skip to Main Content

কুন্তলকাহন I তাপ তারতম্যে

পাল্টে যেতে পারে চুল সোজা করা যন্ত্রের সক্রিয়তা। সংগ্রহের সময় খেয়াল রাখতে হবে চুলের ধরনও। তবেই না বেছে নেওয়া যাবে সেরা সেটিং অপশন

লো, মিডিয়াম, হাই—স্ট্রেইটনারের এমন হিট সেটিং অপশন এখন বড্ড সেকেলে। এখনকার আধুনিক যন্ত্রগুলোতে থাকে ঝাঁ-চকচকে ডিজিটাল টেম্পারেচার ডিসপ্লে। যার মাধ্যমে স্ট্রেইটনারের তাপ নিয়ন্ত্রণ করা যায় সহজে, বেছে নেওয়া যায় চুল সোজা করার জন্য সেরা হিট সেটিং। এতে করে চুল কম ক্ষতিগ্রস্ত হয়, বজায় থাকে স্বাভাবিক সৌন্দর্য। এ ছাড়া চুলের ধরনটাও বুঝে নেওয়া প্রয়োজন। পাতলা থেকে ঘন টেক্সচারের ভিন্নতায় পাল্টাতে হবে হিট সেটিং। এর যথার্থতায় নির্ভর করবে চুল কতটা সুন্দরভাবে সোজা হবে।
স্ট্রেইট কাট
বিশেষজ্ঞদের মত একই এ ব্যাপারে। সটান সোজা চুলে লোয়ার সেটিংয়ে আয়রন করে নিতে হবে চুল। এ ক্ষেত্রে দ্য গোল্ডেন রেঞ্জ ২৫০ থেকে ৩৭৫ ডিগ্রি ফারেনহাইটের মধ্যে। সেলসিয়াসে ১২০ থেকে ১৯০ ডিগ্রি অব্দি। সেটাও নির্ভর করবে চুলের ধরনের ওপর। সোজা, পাতলা চুলে কম হিট সেটিংয়েই কাজ সেরে নেওয়া যাবে। কিন্তু চুল সোজা হলেও যদি ঘন ও মোটা টেক্সচারের হয়, তাহলে সেটিং হাই হলেই বেশি সুবিধা। তবে অতিরিক্ত তাপের একদমই প্রয়োজন নেই। কারণ, সোজা করার জন্য, বরং কিউটিকল মসৃণ করতে স্ট্রেইটনার ব্যবহার করা হয় এ ধরনের চুলে। ফলে ইতিউতি উড়তে থাকা বিরক্তিকর ফ্লাইওয়ে বা ছোট ছোট চুল বশে থাকবে। সোজা চুল স্ট্রেইট করার সময় একদম লোয়ার লেভেল সেটিং থেকে শুরু করা ভালো। তারপর প্রয়োজনে বাড়ানো যেতে পারে তাপের মাত্রা। কোনো কোনো হেয়ারস্টাইলিস্টের মত আবার খানিকটা ভিন্ন। ৩২০ ডিগ্রি ফারেনহাইট অর্থাৎ ১৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে স্ট্রেইটনার ব্যবহারে বারণ করেন তারা। কারণ, তাপ যত কম হয়, স্ট্রেইটনার তত বেশি টানতে হয় চুলে। ফলাফল, ক্ষতিটা আরও বেশি হয়। সোজা চুলে স্ট্রেইটনার ব্যবহারের আগে খেয়াল রাখতে হবে যেন পুরোপুরি শুকনো থাকে। প্রাকৃতিক বাতাসে শুকিয়ে নিলেই ভালো। এ ধরনের চুল সাধারণত একটু নেতিয়ে পড়াই থাকে। সে ক্ষেত্রে বাড়তি ভলিউম যোগে লাইট ভলিউম স্প্রে ব্যবহার করা যেতে পারে। আর হিট প্রটেক্ট্যান্ট তো মাস্ট। স্প্রে অথবা লাইটওয়েট ক্রিম বেসডগুলোই এ ধরনের চুলের জন্য বেশি উপযোগী। যেকোনো ধরনের ম্যাটেরিয়ালে তৈরি প্লেটের স্ট্রেইটনার এই চুলের জন্য উপযোগী। টাইটেনিয়াম আয়রন, সিরামিক, টার্মালাইন—চলবে সবই।
ওয়েভি ওয়ার্নিং
প্রাকৃতিকভাবে ঢেউ খেলানো চুল দেখতে দারুণ। তবে মাঝেমধ্যে লুক পরিবর্তনে স্ট্রেইটনার ব্যবহার করা যেতেই পারে। ফ্রিজ ফ্রি, স্লিক, এলিগেন্ট হেয়ারস্টাইলের জন্য। এ ধরনের চুলের জন্য পারফেক্ট টেম্পারেচার ৩২০ থেকে ৩৭৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট। সেলসিয়াসে যা ১৬০ থেকে ১৯০ ডিগ্রি অব্দি। এ ক্ষেত্রে চুল যদি মোটা হয়, ভার্জিন অথবা কেমিক্যালি ট্রিটেড হয়ে থাকে, সে ক্ষেত্রে ন্যূনতম ৩৫০ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা ১৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার সেটিং ব্যবহার করতে হবে। যাদের চুল ঢেউখেলানো তবে পাতলা, তাদেরকে লাইটওয়েট হিট প্রটেক্ট্যান্ট স্প্রে ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে থাকেন স্টাইলিস্টরা। তবে চুল যদি ঘন ও মোটা হয়, সে ক্ষেত্রে এমোলিয়েন্ট ফর্মুলার হিট প্রটেক্ট্যান্টগুলো বেশি কার্যকর। সে ক্ষেত্রে সেরাম আর বাম জাতীয়গুলো ব্যবহার করা যাবে অনায়াসে। পরিষ্কার ভেজা চুলে এগুলো পর্যাপ্ত পরিমাণে মেখে প্রাকৃতিক বাতাসে চুল শুকিয়ে নিতে হবে। ড্রায়ারও ব্যবহার করা যায়, তবে এড়িয়ে চললে অহেতুক হিট ড্যামেজ থেকে বেঁচে যাবে চুল। ওয়েভি চুল সহজে সুন্দরভাবে স্ট্রেইট করতে চাইলে একটা টেকনিক ট্রাই করা যায়। ঘন দাঁতের হিট রেজিস্ট্যান্ট চিরুনি প্রয়োজন পড়বে সে ক্ষেত্রে। চুলে আয়রনের টান দেওয়ার সময় চিরুনি দিয়েও টেনে নিতে হবে। ছোট ছোট সেকশনে ভাগ করে নিলে কাজটা আরও সহজ হবে। সমান তাপ দেওয়া সিরামিক অথবা টার্মালাইন আয়রন প্লেটের স্ট্রেইটনার ওয়েভি চুলের জন্য বেশি উপযোগী।
কার্ল কন্ট্রোল
কার্লি চুল সোজা করার জন্য স্ট্রেইটনারের হিট তুলনামূলকভাবে বেশি প্রয়োজন হয়। বিশেষজ্ঞদের মত, ৩২৫ থেকে ৪১০ ডিগ্রি ফারেনহাইট টেম্পারেচারের ফ্ল্যাট আয়রন এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে কার্যকর। অর্থাৎ ১৬০ থেকে ২১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস অব্দি। চুল কোঁকড়া স্ট্রেইট করার জন্য সঠিক তাপমাত্রা বের করার ব্যাপারে একটু কৌশলী হওয়া প্রয়োজন। বেশি গরম স্ট্রেইটনার ব্যবহারে হিট ড্যামেজের ফলে চুলের স্বাভাবিক কার্ল প্যাটার্ন নষ্ট হয়ে যেতে পারে। টেক্সচার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েও স্বাভাবিক সৌন্দর্য হারাতে পারে। আবার কম তাপে স্ট্রেইটনার ব্যবহার করলেও বিপদ। স্লিকি, স্মুদ, স্ট্রেইট হবে না। তাই তাপমাত্রা নির্ধারণের ব্যাপারটা নির্ভর করবে চুলের টেক্সচার, ঘনত্ব আর কতটা ক্ষতিগ্রস্ত তার ওপর। স্ট্রেইট কিংবা ওয়েভি হেয়ারের চেয়ে এ ধরনের চুল সোজা করতে হ্যাপা একটু বেশি। এ ক্ষেত্রে আগে ব্লো ড্রাই করে নেওয়ার পরামর্শ দেন হেয়ারস্টাইলিস্টরা। এতে করে প্রি স্ট্রেচড হয়ে যায় চুল। তারপরে ফ্ল্যাট আয়রন দিয়ে তুলনামূলকভাবে কম টানলেও স্ট্রেইট হয়ে যায়। পরিষ্কার টাওয়েল ড্রাই চুলে আর্দ্রতা আটকে রাখতে পারে এমন হিট প্রটেক্ট্যান্ট স্প্রে বা সেরাম মেখে নিতে হবে প্রথমে। তারপর প্যাডেল ব্রাশের সাহায্যে আঁচড়ে জট ছাড়িয়ে নিয়ে ব্লো ড্রাই করতে হবে। আলাদা আলাদা সেকশনে ভাগ করে প্যাডেল ব্রাশ দিয়ে আঁচড়াতে আঁচড়াতে স্ট্রেইটনার টানতে হবে চুলে। আরেকটা ব্যাপার খেয়াল রাখা প্রয়োজন, কার্লি চুল স্ট্রেইট করার আগে অবশ্যই পরিষ্কার করে নিতে হবে। করতে হবে কন্ডিশনও। কারণ, কার্লি চুলে প্রডাক্টের অবশিষ্টাংশ বেশি জমে। তাই সোজা করার আগে চুলে জমে থাকা বিল্ডআপ পরিষ্কার করে নিতে হবে। এতে চুল সুন্দরভাবে সোজা হবে, ক্ষতির আশঙ্কাও কমবে। টাইটেনিয়াম আয়রনে তৈরি প্লেট দ্রুত গরম হয়। উচ্চ মাত্রার তাপও ছড়ায়। তাই এতে তৈরি স্ট্রেইটনারগুলো কার্লি চুলের জন্য বেশি উপযোগী।
কনভার্ট কয়েলি
অসম্ভব কোঁকড়া এ ধরনের চুলে স্বভাবতই স্ট্রেইটনারের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার সেটিং প্রয়োজন হয়। ৩৭৫ থেকে ৪৫০ ডিগ্রি ফারেনহাইট অব্দি। সেলসিয়াস স্কেলে যার মাত্রা ১৬০ থেকে ২৩২ ডিগ্রি পর্যন্ত। কিন্তু মাথায় রাখতে হবে হিট ড্যামেজের ব্যাপারটা। অনেক সময় তো স্বাভাবিক কার্ল প্যাটার্নই নষ্ট হয়ে যায় অতিরিক্ত তাপে। তাই স্ট্রেইটনিংয়ের আগে ব্লো ড্রাই মাস্ট। কারণ, স্বাভাবিক বাতাসে চুল শুকালে কোনো পরিবর্তনই আসবে না কয়েলি ধরনের চুলে। ব্লো ড্রাই করার সময় ন্যাচারাল বোর ব্রিসল ব্রাশ ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে থাকেন বিশেষজ্ঞরা। বোর ব্রিসলের ব্রাশ স্ক্যাল্পের প্রাকৃতিক তেল ছাড়াও সুরক্ষার জন্য ব্যবহৃত ময়শ্চারাইজিং প্রডাক্ট আর হিট প্রটেক্ট্যান্ট পুরো চুলে ছড়িয়ে দিতে কার্যকর। তারপর স্টেইটনার দিয়ে গোড়া থেকে ডগা অব্দি টেনে নিতে হবে চুল। স্ট্রেইট করার পর রাতে ঘুমানোর আগে সিল্ক অথবা স্যাটিন স্কার্ফ চুলে জড়িয়ে নিলে সোজা ভাবটা একটু বেশি সময় বজায় থাকবে। ফ্রিজিনেসও দূর হবে। কয়েলি চুলের স্টাইলিংয়েও টাইটেনিয়াম প্লেটের স্ট্রেইটনার বেশি কার্যকর।
তবে স্ট্রেইটনার ব্যবহারের ক্ষেত্রে সাবধান। হিতে আবার বিপরীত যেন না হয়। চুল একবার তার স্বাভাবিক সৌন্দর্য হারালে পুনরুদ্ধার কিন্তু কম হ্যাপার নয়।

i বিউটি ডেস্ক
ছবি: ক্যানভাস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top