skip to Main Content

ফিচার I চরিত্রের প্রয়োজনে

ডিরেক্টরের কণ্ঠ থেকে ভেসে আসা ‘অ্যাকশন’-এর মধ্য দিয়ে শুরু আর ‘কাট’ শব্দ দিয়ে শেষ হয়ে যায় না অভিনেতার অভিনয়। নিজেকে উপযুক্ত করে তুলতে চরিত্রের প্রস্তুতি বেশ দীর্ঘ সময়, দীর্ঘ কাঠখড় পুড়িয়ে নিতে হয় তাদের। সেই আবেশ থেকে বের হতেও পেতে হয় বেগ

থিয়েটারের বিগ কিংবা সেলফোনের মিনি—সিনেমা যেখানে যে স্ক্রিনেই দেখি না কেন, কিছু কিছু অভিনেতা-অভিনেত্রীর কিছু বিশেষ চরিত্র আমাদের ঘোরগ্রস্ত করে ফেলে। তাদের চিরচেনা মুখ ও অভিব্যক্তি একেবারেই অচেনা হয়ে ধরা দেয়। অবাক হয়ে হয়তো ভাবতে বসি, কীভাবে এমন অভিনয় করলেন তিনি? কীভাবে চরিত্রটির ভেতর এত স্বতঃস্ফূর্তভাবে ঢুকে পড়লেন? হলিউডের পাঁচ তারকার এমন লড়াইয়ের গল্প জানা যাক…

লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও

লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও

সেই জগদ্বিখ্যাত ‘টাইটানিক’ (১৯৯৭) থেকে শুরু করে দীর্ঘকাল অস্কার যেন একটা দীর্ঘশ্বাসের নাম হয়ে উঠেছিল হলিউড তারকা লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিওর কাছে। দুনিয়াজুড়ে তার অগুনতি অনুরাগী ছিলেন অপেক্ষায়, এই বুঝি প্রিয় অভিনেতার হাতে উঠতে যাচ্ছে স্বপ্নের পদক। অপেক্ষার সুফল আসে ২০১৫ সালে। মেক্সিকান ফিল্মমেকার আলেহান্দ্রো ইনারিতুর ‘দ্য রেভেন্যান্ট’ সিনেমার কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয়ের সুবাদে। ব্যক্তিজীবনে চল্লিশোর্ধ্ব লিওনার্দো একজন ভেজিটেরিয়ান হওয়া সত্ত্বেও এই চরিত্রের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে তুলতে তাকে খেতে হয়েছে বাইসনের কাঁচা লিভার। শিখতে হয়েছে মাস্কেট বা গাদা-বন্দুক চালানো এবং ক্ষতস্থান সেলাইয়ের কৌশল। চরিত্রটি নেটিভ আমেরিকান ভাষায় কথা বলে, তাই লিওনার্দোকে শিখতে হয়েছে সেই ভাষা। শুধু তা-ই নয়, এই সিনেমার শুটিং ন্যাচারাল লোকেশনে হয়েছিল বলে তাকে দিনের পর দিন কাজ করতে হয়েছে একেবারেই কনকনে ঠান্ডা আবহাওয়ায়। ঝাঁপ দিতে হয়েছে জমাটবদ্ধ নদীতে। পরতে হয়েছে ভারী বিয়ারস্কিন বা ভালুকের চামড়া।
মার্গো রবি

মার্গো রবি

অস্ট্রেলিয়ান অভিনেত্রী মার্গো রবি বেশ কয়েক বছর ধরেই হলিউডে দেখাচ্ছেন দাপট। ২০১৯ সালে ফোর্বস ম্যাগাজিনের বিবেচনায় বিশ্বের সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক পাওয়া অভিনেতা-অভিনেত্রীর তালিকায়ও করে নিয়েছেন জায়গা। বর্তমানে ৩১ বছর বয়সী এই রূপসীর একই সঙ্গে রয়েছে ব্লকবাস্টার ও ইনডিপেনডেন্ট—উভয় ধরনের ফিল্ম দুনিয়ায় সমান পদচারণ। তবে ডিসি ইউনিভার্সের তুমুল জনপ্রিয় সুপারহিরো ফিল্ম সিরিজ ‘সুইসাইড স্কোয়াড’-এ তার দাপটে থরো থরো কেঁপেছে সিনেমার পর্দা! এই সিরিজের প্রথম সিনেমা ‘সুইসাইড স্কোয়াড’-এ (২০১৬) সুপার ভিলেন হার্লি কুইনের ভূমিকায় মার্গো ছিলেন এমনই দুর্দান্ত, চরিত্রটির নাম এলে আপনাআপনিই তার ছবি ভেসে ওঠে অনুরাগীদের চোখে। পর্দার হার্লি কুইন হতে গিয়ে বেশ ভুগতে হয়েছে মার্গোকে। চরিত্রটিকে স্বতঃস্ফূর্ত করে তুলতে শুটিংয়ের প্রস্তুতি হিসেবে তাকে পানির নিচে দীর্ঘক্ষণ দম ধরে রাখার কৌশল শিখতে হয়েছে। সে জন্য নিতে হয়েছে ফ্রিডাইভার লেসন। শুটিংয়ের কালে মাত্র দু-এক মিনিট দম ধরে রাখতে পারলেই যথেষ্ট ছিল, সেখানে চরিত্রটির প্রতি ভীষণ নিমগ্ন হয়ে পড়া মার্গো শিখে নিয়েছিলেন ৫ মিনিট পর্যন্ত নিশ্বাস আটকে রাখার পাঠ!

ড্যানিয়েল র‌্যাডক্লিফ

ড্যানিয়েল র‌্যাডক্লিফ

‘হ্যারি পটার’খ্যাত খুদে অভিনেতা ড্যানিয়েল র‌্যাডক্লিফ যে বড় হয়ে গেছেন, প্রাপ্তবয়স্কের চরিত্রে অভিনয়ে সক্ষম—সেটি প্রমাণ করতে তাকে বেশ পরিশ্রম করতে হয়েছে। হ্যারি পটারের ইমেজ ভাঙার দারুণ একটা সুযোগ পান তিনি গ্রেগ ম্যাকলিনের ‘জঙ্গল’ সিনেমায়। সত্য ঘটনা অবলম্বনে বানানো এই সিনেমার কেন্দ্রীয় চরিত্রে দারুণ জাদু দেখিয়েছেন ড্যানিয়েল। একঝলকে বোঝা মুশকিল, এটিই সেই ছোট্ট হ্যারি কি না! আমাজন রেইনফরেস্টে হারিয়ে যাওয়া একদল বন্ধুর গল্প নিয়ে ‘জঙ্গল’। ইসরায়েলি অভিযাত্রী ইয়োসি গিন্সবার্গের জীবনে ঘটেছিল এ ঘটনা। তার চরিত্রেই দেখা গেছে ড্যানিয়েলকে। চরিত্রের প্রয়োজনে প্রায় ১৫ কেজি ওজন কমিয়েছিলেন তিনি। বাস্তবের ইয়োসি যে ধরনের ভোগান্তির ভেতর দিয়ে গেছেন, অভিনয় করতে গিয়ে যতটা সম্ভব সেসবের ভেতর নিজেকে ঠেলে দিয়েছেন বর্তমানে ৩২ বছর বয়সী এই ব্রিটিশ অভিনেতা। তাই পুরো প্রোডাকশনকালে একেবারেই কঠোর ও কঠিন ডায়েট অনুসরণ করেছেন। এমনকি শুটের আগে টানা দুই দিন থেকেছেন একদম উপোস!
শাইলিন উডলি

শাইলিন উডলি

হলিউডের উঠতি তারকাদের মধ্যে অনেকের নজর কেড়েছেন ৩০ বছর বয়সী আমেরিকান অভিনেত্রী শাইলিন উডলি। মাত্র ৪ বছর বয়সে মডেলিং দিয়ে বিনোদন দুনিয়ায় যাত্রা শুরু তার। এরপর পেশাদার অভিনেত্রী হিসেবে কিছু টেলিভিশন প্রোডাকশনে করেছেন কাজ। বড় ধরনের চমক তিনি দিয়েছেন ২০১৮ সালে মুক্তি পাওয়া ‘অ্যাড্রিফট’ সিনেমায় কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করে। আমেরিকান এই সারভাইভাল ড্রামা ফিল্মটি প্রশান্ত মহাসাগরে হারিকেনের শিকার হয়ে ভাঙা নৌকায় জীবনযুদ্ধ চালানো এক যুগলকে ঘিরে। সিনেমাটিতে শাইলিন অভিনীত চরিত্রটির ৯০ ভাগ শুটিং প্রক্রিয়ায়ই হয়েছে সমুদ্রে; সৈকত থেকে ২ ঘণ্টার দূরত্বে। কোনো কোনো দিন শুটিং শুরু হয়েছে ভোর চারটায়; চলেছে টানা ১২ ঘণ্টা। দুর্ভাগ্যক্রমে পরিচালক ও ক্যামেরাম্যান ছাড়া শুটিং টিমের প্রত্যেককেই ভুগতে হয়েছে বাজে রকমের সিসিকনেস বা সমুদ্রপীড়ায়। শাইলিনও ভুগেছেন, তবু হাল ছাড়েননি। যেন সাক্ষাৎ মৃত্যুর সামনে দাঁড়িয়ে, একটু একটু করে মানিয়ে নিয়েছেন নিজেকে। তার ফলও পেয়েছেন। বক্স অফিসে হিট হয়েছে ‘অ্যাড্রিফট’। তারকার তকমা পেয়েছেন শাইলিন।
রবার্ট প্যাটিনসন

রবার্ট প্যাটিনসন

‘টোয়াইলাইট’খ্যাত ব্রিটিশ তারকা রবার্ট প্যাটিনসনকে তার অনুরাগীদের অনেকেই আদর করে ‘চকোলেট বয়’ বলে ডাকেন। এমন সিল পড়ে যাওয়া তকমা থেকে বের হওয়ার যারপরনাই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন ৩৫ বছর বয়সী এই অভিনেতা। এর একটা বড় প্রমাণ—আমেরিকান ক্রাইম থ্রিলার ফিল্ম ‘গুড টাইম’। এখানে দুর্ধর্ষ ডাকাতের রূপে দেখা মেলে তার। পুলিশের কাছ থেকে পালিয়ে বেড়ানো সেই ডাকাতের চরিত্রটি বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে আরাম-আয়েশ সব জলাঞ্জলি দিয়েছিলেন প্যাটিনসন। ‘চরিত্রটি যে বেজমেন্ট অ্যাপার্টমেন্টে থাকে, আমি নিজেও আক্ষরিক অর্থেই সে রকম অ্যাপার্টমেন্টে জীবনযাপন শুরু করেছিলাম। দুই মাসের সেই দিনগুলোতে একবারও জানালার পর্দা সরাইনি, বিছানার চাদর পাল্টাইনি, একই পোশাকে ঘুমিয়েছি। আর স্রেফ ক্যানের খাবার খেয়ে দিন কাটিয়েছি বলে এখন আমাকে অসুখে ভুগতে হচ্ছে,’ বলেন তিনি। এমন ত্যাগ-তিতিক্ষার সুফল পেয়েছেন এই অভিনেতা। বড় পর্দার চিরচেনা ‘কিউট ভ্যাম্পায়ার’ প্যাটিনসনকে এই সিনেমার ডাকাত রূপে দেখে তার একান্ত অনুরাগীদের পক্ষেও এক লহমায় চেনা মুশকিল হয়ে যায়!
এডি রেডমেইন

এডি রেডমেইন

বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানী স্টিভেন হকিংয়ের চরিত্রে ‘দ্য থিওরি অব এভরিথিং’ (২০১৪) সিনেমায় ব্রিটিশ অভিনেতা এডি রেডমেইনের অভিনয় অনেককেই বিস্ময়বিমুগ্ধ করেছে। মোটর নিউরন ডিজিজে ভোগা ওই বিজ্ঞানীর বায়োপিকে অভিনয় তাকে এনে দিয়েছে অস্কারও। তবে ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানোর আগে নিজেকে বেশ ভালোভাবে ঝালিয়ে নিয়েছেন এডি। মাসের পর মাস তিনি ব্যয় করেছেন হকিংয়ের জীবনের ওপর গভীর মনোযোগে পড়াশোনা ও গবেষণা করে এবং বিরল ওই রোগে ভোগা মানুষদের সঙ্গে সময় কাটিয়ে। তারা কীভাবে হাঁটেন, কীভাবে কথা বলেন, তাদের চলন ও বলনশক্তি ফুরিয়ে গেলে কীভাবে অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন—এসব ধরে ধরে শিখে নিয়েছেন এই অভিনেতা। তাই শারীরিকভাবে সুস্থ হলেও দীর্ঘ একটা সময় এডিকে মানসিকভাবে কাটাতে হয়েছে মোটর নিউরন ডিজিজে আক্রান্ত রোগীর জীবন।

 লাইফস্টাইল ডেস্ক
ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top