skip to Main Content

এডিটর’স কলাম I সৌহার্দ্যের বারতা

চাই কিংবা না চাই, কখনো কখনো একগুচ্ছ কালো মেঘ এসে ঢেকে দেবে আকাশ—এটাই প্রকৃতির নিয়ম সৌহার্দ্যের বারতা

‘যতই চেষ্টা করুন, কারও যখন আঘাত পাওয়ার সময় আসবে, আঘাত সে পাবেই,’—এমন নিগূঢ় সত্য উচ্চারণ করেছেন প্রখ্যাত জাপানি সাহিত্যিক হারুকি মুরাকামি। তাই বলে অন্যকে আঘাত দেওয়া থেকে নিজেকে নিবৃত্ত রাখার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানোতে কোনো রকম খামতি দেওয়া যে অনুচিত, সে ব্যাপারে বোধ করি মানবিক বোধসম্পন্ন সকল মানুষই একমত হবেন। অন্যদিকে, অনুমেয় ও অনাকাঙ্ক্ষিত—উভয় ধরনের আঘাত সামলে উঠেই জীবনের পথে এগিয়ে যেতে হয় মানুষকে।

দুই
সভ্যতার বিকাশে একেবারে প্রথম পর্যায় থেকেই মানুষকে এগিয়ে নিয়েছে তাদের গোত্র বা সমাজবদ্ধ জীবনাচার। মানুষ একা থাকতে পারে না—এ খুবই জানা কথা। তাই সৃষ্টির শুরু থেকেই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে জীবনযাপন তাদের। এভাবেই গড়ে উঠেছে সমাজ। আর যেকোনো সমাজেই থাকে নানান ধরনের মানুষের সহাবস্থান। তাদের মধ্যে ধর্ম, বর্ণ প্রভৃতি ভিন্নতা থাকা সত্ত্বেও সমাজ মূলত একটি সামগ্রিক সত্তা হিসেবে কাজ করে। তাই সমাজে সুশৃঙ্খলভাবে বসবাসের জন্য ব্যক্তিমানুষের ভেতর থাকা চাই সহিষ্ণুতা বোধ। অন্যকে গ্রহণ করার, অন্যকে মর্যাদা দেওয়ার মানসিকতা। অন্যথায় সমাজে ঘটে যায় বিশৃঙ্খলা; একের পর এক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা, যাকে দুর্ঘটনা বলাই শ্রেয়।

তিন
বাংলা একাডেমির অভিধানে ‘সহিষ্ণু’ শব্দের আভিধানিক অর্থ ‘সহনশীল’, ‘ধৈর্যশীল’, ‘ক্ষমাশীল’, ‘প্রতীক্ষাশীল’ প্রভৃতি। এর বিশেষণ ‘সহিষ্ণুতা’। আভিধানিক অর্থ যা-ই বলুক, যতই বিবিধ অর্থ থাকুক না কেন, প্রাত্যহিক জীবনে শব্দটির বহুল ব্যবহার সাধারণত একটি ক্ষেত্রবিশেষেই বেশি ঘটে থাকে। আর তা ধর্মীয় প্রসঙ্গে। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠের দেশ বাংলাদেশে রয়েছে অন্যান্য ধর্মাবলম্বী নাগরিকদেরও বসবাস। বংশপরম্পরায় অগুনতি বছর ধরে তারাও এই মাটি, হাওয়া, জলবায়ুতে কাটাচ্ছেন জীবন। এ দেশের সমাজে ধর্মীয় সহিষ্ণুতার ইতিবাচক উদাহরণ কালে কালে বহুবারই দেখা গেছে; এখনো যাচ্ছে। তবু মাঝেমধ্যে, বিশেষত বিশেষ কোনো সময়ে কোথাও কোথাও এর বিপরীত চিত্রও দেখা যায়, যা প্রশ্নবিদ্ধ করে সহিষ্ণুতার হাজারো বছরের ভাবমূর্তিকে। সে প্রসঙ্গ আপাতত থাক! বরং এই ফাঁকে একটু পরখ করে নেওয়া যাক, সহিষ্ণুতা প্রসঙ্গে ইসলাম কী বলে।
সহিষ্ণুতা রক্ষায় ইসলামে বেশ কিছু মূলনীতির ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে, সামাজিক শান্তি, পারস্পরিক সদিচ্ছা, নির্দিষ্ট লক্ষ্য স্থিরকরণ প্রভৃতি। ধর্মীয় বিধানে বলা হয়েছে, সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য জীবনের প্রতিটি পর্বে ধর্ম ও বিশ্বাসের ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে যেকোনো সংঘাত ও সংঘর্ষ উপেক্ষা করতে হবে। তাহলে সংখ্যাগরিষ্ঠ ও সংখ্যালঘু—উভয়েই পাবে শান্তি। অন্যদিকে, সহনশীলতা ও ক্ষমাশীলতার বহিঃপ্রকাশ একপক্ষীয় হলে তা কাজে দেবে না; বরং এ ক্ষেত্রে সকল পক্ষের মধ্যেই থাকা চাই সম্প্রীতির মনোভাব ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান। শুধু ধর্মীয় কিংবা বিশ্বাসের ভিন্নতার কারণে কারও সঙ্গে এমন আচরণ করা যাবে না, যা অসহিষ্ণুতা কিংবা সংঘাতের দিকে টেনে নিতে পারে। এ প্রসঙ্গে মিসরের বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ ড. জামাল বাদাভি বলেন, ‘মুসলিম-অমুসলিম সুসম্পর্কের মূল ভিত্তি ও উদ্দেশ্য হলো শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিতকরণ, ন্যায়পরায়ণতা এবং সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ।’

চার
প্রতিবেশীর ঘরে আগুন লাগলে সেই আঁচ নিজের ঘরেও এসে পড়ে। তাই সমাজের সকলের সুরক্ষায় প্রত্যেক নাগরিককেই নিজ নিজ অবস্থান থেকে রাখতে হয় ইতিবাচক ভূমিকা। অন্যদিকে, যারা বেশি সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে, হোক সেটি ধর্মীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা, বিত্ত কিংবা প্রতিপত্তির প্রশ্নে, তাদের দায়ভার একটু বেশিই। তাই সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিস্থিতি বজায় রাখতে তাদের হওয়া চাই সদা জাগ্রত ও দায়িত্ববান।

পাঁচ
চাই কিংবা না চাই, কখনো কখনো একগুচ্ছ কালো মেঘ এসে ঢেকে দেবে আকাশ—এটাই প্রকৃতির নিয়ম। তবু সেই মেঘ সরিয়ে সূর্যের এক চিলতে হাসি ঠিকই দেবে উঁকি। সেই আলোয় আলোকিত হয়ে সৌহার্দ্যের বারতা ছড়িয়ে পড়–ক জনজীবনে।
সবার মঙ্গল হোক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top