skip to Main Content

ফিচার I মিডিয়াকম: পূর্ণ পঁচিশ

ঐতিহ্য ও কাজের মানে ইতিমধ্যে গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করেছে প্রতিষ্ঠানটি। জানা যাক পথচলার গল্প

নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি দেশের বেশ কয়েকটি শীর্ষস্থানীয় কোম্পানি তাদের পণ্য ও সেবা প্রচারের জন্য ধারাবাহিকভাবে বিজ্ঞাপন বানানো শুরু করে। কিন্তু এর প্রক্রিয়া ছিল ঝামেলাপূর্ণ। একটি বিজ্ঞাপন মানে বেশ কয়েকজন ক্রিয়েটিভ মানুষ এবং তাদের কাজের সমন্বয়। তা ছাড়া বিজ্ঞাপন বানাতে যেসব শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তি যেমন ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর, মিডিয়া ডিরেক্টর, আর্ট ডিরেক্টর প্রয়োজন, সে সময়ে দেশে এমন মানুষের সংখ্যা খুব বেশি ছিল না। বিশেষত পাশের দেশের ওপর নির্ভর করতে হতো। সে সময় স্কয়ার গ্রুপ তাদের বিভিন্ন পণ্য ও সেবার বিজ্ঞাপন বানাতে গিয়ে নানান ঝামেলায় পড়ে। এর পরিপ্রেক্ষিতে স্কয়ার টয়লেট্রিজ লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর অঞ্জন চৌধুরী ‘মিডিয়াকম লিমিটেড’ নামে একটি বিজ্ঞাপনী সংস্থা প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেন। এভাবেই শুরু পথচলা।
মিডিয়াকমের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার (সিইও) অজয় কুমার কুন্ডুর সঙ্গে আলাপে জানা গেল, বিজ্ঞাপনী সংস্থাটি ১৯৯৭ সালের ১০ জুলাই মাত্র চারজন কর্মী নিয়ে যাত্রা শুরু করে। এরই মাঝে বাংলাদেশ টেলিভিশনের এনলিস্টেড হয় এবং স্কয়ার, ইলেকট্রো মার্টের বাইরে ক্লায়েন্ট পেতে থাকে। প্রথম দিকের ক্লায়েন্টের মধ্যে ছিল অ্যাঙ্কর, এসএমসি প্রভৃতি। বিশেষ করে, এসএমসির এইডস অ্যাওয়ারনেস ক্যাম্পেইন ছিল মিডিয়াকমের জন্য টার্নিং পয়েন্ট। মিস্টার কুন্ডু বলেন, ‘এটি বিজ্ঞাপনশিল্পে মিডিয়াকমের ল্যান্ডস্কেপ পরিবর্তন করে দিয়েছে। এর ফলে ব্যবসাকে বৃহৎ পরিসরে নিয়ে যাওয়ার জন্য ৫০ জন কর্মী নিয়ে মিডিয়াকমের অফিস গুলশান ১-এ স্থানান্তর করা হয়।’
মিডিয়া বায়িংয়ের বাইরে সংস্থাটি তাদের অধীনে বিজ্ঞাপনসংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিভাগের কার্যক্রমও শুরু করে। ২০০০ সালে একটি ৩৬০ ডিগ্রি বিজ্ঞাপনী সংস্থা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। অজয় কুমার কুন্ডু বলেন, ‘যাত্রার শুরু থেকেই একটা ব্যাপার খুব শক্তভাবে অনুসরণ করা হয়, যা স্কয়ার গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা স্যামসন এইচ চৌধুরীর স্বপ্ন। তিনি বলতেন, প্রতিষ্ঠানটি সব সময় স্থানীয় মানুষদের হাতে পরিচালিত হোক—এ তার চাওয়া।’
বিভিন্ন সাফল্য ও অর্জনের মধ্য দিয়ে মিডিয়াকম এ বছর ২৫ বছর পূর্ণ করেছে। সংস্থাটির সিইও বলেন, ‘২০২২ সালেও স্কয়ার গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতার দিকনির্দেশনা শক্তভাবে অনুসরণ করা হচ্ছে। এ বছর সিলভার জুবিলি উপলক্ষে প্রতিষ্ঠানটি নিজেদের নতুন পে অফ লাইন দিয়েছে, যা মিস্টার চৌধুরীর স্বপ্নের প্রতিফলন ঘটায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে মিডিয়াকম সম্পূর্ণভাবে একটি “মেড ইন বাংলাদেশ” অ্যাডভারটাইজিং এজেন্সি।’
২০০০ সাল থেকে মিডিয়া বায়িংয়ের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন কোম্পানির জন্য ব্র্যান্ড কনসালট্যান্সি, মার্কেটিং কমিউনিকেশন, সোশ্যাল কমিউনিকেশন, মিডিয়া প্ল্যানিং, পাবলিক রিলেশন, টিভি ও সংবাদপত্র বিজ্ঞাপন, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ইত্যাদি সেবা দিয়ে আসছে মিডিয়াকম। শুরুর সময়ে সংস্থাটির জনপ্রিয় ও উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছে কনকা টিভি, প্যান্থার, স্কয়ার হাসপাতাল, মেরিল ও জুঁইয়ের বিজ্ঞাপন। ২০০১ সালে স্কয়ার কনজ্যুমার প্রডাক্ট লিমিটেড (বর্তমানে স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেড) যাত্রা শুরু করে। মিডিয়াকমের কিছু জনপ্রিয় বিজ্ঞাপন প্রচারণার মাধ্যমে তাদের শুরুর দিকের কিছু পণ্য যেমন রাঁধুনী ও রুচি ভোক্তাদের মনে বিশেষ জায়গা করে নেয়। ক্রমাগত পরিবর্তনশীল পরিবেশে খাপ খাওয়াতে কাজের জ্ঞান ও দক্ষতা বাড়িয়ে নিতে ২০১৬ সালে মিডিয়াকম শুরু করে ডিজিটাল মিডিয়া উইংয়ের কার্যক্রম। সে বছরের মার্চে ‘গুগল পার্টনার সার্টিফিকেট’ অর্জন করে সংস্থাটি।
২০১১ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত মিডিয়াকম রবির এটিএল, বিটিএল, ডিজিটাল মিডিয়ার সবচেয়ে প্রশংসনীয় ও কার্যকর কিছু প্রচারণার পরিকল্পনা ও প্রয়োগ করেছে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য, ‘এবার হবে’, ‘জামদানি’, ‘দেশপ্রেমিক’ এবং ‘ঈদের নতুন জামা’। এ ছাড়া বিকাশ, বাটা, ব্র্যাক, এসএমসি, বিসিসিপি, এফএইচআই, কেএসআরএম, ক্রাউন সিমেন্ট, মেটাডর, বিক্রয় ডটকম, আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ, জিপিএইচ ইস্পাতসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বিজ্ঞাপন, কৌশল, মিডিয়া প্ল্যানিং-বুকিং-বায়িংয়ের অংশীদার ছিল মিডিয়াকম। মিস্টার কুন্ডু বলেন, ‘ইস্পাহানি, পারফেটি, আনোয়ার গ্রুপ, আকিজ গ্রুপ, আকাশ ডিটিএইচ, আবুল খায়ের গ্রুপ, লাফার্জ হোলসিমের মতো বেশ কিছু কোম্পানির জন্য আমরা সেবা দিয়ে থাকি।’
গ্রামীণফোন শুরুর দিকে একমাত্র মিডিয়াকমের মাধ্যমে বিটিভিতে তাদের বিজ্ঞাপনের বুকিং দিত। বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক খেলাধুলাবিষয়ক ইভেন্ট, যেমন ২০১৮ সালের ফিফা বিশ্বকাপ, সাম্প্রতিক সময়ে প্রায় প্রতিটি ক্রিকেট বিশ্বকাপ, আইসিসি ইভেন্ট এবং বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সিরিজের আন্তর্জাতিক সম্প্রচার ও বণ্টন স্বত্ব নেওয়া ও দেওয়ার ক্ষেত্রেও মিডিয়াকম অগ্রগামী ভূমিকা পালন করেছে। বিভিন্ন স্বনামধন্য কোম্পানির ইভেন্ট ও কার্যক্রমে দিকনির্দেশনা দিয়ে এবং সংশ্লিষ্ট থেকে সফলভাবে তা করতে সাহায্য করে এই সংস্থা। দেশের বৃহত্তম রান্নাবিষয়ক রিয়েলিটি অনুষ্ঠান ‘সেরা রাঁধুনী’ এবং ফোক সংগীতের একমাত্র রিয়েলিটি শো ‘ম্যাজিক বাউলিয়ানা’র সার্বিক পরিকল্পনা ও তত্ত্বাবধানের দায়িত্বেও ছিল এটি। আন্তর্জাতিক নারী দিবসে দেশের সফল নারীদের নিয়ে মিডিয়াকম আয়োজন করে আসছে ‘রাঁধুনী কীর্তিমতী সম্মাননা’। অন্যদিকে মেরিল বেবির সৌজন্যে আয়োজন করেছে দেশের প্রথম ‘বেবি অলিম্পিয়াড’।
মিস্টার কুন্ডু জানান, দেশব্যাপী আউটডোর ব্র্যান্ডিং, বিলবোর্ড, ব্যানার স্থাপনের মতো কাজগুলো সাফল্যের সঙ্গে করে আসছে মিডিয়াকম। বিজ্ঞাপন জগতে অবদানের জন্য ইতিমধ্যেই বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জন করেছে প্রতিষ্ঠানটি। ২০১২ সালে ঢাকা চতুর্থ অ্যাড ফেস্টে সর্বোচ্চসংখ্যক পুরস্কার জিতে নেওয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরাম আয়োজিত দেশের বিজ্ঞাপন জগতের সর্বোচ্চ স্বীকৃতি ‘কমঅ্যাওয়ার্ড’-এ দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২১টি অ্যাওয়ার্ড জিতে নেয় মিডিয়াকম।
বলে রাখা ভালো, দেশে বার্ষিক ২৫০০ কোটি থেকে ৩০০০ কোটি টাকার বাজারে বর্তমানে ১০০টির বেশি বিজ্ঞাপনী সংস্থা সক্রিয় রয়েছে। অজয় কুমার কুন্ডু বলেন, ‘নতুন প্রযুক্তির আবির্ভাবের সঙ্গে সঙ্গে সৃষ্টি হচ্ছে নতুন কর্মক্ষেত্র। এই ক্রমবর্ধমান সম্ভাবনাময় ক্ষেত্রকে আরও সামনের দিকে নিয়ে যেতে তরুণদের এগিয়ে আসা উচিত।’

 ফুয়াদ রূহানী খান
ছবি: মিডিয়াকমের সৌজন্যে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top