skip to Main Content

রূপরসদ I TEA তবে tea নয়

সৌন্দর্যপণ্যে উপাদানটি অনেক কিছুর প্রভাবক। এমনকি ব্যবহৃত রাসায়নিকের ক্ষতি থেকে ত্বকের সুরক্ষা দেয়। লিখেছেন ফাহমিদা শিকদার

এখন ক্লিন বিউটির সময়। এই ধারা সবাইকে সচেতন করছে সৌন্দর্যপণ্যে থাকা ইনগ্রেডিয়েন্ট সম্পর্কে। আর উদ্বুদ্ধ করছে নিরাপদ বিউটি প্রডাক্ট ব্যবহারের জন্য; যা ত্বক, স্বাস্থ্য এবং পরিবেশের কোনো ক্ষতি করে না। এখন অনেকেই স্কিন বা হেয়ারকেয়ার পণ্য কেনার সময় পড়ে নিচ্ছেন লেবেল। তারও আগে নেট ঘেঁটে জেনে নিচ্ছেন এতে থাকা ক্ষতিকর উপাদানগুলো সম্পর্কে। তবে এমন কিছু উপাদান আছে, যেগুলোর মাত্রা ও প্রভাব নিয়ে আছে ধোঁয়াশা। এমনই একটি রাসায়নিক যৌগ হলো ট্রায়াথ্যানোলামিন বা টিইএ (TEA)। এর পক্ষে-বিপক্ষে রয়েছে ভিন্নমত। কোনটি সঠিক? জেনে নেওয়া যাক—
ট্রায়াথ্যানোলামিন কী?
ট্রায়াথ্যানোলামিন একটি টারশিয়ারি অ্যামিনো যৌগ এবং ট্রাইয়ল অর্থাৎ এমন একটি রাসায়নিক যৌগ, যা তিনটি হাইড্রক্সিল গ্রুপ ধারণ করে। এটি একটি বর্ণহীন, তৈলাক্ত তরল। ট্রায়াথ্যানোলামিন পানির চেয়ে বেশ ঘন। এর গন্ধ হালকা অ্যামোনিয়ার মতো। কারণ, এ যৌগের কেন্দ্রে রয়েছে নাইট্রোজেন।
এটি তৈরি করা হয় ইথিলিন অক্সাইডের বিক্রিয়ায় মাধ্যমে, যা পেট্রোলিয়াম ইন্ডাস্ট্রি থেকে আহরণ করা হয়। আর এর সঙ্গে যোগ হয় অ্যামোনিয়া, যা বাতাস থেকে নেওয়া হয়। ট্রায়াথ্যানোলামিন প্রাথমিকভাবে বিভিন্ন প্রডাক্ট ফর্মুলাতে পিএইচ-এর সামঞ্জস্য রাখতে এবং তেল ও পানিজাতীয় দ্রব্যকে একসঙ্গে মেশাতে ইমালসিফাইয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
ট্রায়াথ্যানোলামিন কোনো একটি নির্দিষ্ট টাইপের প্রডাক্টে ব্যবহার করা হয়, এমনটি নয়। তবে এই পিএইচ অ্যাডজাস্টার স্ট্যাবিলাইজারকে কসমেটিকস এবং ফ্র্যাগনেন্স থেকে শুরু করে স্কিনকেয়ার, হেয়ারকেয়ার পণ্যের ইনগ্রেডিয়েন্ট লিস্টে টিইএ নামে খুঁজে পাওয়া যাবে। বিশেষ করে, স্কিনকেয়ার প্রডাক্টের ক্ষেত্রে, ট্রায়াথ্যানোলামিন পাওয়া যায় শেভিং জেল এবং ক্রিম, সানস্ক্রিন, লোশন, সেরাম, ক্লিনজার ইত্যাদিতে।
ট্রায়াথ্যানোলামিনের অনুরূপ কাঠামোর আরও দুটি যৌগ আছে, উভয় প্রায়শই প্রতিটি উপাদানের সঙ্গে যুক্ত থাকে। ওই যৌগগুলো হেয়ারকেয়ার প্রডাক্টে পাওয়া যায়। প্রথমটি হলো ডায়াথ্যানোলামিন। এটি পিএইচ অ্যাডজাস্টার এবং ফোম বুস্টার হিসেবে হেয়ার কন্ডিশনিং প্রডাক্টে ব্যবহার করা হয়। অপরটি হলো ইথানোলামিন। দ্বিতীয়টি হেয়ার স্প্রেতে বেশি থাকে। এই তিনটি যৌগের কাঠামো এক রকম হলেও কাজের দিক থেকে অনেকটা ভিন্ন।
ট্রায়াথ্যানোলামিন নিরাপদ
ত্বক ও চুলের যত্নে ব্যবহার্য পণ্যে ট্রায়াথ্যানোলামিন নিরাপদ বলে মনে করা হয়। কয়েক বছর আগে এটি কতটা ঝুঁকিমুক্ত, এ নিয়ে সংশয় ছিল।
বিভিন্ন কসমেটিক পণ্যে এন-নাইট্রোসেটিং এজেন্ট থাকে। এটি অ্যামোনিয়ার সঙ্গে বিক্রিয়া করে নাইট্রোসামাইনস তৈরি করে। একে কার্সিনোজেন উপাদান হিসেবে দেখা হয়। এ ধরনের উপাদানগুলো জীবন্ত টিস্যুতে ক্যানসার সৃষ্টি করতে পারে। এ নিয়ে বিগত বছরগুলোতে অনেক গবেষণা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা দেখেন, ৩১টি ট্রায়াথ্যানোলামিন ধারণকারী উপাদান নিরাপদ যখন সেগুলো সেফটি গাইডলাইন মেনে ফর্মুলেট করা হয়। গবেষণাটির পর তারা সিদ্ধান্তে আসেন, ট্রায়াথ্যানোলামিনযুক্ত পণ্য নিরাপদ হয়ে উঠবে, যদি তাতে সেখানে কোনো এন-নাইট্রোসেটিং উপাদান এবং নাইট্রেটের উপস্থিতি না থাকে। তবে যৌগটির ঘনত্ব ৫ শতাংশের নিচে থাকতে হবে। বিশেষ করে যে স্কিনকেয়ার পণ্য বা মেকআপ অনেকক্ষণ ধরে ত্বকে লেগে থাকে, তাতে ট্রায়াথ্যানোলামিনের পরিমাণ ৫%-এর কম থাকতে হবে। এভাবে সম্ভাব্য কার্সিনোজেন গঠন প্রতিরোধ করা যায়। উল্লেখ্য, ট্রায়াথ্যানোলামিন এককভাবে সম্পূর্ণ নিরাপদ একটি যৌগ। ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব টক্সিকোলজি এবং রিভিউস অব এনভায়রনমেন্টাল কন্টামিনেশন অ্যান্ড টক্সিকোলজিতে প্রকাশিত এ সম্পর্কে দুটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, ট্রায়াথ্যানোলামিন নন-কার্সিনোজেনিক, অর্থাৎ ক্যানসার কোষ সৃষ্টিতে এর কোনো ভূমিকা নেই। এ ছাড়া এটি মানবদেহের জন্য অন্য কোনো দিক থেকে টক্সিক বা ক্ষতিকর নয়।
আমেরিকা ও ইউরোপে এখন স্কিনকেয়ার, হেয়ারকেয়ার, মেকআপ ও ফ্র্যাগরেন্সে এন-নাইট্রোসেটিং উপাদান ব্যবহার করতে হলে বিশেষ নির্দেশনা মেনে চলতে হয়। খুব সতর্কতার সঙ্গে এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। তাই স্কিনকেয়ার বা হেয়ারকেয়ার প্রডাক্ট উৎপাদনের সময় ট্রায়াথ্যানোলামিন এবং এন-নাইট্রোসেটিং উপাদানের মিথস্ক্রিয়ায় কার্সিনোজেনিক নাইট্রোসামাইনস যৌগ গঠনের আশঙ্কা অনেক কম। বলতে গেলে শূন্যের কাছাকাছি। কারণ, এখন কসমেটিক কোম্পানিগুলোকে ইনগ্রেডিয়েন্ট রিভিউ প্যানেলের গাইডলাইন মেনে প্রডাক্ট বানাতে হয়। সেখানে ট্রায়াথ্যানোলামিন বা এর অনুরূপ যৌগ যেমন ডায়াথ্যানোলামিন, ইথানোলামিনের সঙ্গে এন-নাট্রোসেটিং বা নাইট্রেট ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

কার্যকারিতা
ট্রায়াথ্যানোলামিন ত্বক বা চুলের জন্য বিশেষ উপকারী কোনো উপাদান নয়। তবে এটি যেকোনো কসমেটিক প্রডাক্টের ফর্মুলেশন ইমপ্রুভ করতে সক্ষম।
পিএইচ স্তরের ভারসাম্য
স্কিনকেয়ার বা যেকোনো পারসোনাল কেয়ার প্রডাক্টে পিএইচ মাত্রা সঠিক থাকাটা অত্যন্ত জরুরি। প্রসাধনসামগ্রীর ফর্মুলেশনে পিএইচের ভারসাম্য বজায় রাখাও এর প্রধান একটি কাজ। এটি হাই এবং লো পিএইচ লেভেলকে নিউট্রালাইজ বা নিরপেক্ষ করতে পারে। এ ছাড়া যৌগটি যেকোনো প্রডাক্টের অম্লতা বা ক্ষারত্ব কমাতে বেশ সহায়ক। অম্লতার আধিক্য ত্বকে ইরিটেশনের একটি কারণ। পিএইচ লেভেল নিউট্রাল থাকলে এই আশঙ্কা থাকে না।
চমৎকার ইমালসিফায়ার
আগেই বলা হয়েছে, তেল ও পানির ইমালসিফায়ার হিসেবে এটি কাজে লাগে। প্রসাধনীতে ট্রায়াথ্যানোলামিন ব্যবহারের এটাও একটি কারণ। এর মাধ্যমে অমসৃণ বা ভিন্ন আণবিক গঠনের দুটি উপাদানের মিশ্রণ ঘটানো হয়। স্কিনকেয়ার বা হেয়ারকেয়ার প্রডাক্ট বানানোর সময় বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অয়েল এবং নন-অয়েল লিকুইড বেশি থাকে। ট্রায়াথ্যানোলামিন এ ধরনের উপাদানের মলিকিউলগুলোকে একসঙ্গে ধরে রাখে। কারণ, এর রাসায়নিক গঠনের দুটি দিক আছে। একটি হলো হাইড্রোফিলিক এবং অন্যটি হাইড্রোফোবিক। হাইড্রোফিলিক পানির সঙ্গে এবং হাইড্রোফোবিক তেলের সঙ্গে আবদ্ধ হতে পারে।
থিকেনিং এজেন্ট
প্রসাধনীতে ট্রায়াথ্যানোলামিন ব্যবহারের আরেকটি কারণ হচ্ছে, এটি খুব ভালো থিকেনিং এজেন্ট। অর্থাৎ এটি যেকোনো প্রডাক্টের টেক্সচার ঘন করতে সাহায্য করে। উপযুক্ত গাঢ়তার জন্য অনেক লোশন, ক্রিম বা কন্ডিশনারে থিকেনার প্রয়োগের দরকার হয়। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেটার অপশন ট্রায়াথ্যানোলামিন।
তবু একটু সতর্কতা
আগেই বলা হয়েছে, ৫%-এর বেশি ট্রায়াথ্যানোলামিন ব্যবহার করা যাবে না। করলে ত্বকে ইরিটেশন হতে পারে। যাদের ত্বক অতিসংবেদনশীল সৌন্দর্যসামগ্রী সম্পর্কে তাদের সচেতন থাকা দরকার। উল্লেখ্য, এটি শুকনা ও শীতল স্থানে রাখতে হবে।
মডেল: মাহলেকা
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: ইভান সরদার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top