skip to Main Content

তনুরাগ I কায়া কল্পে

বিশেষভাবে উপযোগী এ পণ্য। দেহত্বক স্বাস্থ্যোজ্জ্বল রাখতে। বছরজুড়ে

ঠিক মুখত্বকের মতোই, দেহত্বকেরও প্রয়োজন একাধিক ধাপের স্কিনকেয়ার রুটিন। যার মধ্যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি ধাপ বডি সেরামের ব্যবহার। কেননা শরীরের প্রাণহীন ও শুষ্ক ত্বককে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য বিশেষ এই সেরামের বিকল্প নেই।
মুখত্বকের যত্নের পাশাপাশি নানা সমস্যা সারাইয়ে সেরামের ব্যবহার বহু পুরোনো। শুষ্কতা এবং ফ্লেকিনেস, নিস্তেজ ভাব ছাড়াও সংবেদনশীল ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করতে সেরাম অনন্য। সেরামগুলো ত্বকের ওপর একটি পুরু, প্রায় জেলের মতো স্তর তৈরি করে দেয় এবং ঠিক উৎস থেকে ত্বক সমস্যাটি মোকাবিলায় কাজ করে। ত্বককে ভেতর থেকে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল করে তোলায় সহায়ক বডি সেরাম ব্যবহারে আলসেমি তাই হতে পারে ত্বকের ক্ষতির কারণ। ফেশিয়াল সেরামের মতোই, বডি সেরামগুলো শুষ্ক বা নিস্তেজ ত্বকের মতো নির্দিষ্ট সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে ত্বকে সক্রিয় উপাদান সরবরাহ করে, যেখানে বডি লোশন এবং ক্রিমগুলো মূলত আর্দ্রতা প্রদানের জন্য ব্যবহৃত হয়। আর বডি সেরামের এসব সক্রিয় উপাদানের কারণেই এগুলো দামে একটু চড়া, কিন্তু কার্যকারিতায় অন্য বডি প্রডাক্টের চেয়ে ঢের ভালো। সেরাম ত্বকের চামড়া বদলানোর প্রাকৃতিক প্রক্রিয়াকেও দীর্ঘায়িত করে। ফলে ত্বক বেশি দিন ধরে নরম ও হাইড্রেটেড থাকে।
বডি সেরামের ব্যবহার খুবই সহজ। সাধারণ বডি লোশনের মতোই এগুলো ব্যবহার করা হয় ত্বকে। তবে তুলনায় সামান্য ঘন হয়ে থাকে এগুলো। ত্বক খুব সহজেই সেরাম শুষে নিতে পারে। ফলে তাৎক্ষণিকভাবেই মসৃণ ও নরম অনুভূতি পাওয়া যায়। বডি সেরাম ব্যবহার করার মানে এই নয় যে স্বাভাবিক বডি ময়শ্চারাইজার এড়িয়ে যাওয়া। ত্বক বডি সেরাম পুরোপুরি শুষে নিলেই এর ওপর প্রতিদিনকার বডি ময়শ্চারাইজার ব্যবহার করা যেতে পারে। একটি নির্দিষ্ট উপাদান মুখের ত্বকে যেভাবে কাজ করে, শরীরের ত্বকে ঠিক একইভাবে কাজ করবে। যেমন ভিটামিন সি-এর মতো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যুক্ত বডি সেরাম, ত্বকের ফ্রি র‌্যাডিক্যাল ড্যামেজ প্রতিরোধে সাহায্য করে। আবার আলফা হাইড্রক্সি অ্যাসিড, যেমন ল্যাকটিক অ্যাসিড এবং স্যালিসাইলিক অ্যাসিডযুক্ত সেরাম ত্বককে উজ্জ্বল ও মসৃণ করতে সাহায্য করে। অন্যদিকে হায়ালুরনিক অ্যাসিডযুক্ত সেরাম কাজ করে ত্বককে কোমল ও ময়শ্চারাইজড রাখতে।
সেরাম শপিংয়ে গেলে বডি সেরামের অনেক বিকল্প মিলবে বাজারে। তাই ত্বকের জন্য কোনটা সঠিক, তা খুঁজে পাওয়া গুরুত্বপূর্ণ। সেরামের কাজ ত্বককে উজ্জ্বল এবং পুনরুজ্জীবিত করা, আর ত্বকের গভীরে গিয়ে ত্বককে হাইড্রেট করা, পুষ্টির সঞ্চার করা। দেহত্বক শুষ্ক হলে এমন সেরামের সন্ধান করতে হবে, যার উপাদানগুলো শুধু আর্দ্রতাই ধরে রাখবে না, ত্বকের শুষ্কতা নিরাময়েও সহায়তা করবে। এ ক্ষেত্রে বেছে নেওয়া যায় ভ্যাসলিনের ইনটেনসিভ কেয়ার হিলিং সেরাম। এর পিপিএআর অ্যাকটিভেটরগুলো ত্বকে ভেতর থেকে পুষ্টি জোগাতে সহায়ক। সেই সঙ্গে এর ইলাস্টোমার এবং মাইক্রো-ড্রপলেটগুলো ত্বক কোমল ও আর্দ্র রাখতে সহায়তা করে। এটা ছাড়া বেছে নেওয়া যায় নিভিয়ার ইনটেনসিভ ময়শ্চার বডি সেরামও। অত্যন্ত সংবেদনশীল ত্বকের জন্য বিশেষভাবে তৈরি এটি। ত্বককে সুস্থ রাখতে সাহায্য করবে এমন একটি ময়শ্চারাইজার এবং একটি বডি সেরামের সংমিশ্রণ ব্যবহার করা গেলে সবচেয়ে ভালো ফল মিলবে। ত্বক যদি সেনসিটিভ হয়, তাহলে ভ্যাসলিন ইনটেনসিভ কেয়ার অ্যাডভান্সড রিলিফ হিলিং সেরামের মতো ডার্মাটোলজিক্যাল পরীক্ষিত এমন সেরামের সন্ধান করা যেতে পারে। এগুলো ত্বকের জন্যও কোমল। নেসেসেয়ারের হায়ালুরনিক অ্যাসিডযুক্ত বডি সেরামটিও সংবেদনশীল ত্বকের জন্য খুবই মানানসই। ত্বক নিস্তেজ ও প্রাণহীন হয়ে পড়লে ত্বকের হারানো আভা ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করবে এমন একটি ব্রাইটেনিং ফর্মুলার সেরামের কথা ভাবা যেতে পারে। এর জন্য বেছে নেওয়া যায় পেট্রোলিয়াম জেলিযুক্ত ভালো ব্র্যান্ডের কোনো বডি সেরাম। ত্বকের ক্ষতি মেরামত করার পাশাপাশি ত্বক কোষের স্বাভাবিক পুনর্জন্ম প্রক্রিয়া দ্রুততর করতে সেরামে ব্যবহৃত পেট্রোলিয়াম জেলির মাইক্রোড্রপলেটগুলো দারুণ কার্যকর। এগুলো ত্বকে আর্দ্রতা ধরে রাখে, যা ত্বককে প্রাণবন্ত দেখানোর মূলমন্ত্র। শুষ্ক, নিস্তেজ ত্বককে পুনরুজ্জীবিত করতে কোকোয়া বাটারের গুণাগুণ সমৃদ্ধ ভ্যাসলিন ইনটেনসিভ কেয়ার রেডিয়েন্স রিস্টোর হিলিং সেরাম ব্যবহার করে দেখা যেতে পারে। ব্যবহার করা যায় নিভিয়ার কেয়ার অ্যান্ড প্রটেক্ট আর নাইট নারিশিং—এই দুটো সেরামও। তবে একজিমা বা রোজাসিয়ার মতো দীর্ঘস্থায়ী ত্বকের সমস্যা থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শে নির্ধারিত সেরাম বা ময়শ্চারাইজার ব্যবহার করাটাই নিরাপদ।
ত্বকের ধরন ছাড়াও কী ধরনের সমস্যার সমাধান করতে বডি সেরাম ব্যবহার করা হচ্ছে কিংবা শরীরের ঠিক কোন অংশে ব্যবহার করা হবে, এই বিষয়গুলোও সেরাম বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে। দেহত্বকের অনেক ধরনের সমস্যার মধ্যে স্ট্রেচ মার্ক একটি, যা কমিয়ে আনতেও ব্যবহার করা হয় বডি সেরাম। অরেলিয়া ব্র্যান্ডের বডি সেরাম এমনই একটি প্রডাক্ট। ম্যান্ডারিন ও বার্গামটের মিশ্রণে তৈরি এই সেরাম খুব সহজেই ত্বক শুষে নেয়। কোনো অতিরিক্ত চিটচিটে ভাব তৈরি না করেই। মুখের মতো শরীরের ত্বকেও বার্ধক্যের ছাপ পড়ে। তা প্রতিরোধের জন্যও রয়েছে সেরাম। বায়োইফেক্ট বডি সেরাম শুষ্কতা এবং অসম টেক্সচারের ওপর কাজ করে ত্বককে পুনরুদ্ধার করে এবং ত্বকে তারুণ্যের অনুভূতি ফিরিয়ে আনে। গায়ে যদি রোদে পোড়া দাগ থাকে, তাহলে বেছে নেওয়া যায় আইল অব প্যারাডাইসের হাইগ্লো সান-ট্যান সেরাম। এর ব্যবহার শরীরের পোড়া দাগ সরিয়ে প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা এনে দেয়। কিছু সেরাম আবার শরীরের কোনো নির্দিষ্ট অংশের জন্য তৈরি। ইউ বিউটি আর্ম স্কাল্পট কম্পাউন্ড এমনই একটি বডি সেরাম। এটি ৬ সপ্তাহের মাঝেই হাতের ত্বকে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে বলে দাবি ব্র্যান্ডটির। তবে কম বাজেটের মধ্যে ভালো সেরাম কিনতে চাইলে বেছে নেওয়া যায় দ্য সলিউশন রেটিনল স্মুদিং বডি লোশন। নামে লোশন হলেও কার্যকারিতা ও উপকারিতা ঠিক সেরামের মতো। শুধু মনে রাখা জরুরি, বডি সেরাম কেনার ক্ষেত্রে তাড়াহুড়ো করা যাবে না; ত্বকের যত্নের পাশাপাশি সমস্যাগুলো কী, তা খুঁজে বের করতে কিছু সময় নেওয়া যেতে পারে। সমস্যা যাচাই করে, ত্বকের ধরন অনুযায়ী বডি সেরাম বেছে নেওয়াই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।

 শিরীন অন্যা
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: হাদী উদ্দীন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top