skip to Main Content

কুন্তলকাহন I মাইসেলার ম্যাজিক

চুলের বিভিন্ন সমস্যা সামাল দেওয়ার নতুন প্রযুক্তি। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াবিহীন, কিন্তু জরুরি পুষ্টির জোগান দিতে যথেষ্ট

ত্বকের যত্নে মাইসেলার ওয়াটারের গুরুত্ব নিয়ে কমবেশি সবাই জানেন। এটি মূলত ওয়াটারবেসড মেকআপ রিমুভার এবং ফেস ক্লিনজার, যা দিয়ে ত্বক পরিষ্কার করার পর তা আবার আলাদাভাবে ধুয়ে ফেলতে হয় না। ত্বক বিশেষজ্ঞদের মত, ফরাসি মেয়েদের সৌন্দর্যের কিছু রহস্যের মাঝে এটি একটি; কেননা ফরাসি প্রতিষ্ঠান বায়োডার্মা প্রথম এটি বাজারে আনে। বর্তমানে ত্বকের যত্নের গন্ডি পেরিয়ে চুলের যত্নেও এর ব্যবহার বাড়ছে। কিন্তু জেনে রাখা জরুরি, ত্বক আর চুলের যত্নে ব্যবহৃত মাইসেলার ওয়াটারের মধ্যে কিছু পার্থক্য রয়েছে।
কোনো ক্ষতি না করে মৃদুভাবে পরিষ্কার করার দিক বিবেচনায় দুই ধরনের মাইসেলার ওয়াটারের কার্যকারিতা একই বলা চলে। মাইসেলার হলো ক্ষুদ্র পরিষ্কারক উপাদান, যা আলতোভাবে ময়লা ও অতিরিক্ত তেল দূর করে ফেলে; এটি পরে পানি দিয়ে খুব সহজেই ধুয়ে ফেলা যায়। দুই ধরনের মাইসেলার ওয়াটারের মধ্যকার মূল পার্থক্য এর ব্যবহারবিধিতে। ত্বকের যত্নে ব্যবহৃত মাইসেলার পণ্যটি ব্যবহারের পর ধুয়ে নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। কেননা, এ ধরনের পণ্যে মাইসেলগুলো আগে থেকেই সক্রিয় থাকে। তাই কটন বল কিংবা ওয়াইপের সাহায্যে এটি ব্যবহার করা যায়। কিন্তু চুলের যত্নে মাইসেলার শ্যাম্পু ব্যবহার করলে তা পানি দিয়ে ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে। কেননা, পানির সংস্পর্শে শ্যাম্পুর মধ্যে থেকে মাইসেলগুলো সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং চুলে আটকে থাকা ময়লা কিংবা তেল বের করে আনে। মাথার ত্বক পরিষ্কার থেকে শুরু করে এর আর্দ্রতা পুনরুদ্ধার করা পর্যন্ত, চুলের যত্নে এর উপকারিতা অনেক।
ইন ডিপা
মাইসেলার ওয়াটারযুক্ত প্রোডাক্ট চুলকে গভীর থেকে পরিষ্কার করে, যার কার্যকারিতা সাধারণ হেয়ার প্রোডাক্টের তুলনায় বেশি। এ ধরনের প্রোডাক্টে থাকা মাইসেল চুলের ভেতর থেকে অতিরিক্ত তেলজাতীয় পদার্থ যেমন সিবাম, হেয়ার স্প্রে বা জেলের মতো অন্যান্য হেয়ার প্রোডাক্টের অবশিষ্টাংশ বের করে আনে। এতে চুলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয়।
স্ক্যাল্প পিউরিফিকেশন
মাইসেলার ওয়াটার তৈরি হয় বিশুদ্ধ করা পানি থেকে। তাই এটি সাধারণ ট্যাপের পানিতে উপস্থিত খনিজ কিংবা ধাতব উপাদানের বিরুদ্ধে একটা প্রতিরোধব্যবস্থা গড়ে তোলে। এ ছাড়া মাইসেলার ওয়াটারে খুব হালকা সারফেকট্যান্ট ব্যবহার করা হয়, যা স্ক্যাল্পের কোনো ক্ষতি না করেই আলতোভাবে স্ক্যাল্প থেকে তেল সরিয়ে নেয়। এতে মাথায় খুশকির সমস্যা কমে যায়, চুল থাকে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল।
অন সেনসিটিভিটি
মাইসেলার ওয়াটারের সব কটি উপাদানই খুব নমনীয়। এগুলো চুলের ময়লা ছাড়াও স্ক্যাল্পে জমে থাকা হেয়ার প্রোডাক্টের অবশিষ্টাংশ খুব আলতোভাবে অপসারণ করে। তাই যেকোনো ধরনের চুলে এবং স্ক্যাল্পে ব্যবহার করা যায় কোনো ভাবনা ছাড়াই। এমনকি ভঙ্গুর, শুষ্ক, তৈলাক্তই শুধু নয়, ডাই করা চুলেও।
রেগুলার ইউজ
চুলের জন্য কোমল হওয়ায় মাইসেলার শ্যাম্পু সাধারণ শ্যাম্পু কিংবা অন্য যেকোনো ডিটক্সিফাইং ট্রিটমেন্টের দারুণ বিকল্প হিসেবে কাজ করে। সাধারণ শ্যাম্পুতে থাকা কেমিক্যাল উপাদান চুল ও স্ক্যাল্পের বিভিন্ন রকম ক্ষতির কারণ হতে পারে। অন্যদিকে যেকোনো ধরনের ডিটক্সিফাইং ট্রিটমেন্ট চুলের স্বাভাবিক আর্দ্রতা এবং স্ক্যাল্পের প্রাকৃতিক তেলের বড় শত্রু। তাই এগুলোর নিয়মিত ব্যবহার হতে পারে চুলের ক্ষতির কারণ। তবে মাইসেলার শ্যাম্পু নিয়মিত ব্যবহার করা যাবে। এটি কোনো ক্ষতি নয়, বরং চুলের স্বাস্থ্যের পক্ষেই কাজ করবে।
হাইড্রেটিং অ্যান্ড ভলিউমনাইজিং
মাইসেলার শ্যাম্পু মাথার ত্বককে অতিরিক্ত শুষ্ক করা ছাড়াই পরিষ্কার করে তোলে। তাই তৈলাক্ত স্ক্যাল্পের অধিকারী, যাদের আরও বেশি ভলিউম দরকার, তাদের জন্য এটি ভালো বিকল্প হিসেবে কাজে দেয় বলে মত ডার্মাটোলজিস্টদের। গ্লিসারিন মাইসেলার ওয়াটারের একটি মূল উপাদান, যা চুল ও মাথার ত্বককে আরও হাইড্রেটেড করতে সাহায্য করে।
হেলদি হেয়ার
যেহেতু মাইসেলার ওয়াটার চুলের অতিরিক্ত তৈলাক্ত ভাব, ময়লা এবং চুলে আটকে থাকা ধুলা-ময়লা কিংবা হেয়ারস্টাইলিং প্রোডাক্ট চুল থেকে খুব আলতোভাবে বের করে নিয়ে আসে, সে জন্য এটি চুলের ফলিকল বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, পাশাপাশি চুলের বৃদ্ধির জন্য একটি অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করে। ফলে চুল দ্রুত লম্বা হয় এবং বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে চুলের স্বাস্থ্যের কোনো ধরনের অবনতি ঘটতে দেয় না।
মাইসেলার ওয়াটারে তৈরি হেয়ার প্রোডাক্টের বেশ কিছু ধরন রয়েছে। এগুলোর মধ্যে শ্যাম্পু, ক্লিনজিং ওয়াটার এবং হেয়ার রিফ্রেশনার অন্যতম। নিউট্রোজেনার পিএইচ ব্যালেন্সড হেলদি স্ক্যাল্প শ্যাম্পু প্যারাবেন ও সালফেট ফ্রি, যা চুলে কালার করা অবস্থায়ও ব্যবহার করা যায়। এটি সেনসিটিভ স্ক্যাল্পের জন্য সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। অন্যদিকে শুষ্ক স্ক্যাল্প আর রুক্ষ চুলের জন্য বেছে নেওয়া যেতে পারে ট্রেসেমির প্রো পিওর মাইসেলার ময়শ্চার শ্যাম্পু। এর হালকা ফর্মুলা চুলের হারিয়ে যাওয়া উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে। হারবাল এসেন্সের ব্লু জিনজার অ্যান্ড মাইসেলার ওয়াটার শ্যাম্পু চুলের গোড়া থেকে পুষ্টি জোগায় এবং চুলে ভলিউম আনতে সহায়তা করে। প্যানটিন প্রো ভি মাইসেলার শ্যাম্পু ক্লিনজিং ওয়াটার ব্যবহার করা যেতে পারে শুষ্ক বা তৈলাক্ত যেকোনো ধরনের চুলে। অ্যাডভান্সড রিন্সলেস রিফ্রেশ মাইসেলার হেয়ার অ্যান্ড স্ক্যাল্প রিফ্রেশনার কোনো ধরনের পানির ব্যবহার ছাড়াই চুল পরিষ্কার করবে। ভ্রমণের সময় এমন রিফ্রেশনার খুবই কার্যকর। এতে থাকা অর্গানিক ম্যান্ডারিন, লেমন ও জেসমিনের নির্যাস চুলে বাড়তি সুগন্ধি ছড়াবে।

 শিরীন অন্যা
মডেল: মিলি
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: তানভীর খান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top