skip to Main Content

বহুরূপী I গুড় গুণাগুণ

হরেক গুড়ের হরেক স্বাদ; আছে হরেক উপকার ও অপকার

গুড় মিষ্টি। তবে উপাদানভেদে এর মিষ্টতা ভিন্ন। উপকারিতাও আলাদা। সাধারণত উদ্ভিজ্জ রস জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি হয়। এক রকমের রস দিয়ে নানা প্রকারের গুড় তৈরি হতে পারে, যেগুলোর ভৌতকাঠামো আলাদা। তবে গুণগত মান প্রায় একই থাকে। অবশ্য আলাদা রসে তৈরি গুড়ের গুণাগুণ এক রকম নয়। সাধারণত খেজুর, আখ, গোলপাতা ও তালের রস দিয়ে গুড় তৈরি হয়। এসব উপাদানের কিছু স্বাস্থ্যগুণ রয়েছে। আছে অপকারিতাও। তাই সব গুড় সবার জন্য উপাদেয় না-ও হতে পারে।
দেশে তাল ও গোলপাতার রসের গুড়ের প্রচলন কম। গোলপাতার গুড় মূলত খনিজ উপাদানের আধার। ফলে শরীরে খনিজের ঘাটতিজনিত রোগবালাই থেকে সুরক্ষিত থাকতে এ গুড় নিয়মিত খাওয়া যেতে পারে। প্রচলন খুব কম বলে গোলপাতার গুড়ের ক্ষতিকর দিক নিয়ে খুব একটা চর্চা হয় না। তালের গুড়ের ক্ষেত্রেও একই কথা। সব গুড়েই কিছু সাধারণ অপকারিতা থাকে। তাল ও গোলপাতার গুড়েও তা আছে। সেসব নিয়ে আলাপের আগে তালের গুড়ের কিছু উপকারিতার ফিরিস্তি আওড়ানো যাক।
কোষ্ঠকাঠিন্য রোধে তালের গুড়ের কদর রয়েছে। লিভারকে বিষক্রিয়া থেকে সুরক্ষিত রাখার পাশাপাশি ফ্লু জাতীয় রোগের দাওয়াই হিসেবে কাজ করে এই গুড়। এতে আছে রক্ত বিশুদ্ধকারী গুণও। হিমোগ্লোবিন বাড়ায় এবং রক্তশূন্যতা কমায়। পিরিয়ড জাতীয় সমস্যায় এই গুড় পথ্যস্বরূপ। মুড সুইং নিয়ন্ত্রণ করে। অন্ত্রে কোনো বালাই থাকলে নিয়মিত খাওয়া যেতে পারে তালের গুড়। পাকস্থলীও শীতল রাখে এটি।
যেকোনো গুড়েরই ক্ষতিকর কিছু দিক আছে। যেমন নিয়মিত খেলে ওজন বাড়তে পারে, রক্তে চিনির পরিমাণ বাড়ার আশঙ্কা থাকে ইত্যাদি। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে গুড় তৈরি ও সংরক্ষিত হলে তা থেকে জীবাণু সংক্রমণ হতে পারে। সদ্য তৈরি গুড় খেয়ে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার ঘটনাও ঘটে। প্রচন্ড গরম আবহাওয়ায় গুড় খেলে নাক দিয়ে রক্ত পড়ার আশঙ্কা থাকে। আয়ুর্বেদশাস্ত্রে গুড় ও মাছ একসঙ্গে খেতে বারণ করা হয়। এতে আলসারের রোগীদের সমস্যা হতে পারে। এসব অপকারিতা সব ধরনের গুড়ের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। তাল ও গোলপাতার গুড়ের ক্ষেত্রে তো বটেই, আমাদের দেশে বহুল প্রচলিত আখ ও খেজুরের গুড়ের ক্ষেত্রেও।
আখের গুড় শরীরের তাপমাত্রা ঠিক রাখে। আয়রন, ম্যাগনেশিয়াম, জিংক, সেলেনিয়ামসহ বেশ কিছু উপাদান মেলে এ গুড়ে। কফ, গলা খুসখুস করা ইত্যাদি সমস্যা সারায়। এই গুড় এলার্জি নিরোধী। প্রচুর ক্যালরি ও শর্করা থাকায় ডায়রিয়া রোগীকে এ গুড়ের স্যালাইন খাওয়ানো হয়। তবে ওবিসিটি সমস্যায় ভোগা মানুষের জন্য তা না খাওয়াই ভালো।
শীতঋতুতে টাটকা খেজুরের গুড় মেলে। তা নিয়মিত খেলে বদহজম থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। এই গুড় মাইগ্রেন কমাতে সক্ষম। শরীর থেকে ক্ষতিকর টক্সিন বের করে দিতে পারে। এটি খেলে রক্তে গ্লুকোজ কমে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে না। হাড় ও বাতের ব্যথা কমাতে খেজুরের গুড় ওষুধের মতোই কাজ করে। চুল ও ত্বকের উজ্জ্বলতাও বাড়ায়। তবে ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের জন্য এ গুড় খাওয়া একেবারেই নিষেধ।
গুড় খেতে যতই ইচ্ছে করুক, এর উপকারিতা ও অপকারিতার বিষয়টি মাথায় রেখে, নিজের স্বাস্থ্য বুঝে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে খাওয়াই ভালো।

 ফুড ডেস্ক
ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top