skip to Main Content

ফিচার I ভোজন বিরতি

বিপদ দেখলেই মাংস খাওয়ায় ফুলস্টপ বসিয়ে দিতে হবে। সাধারণ কিছু লক্ষণই বলে দেবে কখন থামা চাই। একটু রয়েসয়ে মাংস খেতে হয় বৈকি

কোরবানি ঈদে মাংস খাওয়ার ধুম। অবশ্য সবার জন্য মাংসের এই মহাভোজ স্বাস্থ্যসম্মত নয়। আবার পৃথিবীতে এমন কোনো খাবার নেই, যেটা সবার স্বাস্থ্যের সঙ্গে মানানসই। শরীরের নানান প্রকার বালাই থাকলে কিংবা রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কম হলে মাংস খাওয়ার পর অসুস্থতা বোধ হতে পারে। তা ছাড়া কোরবানির ঈদে প্রতি বেলাতেই মাংসের পদ খাওয়ার কারণে সুস্থ মানুষও কাহিল হয়ে পড়তে পারেন। তাই জানতে হবে, কখন মাংস খাওয়ার বেলায় থামতে হবে। বেশ কিছু উপসর্গ আছে, যা শরীরে দেখা দিলেও পাতে মাংস তোলা থেকে বিরত থাকতে হবে। তা নিয়েই এই আলাপ।
পেটে মাংস ঠিকভাবে পরিপাক না হলে বমি বমি ভাব হতে পারে। তা ছাড়া বদহজম ও গ্যাস্ট্রিকের যন্ত্রণাও হতে পারে। এসব অসুস্থতা নিয়ে ঈদ কিংবা ঈদ-পরবর্তী নানান কাজ করা কষ্টসাধ্য। উৎসবের আনন্দও ফিকে হয়ে যেতে পারে। ফলে এসব উপসর্গ দেখা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মাংস খাওয়ায় বিরতি দিলে সুস্থ থাকা সম্ভব।
কয়েক বেলা মাংস খাওয়ার পর পেট ভারী লাগতে পারে। মনে হবে পেটটা ফুলে আছে। ফাঁপাভাবের সঙ্গে অস্বস্তি বোধ হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে থাকতে পারে ব্যথাও। ঠিকমতো হজম না হলে মাংসজনিত কিছু সমস্যায় অন্ত্র আক্রান্ত হয়। এর জন্য দায়ী ই-কোলাই ও স্যালমোনেলা ব্যাকটেরিয়া। মাংস হজম না হলে ধীরে ধীরে শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতাও কমে যেতে পারে। তাই উল্লিখিত উপসর্গ দেখা দিলে মাংস খাওয়ায় বিরতি দেওয়া ভালো।
বেশি বড় মাপের মাংসের টুকরা অতিরিক্ত খেলেও সমস্যা হতে পারে। কারণ, তা মাত্র এক টুকরা হলেও সেখানে অনেক মাংস থাকে। সাধারণ একজন মানুষের মূলত দৈনিক প্রায় ৫৭ গ্রাম প্রোটিন দরকার। ছোট মাপের দু-তিন টুকরা মাংস থেকেই তা মেলে। তিন বেলায় মাংসের বেশ কয়েকটি বড় বড় টুকরা খেয়ে ফেললে সুস্থ শরীরেও একটা নির্দিষ্ট সময় পর অস্বস্তি হতে পারে।
উদ্ভিদ থেকে পাওয়া খাদ্যের তুলনায় প্রাণীর মাংস পরিপাক করা মানুষের জন্য কিছুটা কষ্টসাধ্য। ফলে গিলে ফেলার আগে ভালোভাবে চিবিয়ে নরম করে নিলে পাকস্থলী তা সহজে হজম করতে পারে। মাংস কম চিবিয়ে খেলে পেট ভারী মনে হতে পারে। এমনকি গ্যাস আর ব্যথাও হতে পারে এ কারণে।
হুট করে কোষ্ঠকাঠিন্যের যন্ত্রণায় ভুগলে মাংস খাওয়া বন্ধ করে দিতে হবে। সাধারণত অন্ত্রে ইনফেকশন বা প্রদাহ থাকলে কোষ্ঠকাঠিন্য হয়। তবে তা মাত্র ২০ শতাংশ ক্ষেত্রে। ৮০ শতাংশ কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য খাবারের সমস্যাই দায়ী। লাল মাংসে থাকে ফ্যাট ও আয়রন। এ দুটি শরীরে কোষ্ঠকাঠিন্য বাঁধাতে পারে। কেননা চর্বি হজম হতে বেশ সময় নেয়। ফলে সমস্যায় পড়লেই মাংস খাওয়া বন্ধ করতে হবে, যাতে অন্ত্রে ফ্যাট না পৌঁছায়।
কখনো কখনো মাংস খাওয়ার কারণে চোখের নিচে কালি পড়ে যেতে পারে। এমনকি মাত্র এক দিন খেলেও তা হতে পারে। ঠিকমতো পরিপাক না হলে পরের দিনই চোখের নিচে কালি পড়ার শঙ্কা থাকে। তখন মাংস খাওয়ায় বিরতি দেওয়াই হবে সঠিক সিদ্ধান্ত। ঠিকমতো পরিপাক না হলে নিশ্বাসে দুর্গন্ধ হতে পারে। তা পাচক অ্যানজাইমের মাধ্যমে শরীরে ও নিশ্বাসে দুর্গন্ধ তৈরি করে। আরও একটি বিষয় ঘটে, তা হলো ক্লান্ত লাগা। মাংস খাওয়ার পর অনেক সময় আলসেমি লাগতে পারে। এটাও পরিপাকের সমস্যা। মাংসের মতো জটিল খাবার হজমে শরীরকে অনেক বেশি শক্তি ব্যয় করতে হয়। ফলে অন্যান্য কাজের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তির জোগান মেলে না। তাই আলসেমি লাগে। এমন হলে মাংস খাওয়া থামানো ভালো।
৫০ কেজির একজন মানুষের প্রায় ৫০ গ্রাম প্রোটিন লাগে দৈনিক। অবশ্য কিডনিতে সমস্যা থাকলে লাগবে এর অর্ধেক। আবার ঋতুস্রাবকালে এর দ্বিগুণ প্রয়োজন হয়। সর্বোচ্চ ১০ গ্রাম প্রোটিন খাওয়া যেতে পারে দৈনিক। ওজন ৫০ কেজির কম হলে বেশি প্রোটিন খাওয়া ভালো। তবে কোনো মানুষের জন্যই দৈনিক ৭০ গ্রাম এবং সপ্তাহে ৫০০ গ্রামের বেশি প্রোটিন গ্রহণ ঠিক হবে না। এসব হিসাব মিলিয়েই পুরো কোরবানির ঈদের আগের ও পরের দিনগুলোতে মাংস খাওয়া উত্তম। জেনে রাখা ভালো, প্রতি ১০০ গ্রাম গরুর মাংসে প্রোটিন থাকে প্রায় ২৬ গ্রাম। তাই প্রতিদিনের আমিষের চাহিদা পূরণ হতে পারে ২৭০ গ্রাম মাংসে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে শুধু গোমাংস খেয়ে শরীরে প্রোটিনের জোগান দিতে হবে। বিভিন্ন উৎস থেকে আমিষ নেওয়া হবে স্বাস্থ্যসম্মত।
কোরবানির মাংস খাওয়ার পর পেট ফাঁপা ও কোষ্ঠকাঠিন্যের সাধারণ সমস্যায় কিছু ঘরোয়া ভেষজের মাধ্যমে রেহাই মিলতে পারে। পেটের গ্যাস দূর করার সহজ সমাধান হলো আদা। মাংস খাওয়ার পর পেটে ফাঁপা ভাব হলে তা চিবিয়ে খাওয়া যেতে পারে। কাঁচা আদা খেতে ভালো না লাগলে চায়ের সঙ্গে পান করা যেতে পারে। গ্যাসের সঙ্গে পেটে ব্যথা থাকলে সামান্য গরম পানিতে কিছুটা লেবুর রস মিশিয়ে খেলে আরাম মিলবে। কাঁচা রসুনও আদার মতো কাজ করে। তা ছাড়া খাওয়ার মাঝখানে পানি পানের অভ্যাস বাদ দেওয়া চাই। এতে খাবার হজমে সমস্যা হয়। বদহজম হলে পানিতে সমপরিমাণ ভিনেগার ও মধু মিশিয়ে পান করলে স্বস্তি মিলতে পারে। আদা ও লেবুর রসে লবণ মিশিয়ে খেলেও আরাম হবে। এতে পানি মেশানো যাবে না। কোষ্ঠকাঠিন্য এড়াতে কোরবানির ঈদের সময়টায় মাংসের পাশাপাশি কাঁচা স্যালাড ও সবজি খাওয়া যেতে পারে। নিয়মিত ইসবগুল খেলেও ভালো থাকা সম্ভব। তবে অবস্থা বেগতিক হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই হবে সঠিক সিদ্ধান্ত।

i ফুড ডেস্ক
ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top