skip to Main Content

টেকসহি I ‘স্কিন’টেলেকচুয়াল

কারণ, ‘নলেজ ইজ পাওয়ার’। সৌন্দর্যচর্চার ক্ষেত্রেও। এ দৌড়ে সবচেয়ে এগিয়ে জেন জি-রা

টিভির পর্দায় কিংবা ম্যাগাজিনের পাতায় নিখুঁত ত্বকের সব মডেল দেখিয়ে কিংবা রঙচঙে মোড়কের সৌন্দর্যপণ্যের গায়ে গোটা গোটা অক্ষরে লেখা সব প্রতিশ্রুতিবাণী পড়িয়ে মন ভোলানো মুশকিল এখনকার সৌন্দর্যসচেতনদের। সায়েন্স স্যাভি তো বটেই, স্বশিক্ষিতও। জানার আগ্রহও অগাধ। তাই মোড়কের পেছনে লেখা বিদেশি ভাষার ইনগ্রেডিয়েন্ট লিস্ট দেখে দমে যাওয়ার নয় একদমই; বরং প্রডাক্টে ব্যবহৃত পণ্যতালিকা আর সেগুলোর বিজ্ঞানসম্মত কার্যকারিতা জেনে নেওয়ার পাশাপাশি ব্র্যান্ড ভ্যালু এবং কালচার নিয়েও তারা সমানভাবে সচেতন। স্কিনটেলেকচুয়াল বলে কথা!
ত্বকসংক্রান্ত নানা বিষয় তো বটেই, পরিচর্যার বিভিন্ন উপাদান, সেগুলোর কার্যকারিতা এবং তার পেছনের বিজ্ঞান সম্পর্কে যাদের বিস্তর জানাশোনা, তাদেরকে আখ্যায়িত করা হয় স্কিনটেলেকচুয়াল হিসেবে। সৌন্দর্যচর্চার নানা উপাদানের খুঁটিনাটি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল, কোনটা ত্বকের কী উপকারে আসে, তা-ও তাদের নখদর্পণে। নিত্যনতুন উদ্ভাবনের নিয়মিত খবর রাখলেও বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত কার্যকর উপাদানেই তাদের বিশ্বাস। তাই বলে সব নতুন পণ্য কিনে নেন—ব্যাপারটা একদমই তেমন নয়; বরং কেনার আগে সচেতনভাবে পর্যবেক্ষণ করে নেন পণ্যের নানা দিক। হাইপার নলেজেবল শপার্স হিসেবে পরিচিত স্কিনটেলেকচুয়ালরা প্রভাব ফেলছেন সৌন্দর্যবিশ্বে। কোনো ব্যাপারেই এতটুকু ছাড় দিতে নারাজ এই কনজিউমারদের দিলখুশ করতে স্কিনকেয়ার ব্র্র্যান্ডগুলোও তাই তাদের স্ট্র্যাটেজি পাল্টে ফেলছে প্রতিনিয়ত।
শুরুটা হয়েছিল মিলেনিয়ালদের দিয়ে। সৌন্দর্যপণ্যের মনমাতানো মোড়ক আর তাতে লেখা ‘পারফেক্টিং’, কিংবা ‘রিফাইনিং’-এর মতো আকর্ষণীয় শব্দের উপস্থিতি, এমনকি ‘ডার্মাটোলজিস্ট অ্যাপ্রুভড’-এর মতো স্টেটমেন্টেও মন ভোলানো যাচ্ছিল না তাদের; বরং এসব শব্দের বৈজ্ঞানিক উৎস উদঘাটনেই বেশি মনোযোগী হয়ে ওঠেন মিলেনিয়ালরা। কোনো পণ্যের ব্যবহারে ম্যাজিকের মতো পাল্টে যাবে ত্বক, এ মন্ত্রে অবিশ্বাসী হয়ে ওঠেন ক্রমেই। কারণ, ফেশিয়াল ক্রিম মেখে দিনের শুরু আর রাতে বাড়ি ফিরে ক্লিনজার দিকে মুখ পরিষ্কারেই সীমাবদ্ধ ছিল না মিলেনিয়ালদের বিউটি রুটিন; বরং মাল্টি স্টেপে অভ্যস্ত এ বয়সী সৌন্দর্যসচেতনদের সামনে অপশন ছিল মেলা। এসেন্স, সেরাম, বুস্টার, কনসেনট্রেট—তালিকাটা কিন্তু বেশ দীর্ঘ। সৌন্দর্যপণ্যের আধুনিকায়নের ফলে প্রয়োগকৌশলেও আসে পরিবর্তন। হাইটেক প্যাকেজিং চালু হয় পণ্যের সর্বোচ্চ গুণগত মান রক্ষায়। স্কিনকেয়ার ব্লগারদের চাহিদা বাড়তে শুরু করে বিশ্বজুড়ে; যা পেশা হিসেবে জনপ্রিয়তা পায় প্রজন্মের সৌন্দর্যসচেতনদের মাঝে। সব মিলেনিয়ালের হাত ধরেই। তবে বর্তমানে স্কিনটেলেকচুয়াল জেনারেশনের খেতাব জেন জি-দের দখলে। ভিন্ন ভিন্ন জরিপ বলছে, এই প্রজন্মের সৌন্দর্যসচেতনেরা ত্বকচর্চার পণ্য ব্যবহারের ক্ষেত্রে অন্যদের তুলনায় অনেক এগিয়ে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক ক্রিয়েটিভ এজেন্সি এবং কনসালট্যান্সি ফার্ম ‘দ্য পুল এজেন্সি’র বরাতে জানা গেছে, গড়ে ৬০ শতাংশ জেন জি ১৪ বছর পেরোনোর আগেই তাদের প্রথম বিউটি প্রডাক্ট কিনে ফেলেন। মিলেনিয়ালরা এ ক্ষেত্রে স্কোর বোর্ডের অনেক নিচের দিকে। গড়ে মাত্র ৩৯ শতাংশ। একই ধরনের প্রতিষ্ঠান কম্পোজড ক্রিয়েটিভও বলছে একই কথা। মিলেনিয়ালদের থেকে আরও কম বয়সে জেন জি-রা ত্বকে ক্লিনজার আর ময়শ্চারাইজার মাখতে শুরু করেন। প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগেই। জেন জি-দের বলা হয় বিউটি গিক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের এ যুগে অনলাইনের বিউটি টিউটরিয়াল আর পণ্যের খুঁটিনাটি তথ্য যখন হাতের মুঠোয়, স্কিনটেলেকচুয়াল হতে ঠেকায় কে! জেন জি-রা মূলত স্বচ্ছতায় বিশ্বাসী। তাই যেসব ব্র্যান্ডের লেবেলে পণ্যের উপাদান এবং তার কার্যকারিতা সুস্পষ্ট, সেগুলোই তাদের পছন্দের শীর্ষে। নির্ভরযোগ্য সূত্রে, পর্যালোচনার ভিত্তিতে তারা পণ্য কেনার সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। শুধু কি তাই, ব্র্যান্ড ভ্যালু এবং কালচার নিয়েও সমান সচেতন জেন জি-রা। পছন্দের ব্র্যান্ডগুলোর পরিবেশগত, রাজনৈতিক আর সামাজিক মূল্যবোধও তাদের কাছে সমান গুরুত্বপূর্ণ। প্রডাক্ট প্যাকেজিংয়ে লেখা নট-টেস্টেড অন অ্যানিমেলস, ভেগান বিউটি, ক্রুয়েলটি ফ্রি, ইনক্লুসিভ বিউটি, সাসটেইনেবল প্যাকেজিংয়ের মতো শব্দগুলো পণ্য কেনায় তাদের বেশি আগ্রহী করে তোলে। মূল্যবোধকে প্রতিফলিত করে এমন ব্র্যান্ডগুলোর প্রতিই তাদের ঝোঁক সবচেয়ে বেশি।
স্কিনটেলেকচুয়াল হয়ে ওঠার জন্য যে ডাইহার্ড স্কিনকেয়ার ফ্যানাটিক হতে হবে, তা মোটেও নয়; বরং স্কিনটেলেকচুয়ালিজম হচ্ছে ত্বক সম্পর্কে জানা, সমস্যা থাকলে তা বুঝে সে অনুযায়ী সঠিক উপাদানে তৈরি পণ্য ব্যবহারের চর্চা।
স্কিনটেকচুয়ালিজমের চর্চা কিন্তু মোটেও কঠিন কিছু নয়। অনলাইনের কল্যাণে এখন পুরো ব্যাপারটা বেশ সহজ। এ-সংক্রান্ত ওয়েবসাইট আর ব্লগ রয়েছে মেলা। বিউটি ই-কমার্সগুলোতেও নজরে পড়বে অনেক রিভিউ ফোরাম। আর কমেন্ট সেকশন তো থাকছেই। সেগুলোর মাধ্যমে ভোক্তারা তাদের কাঙ্ক্ষিত পণ্যের পর্যালোচনা করতে পারবেন সহজেই। জানতে পারবেন খুঁটিনাটি তথ্য। নিয়মিত চর্চায় হয়ে উঠবেন স্কিনটেলেকচুয়াল।
‘বিউটি বাই দ্য গিকস’ এমনই একটি ওয়েবসাইট। যেখানে একদল বিজ্ঞানী সৌন্দর্যের বিজ্ঞানসম্মত পর্যালোচনা করছেন প্রতিনিয়ত। সেই সঙ্গে জনপ্রিয় সব কসমেটিকস আর স্কিন কেয়ার প্রডাক্টের বিস্তারিত রিভিউ দিয়ে থাকেন। স্কিনটেলেকচুয়াল ডটকম ওয়েবসাইটেও মিলবে দারুণ কাজের সব ব্লগ পোস্ট। জানা যাবে ত্বকের পিএইচ লেভেল বুঝে কীভাবে সৌন্দর্যপণ্য লেয়ার করতে হয়। কিংবা ত্বকের যত্নে আজেলেক অ্যাসিড কতটা গুরুত্বপূর্ণ, এমন সব তথ্য। এ ছাড়া ভোগ স্কিনকেয়ার অ্যালফাবেট থেকে মিলবে ত্বকচর্চার ১০১ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান এবং তাদের উপকারিতার বিস্তারিত বর্ণনা। যারা কমিউনিটি মাইন্ডেড অ্যাপ্রোচ অর্থাৎ একটি বড় গোষ্ঠীর মতামত পর্যালোচনা করে তবেই সিদ্ধান্তে আসতে আগ্রহী, এদের জন্য রয়েছে রেডডিটের স্কিনকেয়ার অ্যাডিকশন ফোরাম। ত্বক পরিচর্যা নিয়ে আগ্রহী লাখখানেক মানুষ মিলবে এই এক প্ল্যাটফর্মেই। ইন্টারঅ্যাকটিভ এ অনলাইন প্ল্যাটফর্মে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা অন্যের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়ার সুযোগ থাকছে। সেই সঙ্গে নানান টিপ আর ট্রিকসও থাকবে ওয়েবসাইটটিতে।
মজার ব্যাপার হচ্ছে, স্কিনটেলেকচুয়ালিজমের চর্চার ফলে শুধু ভোক্তারাই নন, উপকৃত হচ্ছে খোদ ব্র্যান্ডগুলোও। কারণ, পণ্যের এবং এতে ব্যবহৃত উপাদানগুলোর কার্যকারিতা বোঝাতে হ্যাপা কমে যাচ্ছে। কমে যাচ্ছে বাড়তি বাজারজাতকরণ ব্যয়ও। ফলে পণ্যের বাড়তি দামের লাগামও টেনে ধরা যাচ্ছে। প্রত্যক্ষভাবে লাভবান হচ্ছেন ক্রেতারাও। সময়টাই যে এখন স্কিনটেলেকচুয়ালিজমের।

i জাহেরা শিরীন
মডেল: মিলি
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: হাদী উদ্দীন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top