skip to Main Content

ফিচার I টি স্টিম ফেশিয়াল

চায়ের ভেষজ গুণ বাষ্পের মধ্য দিয়ে ত্বকে গ্রহণ করার পদ্ধতি। সতেজ হয়ে ওঠার জন্য। লিখেছেন সিফাত বিনতে ওয়াহিদ

বহু শতাব্দী ধরেই ফুল এবং ভেষজ উপাদানের স্টিম সৌন্দর্যচর্চায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। গবেষণায় দেখা গেছে, এটি ত্বক নরম রাখতে সাহায্য করে। রক্তসঞ্চালন বাড়ায়। আরও জানা গেছে, চায়ের মধ্যে থাকা পলিফেনল ত্বকের তৈলাক্ত ভাব এবং ব্রণ দূর করতে পারে। যারা প্রাকৃতিক পরিচর্যায় স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন, তাদের জন্য ফেশিয়াল স্টিমে চা এবং ভেষজ উপাদানের সংযোগ জুতসই হতে পারে।
এই বাষ্প নেওয়ার সময় চায়ের সঙ্গে যেকোনো ঔষধি গাছের পাতা বা ফুল মেশানো যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে পুদিনা এবং রোজমেরি বেশ উপকারী। এগুলো ত্বক শীতল ও শান্ত রাখে। গোলাপ এবং ক্যামোমাইল ফুলের ব্যবহারে তা নরম হয়ে ওঠে। চা এবং ফুল বা গুল্ম মিশ্রিত এই ফেশিয়াল স্টিম কীভাবে তৈরি করা যায়, জেনে নেওয়া যাক।
চা কিংবা শুকনা গুল্ম অথবা ফুল ৬ কাপ পানি একটা হাঁড়ি বা বাটিতে ফুটিয়ে টেবিলে রাখতে হবে। একটু ঠান্ডা বা সহনীয় পর্যায়ে এলে মাথার ওপরের অংশ একটি বড় তোয়ালে দিয়ে বাটিসমান ঢেকে নিতে হবে। ভাপ নেওয়ার সময় সতর্কতা দরকার। কোনো অবস্থাতেই যেন মুখে অতিরিক্ত গরম বাষ্প না লাগে। এতে ত্বক পুড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। কিছুক্ষণ পর পর বিরতি নিয়ে ১০ মিনিট এভাবেই ভাপ নেওয়া যেতে পারে। ভাপ নেওয়া শেষ হলে ঠান্ডা পানিতে মুখ ধুয়ে, হালকা ময়শ্চারাইজার লাগিয়ে নিতে হবে।
নুমি চায়ের সঙ্গে তাজা ফুল এবং ভেষজ উপাদান মিশিয়ে তৈরি টি স্টিম মুখত্বক পরিষ্কার রাখতে যথেষ্ট সহায়ক।
সুবিধা
এটি মুখের দাগ দূর করতে সাহায্য করে। এই স্টিম লোমকূপে জমে থাকা তেল ও ময়লা নরম করে দেয়। ফলে ত্বক পরিষ্কার করা সহজ হয়। ব্লাকহেডস ও হোয়াইটহেডসের ঝুঁকি থাকে না। এই স্টিম ফেশিয়ালে রক্তসঞ্চালন বাড়ে বলে ত্বক সতেজ হয়ে ওঠে। বলিরেখা দূর হয়। ত্বক থেকে টক্সিন সরে যায়। এসব টি স্টিম নেওয়ার সময় মুখ স্বাভাবিকের তুলনায় অতিরিক্ত ঘাম তৈরি করে, ফলে লোমকূপ দিয়ে বিষাক্ত পদার্থগুলো বের হয়ে যেতে পারে।
শুধু ক্লান্তি দূর বা শরীর-মনে উদ্দীপনা তৈরি করেই ক্ষান্ত হয় না এই পানীয়। এর আছে আরও বিচিত্র ভেষজ গুণ। এ কারণে রূপচর্চায়ও চায়ের পাতা বা লিকার ব্যবহৃত হয়ে আসছে যুগ যুগ ধরে। চায়ের লিকার প্রাকৃতিক অ্যাসট্রিনজেন্টের কাজ করে। তৈলাক্ত ত্বকের জন্যও এটি বেশ কার্যকর। এ ছাড়া চায়ে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট; অ্যান্টিএজিং এবং অ্যান্টিইনফ্ল্যামেটরি গুণ। এগুলো ত্বককে মসৃণ ও লাবণ্যময় রাখতে সাহায্য করে।
গ্রিন টি এবং লিকার চায়ে একধরনের ক্যাফেইন থাকে, যা ক্যাটেচিন ও পলিফেনল সমৃদ্ধ। উন্নত টোনারের কাজ করে থাকে এই পানীয়। জেনে নেওয়া যাক এটি কীভাবে রূপচর্চার সঙ্গী করা যায়—
লেবুর খোসা এবং ক্যামোমাইল টি
লেবুর খোসায় থাকা সাইট্রিক অ্যাসিড ত্বক পরিষ্কার ও উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে। এমনকি এর সুগন্ধযুক্ত স্টিম নেওয়ার পর ত্বকের মসৃণতা খুব সহজেই লক্ষ করা যায়। ক্যামোমাইলে সাইট্রিকের মতো কিছু সুবিধা রয়েছে, যেমন এটি ত্বকের কালো দাগ দূর করে। ক্যামোমাইল একটি শিথিলকরণ মাধ্যম হিসেবেও পরিচিত, ক্রাইসিন নামক ফ্ল্যাভোনয়েডের মাধ্যমে এটা ঘুমের উদ্রেক ঘটায়। ঘুম অথবা বিশ্রামের আগে এই ফেশিয়াল স্টিম ব্যবহার করা যেতে পারে।
তুলসী এবং ব্ল্যাক টি
এই দুয়ের মধ্যে রয়েছে ত্বককে শীতল করার মতো বৈশিষ্ট্য। কারণ, উভয়ই প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। এ ছাড়া মুখের ফোলাভাব দূর করতে সহায়ক। তৈলাক্ত এবং ময়লা ত্বকের বিরুদ্ধে লড়াইয়েও ব্ল্যাক টি অনন্য। এটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের খুব ভালো উৎস, যা ত্বকের সূক্ষ্ম দাগ এবং বলিরেখা কমাতেও সাহায্য করে। এই দুয়ের মিশ্রণ ব্যবহারে ত্বক প্রশান্তিকর হয়ে ওঠে।
সবুজ চা এবং গোলাপের পাপড়ি
গ্রিন টিতে ব্ল্যাক টির মতোই অ্যাসট্রিনজেন্ট এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের গুণ রয়েছে, যা ত্বকে উদ্দীপনা ও শক্তি জোগায়। প্রাচীনকাল থেকেই ত্বককে নরম ও মসৃণ করার জন্য গোলাপের পাপড়ি ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
স্টিম ফেশিয়াল ত্বকের জন্য উপকারী হলেও এটা নেওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা প্রয়োজন। বিউটিশিয়ানরা পরামর্শ দিয়ে থাকেন, এটি সপ্তাহে একবারের বেশি ব্যবহার করা উচিত নয়। এ ছাড়া খেয়াল রাখতে হবে, এই ফেশিয়ালের মুখ যেন পরিষ্কার থাকে।

মডেল: মিলা
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: তানভীর খান
কৃতজ্ঞতা: মিথিলা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top