skip to Main Content

ফিচার I সুগার ফেস

সম্প্রতি বিউটি ওয়ার্ল্ডে টার্মটি বেশ চালু হয়েছে। শুনতে মিষ্টি লাগলেও এর আসল অর্থে অনেকেই চমকে উঠবেন। বিশেষত যারা ডেজার্ট ভালোবাসেন

সুগার ফেসের বিজ্ঞান
অ্যান্টি-এজিং নিয়ে যেকোনো বড় চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের লেখা বইয়ে, চিনি কীভাবে ত্বকের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে, সেই সম্পর্কে বিশদ একটি অধ্যায় থাকবেই—যেমনটা হলিউড অভিনেত্রী গুয়েনেথ প্যালট্রোর হলিস্টিক ডক্টর ফ্র্যাংক লিপম্যান তার ‘টেন রিজনস ইউ ফিল ওল্ড অ্যান্ড গেট ফ্যাট’ বইয়ে লিখেছেন। সেখান থেকে জানা যায়, চিনি কনজিউম করলে শরীরে গ্লাইকেশন নামের একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া হয়। এ প্রক্রিয়াটিই মূলত স্কিন ড্যামেজের জন্য দায়ী। এতে চিনি রক্তপ্রবাহে প্রোটিনের সঙ্গে খুব সহজে মিশে গিয়ে, অ্যাডভান্সড গ্লাইকেশন অ্যান্ড প্রডাক্টস (AGEs) নামক ক্ষতিকর ফ্রি র‌্যাডিকেল উৎপাদন করে। শরীরে যত বেশি চিনি ঢুকবে, তত AGEs বাড়তে থাকবে। তখনই এটি আশপাশের প্রোটিনগুলোকে ড্যামেজ করতে শুরু করে।
যে প্রোটিনগুলো স্কিনের বিল্ডিং ব্লক হিসেবে কাজ করে, সেগুলো সবার আগে AGEs-এর আক্রমণের স্বীকার হয়। এর ভেতর আছে কোলাজেন আর ইলাস্টিন। এই প্রোটিনগুলো ত্বককে দৃঢ় এবং স্থিতিস্থাপক রাখে। এদের জন্যই ত্বক থাকে সুস্থ এবং তারুণ্যোজ্জ্বল। AGEs কোলাজেন এবং ইলাস্টিনকে শক্ত, শুষ্ক আর ভঙুর করে তোলে। আমাদের শরীরে তিন রকমের কোলাজেন আছে। টাইপ ওয়ান, টু এবং থ্রি। এর স্থায়িত্ব এবং স্থিতিস্থাপকতা ধাপে ধাপে বাড়ে। সবচেয়ে দুর্বল টাইপ ওয়ান আর সবচেয়ে শক্তিশালী টাইপ থ্রি। গ্লাইকেশন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উৎপন্ন AGEs, টাইপ থ্রি কোলাজেনকে টাইপ ওয়ানে পরিণত করে। এই ক্ষতিকর ফ্রি র‌্যাডিকেল এভাবে ত্বকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ প্রোটিন দুটির ক্ষতি করে থাকে। ফলে বয়স বাড়ার আগেই, ত্বকে ফাইন লাইনস, গভীর খাঁজযুক্ত লাফ লাইনস, রিংকেল, ডার্ক সার্কেল এমনকি গালের নিচের অংশে চামড়া ঝুলে পড়ার মতো বার্ধক্যের ছাপ দেখা যায়। এ ছাড়া চিনির কারণে ত্বকে ডিসকালারেশন এবং হাইপারপিগমেন্টেশন দেখা দেয়।
AGEs শুধু কোলাজেন আর ইলাস্টিনেরই বারোটা বাজায় না, এর পাশাপাশি শরীরের প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এনজাইমগুলোকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বককে বিভিন্ন ধরনের দূষণ, ডিজিটাল ডিভাইসের ব্লু লাইট এবং সূর্যের ইউভি রশ্মির মতো ক্ষতিকর প্রভাবক দ্বারা সৃষ্ট ফ্রি র‌্যাডিকেলের হাত থেকে সুরক্ষা দেয়। এ ধরনের ফ্রি র‌্যাডিকেলগুলো অক্সিডেটিভ স্ট্রেস ট্রিগার করার মাধ্যমে ত্বকের অকালবার্ধক্যে অবদান রাখে। ব্রিটিশ জার্নাল অব ডার্মাটোলজির একটি প্রতিবেদনের মতে, গ্লাইকেশনের দৃশ্যমান প্রভাব পঁয়ত্রিশ বছর বয়সী মহিলাদের মধ্যে দেখা দেয়। কিন্তু সত্যি বলতে, এখন সেটা ত্রিশের আগেই বেশি দেখা দিচ্ছে।
চিনি শরীরে টেস্টোস্টেরন তৈরির ক্ষমতা রাখে। এই হরমোনের কারণে লোমকূপ বড় হতে থাকে। ত্বক হয়ে ওঠে অতিরিক্ত তৈলাক্ত। এদিকে বেশি চিনি খেলে শরীরের ইমিউন সিস্টেমে গুগল দেখা দেয়। দুর্বল ইমিউন সিস্টেম ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়তে পারে না। আর এগুলো আটকে যায় লোমকূপের ভেতর। ফলাফল, ব্ল্যাকহেডস এবং অ্যাকনে! আবার বেশি চিনি খেলে ইনসুলিন লেভেল বেড়ে যায়। এটির জন্য শরীরে ইনফ্ল্যামেশন বৃদ্ধি পায়। ফলে ত্বকে ইনফ্ল্যামেশনজনিত অ্যাকনে দেখা দেয়। এ ছাড়া অতিরিক্ত চিনি রোজেশিয়া, একজিমা, সোরাইসিসের মতো স্কিন কন্ডিশনকে বাড়িয়ে তুলতে পারে। কারণ, এগুলো স্কিন ইনফ্ল্যামেটরি ডিজিজ।
টু স্টপ অ্যান্ড কিল আ সুগার ফেস
বুঝতেই পারছেন, চিনি আমাদের ত্বকের কত বড় শত্রু। এর খারাপ প্রভাব থেকে ত্বককে রক্ষা করতে চাইলে সবার আগে নিজের খাদ্যাভ্যাস ঠিক করতে হবে। কমাতে হবে সুগার ইনটেক। কিংবদন্তি ডার্মাটোলজিস্ট ফ্রেডরিক ব্র্যান্ড প্রায়ই বলতেন, ডায়েট থেকে চিনি বাদ দিলে ত্বকের বয়স ১০ বছর কমে যাবে। কথাটা যে সত্যি, সেটার প্রমাণ মেলে সেলিব্রিটি কাপল জিজেল বুন্দসেন আর টম ব্র্যাডিকে দেখলে। একবার এক ম্যাগাজিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তাদের সাবেক পারসোনাল শেফ এলেন ক্যাম্পবেল বলেছিলেন, তারা খুব কঠোর ‘নো সুগার ডায়েট’ অনুসরণ করেন। জিজেল এবং টম এদের দুজনকে দেখলে মনেই হয় না বয়স চল্লিশ পেরিয়েছে। তাদের চেহারায় এখনো কুড়ির তারুণ্য।
মিষ্টি বা মিষ্টিজাতীয় খাবার বেশি খেলে ত্বকে প্রিম্যাচিউর এজিং সাইন, অ্যাকনে, হাইপারপিগমেন্টেশন দেখা দেয়। যদি কারও সুইট স্ক্র্যাভিং বেশি থাকে এবং স্কিনে এই সমস্যাগুলো দেখা দেয়, তাহলে বুঝতে হবে সে সুগার ফেসের অধিকারী। সুগার ফেস থেকে মুক্তি চাইলে নো সুগার ডায়েটের বিকল্প নেই। তবে আশার কথা, এই খাদ্যাভ্যাস থেকে সব রকমের চিনি বা চিনিজাতীয় খাবার ঝেঁটিয়ে বিদায় না করলেও চলবে। বাদ দিতে হবে কেবল সাদা চিনি। এর বদলে প্রিয় ডেজার্ট আইটেমগুলো বানাতে ব্যবহার করতে পারেন, মধু, গুড়, স্টিভিয়া, ম্যাপল সিরাপ, কোকোনাট সুগার, খেজুরের পিউরি ইত্যাদি। তবে এগুলো মাত্রাতিরিক্ত হলে চলবে না। পাশাপাশি নজর দিতে হবে কার্ব ইনটেকের দিকে। এটি সুগারের অন্যতম প্রধান উৎস। কারণ, কার্বোহাইড্রেট একবার হজম হয়ে গেলে সেটি ভেঙে গ্লুকোজ নামক চিনিতে পরিণত হয়। তাই সাদা ভাত, সাদা রুটি, পিজ্জা, বার্গার, স্যান্ডউইচ, পাস্তা, নুডলস—এসব থেকে দূরে থাকুন। এদের বদলে বেছে নিন ‘হোল-ফুড কার্ব’। যেমন লাল আটা, লাল, বাদামি বা কালো চাল, কিনোয়া, ওটস, বাকহুইট ইত্যাদি। ফ্লাওয়ার-বেসড ফাস্ট ফুড খেতে ইচ্ছা করলে বাসায় লাল আটা দিয়ে বানিয়ে নিতে পারেন। প্রসেসড ফুড থেকে সাবধান। প্রি-প্যাকেজড খাবারের প্যাকেটে কর্ন সিরাপ, ফ্রুকটোজ, বার্লি মল্ট, সুক্রোজ, ডেক্সট্রিন, ডেক্সট্রোজ, মল্ট সিরাপ ইত্যাদি অনেক নামে সুগার পাওয়া যায়। তাই একেবারে না পারলেও ধীরে ধীরে প্যাকেটজাত খাবার খাওয়া কমিয়ে দেন। ডায়েটে যোগ করুন প্রোটিন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার। বাড়িয়ে দিন ওয়াটার ইনটেক।
এই তো গেল প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা। সুগার ফেস যদি হয়েই যায়, তখন কী উপায়? এর প্রতিকার হিসেবেও একই জিনিস মানতে হবে। এ ক্ষেত্রে সুখবর হলো, বাড়তি সুগার খাওয়া বাদ দেওয়ার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ভালো ফল পাওয়া যায়। ৭২ থেকে ৯৬ ঘণ্টার মধ্যেই স্কিন টোনের উন্নতি হয়, তৈলাক্ত ও শুষ্ক ভাব দূর হয়। আর ডার্ক সার্কেল এতটাই কমে যাবে যে খালি চোখেই ধরতে পারবেন। অ্যাকনেও কমে আসবে। একটু বাড়তি যত্ন হিসেবে ত্বকের ধরন অনুযায়ী বাজার থেকে কেনা বা ঘরে প্রাকৃতিক উপাদান (নিম, হলুদ, আঙুর, অ্যালোভেরা, টক দই) তৈরি অ্যান্টি-অ্যাকনে মাস্ক ব্যবহার করতে পারেন। আর ত্বকে বয়সের ছাপ পড়লে কোকোনাট, অলিভ বা আমন্ড অয়েলের সঙ্গে একটা ভিটামিন ই ক্যাপসুল এবং একটা ইভনিং প্রিমরোজ অয়েল ক্যাপসুল মিশিয়ে ফেস অয়েল বানিয়ে সকাল ও রাতে আপার স্ট্রোকে ম্যাসাজ করলেই চলবে।

 ফাহমিদা শিকদার
মডেল: অনন্যা
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: তানভীর খান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top