skip to Main Content

কভারস্টোরি I চা-চক্র: বিউ-টি বুস্টিং

দেহ-মন চাঙা করে দেওয়া এই পানীয় এখন সৌন্দর্যচর্চার প্রধান একটি উপাদান। কেননা ক্ষতিকর রাসায়নিকের বিপরীতে এটি নিরাপদ প্রাকৃতিক বিকল্প। ফলে সৌন্দর্যপণ্যের শীর্ষস্থানীয় ইনগ্রেডিয়েন্ট হিসেবে এর কদর বাড়ছে দিন দিন। জানাচ্ছেন জাহেরা শিরীন

গেল কয়েক বছরে সবেতেই পুরোনোয় ফিরে যাওয়ার প্রবল আগ্রহ পষ্ট। সৌন্দর্যবিশ্বও এর বাইরে নয়। জেড রোলার থেকে ড্রাই ব্রাশিং কিংবা যুগ-পুরোনো বিউটি ম্যাসাজের নতুন অন্তর্ভুক্তিতে সেই প্রাচীনতার প্রতি অনুরাগই দৃশ্যমান। তালিকায় রয়েছে পাঁচ হাজার বছর পুরোনো আরেকটি সৌন্দর্য উপাদান, যা নিয়ে বেশ চর্চা চলছে এখন। বিউটি টি। ট্র্যাডিশনাল চায়নিজ মেডিসিন আর আয়ুর্বেদের অনুপ্রেরণায় তৈরি এসব চা বেশ জোরেশোরেই জায়গা করে নিচ্ছে মেইনস্ট্রিম বিউটি ইন্ডাস্ট্রিতে। চা-এর নির্যাসে তৈরি হচ্ছে টপিক্যাল সেরাম, বিউটি মাস্ক, স্ক্রাব, হেয়ার অয়েল থেকে শুরু করে অভিনব সব সৌন্দর্যপণ্য। পানেও মিলছে সুফল। ফলাফল, ১৬৮ দশমিক ২ মিলিয়ন ডলারের টি বেসড স্কিনকেয়ার মার্কেট। প্রতিবছরই যার প্রবৃদ্ধি ৭.৫%।
দূষণক্ষতি রোধে: গ্রিন টি
সৌন্দর্যচর্চায় সুপারহিরোর শামিল এ উপাদান। অ্যাকনে টু অ্যান্টিএজিংয়ের মতো সমস্যা সারাইয়ে। প্রতিদিন এক কাপ ধোঁয়া ওড়ানো গ্রিন টি পানেই হোক বা টপিক্যালি এর ফর্মুলেশনে তৈরি ক্লিনজার, সেরাম, ময়শ্চারাইজার বা মাস্ক ব্যবহারেই হোক— সুফল মিলবেই। অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর এই চা। ফলে জোরদার লড়াই করতে পারে ফ্রি র‌্যাডিক্যালের বিরুদ্ধে। প্রতিরোধ করে ত্বকের ডিএনএ ড্যামেজ। গ্রিন টিতে থাকা পলিফেনল এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে কার্যকর। এটি একধরনের মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট, যা প্রোবায়োটিক হিসেবে কাজ করে। অন্ত্রের সুস্থতা রক্ষায় সহায়ক। ফলে নিয়মিত গ্রিন টি পান ত্বককে করে পরিষ্কার, উজ্জ্বল। একই সঙ্গে ‘প্রোটেক্টিভ এবং কারেক্টিভ’ হিসেবে জনপ্রিয় গ্রিন টি সব ধরনের ত্বকের জন্য ব্যবহার উপযোগী।
ফর গ্রেসফুল এজিং: রোজ টি
ন্যাচারাল রেটিনলে পরিপূর্ণ গোলাপ। তাই ত্বকচর্চায় এর ব্যবহার যুগ-পুরোনো। রোজ টিও সমগুণে গুণান্বিত। প্রচুর ভিটামিন এ এবং ই সমৃদ্ধ এই চা নিয়মিত পানে ত্বক ফিরে পায় হারানো আর্দ্রতা। সেই সঙ্গে ত্বককে টান টান করে তুলতে সাহায্য করে। ফলে এটি পানে ত্বকের বলিরেখা আর সূক্ষ্মরেখা দূর হয়। গোলাপের পাপড়ি ভিটামিন সি এর কার্যকর উৎস। অ্যান্টিঅক্সিডেন্টও প্রোপার্টিতে ভরপুর। ফলে রোজ টি পানে ত্বকের উজ্জ্বলতা ভেতর থেকে উদ্দীপ্ত হয়। দেহ ডিটক্সিফাইও করে এ চা। তাই ত্বকের সজীবতা বাড়ে, স্বাস্থ্যোজ্জ্বল দেখায়। সুবাসিত এই চা দেহের রোগ প্রতিরোধক্ষমতাকে সক্রিয় রাখতে সহায়তা করে আর কোলাজেন উৎপাদনের হার বাড়ায়। ফলে ত্বক তো বটেই, চুলেরও বয়স বাড়ে গ্রেসফুলি। অ্যান্টিইনফ্ল্যামেটরি আর অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল প্রোপার্টিযুক্ত এ চা পানে ত্বকের ব্রণও সারে কার্যকরভাবে।
অ্যাকনে আটকাতে: স্পিয়ারমিন্ট টি
হরমোনকে প্রভাবিত করতে পারে এ চা, বিশেষ করে টেস্টোস্টেরনকে। গবেষণায় প্রমাণিত, স্পিয়ারমিন্ট নারী শরীরে উপস্থিত এন্ডোক্রাইন সিস্টেমের ওপর অ্যান্টিঅ্যান্ড্রোজেনিক ইফেক্ট ফেলে, যা হরমোনাল ইমব্যালেন্সের ফলে সৃষ্ট নানা ধরনের ত্বক সমস্যা, যেমন ফেশিয়াল হেয়ার, বুক এবং পেটের লোমশ ভাব এবং হরমোনাল অ্যাকনে উপশমে সাহায্য করে। তাই এগুলো এড়াতে প্রতিদিনকার রুটিনে রাখা যেতে পারে স্পিয়ারমিন্ট টি। নিয়মিত এ চা পানে ব্যাকটেরিয়া এবং ইস্টের ফলে সৃষ্ট ত্বক সমস্যা দ্রুত সারতে শুরু করে। কারণ, এতে থাকা অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টিইনফ্ল্যামেটরি প্রোপার্টি। এ ছাড়া অ্যান্টিঅক্সিডেন্টেও ভরপুর এ চা। দিনে দুবার স্পিয়ারমিন্ট টি পানই যথেষ্ট।
তারুণ্যদীপ্ত ত্বকের জন্য: হিবিসকাস টি
উজ্জ্বল রঙা ফুল জবা। যাতে মিলবে হরেক রকম প্ল্যান্ট কম্পাউন্ডের মিশেল। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন, মিনারেল, ম্যালিক অ্যাসিড— কী নেই এতে। তাই ত্বক এবং চুলচর্চার উপাদান হিসেবে বহু বছর ধরেই জনপ্রিয় জবা। এর নির্যাস ‘বেটার দেন বোটক্স’ বলেই পরিচিত স্কিন কেয়ার ব্র্যান্ডগুলোর কাছে। কারণ, এতে রয়েছে অ্যান্থোসায়ানিন এবং আলফাহাইড্রোক্সি অ্যাসিড। দুটি উপাদানই ফ্রি র‌্যাডিক্যাল থেকে ত্বককে সুরক্ষা দেয়, বাঁচায় প্রিম্যাচিউর স্কিন এজিং থেকে। ত্বকের ইলাস্টিসিটির মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। জবায় আছে ভিটামিন সি, যা কোলাজেনের কার্যকারিতাও বাড়ায়। ফলে হিবিসকাস এক্সট্র্যাক্টে তৈরি স্কিনকেয়ার প্রডাক্ট টপিক্যালি ব্যবহারে তুলনামূলকভাবে তরুণ দেখায় ত্বক। চুলের যত্নেও জবার নির্যাস জাদুকরি। তাই এই উপাদানে তৈরি হেয়ার কেয়ার প্রডাক্ট মজবুত চুলের উৎস। স্ক্যাল্পের পিএইচ লেভেল ব্যালান্সড রাখতেও এর জুড়ি নেই। জবায় তৈরি চা বা হিবিসকাস টিও তাই কার্যকর গুণের আধার। এতে মিলবে ভিটামিন এ, বি১, বি২, সি, জিংক আর আয়রন। আরও আছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড এবং প্রাকৃতিক আলফা হাইড্রোক্সি অ্যাসিড, যা ত্বকের সুস্বাস্থ্য আর উজ্জ্বলতা ধরে রাখতে অনবদ্য। নিয়মিত পানে চুল হবে গোড়া থেকে মজবুত। বড় হবে দ্রুত। এ ছাড়া হিবিসকাস টি হেয়ার রিন্স হিসেবে চমৎকার। শ্যাম্পু করার পর এ চায়ের লিকার দিয়ে চুল ধুলে খুশকি কমবে। জটা ভাবও অপসারিত হবে।
টু সাপোর্ট সার্কুলেশনে: মাচা টি
বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আর বেনিফিশিয়াল প্ল্যান্ট কম্পাউন্ড যুক্ত মাচা। ফলে সৌন্দর্যপণ্য তৈরিতে ঝুঁকিপূর্ণ কেমিক্যালের বিপরীতে চমৎকার প্রাকৃতিক বিকল্প এটি। তাই মাচা দিয়ে তৈরি অ্যাকনে ক্রিম থেকে অ্যান্টিএজিং সেরাম— সবই দারুণ জনপ্রিয় বিশ্বজুড়ে। আর হাতের কাছে মাচা টি পাউডার থাকলে তো কথাই নেই। চটজলদি তৈরি করে নেওয়া যাবে ফেস মাস্ক, অ্যাকনে প্রতিরোধে। গবেষণায় মিলেছে, গ্রিনটির মতোই উপকারী প্রোপার্টি রয়েছে মাচা টি-তে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বরং বেশি। এতে আছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন কে। তাই এটি পানে ত্বকের রক্তসঞ্চালন বাড়ে। ফলাফল, ত্বকের প্রদাহ কমে আসে, প্রশমিত হয় ফোলা ভাব। চোখের চারপাশের কালো দাগ সেরে যায়। মাচা টিতে আরও আছে ক্লোরোফিল। ভিটামিন ও মিনারেলের আধার এ সাবস্টেন্স ত্বককে বাঁচায় সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে। ফলে ফটো এজিং, অ্যাকনে আর ক্লগড পোরসের মতো সমস্যা থেকে সুরক্ষিত থাকে ত্বক।
জরুরি আর্দ্রতা জোগাতে: ক্যালেন্ডুলা টি
বহুল পরিচিত ম্যারিগোল্ড ফ্লাওয়ার হিসেবে। সহজ বাংলায় গাঁদা ফুল। এতে থাকা অ্যান্টিসেপটিক প্রোপার্টি ত্বকের ক্ষত সারাইয়ে কার্যকর। সঙ্গে অ্যাকনে অপসারণেও কম যায় না। ক্যালেন্ডুলা এক্সট্র্যাক্টে তৈরি ত্বক যত্নের উপাদান কোলাজেন উৎপাদনের হার বাড়ায়। আর্দ্রতারও জোগান দিয়ে সারায় অতিরিক্ত শুষ্কতা। সেরাম বা ক্রিমের লেবেলে ক্যালেন্ডুলা অফিসিনালিস লেখা দিয়ে সহজেই শনাক্ত করা যায় একে। চুলের যত্নে স্ক্যাল্পের ফাঙ্গাল ওভারগ্রোথ ঠেকাতে ক্যালেন্ডুলার জুড়ি নেই। এ ছাড়া ত্বকের যত্নেও সমান কার্যকর। এটি নিয়মিত পান করলে ভেতর থেকে ত্বক আর্দ্র হয়ে ওঠে এবং পুষ্টি পেতে থাকে। এই টি থেকে তৈরি করা যায় ফেস প্যাক। দুই ব্যাগ চা দিয়ে লিকার বানিয়ে তার সঙ্গে হাফ কাপ দই আর চার টেবিল চামচ ওটস দিয়ে তৈরি করে নিতে হবে প্যাক। পরিষ্কার ত্বকে এটা মাখিয়ে নিয়ে অপেক্ষা করতে হবে ১৫ মিনিট। এ ছাড়া ব্রণ সারাতে ক্যালেন্ডুলা টি-এর লিকার খুব ভালো কাজ করে। শুধু মুখ ধুয়ে নিলেই চলবে। মাথার ত্বকের চুলকানি সারাতেও দারুণ কাজের এই লিকার।
কোলাজেন উৎপাদনের জন্য: হর্সটেইল টি
এতে রয়েছে প্রচুর সিলিকন। সিলিকা এবং সিলিকা অ্যাসিড ফর্মে। অন্য যেকোনো হারবাল টি থেকে এই চায়ে যার পরিমাণ বেশি। এটি দেহ সহজেই শুষে নিতে পারে। ফলাফল, ত্বকে কোলাজেন উৎপাদনের হার ত্বরান্বিত হয়। তাই নিয়মিত হর্সটেইল টি পানে ত্বক হয় টান টান এবং মসৃণ। বয়সের ছাপ কাটিয়ে ওঠা যায়। এ ছাড়া এতে থাকা ক্লিনজিং প্রোপার্টি পোর সারাইয়ে সহায়ক। ত্বকের টেক্সচার মেরামতেও এর জুড়ি নেই। ‘ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, জিংক, ম্যাঙ্গানিজ, ফসফরাস, পটাশিয়াম, সেলেনিয়াম, রিবোফ্লাভিন, নিয়াসিন আর ভিটামিন সি এর মতো প্রাকৃতিক উপাদানেরও দারুণ উৎস এ চা। যা চুল এবং নখকেও সুন্দর রাখতে সাহায্য করে। হর্সটেইল টি-তে থাকা অ্যাকটিভ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বককে পরিবেশদূষণের ক্ষতি থেকে সুরক্ষা দেয়।
ক্রনিক স্কিন কন্ডিশন এড়াতে: ক্যামোমাইল টি
একই সঙ্গে অ্যান্টিইনফ্ল্যামেটরি, অ্যান্টিসেপটিক এবং অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল প্রোপার্টি যুক্ত এ চা। এটি পান করলে ত্বকের নানাবিধ সমস্যা সারে। যেমন— একজিমা, সোরাইসিস, ব্রণের দাগ, ব্রেকআউট আর পিগমেন্টেশন। শুধু পানের মাধ্যমে নয়, সরাসরি এর ব্যবহারও সারায় ত্বকের চুলকানি ও অমশ্রিণতা। সে ক্ষেত্রে গোসলের পানিতে এই চায়ের লিকার মিশিয়ে নিলেই চলবে। ক্যামোমাইল টিতে থাকা পলিফেনল আর ফাইটোকেমিক্যাল ত্বকের যেকোনো ক্ষত সারানোর প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে। সারায় বলিরেখা আর ব্রেকআউটও। এ ছাড়া পলিফেনলের মাত্রা বেশি হওয়ায় নিয়মিত এই চা পান ত্বককে ফ্রি র‌্যাডিক্যাল ড্যামেজ থেকে রক্ষা করে। ত্বক কোষ পুনরুজ্জীবিত রাখে। ফলে বুড়িয়ে যাওয়া রোধ করা যায়। শুধু কি ত্বক! চুলের জন্যও ক্যামোমাইল টি উপকারী। এর অ্যান্টিইনফ্ল্যামেটরি কম্পাউন্ড শুষ্ক স্ক্যাল্প সারাতে চমৎকার। রোধ করে চুলকানিও। এ ছাড়া হেয়ার রিন্স হিসেবে এর ব্যবহার বেশ প্রচলিত। ন্যাচারাল হেয়ারলাইনার হিসেবে, হেয়ার হাইলাইটিংয়ের জন্য।
তেলে ত্বক নিয়ন্ত্রণে: পেপারমিন্ট টি
শুধু হজমশক্তিই বাড়ায় না, এই চা সহায়তা করে ত্বকের অতিরিক্ত তেলেভাব নিয়ন্ত্রণে। পেপারমিন্টের মেনথল এ ক্ষেত্রে কার্যকর, যা অতিরিক্ত তেল তৈরির প্রক্রিয়াকে রোধ করে। ভেতর থেকে তেলে ভাব কাটানোর পাশাপাশি অ্যাকনে, ব্রণ সারাতে সহায়ক। এতে আরও আছে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল প্রোপার্টি; যা মাইক্রোবিয়াল আক্রমণ রোধে কার্যকর, যা ত্বককে ভেতর থেকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। বাড়ায় সজীবতা। পিপারমিন্ট টি-তে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের লোমকূপের সমস্যাও সারায় কার্যকরভাবে। সে সঙ্গে বয়সের ছাপ কাটায়। এই চা ভিটামিন ই-তে ভরপুর, যা রোদের ফলে সৃষ্ট ত্বক সমস্যা সারাতে সহায়ক। ত্বকের শুষ্কতা কাটাতে ভিটামিন ডি খুব কার্যকর। এটাও মিলবে পিপারমিন্ট টি থেকে। স্লিপিং সাইকেল ঠিক রাখতে জুড়ি নেই এই চায়ের। আর প্রতিদিনকার পর্যাপ্ত ঘুম মানেই ত্বকের পুনরুজ্জীবিত হয়ে ওঠা। মৃতকোষ সারাই এবং বয়সের ছাপ প্রতিরোধ।

মডেল: তানিয়া
মেকওভার: পারসোনা
ওয়্যারড্রোব: বাটারফ্লাই বাই সাগুফতা
ছবি: ইভান সরদার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top