skip to Main Content

নখদর্পণ I টো ট্রাবল

সংক্রমণটা নখের। সেরে ওঠে ঘরোয়া টোটকাতেও। তবে সময় সামান্য বেশি লাগে

ছত্রাকের সংক্রমণ, যা হাতের বা পায়ের নখে হয়। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় এই রোগের নাম ‘ওনেকোমাইকোসিস’। এটি নখের ডগা বা প্রান্তভাগ থেকে শুরু করে মধ্যবর্তী স্থানে ছড়িয়ে পড়ে। এতে নখের রং ফ্যাকাশে হয়ে যায়, দেখায় পরিবর্তিত। নখে ফাঙ্গাসের সংক্রমণ হলে পায়ের বুড়ো আঙুলের নখের পাশে নরম মাংস বাড়ে। এতে কখনো কখনো ব্যথা বাড়ে, লালচে হয়ে নখ ফুলে যায়। যদিও নখে ছত্রাক সংক্রমণকে আদতে কোনো গুরুতর বা জটিল সমস্যা হিসেবে ধরা হয় না, তবে এটি নিরাময়ে দীর্ঘদিন লেগে যেতে পারে।
নখ ফাঙ্গাসে আক্রান্ত হলে দেখতে বাজে দেখায়। ত্বকের অস্বাভাবিক পিএইচ লেভেল, দুর্বল রোগ প্রতিরোধক্ষমতা, ঘর্মাক্ত মোজা ও জুতার ব্যবহার, স্বাস্থ্যবিধি না মানা এবং ডায়াবেটিসের কারণে নখের এই রোগ হতে পারে। যথাসময়ে নিরাময়ের ব্যবস্থা না করা হলে নখটি ভেঙে যেতে, এমনকি পুরো নখটি খসে পড়ে যেতে পারে। সংক্রমণ বাড়তে থাকলে, পায়ের নখ নেইল বেড থেকে আলাদা হয়ে যেতে থাকে। এতে পায়ে ভীষণ ব্যথা ও দুর্গন্ধ হয়। খুব খারাপ অবস্থা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। তবে তার আগে কিছু ঘরোয়া কৌশল খাটিয়ে দেখা যেতে পারে।
বেকিং সোডা
গবেষণায় দেখা গেছে, আর্দ্রতার কারণে হওয়া নখের ফাঙ্গাসের আর্দ্রতা বেকিং সোডা শুষে নেয়। এ সোডা ফাঙ্গাসের বৃদ্ধির ৭৯ শতাংশ পর্যন্ত দূর করতে পারে। এ ক্ষেত্রে মোজা বা জুতা পরার আগে তাতে বেকিং সোডা ছিটিয়ে নিতে হবে। চাইলে বেকিং সোডা ও পানি মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে আক্রান্ত নখে মাখিয়ে রাখা যেতে পারে। শুকিয়ে এলে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।
ভিনিগার
রান্না ও পরিষ্কারের কাজে ব্যবহারের পাশাপাশি নখের ফাঙ্গাস দূর করতেও ভিনিগার বেশ কার্যকর। এক ভাগ ভিনিগার, দুই ভাগ হালকা গরম পানির মধ্যে মিশিয়ে আক্রান্ত পা ২০ মিনিট এতে ডুবিয়ে রাখতে হবে। নিয়মিত এই পদ্ধতি অনুসরণে উপকার মিলবে।
মাউথওয়াশ
মাউথওয়াশে মেনথল, থাইমল ও ইউক্যালিপটাসের মতো উপাদান থাকে, যাতে আছে ব্যাকটেরিয়া ও ফাঙ্গাসরোধী উপাদান। একটি বাটিতে মাউথওয়াশ নিয়ে তাতে আক্রান্ত আঙুল ডুবিয়ে রেখে, কিছুক্ষণ পরে পানি দিয়ে তা ধুয়ে ফেললে ফাঙ্গাস কমে আসবে।
হলুদ
হলুদ সাধারণত অ্যান্টিসেপটিক উপাদান হিসেবে বেশ পরিচিত। এটি রোগের প্রতিকারের পাশাপাশি প্রতিরোধে কাজ করে। পানির মধ্যে এক চা-চামচ হলুদগুঁড়া নিয়ে আক্রান্ত স্থানে লাগিয়ে তিন-চার ঘণ্টা রেখে দিতে হবে। এরপর ভালোভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে। এ ছাড়া আরও একটি পদ্ধতি রয়েছে। অলিভ অয়েল বা আমন্ড অয়েলে খানিকটা কাঁচা হলুদ কুচি করে কেটে তা জ্বাল দিয়ে ছেঁকে তেল তৈরি করে নিতে হবে। এবার এই ১ টেবিল চামচ হলুদের তেলের সঙ্গে ৩ টেবিল চামচ পানি মিশিয়ে মিশ্রণ তৈরি করে আক্রান্ত নখে ঘষতে হবে। এই মিশ্রণ দিনে ৩ বার ব্যবহার করতে হবে। এর সঙ্গে দিনে ৩০০ মিলিগ্রাম কাঁচা হলুদ খেলে আরও ভালো ফল পাওয়া যেতে পারে।
পেঁয়াজ
পেঁয়াজের টুকরাকে সামান্য স্লাইস করে পাঁচ মিনিট আক্রান্ত নখে ঘষতে হবে। ২০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলতে হবে। পেঁয়াজের মধ্যে থাকা অ্যান্টি-ফাঙ্গাল উপাদান ফাঙ্গাসের সংক্রমণকে ধ্বংস করে।
রসুন
খাবারের স্বাদ বাড়াতে এবং ঔষধি গুণের জন্য রসুন বেশ পরিচিত। রসুনে রয়েছে ব্যাকটেরিয়া ও ফাঙ্গাসরোধী উপাদান। রসুন কুচি করে তা আক্রান্ত নখের ওপর ৩০ মিনিট রেখে দিতে হবে। প্রতিদিন এই পদ্ধতি অনুসরণ করলে ফাঙ্গাসের সমস্যা দূর হয়ে যাবে।
ভিক্স ভেপোরাব
নখের ফাঙ্গাস তাড়ানোর একটি প্রচলিত উপায় হচ্ছে ভিক্স ভ্যাপোরাবের ব্যবহার। সর্দি, মাথাব্যথার কারণেই মূলত এই মলম ব্যবহৃত হয়। এটি নখের ফাঙ্গাস তাড়াতেও বেশ সহায়ক। প্রতিদিন দুবার শুধু ভিক্স ভেপোরাব ফাঙ্গাস আক্রান্ত নখে লাগিয়ে একটি ব্যান্ডএইড দিয়ে নখটি ঢেকে রাখতে হবে। এতে নিরাময় ধীরগতিতে হলেও এটি যে একটি উপকারী উপায়, সে বিষয়ে প্রমাণ রয়েছে।
মনে রাখা চাই
i সংক্রমণের সময় পায়ে অপ্রয়োজনীয় রাসায়নিক (নেইল পেইন্টিং, নেইলপলিশ) ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
i নখের চারপাশে শুকনো চামড়া থাকলে তৎক্ষণাৎ কেটে ফেলতে হবে। এতে নখে বাতাস চলাচল করতে সুবিধা হবে।
i পায়ে সুতি মোজা ব্যবহার করা ভালো।
i পায়ের পাতা পরিষ্কার ও শুকনো রাখার চেষ্টা করতে হবে।
i ঘরোয়া পদ্ধতিতে আক্রান্ত স্থান ভালো হচ্ছে কি না খেয়াল রাখতে হবে। যদি হলুদ, সবুজ বা তামাটে বর্ণের পুঁজ বের হয়, তাহলে ডাক্তারের সঙ্গে দ্রুত যোগাযোগ করা জরুরি।

i সুরবি প্রত্যয়ী
ছবি: সংগ্রহ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top