skip to Main Content

ফরহিম I অ্যাট এনি এজ

ছেলেরা স্যালনে গেলে কিংবা সৌন্দর্যচর্চায় মন দিলে ‘মেয়েলি’ হয়ে যাওয়ার ব্যাপারটা এখন বড্ড সেকেলে। পিছিয়ে থাকতে চান নাকি?

সব বয়সের পুরুষের জন্যই প্রয়োজন সঠিক গ্রুমিং রুটিন। শুরু থেকেই ঠিকঠাক যত্ন নেওয়ার পাশাপাশি যদি বয়স অনুযায়ী স্কিনকেয়ার রুটিন মেনে চলার অভ্যাস গড়ে তোলা যায়, তাহলে সৌন্দর্য ধরে রাখা যাবে জীবনের অনেকটা সময়জুড়েই।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ত্বকে এর প্রভাব পষ্ট হবে, এটি যেমন সত্য, ঠিক তেমনি একটু নিয়ম মেনে চললেই এর নেতিবাচকতা রুখে দেওয়া সম্ভব বলেই দাবি সৌন্দর্যবিশেষজ্ঞদের। জীবনের মোক্ষম সময়, অর্থাৎ ২০, ৩০ ও ৪০ বয়সের এই প্রধান তিন দশকে কী, কীভাবে, কোন সময়ে ব্যবহার করা হবে—এ সবকিছুর ছক কেটে নিলেই ত্বকের প্রাণবন্ত ভাব টিকে থাকবে বছরের পর বছর। রক্ষা পাওয়া যাবে অকালে ত্বকের বুড়িয়ে যাওয়া থেকেও।
বয়স যখন বিশের কোঠায়, তখন মূল লক্ষ্য হওয়া চাই ত্বকের সুরক্ষা ও সংরক্ষণ। আনুমানিক ২৫ বছর বয়স থেকে শরীর স্বাভাবিকভাবেই কোলাজেন উৎপাদন বন্ধ করে দেয়। আর ধূমপায়ী হলে এটি ঘটতে পারে আরও আগেই। ফলে ত্রিশের কোঠায় যেতে যেতে ধীরে ধীরে বলিরেখার মতো বার্ধক্যের ছাপ দেখা দিতে শুরু করে। তাই এই বয়সে বার্ধক্যের ছাপকে বিলম্বিত করাই গুরুত্ব পাবে সবচেয়ে বেশি। আর বিশ থেকে ত্রিশ বছর অব্দি নিয়মিত পরিচর্যার ফল ধরে রাখাটাই হবে ৪০ বছর বয়সের মূল সূত্র।
কুড়িতে করণীয়
সামনের বছরগুলোতে সবার সামনে নিজেকে ‘ফরেভার ২১’ হিসেবে উপস্থাপন করতে হলে এই সময় থেকেই ৫টা গুরুত্বপূর্ণ ধাপ মেনে চলাই যথেষ্ট।
 ত্বক পরিষ্কার রাখার বিকল্প নেই। প্রতিদিন রাতে অন্তত একবার ভালো মানের জেন্টল ক্লিনজার দিয়ে মুখ ধোয়া জরুরি। খুব ভালো হয় সকালে ও রাতে দুবার ধুয়ে নিলে। এ সময় প্রায় সব ছেলের ত্বকেই টুকটাক অ্যাকনে সমস্যা দেখা দেয়। তাই বেছে নেওয়া যায় স্যালিসাইলিক অ্যাসিডযুক্ত ক্লিনজার, যা অ্যাকনে রোধ করার পাশাপাশি ত্বকের মৃত কোষ দূর করতে সাহায্য করবে। বডি অ্যাকনে থাকলে গোসলের সময় চাইলে পুরো শরীরে অ্যাকনে রোধী শাওয়ার জেল ব্যবহার করা যায়।
 ক্লিনজিংয়ের পাশাপাশি টোনিংও গুরুত্বপূর্ণ। ত্বক পরিষ্কারের পর চাইলে একটি অ্যাসিড টোনার ব্যবহার করা যায়। অ্যাসিড শুনে ঘাবড়ে যাওয়ার কিছু নেই। স্কিন কেয়ারে অ্যাসিড কেমিক্যাল এক্সফোলিয়েন্ট হিসেবে কাজ করে। মুখ ধোয়ার পর একটি কটন প্যাডের সাহায্যে এটি পুরো মুখে লাগাতে হবে। ২ সপ্তাহেই ত্বকের টেক্সচারে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। ক্লিনিক এবং পিক্সি স্কিনট্রিটের মতো ব্র্যান্ডের লিকুইড এক্সফোলিয়েন্ট মিলবে বাজারে। ত্বকের ধরন বুঝে বেছে নিতে হবে পছন্দেরটি।
 প্রয়োজনীয় আর্দ্রতার জোগান স্বাস্থ্যকর ও প্রাণবন্ত ত্বকের মূল চাবিকাঠি। ত্বক হাইড্রেটেড রাখতে ক্লিনজিং আর টোনিংয়ের পর ব্যবহার করা যায় পছন্দের ময়শ্চারাইজার। এটি ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখতে সাহায্য করবে। অবশ্যই ত্বকের ধরন বিবেচনায়।
 ত্বকের প্রতিদিনকার যত্নে এসপিএফ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কারণ, এই বয়সেই ক্লাস, ঘোরাঘুরি, আড্ডা কিংবা কাজে সবচেয়ে বেশি সময় বাইরে থাকা হয় ছেলেদের, ফলে রোদের তাপে ত্বকের ক্ষতি হয় বেশি। তাই এসপিএফ সমৃদ্ধ ময়শ্চারাইজার ব্যবহার জরুরি। অথবা আলাদাভাবে সানস্ক্রিনও ব্যবহার করা যায়। এসপিএফের ব্যবহার শুধু ত্বকের জন্যই ভালো নয়, বরং এটি স্কিন ক্যানসারের ঝুঁকি থেকেও বাঁচাবে।
 টিনএজ শেষ হতেই ছেলেদের ত্বক থেকে সব ব্রণ কিংবা অ্যাকনে একেবারে জাদুর মতো হাওয়া হয়ে যাবে, এটা ভাবা ঠিক নয়। বিশের কোঠায় দুশ্চিন্তা কিংবা ধুলাবালি থেকে ত্বক অ্যাকনেপ্রবণ হয়ে পড়া খুবই স্বাভাবিক। তাই অ্যাকনে কিংবা অ্যাকনের দাগ থেকে রক্ষা পেতে ব্যবহার করা যায় ভালো ব্র্যান্ডের অ্যাকনে ক্রিম। বর্তমানে অ্যাকনে প্যাচ এই সমস্যার তাৎক্ষণিক সমাধান হিসেবে বেশ সাড়া ফেলছে। ব্যবহারে সহজ, কাজও করে চটজলদি। আগের দিন রাতে আক্রান্ত স্থানে অ্যাকনে প্যাচ পিম্পলের ওপর লাগিয়ে রাখলে সকালে উঠেই ফল মিলবে।
ত্রিশে তরকিব
ত্রিশের কোঠায় পা রাখতেই ত্বকের স্তরগুলোর মধ্যে আর্দ্রতা কমে যাওয়ায় কোষ সংকুচিত হতে শুরু করে। এটি খুব সহজে ঠেকানো সম্ভব নয়; বরং কোনো স্কিনকেয়ার রুটিন না থাকা, ভুল ডায়েট কিংবা সূর্যের তাপের মতো বিষয়গুলো ত্বকের বুড়িয়ে যাওয়া আরও ত্বরান্বিত করবে। তাই চোখে-মুখে বার্ধক্যের ছাপ কিছুটা বিলম্বিত করতে এই দশকেও মেনে চলা যায় পাঁচ ধাপের স্কিনকেয়ার রুটিন। ক্লিনজিং, টোনিং আর ময়শ্চারাইজিংয়ের ধাপগুলো থাকছে বরাবরের মতোই। তবে উপাদানে কিছুটা পরিবর্তন আনা যেতে পারে।
 যেহেতু এ সময়ে ত্বকে আর্দ্রতা কমে, তাই একটি হাইড্রেটিং ক্লিনজার ব্যবহার করা যায়। জেন্টাল হাইড্রেটিং ফেস ক্লিনজার হতে পারে এ ক্ষেত্রে আদর্শ প্রডাক্ট। কেননা এটি সেনসিটিভ ত্বকেও ব্যবহার করা যায় এবং এর নিয়াসিনামাইড এন্টিএজিং ও ত্বকের তৈলাক্ত ভাব দূর করতে সাহায্য করে।
 ক্লিনজিংয়ের পর ব্যবহার করা যায় কেমিক্যাল এক্সফোলিয়েন্ট টনিক। এটি পোরগুলো সংকুচিত করে বলিরেখা পড়তে বাধা দেয়। এ ক্ষেত্রে ল্যাকটিক অ্যাসিড আর এজিলাইক অ্যাসিডযুক্ত প্রডাক্ট ব্যবহার করা যাবে প্রতিদিন।
 ত্বকের বলিরেখা রোধে রেটিনল কার্যকর উপাদান। রেটিনল ভিটামিন-এ এর এমন একটি ধরন, যা ত্বকে নতুন কোষ সৃষ্টিতে সাহায্য করে। এতে ত্বকের ক্ষতির পরিমাণ কমে যায় অনেকাংশেই। এ ক্ষেত্রে বেছে নেওয়া যায় জেন্টাল রেটিনল সেরাম। ব্যবহার করা যাবে ভিটামিন এ যুক্ত সেরামও।
 প্রথম তিনটি ধাপের পর ত্বকের প্রয়োজন পর্যাপ্ত পরিমাণে আর্দ্রতা। ত্বকে ব্যবহার করা যায় পেপটাইড ময়শ্চারাইজার। এতে ত্বকে এন্টিঅক্সিডেন্টের পরিমাণ বেড়ে ত্বক প্রাণবন্ত ও স্বাস্থ্যোজ্জ্বল দেখাবে।
 চোখের নিচে কালি পড়তে পারে এই বয়সে। আর চোখের নিচের ত্বক খুব বেশি পাতলা হওয়ায় বলিরেখাও দেখা যায় বেশি। তাই পর্যাপ্ত ঘুমের পাশাপাশি ব্যবহার করা যায় আরামদায়ক কোনো আইক্রিম।
চল্লিশের চর্চা
২০ থেকে ৩০ পেরিয়েও স্কিনকেয়ার রুটিন যদি খুব ভালোভাবে মেনে চলা হয়, তাহলে ৪০ এর পর অতিরিক্ত তেমন আর কোনো ঝক্কি পোহাতে হবে না। শুধু আগের অভ্যাসগুলো ধরে রাখলেই চলবে কিছু জিনিস মাথায় রেখে—
 খুবই কোমল এবং সম্ভব হলে প্রাকৃতিক উপাদান যেমন হলুদ, লিকোরাইস রুট ইত্যাদি দিয়ে তৈরি ক্লিনজার ব্যবহার করা যায়। স্ক্রাব ব্যবহার না করাই ভালো।
 হায়ালুরনিক অ্যাসিডযুক্ত ময়শ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে। খুব ভারী ময়শ্চারাইজার কিন্তু নয়।
 স্কিন কেয়ার রুটিন থেকে কোনোভাবেই এসপিএফ বাদ দেওয়া যাবে না।
 এ সময় ত্বকের যত্নে ভিটামিন সি সেরাম যোগ করা যায়। এটি ত্বকে এসপিএফের কার্যকারিতা বাড়ায়।
 ৩০ বছর অব্দি রেটিনল ব্যবহার না করে থাকলে এই বয়সই তা ব্যবহার শুরু করার মোক্ষম সময়।

 শিরীন অন্যা
মডেল: জামি
মেকওভার: পারসোনা মেনজ
ছবি: ক্যানভাস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top