skip to Main Content

ইন্টারন্যাশনাল ফ্যাশন I শালীনতা সর্বত্র

শুধু মধ্যপ্রাচ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বর্তমানে এ বাজারের বিস্তার বিশ্বজুড়ে। মুসলিমদের তো বটেই, মাতাচ্ছে নন-মুসলিম ফ্যাশনিস্তাদেরও

‘মডেস্ট ফ্যাশন’ টার্মটির সূত্রপাত ২০১৭ ও ২০১৮ সালের দিকে। টেনজিস শেষ হওয়ার আগে যা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্য ছাড়িয়ে পশ্চিমে একটি স্বীকৃত ট্রেন্ডে পরিণত হয়। এতে অবদান রয়েছে মুসলিম ফ্যাশন ইনফ্লুয়েন্সারদের। যাদের বরাতে বর্তমানে মডেস্ট ক্লোদিং কেবল মুসলিম নয়, পশ্চিমা নন-মুসলিম নারীদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।
আগে প্রায়শই মিডিয়ায় মুসলিম নারীদের মাথা থেকে পা পর্যন্ত ঢাকা কালো রঙের বোরকায় উপস্থাপন করার প্রবণতা ছিল। যার কারণে মুসলিম ফ্যাশন সম্পর্কে মানুষের মনে একধরনের বৈষম্য সৃষ্টি হয়। অনেকে ভুলে যেতে শুরু করেন, মুসলিম বিশ্ব শুধু মধ্যপ্রাচ্যে সীমাবদ্ধ নয়। তবে গত কয়েক বছরে সেই চিত্রে বেশ পরিবর্তন এসেছে। ১ দশমিক ৮ বিলিয়ন মুসলমান দক্ষিণ, দক্ষিণ-পূর্ব, মধ্য এশিয়া থেকে আফ্রিকা, ইউরোপ, আমেরিকা পর্যন্ত বিশ্বের অনেক অংশে ছড়িয়ে রয়েছে। পোশাক পরিধানের ক্ষেত্রে বিভিন্ন মুসলিম দেশের সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটেও আছে ভিন্নতা। সেই সঙ্গে শালীনতারও বিভিন্ন ব্যাখ্যা রয়েছে। যেমন কোথাও পরা হচ্ছে ঢিলেঢালা আবায়া, কোথাও কাফতান, কোথাওবা খিমার। মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় মাথা ঢাকতে হিজাবের ব্যবহার হয়। অন্যদিকে নন-আরব আফ্রিকান মুসলিম নারীদের মাথায় টারবান বা গেলে পরতে দেখা যায় তাদের সংস্কৃতি মেনে।
সমীক্ষা বলছে, মডেস্ট ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রির বর্তমান ২৭৭ বিলিয়ন ডলারের বাজার আগামী দুই বছরে ৩১১ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়াবে। এ বাজার যত বড় হবে, নারীদের জন্য বিকল্প বেছে নেওয়ার সুযোগটাও তত বাড়বে। কর্মক্ষেত্রে মুসলিম নারীদের অংশগ্রহণ আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। সেই সঙ্গে বেড়ে চলেছে তাদের ফ্যাশনেবল মডেস্ট পোশাক কেনাকাটার প্রবণতা, যা কিছুটা হলেও এর বাজার বৃদ্ধির পেছনে ভূমিকা রাখছে। মডেস্ট ফ্যাশন নিয়ে আগ্রহী হয়ে উঠছে জনপ্রিয় সব আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড। ইউনিক্লো ও ব্যানানা যৌথভাবে হিজাব ডিজাইন করছে। অ্যাকটিভওয়্যার ব্র্যান্ডগুলো যেমন স্পিডো, নাইকি ও অ্যাডিডাসও মডেস্ট ফ্যাশন কালেকশনের বাজারে ঢুকে পড়েছে। ২০১৭ সালে নাইকি একটি স্পোর্টস হিজাব ডিজাইন তৈরিতে এমন কাঁচামাল ব্যবহার করা হয়েছিল, যা দ্রুত ঘাম শুষে নেবে এবং যার মধ্য দিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে শ্বাস নেওয়া যাবে। পিছিয়ে নেই লাক্সারি ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলোও। বারবেরি বা ডলশে অ্যান্ড গ্যাবানার মতো প্রথম সারির ডিজাইনার হাউসগুলোও মুসলিম নারীদের জন্য পোশাকের বিশেষ কালেকশন বের করে। উপসাগরীয় দেশ যেমন সংযুক্ত আরব আমিরাত ও কাতারে গত বছরের শেষ দিকে শ্যানেল, ডিওর, ভার্জিল আবলো, আরমানির মতো লেবেলগুলো বড় বড় ফ্যাশন ইভেন্টে বিনিয়োগ করেছে। লাক্সারি ডিজাইনার হাউস ভ্যালেন্টিনোকে কাতারের দোহায় কতুর আবায়ার কালেকশন শোকেস করতে দেখা গেছে। লাক্সারি ব্র্যান্ডগুলো রমজান ও ঈদুল আজহার সময় এ ধরনের পোশাককে বেশি গুরুত্ব দেয়। এভাবে তারা নিয়মিত টক্কর দিয়ে যাচ্ছে সেখানকার নামি লোকাল লেবেলগুলোর সঙ্গে।
মডেস্ট ফ্যাশনের বাজার যে কতটা ব্যাপক, তার উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হতে পারে মালয়েশিয়া। ইন্ডাস্ট্রির গতিবিধি পর্যালোচনাকারী প্রতিষ্ঠান দিনারস্ট্যান্ডার্ড’স গ্লোবাল ইসলামিক ইকোনমিক রিপোর্ট ২০২০/২১-এ এমন চিত্রই উঠে এসেছে। নিত্যনতুন ট্রেন্ড আর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ঢালাও মডেস্ট ফ্যাশন বাজারের দিকে স্থানীয় ব্র্যান্ডগুলোর নজর কেমন, তার বিবেচনায় এগিয়ে আছে দেশটি। কুয়ালালামপুর ফ্যাশন উইকসহ নানা ইভেন্টে যে ইসলামিক ফ্যাশন শোকেসগুলো হয়, তার বড় ধরনের প্রভাব আছে মডেস্ট ফ্যাশন ওয়ার্ল্ডে। তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে, মডেস্ট ফ্যাশন বাজারে আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডগুলোর সবচেয়ে আকাঙ্ক্ষিত নাম মালয়েশিয়া নয়, বরং এর এক প্রতিবেশী দেশ। জনসংখ্যার দিক দিয়ে বিশ্বে ইন্দোনেশিয়ার অবস্থান চতুর্থ। আর ২৭৩ মিলিয়নের এ বৃহৎ জনগোষ্ঠীর প্রায় ৮৭ শতাংশই মুসলিম। ইন্দোনেশিয়ার নারীদের বড় এক অংশেরই মডেস্ট ফ্যাশনের দিকে বাড়তি ঝোঁক থাকায় দেশটি এ ক্ষেত্রের অন্যতম কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। দিনারস্ট্যান্ডার্ড’স-এর মতে, ইরান, তুরস্ক, সৌদি আরব এবং পাকিস্তানের পরে ইন্দোনেশিয়া হলো বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম মডেস্ট ফ্যাশন বাজার, যার মূল্য ১৬ বিলিয়ন ডলার। তবে আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডগুলোর চেয়ে এখানে এগিয়ে আছে লোকাল ব্র্যান্ডগুলো। এ জন্য অবশ্য দেশটির আর্থসামাজিক অবস্থার ভূমিকা বেশি। কাতার বা আরব আমিরাতের মতো ধনী দেশ নয় ইন্দোনেশিয়া। মধ্যম আয়ের দেশ। ২৭৭ বিলিয়ন ডলারের এ বিশাল আন্তর্জাতিক বাজারের অংশ হতে চাইলে মধ্যপ্রাচ্যের বাইরেও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এমন দ্রুত বর্ধনশীল বাজারের দিকে ব্র্যান্ডগুলোর মনোযোগ দিতেই হবে এবং সে জন্য তাদের নতুন ব্যবসায়িক কৌশল গ্রহণ করতে হবে।
পশ্চিমা দেশগুলোতেও মডেস্ট ফ্যাশনের জনপ্রিয়তা জ্যামিতিক হারে বেড়ে চলেছে। আমেরিকা ও ইউরোপে ইন্ডি মডেস্ট ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলো যেমন ভেলা স্কার্ফ, মডানিসা, লুয়েলা, ইলেকট্রিক বাজার, নায়লা কালেকশন, জানাল্ডো, আকাসিয়া স্টুডিও, দ্য অ্যাটেলিয়ের হিজাব, এসোস—ধীরে ধীরে বেশ বড় একটা বাজার দখল করে ফেলছে।
২০১৬ সালে ফ্রান্সে বিকিনির মডেস্ট ভার্সন বুরকিনি নিষিদ্ধ হওয়ার পরপরই পশ্চিমে হুহু করে এর বিক্রি বেড়ে গিয়েছিল। মজার ব্যাপার হচ্ছে, ক্রেতাদের ৯০ শতাংই ছিল নন-মুসলিম নারী। এরপর থেকে সুইমওয়্যার ইন্ডাস্ট্রিতে বুরকিনির আধিপত্য বেড়ে যায়। মাদামে বিকে, শেল্লিন সুইমওয়্যার, লানুক সুইমওয়্যার, লিরা সুইম, সাব্রিনক্যাট সুইমওয়্যার, সুইজাবির মতো ব্র্যান্ডের উত্থান ঘটে; যেখানে শুধু স্টাইলিশ বুরকিনি পাওয়া যায়। নন-মুসলিম কাস্টমারদের কাছে এই সুইমওয়্যারের জনপ্রিয়তার অন্যতম প্রধান কারণ স্বাস্থ্যসচেতনতা। সোজা কথায় স্কিন ক্যানসার প্রতিরোধ করা।
মুসলিম ফ্যাশনের এই উত্থান নতুন প্রজন্মের ডিজাইনারদের জন্যও ভিন্নধর্মী সুযোগ তৈরি করছে। বর্তমানে মডেস্ট ডিজাইনারদের ৭০ শতাংশই ৪০ বছরের কম বয়সী মুসলিম নারী। ক্রেতাদের ভেতরও এগিয়ে আছেন জেন যি ও মিলেনিয়ালরা। বৈচিত্র্যময় অভিজ্ঞতার জন্য অনেক নন-মুসলিম ফ্যাশন-সচেতন নারী স্টাইলিংয়ের জন্য মডেস্ট ক্লোদিং বেছে নিচ্ছেন। সুতরাং মডেস্ট ফ্যাশন মার্কেটের বৃদ্ধিতে কেবল মুসলিম নারীদের নিরঙ্কুশ ভূমিকা নেই। তাই ডিজাইনাররা শুধু একটি কমিউনিটির কথা চিন্তা করেই কালেকশন আনছেন না। নন-মুসলিম নারীদের কথাও ভাবতে হচ্ছে।

 ফাহমিদা শিকদার
ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top