skip to Main Content

টেকসহি I ফাস্ট ফ্যাশনের ফাঁদে?

তবেই সেরেছে। সস্তায় বস্তা ভরা হবে বটে, কিন্তু এর ঝুঁকিপূর্ণ পরিণতি এড়ানো মুশকিল। তবে খোদ খরিদ্দারদের কাছেই রয়েছে পরিত্রাণের পন্থা। কী সেগুলো?

বিকোয় সস্তায়, মেলেও সহজে। একদম অন ট্রেন্ড একেকটি পিস। ফ্যাশনে চলতি ধারার চর্চা যাদের অভ্যাস, তাদের পক্ষে ফাস্ট ফ্যাশনের প্রলোভন এড়ানো মুশকিল। অন্যদিকে সাসটেইনেবল ফ্যাশনের প্র্যাকটিস যে খুব সহজসাধ্য নয়, তা মানেন সংশ্লিষ্টরাও। সাধারণের ধরাছোঁয়ার বাইরে। হোক তা দামের ক্ষেত্রে কিংবা প্রাপ্যতার ভিত্তিতে। তাই ফ্যাশনেবলদের ঝোঁক এখনো ফাস্ট ফ্যাশনেই। কিন্তু এর প্রভাব সামাজিক ও পরিবেশগত। পুরোটাই নেতিবাচক। সুলভে বিকোয়; কারণ, সস্তায় তৈরি হয় এসব ফ্যাশন পিস। তাই হাই ভলিউমে উৎপাদিত হয়। সে ক্ষেত্রে মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েই যায়। শ্রমের সঠিক মূল্যায়নটাও সচরাচর হয় না এ ক্ষেত্রে। আর অধিক উৎপাদনের ফলে পরিবেশের ওপর প্রতিকূল প্রভাব তো পড়েই। বিশ্বজুড়ে পানিদূষণের প্রধানতম কারণগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় স্থান ফাস্ট ফ্যাশনের দখলে। এ ছাড়া বায়ুদূষণের জন্য দায়ী এটি। জরিপ বলছে, আন্তর্জাতিক ফ্লাইট আর শিপিংয়ের চেয়ে বেশি কার্বন ডাই-অক্সাইড উৎপন্ন হয় ফাস্ট ফ্যাশন প্রোডাকশনের ফলে।
এ থেকে রক্ষার উপায়? পুরো টেক্সটাইল ম্যানুফ্যাকচারিং ইন্ডাস্ট্রি নিয়ন্ত্রণ করা না গেলেও ছোট পরিসরে ব্যক্তিগত উদ্যোগে কিছুটা হলেও পরিস্থিতিতে পরিবর্তন আনা সম্ভব বলে ধারণা বিশেষজ্ঞদের। ফাস্ট ফ্যাশনে অভ্যস্ত হলেও এমন অনেক উপায় আছে, যা মেনে চললে পোশাক বেশি দিন টিকবে। সস্তা হলেও। তবে নির্দিষ্ট সময় পর পোশাক পরার অনুপযোগী হবেই। সে ক্ষেত্রে আস্তাকুঁড়ে জমা না করে অন্যভাবে কী করে এগুলো ব্যবহার করা যায়, সেটা মাথায় রাখতে হবে। ব্যক্তিগত এসব সচেতনতায় ফাস্ট ফ্যাশনের ক্ষতি কিছুটা হলেও পোষানো সম্ভব বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের।
দীর্ঘস্থায়িত্ব ধরে রাখতে
i সস্তা কাপড়ের মান বরাবরই দামি কাপড়ের তুলনায় ত্রুটিপূর্ণ হয়ে থাকে। মজবুতও কম। তাই এ ধরনের কাপড় ধোয়ার ক্ষেত্রে ওয়াশিং মেশিন ব্যবহার করলে সবচেয়ে জেন্টল সাইকেল বেছে নিতে হবে। এতে ফ্যাব্রিকের টেক্সচারের ক্ষতি কম হবে। সেই সঙ্গে স্ট্র্যাপ ছিঁড়ে যাওয়া, কাপড়ের সেলাই ছুটে যাওয়ার মতো সমস্যায়ও পড়তে হবে না। টিকে থাকবে দীর্ঘদিন।
i এ ধরনের কাপড় ওয়াশিং মেশিনের বদলে হাতে ধোয়া গেলে সবচেয়ে ভালো। বিশেষ করে সুইমওয়্যার, স্পোর্টসওয়্যার, নিটওয়্যার, র ডেনিমের মতো পোশাকগুলো ওয়াশিং মেশিনে ধুলে দ্রুত নষ্ট হয়ে যাওয়ার শঙ্কা থাকে। কারণ, মেশিনে সব ধরনের ম্যাটেরিয়ালের কাপড় একসঙ্গে রগড়ে নেওয়া হয়। কিন্তু হাতে ধুয়ে নিলে সব কাপড় আলাদাভাবে পরিষ্কার করে নেওয়া যায়। সে ক্ষেত্রে ঠান্ডা পানি ব্যবহার করা শ্রেয়। গরম পানি কাপড়ের রং নষ্ট করে দেয়, কাপড় কুঁচকে ফেলে। আর মেশিনে কাপড় ধুলে পানির যে অপচয় হয়, তা-ও এ ক্ষেত্রে রোধ করা যায়। সেই সঙ্গে দূষণ থেকেও রক্ষা করা সম্ভব।
i এ ধরনের কাপড় ধোয়ার পর ড্রায়ারে না শুকিয়ে খোলা জায়গায় ছড়িয়ে শুকিয়ে নিতে হবে। কারণ, ড্রায়ার ব্যবহারে এনার্জির অপচয় হয়। কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমন বাড়ে। প্রাকৃতিক বাতাসে, রোদে কাপড় শুকিয়ে নিলে ক্ষতি কম। পোশাকের আকৃতিও থাকে ঠিকঠাক।
i কাপড় যদি ওয়াশিং মেশিনেই ধুতে হয়, সে ক্ষেত্রে কিছু ব্যাপার মাথায় রাখা প্রয়োজন। প্রথমে ফ্যাব্রিক ভেদে কাপড় আলাদা করে নিতে হবে। যেমন জিনস বা তোয়ালের মতো ফ্যাব্রিকের সঙ্গে নেট, মসলিন, নিটের মতো কোমল কাপড়গুলো দেওয়া যাবে না। একদম জেন্টল সেটিংয়ে, কোমল ডিটারজেন্ট দিয়ে কাপড় ধুয়ে নিতে হবে। ড্রায়ার ব্যবহারের সময় কুল সেটিং মাস্ট। আর কাপড় ধোয়ার আগে উল্টে নিতে হবে। এতে কাপড়ের রং নষ্ট হবে না, প্রিন্টেরও ক্ষতি হবে কম।
i সবচেয়ে ভালো হয় যদি কাপড় কম ধোয়া যায়। তাই বলে সপ্তাহের পর সপ্তাহ না ধুয়ে থাকার কথা বলা হচ্ছে না! অন্তত তিনবার পরার পর একটা পোশাক ধুয়ে নিলে ভালো। এতে কাপড়ের ফাইবার ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। পোশাক টিকে থাকবে দীর্ঘদিন। এ ছাড়া পানির অপচয়ও কমবে। স্পট ক্লিনও করে নেওয়া যায় কাপড়। শুধু দাগ লেগে যাওয়া জায়গাটুকু পরিষ্কার করে নিয়ে খোলা জায়গায় কাপড় ছড়িয়ে দিলেই আবার পরার উপযোগী হয়ে উঠবে।
i কাপড় সঠিকভাবে সংরক্ষণের ওপরও নির্ভর করে এর দীর্ঘস্থায়িত্ব। ঠান্ডা, সূর্যালোক থেকে দূরে, অপেক্ষাকৃত অন্ধকারাচ্ছন্ন স্থানে পোশাক রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। তবে তা যেন স্যাঁতস্যাঁতে না হয়। বাতাস চলাচল করতে পারলেও যেন ধুলাবালি মুক্ত হয়। পোশাকভেদে ভাঁজ করে অথবা হ্যাঙ্গারে ঝুলিয়ে তবেই সংরক্ষণ করতে হবে। এতে পোশাকের ফ্যাব্রিক ওভারস্ট্রেচ হবে না; টিকে থাকবে দীর্ঘদিন।
i পোশাক সামান্য ছিঁড়ে গেলে কিংবা ফুটো হয়ে গেলে ফেলে না দিয়ে বরং সারিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করে নিতে হবে। সেলাই করে নেওয়া যায় এ ক্ষেত্রে। সেলাইকর্ম যদি নিজেরই জানা থাকে, তাহলে সবচেয়ে ভালো।

তবে সব পোশাকেরই একটা নির্দিষ্ট লাইফ সাইকেল থাকে। ফাস্ট ফ্যাশনের পোশাকগুলো পরার অনুপযোগী হয়ে উঠলে ফেলে না দিয়ে তা আরও বেশ কিছুদিন ব্যবহার করা সম্ভব। কীভাবে?
i বাইরে পরে যাওয়ার পোশাক পুরোনো হয়ে গেছে? বাসায় তো পরে নেওয়াই যায়, হোক তা সামান্য দাগযুক্ত কিংবা রং জ্বলে যাওয়া।
i ওয়্যারড্রোবের অবাঞ্ছিত এসব পোশাক পরিবার বা বন্ধুদের দেখানো যায়। তাদের পছন্দ হয়েও যেতে পারে। এ ছাড়া দুস্থদের মাঝেও বিলিয়ে দেওয়া যায়।
i পরনের প্রি-লাভড পোশাকগুলো দিয়ে সেলের আয়োজন করা যেতে পরে। এতে করে পরিহিত পোশাকগুলো ব্যবহার আরও কিছুদিন বাড়বে। সেই সঙ্গে বাড়তি কিছু টাকাও আয় হবে।
i পুরোনো পোশাকগুলো রিপারপাস করে নেওয়া যায়। তৈরি করা যায় রিইউজেবল রুমাল, বাজারের ব্যাগ, কাঁথা, কয়েন পার্স, কুশন কাভার, রাগ ওয়াল হ্যাগিংসহ আরও অনেক কিছু। শুধু সৃজনশীলতা কাজে লাগাতে হবে।
এভাবে ফাস্ট ফ্যাশনের যে চিরাচরিত ধারা, অর্থাৎ কম দামে পোশাক কিনে অল্প কিছুদিন ব্যবহারের পর ফেলে দেওয়ার যে প্রবণতা, তাতে কিছুটা হলেও পরিবর্তন আনা সম্ভব। উৎসাহিত করতে হবে নতুন প্রজন্মকেও। প্রিয় পৃথিবীকে ঝুঁকির হাত থেকে রক্ষায়।

i জাহেরা শিরীন
মডেল: আনসা
ওয়্যারড্রোব: বাটার ফ্লাই বাই সাগুফতা
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: হাদী উদ্দীন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top