skip to Main Content

বিশেষ ফিচার I ম্যাচবক্স ম্যাজিক

আর ম্যাজিশিয়ান নাল্লা বিজয়। যার মন্ত্রে মুগ্ধ গোটা বিশ্বের মানুষ। বাকিটা জানাচ্ছেন সারাহ দীনা

শাড়ি। শব্দটি শুনলেই চোখে ভেসে ওঠে বারো হাত কাপড়। প্রিয় শাড়ি ভাঁজ করে তুলে রাখা হয় আলমিরায়। সারি করে তাকে অথবা হ্যাঙ্গারে। কিন্তু চিরচেনা শাড়ি রূপ বদলে হাজির হয়েছে ভারতের তেলেঙ্গানানিবাসী নাল্লা বিজয়ের হাত ধরে। তেলেঙ্গানার রাজানা সারসিলা জেলার অধিবাসী এই তাঁতি বিশেষ এক শাড়ি তৈরি করেছেন, যা পুরে রাখা যাবে ম্যাচবক্সে। এই শাড়ির সুবাদে তেলেঙ্গানার ‘টেক্সটাইল হাব’ হিসেবে পরিচিত রাজানা সারসিলা সুপরিচিত হয়ে উঠছে বিশ্বজুড়ে।
টানা ছয় দিন হাতে বুনে তৈরি হয় সম্পূর্ণ একটি শাড়ি। প্রাকৃতিক রেশমি সুতা থেকে। সম্পূর্ণ দৈর্ঘ্য ৫ দশমিক ৫ মিটার। এটি রঙিন করে তুলতে নাল্লা বিজয় ব্যবহার করে ভেজিটেবল ডাই। শাড়িটির বিশেষ দিক হচ্ছে, এটিকে নিত্যদিনের ব্যবহারের শাড়ির মতোই ব্যবহার করা যায়।
ম্যাচবক্স শাড়ির কিন্তু ইতিহাস রয়েছে। এটি প্রথম তৈরি করা হয়েছিল ২০১৫ সালে। ভারত সরকারের অতিথি হয়ে আসা মিশেল ওবামাকে সেই সূক্ষ্ম বুননের শাড়িটি উপহার হিসেবে দেওয়া হয়েছিল।
বিজয় নাল্লার বাবা নাল্লা পারানধামুলু খাঁটি রেশমি চিকন সুতায় হাতে টানা তাঁতে প্রথম হালকা ধরনের শাড়ি বুনতে শুরু করেন। উদ্দেশ্য সংসার অভাবমুক্ত রাখা। ১৫-২০ দিন সময় দরকার হতো একটি সম্পূর্ণ শাড়ি তৈরি করতে। শাড়ি রাঙিয়ে তোলা হতো শতভাগ প্রাকৃতিক রঙে।
ম্যাচবক্স শাড়িতে নানা ধরনের নকশা তৈরি করা থাকে। একটি সুতার সঙ্গে অন্য সুতার বন্ধনে তৈরি হয় বিচিত্র নকশা। শাড়ি তৈরিতে খরচ হয় ১২ হাজার রুপি। ম্যাচবক্স শাড়ির ওজন হালকা হওয়ায় পরিধানকারীর জন্য স্বস্তিকর। ভারতীয় উপমহাদেশের পোশাক সাধারণত খানিকটা ভারী হয়ে থাকে। প্রধানত বিয়েতে। বিশেষ দিনে ভারী বুননের পোশাক অনেকের কাছে আরামদায়ক মনে হয় না। বিজয়ের তৈরি হালকা শাড়িটি এ ক্ষেত্রে বেশ কাজের। জমকালো অনুষ্ঠান হোক কিংবা নিত্যদিনের কর্মক্ষেত্র, পোশাকের ওজন বাধা হয়ে দাঁড়াবে না। শাড়িপ্রেমীদের জন্যও সুবিধাজনক হবে শাড়ি পরে সাবলীলভাবে ঘুরে বেড়ানো।
বিজয়ের মতে, বিশেষ এই বুননটি মেশিনের সহায়তা নিয়েও করা যাবে। সে ক্ষেত্রে সময় ও খরচ—দুই-ই হবে কম। তিন দিন সময় দিয়ে তৈরি করা যাবে এই শাড়ি আর খরচটাও কমে আসবে। সাকল্যে আট হাজার রুপি খরচ হতে পারে। তবে সে ক্ষেত্রে মানে ভিন্নতা থাকবে। হাতে টানা তাঁত আর মেশিনে তৈরি এই দুই শাড়ির বুনন কোনোভাবেই এক হবে না। বেশ খানিকটা পার্থক্য থাকবে। সে ক্ষেত্রে ম্যাচবক্স এই শাড়ির বিশেষত্ব আর সৌন্দর্য দুটোই হারাবে।
ম্যাচবক্স শাড়ির মূল্য শুরু হয় দশ হাজার টাকা থেকে। এমনটাই জানা যায় বিজয় নাল্লার দেওয়া তথ্যে। কিন্তু এই মূল্য পরিবর্তন হতে পারে ব্যবহৃত উপাদানের ওপর নির্ভর করে। একবার এক ক্রেতার অনুরোধে রুপালি জরি ব্যবহার করে শাড়ি তৈরি করেছিলেন বিজয়। তখনই বুঝতে পেরেছিলেন দামের তারতম্য। বিজয়ের তথ্য অনুযায়ী ম্যাচবক্স শাড়ির ফ্যাব্রিক ব্যবহার করে অন্য পোশাকও তৈরি করা যেতে পারে। যেমন ওড়না।
নাল্লা বিজয়ের এই আবিষ্কার তেলেঙ্গানার মন্ত্রীদেরও মুগ্ধ করেছে। গেল বছরের জানুয়ারিতে হায়দরাবাদে শাড়ি প্রদর্শনের পর। তেলেঙ্গানার আইটি ইনস্টিটিউট বিস্তারিত তথ্যসহ তাদের সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেলে এ বিষয়ে বিবৃতি দেয়। বিজয় তার এই আবিষ্কারের অর্থনৈতিক দিক সবার কাছে তুলে ধরেন সেই প্রদর্শনীতে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত মন্ত্রীরা প্রতিভাবান তাঁতি বিজয় নাল্লাকে চিকন সুতার মিহি বুননে তৈরি এই শাড়ির জন্য আর্থিক সহায়তার ব্যবস্থা করবেন বলে আশ্বাসও দেন।
ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top