skip to Main Content

এডিটর’স কলাম I সময়ের দায়ভার

সময় আপনাকে আরও অনেক কিছুর মতো সিদ্ধান্ত গ্রহণের সক্ষমতাও এনে দেবে

‘সময় গেলে সাধন হবে না…’ গেয়ে গেছেন বাউল সম্রাট ফকির লালন। ‘সময় সবুজ ডাইনি…’ লিখেছেন কবি রণজিৎ দাশ। ‘সময় একটা বিভ্রম’ বলে গেছেন বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন। দেখা যায় না, ধরা যায় না, ছোঁয়া যায় না, তবু চির প্রবহমান—সময় এক জলজ্যান্ত ধারণা। নিত্যসঙ্গী হয়ে আমাদের সঙ্গ দিয়ে যায়। কখনো কখনো দেখায় ঝলমলে রূপ, কখনোবা নিকষ কালো ঘোর। তবে সুসময়ে যেমন শুধুই সময়ের তোষামোদ করা ঠিক নয়, তেমনি দুঃসময়ের দায়ভারও চাপানো উচিত নয় স্রেফ সময়ের কাঁধে। বরং সময়ের সঠিক ব্যবহারের দায় ব্যক্তিমানুষের ওপর বর্তায় অনেকটাই।

দুই
বলা হয়ে থাকে, সময় একই সঙ্গে শিক্ষক ও উপশমকারীর ভূমিকা পালন করে। কখনো কখনো কোনো বিরূপ পরিস্থিতিকে নতুন ও অনুকূলে পাওয়ার জন্য একটু সময় ব্যয় করার দরকার পড়ে। সময়ের ব্যবধান আমাদের দেহ-মনে জমে থাকা ক্ষত সারিয়ে তোলে। আর এটি শেখায় জীবনের মূল্য এবং খুশিমনে যাপনের পাঠ। অন্যদিকে, সময় এমন এক বিষয়, যেটি অতিবাহিত হলে ফিরে পাওয়া যায় না। তাই সুসময়কে হেলায় নষ্ট না করে কাজে লাগানোই বুদ্ধিমত্তার পরিচয়।
আয়ুর প্রসঙ্গে যদি আসি, আমরা আসলে কেউ জানি না পৃথিবীর বুকে কত দিন বেঁচে থাকব। শুধু জানি, একদিন সেই সময় এসে হাজির হবে, যখন কোনো প্রচেষ্টাই পারবে না আমাদের মৃত্যু থেকে রক্ষা করতে।
এদিকে বিজ্ঞান বলে, এই মহাবিশ্বের প্রতিটি জিনিসই সময়ের বাঁধনে বাঁধা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গেই ধীরে ধীরে সবকিছুর ঘটে সূচনা, আবার ধীরে ধীরে সবকিছুর বিলোপ। অন্যদিকে, মরমি দিক থেকে আমরা সময়ের তিনটি পর্যায় সম্পর্কে অবগত—অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ। কিন্তু বাস্তবিক অর্থে আসলে শুধু বর্তমান কালেই বাঁচি। তাই বলে অতীত ও ভবিষ্যতের যে কোনো তাৎপর্য নেই, তা কিন্তু নয়। প্রখ্যাত লেবানিজ কবি কাহলিল জিবরান (খলিল জিবরান) তার বিখ্যাত কাব্য ‘দ্য প্রফেট’-এ লিখে গেছেন, ‘আজকের দিন অতীতকে স্মৃতিচারণায় এবং ভবিষ্যৎকে প্রত্যাশায় আলিঙ্গন করুক।’

তিন
আমাদের আনন্দ-বেদনার ওপর সময়ের রয়েছে নিগূঢ় প্রভাব। মনোবিজ্ঞানীদের ভাষ্য, সময় সম্পর্কে একজন ব্যক্তিমানুষের ধারণা তার আনন্দ ও মানসিক শান্তির ওপর প্রভাব ফেলে। নেতিবাচক প্রভাবের ক্ষেত্রেও একই কথা খাটে, সে তো বলা বাহুল্য।
জীবনকে গুছিয়ে কাটানোর জন্য তাই সময় ব্যবস্থাপনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ঘড়ির কাঁটায় দিনে প্রত্যেক মানুষই ২৪ ঘণ্টা করে সময় পান। ফলে সেই সময় কে কার জীবনে কীভাবে ব্যয় করবেন বা কাজে লাগাবেন, তা অনেকাংশেই নির্ভর করে ব্যক্তিমানুষটির ওপর। জীবনকে আনন্দময় করে তুলতে কীভাবে করা যায় যথাযোগ্য সময় ব্যবস্থাপনা? চলুন, নিজেকে কিছু প্রশ্নের সামনে দাঁড় করানো যাক। সময়মতো কোনো কাজ শেষ করা নিয়ে আপনি কি উৎকণ্ঠায় ভোগেন? পরের দিন কী হবে—এই ভেবে সারা রাত নিদ্রাহীন কাটান? দিন শেষে আপনার কি মনে হয়, যতটুকু করার ছিল তার খুব সামান্যই করতে পেরেছেন? এই সব প্রশ্নের উত্তর ‘হ্যাঁ’ হলে আপনি মুশকিলে আছেন! তা থেকে আসান পেতে সময় ব্যবস্থাপনার চর্চা শুরু করা ছাড়া খুব বেশি উপায় নেই আপনার সামনে। যদি সময়কে কাজ অনুসারে ঠিকঠাক ভাগ করে নিতে পারেন, তাহলে দিনে দিনে আপনার কর্মক্ষমতা বাড়বে; উৎকণ্ঠা কমবে। ফলে জীবন উপভোগ করতে শুরু করবেন।

চার
সময় আপনাকে আরও অনেক কিছুর মতো সিদ্ধান্ত গ্রহণের সক্ষমতাও এনে দেবে। প্রচুর কাজের চাপে কোনো কিছুই যখন ঠিকঠাক সামাল দিতে পারছেন না, এমন মুহূর্তে নিজেকে খানিকটা সময় দিন। তারপর ঠান্ডা মাথায় ভাবতে থাকুন উপায়। তারপর নিন সিদ্ধান্ত। এমন চর্চা ধীরে ধীরে আপনার ভেতর ত্বরিত সিদ্ধান্ত নেওয়ার সক্ষমতা বাড়াবে।

পাঁচ
নদীর স্রোতের মতো বয়ে যায় সময়। কখনো টের পাই, কখনো পাই না। তবু এ প্রবাহ চির চলমান। আর প্রতিটি সময়েরই থাকে নিজস্ব কিছু স্বর, নিজস্ব কিছু ডাক। তা ব্যক্তিবর্ণনির্বিশেষে সর্বজনীনও হয়ে ওঠে কখনো কখনো। এই করোনাকালীন পৃথিবীতে রাশিয়া-ইউক্রেন সংকট বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক ব্যবস্থার ওপর বিরূপ প্রভাব এ সময়ের এমনই একটি সর্বজনীন স্বর জাহির করেছে আমাদের সামনে। ধকল সামলাতে গিয়ে কম-বেশি সব রাষ্ট্রই ভুগছে নানানভাবে। আমরাও ভুগছি। বিরল হয়ে ওঠা লোডশেডিং ফিরে এসেছে, কিংবা বলা ভালো, ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছে জনজীবনে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বমুখী ঘোড়া তার অদৃশ্য অথচ প্রভাববিস্তারী দাপট থামাচ্ছে না। কোনোরকম খেয়ে-পরে বাঁচা অনেকের জন্যই কষ্টকর। এর পেছনে দায় কার, কে কতটুকু ব্যর্থ—সেই সব হিসাব-নিকাশ পাশ কাটিয়ে ব্যক্তিপর্যায়ে নিজ নিজ দায়িত্বভার গ্রহণ করার সময় এটি। শুধু বিদ্যুৎ নয়, যেকোনো পণ্য ও সেবারই ন্যূনতমও অপচয় যেন না হয়, খেয়াল রাখা চাই। হয়ে ওঠা চাই মিতব্যয়ী, তা সকল পর্যায়েই। হাতে হাত রেখে পাড়ি দেওয়া যায় যেকোনো দুঃসময়। তাহলে আমাদের আগামী দিনগুলো, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জীবনপথগুলো তুলনামূলক সহজ ও সুন্দর হওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে।
নিজ নিজ জায়গা থেকে দায়িত্ববান হোন। সচেতন ও সুস্থ থাকুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top