skip to Main Content

ফিচার I সপ্তাহান্তে

বাড়িতে বিরিয়ানি কিংবা কোরমা-কালিয়া খাওয়ার ইচ্ছা যেমন ছুটির দিনগুলোর জন্য তুলে রাখা হয়, তেমনি রূপচর্চার জটিল রেসিপিগুলোও না হয় তোলা থাক

রোজকার অফিস-সংসার ইত্যাদির চাপে জীবন যখন জেরবার, নিশ্বাস নেওয়ারই ফুরসত মেলে না, তার মধ্যে আবার রূপচর্চা! সবার জীবনেই সময়ের এত অভাব, সবদিক সামলে নিজের জন্য আর সময় বাঁচে না। সেখানে ফর্দ ধরে রূপচর্চা করতে বসা অনেকের কাছে সময়ের অপচয় বৈকি। তবে কথায় আছে, ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়। সারা সপ্তাহ ব্যস্ত থাকার পর উইকএন্ডের একটা দিনের কয়টা ঘণ্টা সময় তো সবার হাতেই থাকে। ওতেই চলবে। ত্বক আর চুলের বাড়তি যত্নআত্তিতে। এ ক্ষেত্রে পদ্ধতি যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি সময়টা বুদ্ধি করে খরচ করা দরকার। একদিন যদি একটু সময় করে যত্ন নেওয়া যায়, এক সপ্তাহের অনেক সমস্যা তাতেই মিটে যাবে।
চুলচর্চা
মাথা থেকে শুরু করাই ভালো। হোক তা চুল দিয়ে। হেয়ার কালার, অতিরিক্ত হিটিং টুলসের ব্যবহার কিংবা সঠিক যত্নের অভাব—প্রাকৃতিক উপায়ে তৈরি ডিপ কন্ডিশনিং মাস্ক ব্যবহারে অনেক সমস্যাই মিটবে। কমবে রুক্ষতা আর নির্জীব ভাব। যেদিন মাস্ক ব্যবহার করা হবে, তার আগের রাতে সময় বের করে স্ক্যাল্পে হট অয়েল মাসাজ করে নেওয়া যায়। অলিভ অয়েল বা নারকেল তেল সামান্য গরম করে স্ক্যাল্পে সার্কুলার মোশনে মাসাজ করে ঘুমিয়ে পড়লেই চলবে। পরদিন এক চামচ অলিভ অয়েল, একটা আস্ত ডিম, এক চা-চামচ মধু আর একটা পাকা কলা ভালোভাবে চটকে মিশিয়ে নিতে হবে। সব উপকরণ ভালোভাবে মিশে গেলে স্ক্যাল্প থেকে চুলের ডগা অবধি পুরোটা ভালো করে কোট করে নিতে হবে। তারপর চুলে খোঁপা করে শাওয়ার ক্যাপ বা পুরোনো তোয়ালে দিয়ে মাথা জড়িয়ে রাখা চাই আধঘণ্টা। এরপর শ্যাম্পু আর কন্ডিশনার দিয়ে ভালোভাবে চুল ধুয়ে নিতে হবে। একবার ব্যবহারেই আগের তুলনায় চুল হয়ে উঠবে অনেক বেশি নরম ও চকচকে। সময় পেলে সপ্তাহে দুবার ব্যবহার করলে তো আরও ভালো।
ত্বক সমস্যায়
চুলে প্যাক মাখানোর পর আধঘণ্টা বসে না থেকে ত্বকের যত্ন শুরু করে দেওয়া যায়। সারা সপ্তাহ তো ফেসওয়াশ বা স্ক্রাবেই যত্ন সেরে নেওয়া হয়, তাই সপ্তাহ শেষে একটু বাড়তি যত্ন ত্বকের প্রাপ্য। এ ক্ষেত্রে ফেশিয়াল মাস্কের চেয়ে ভালো আর কীই-বা হতে পারে। ত্বকের সমস্যা বুঝে মাস্ক বাছাই জরুরি। সামগ্রিকভাবে ত্বকের যত্ন নিতে চাইলে এক টেবিল চামচ অ্যাভোকাডোর ক্বাথ, এক টেবিল চামচ টক দই আর এক টেবিল চামচ মধু একসঙ্গে মিশিয়ে নিতে হবে। এই মিশ্রণ চোখের অংশ বাদে ত্বকের বাকি জায়গায় মাখিয়ে রাখতে হবে পনেরো মিনিটের জন্য। তারপর হালকা গরম পানিতে তোয়ালে ভিজিয়ে মুখ মুছে নিতে হবে। পরে ময়শ্চারাইজার মাখতে ভুলে যাওয়া চলবে না কিন্তু। আর ত্বক যদি জেল্লাহীন দেখায়, তাহলে চটজলদি উজ্জ্বলতা আনতে অন্য একটি মাস্ক মাখা যায়। খানিকটা মধুর সঙ্গে এক চিমটি গুঁড়া হলুদ মিশিয়ে মুখে মাখিয়ে নিতে হবে। এতে ত্বকে রক্তসঞ্চালন বাড়বে। সব টক্সিন ফ্ল্যাশআউট হয়ে, দাগছোপ হালকা হয়ে আসবে। এই মাস্কও পনেরো মিনিট রাখলে যথেষ্ট। তারপর পানি দিয়ে ধুয়ে নিলেই চলবে।
আন্ডারআই ট্রিটমেন্ট
সারা সপ্তাহের রাত জাগা, অনিয়ম, স্ট্রেস ইত্যাদি কারণে ডার্ক সার্কেলের সমস্যা অবধারিত। তাই মুখে প্যাক লাগানো শেষে চোখের চারপাশের অংশের যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে কাজে আসতে পারে গ্রিন টি। দুটো ব্যবহার করা টি-ব্যাগ কিছুটা সময় ফ্রিজে রেখে দিতে হবে। ঠান্ডা হলে তা চোখের ওপর দিয়ে রাখতে হবে দশ মিনিট। গ্রিন টির পরিবর্তে দুধের আইস কিউব করে তা-ও চোখের ওপর রাখা যায়। দশ মিনিটেই পার্থক্য চোখে পড়বে। সম্ভব হলে আগের রাতে ফ্রিজে দুটো চামচও রেখে দেওয়া যায়। পরদিন সেই চামচ চোখের ওপর রেখে দিলে পাফি আইজের সমস্যা কমবে।
দেহতত্ত্ব
সপ্তাহান্তে গোসল সেরে নেওয়ার আগে শরীরেও বিশেষ যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। প্রতিদিন দাঁত মাজার মতোই সপ্তাহ শেষে বডি ব্রাশিংয়ের অভ্যাস গড়ে তুললে দারুণ ফল মিলবে। ব্রিসলযুক্ত লম্বা হাতলওয়ালা ব্রাশের সাহায্যে শুকনা অবস্থাতেই গা, পিঠ, হাত, পা ঘষে নেওয়া যায়। তবে খুব জোরে নয়। এতে শরীরে রক্তসঞ্চালন বাড়বে এবং মৃতকোষ দূর হবে। ব্রাশিংয়ের সময় পা থেকে ধীরে ধীরে ওপরের দিকে উঠতে হবে। ট্যানিংয়ের সমস্যায় এরপর টমেটো স্লাইস কেটে পুরো শরীরে ঘষে নিতে হবে। পনেরো মিনিট পর গোসল করে নিলেই চলবে। ট্যানিংয়ের সমস্যা না থাকলে ড্রাই ব্রাশিংয়ের পর খানিকটা অলিভ অয়েল নিয়ে পুরো শরীরে মাসাজ করে নেওয়া যায়। এতে ত্বকের আর্দ্রতা বজায় থাকবে। ওয়াক্সিংয়ের জন্য উইকএন্ডের চেয়ে ভালো সময় আর কিছু নেই। প্রতি সপ্তাহে প্রয়োজন না হলে এক সপ্তাহ পর পর ওয়াক্সিং করে নেওয়া যায়। আর ওয়াক্সিংয়ের আগে ব্রাশিং করে নেওয়া হয় বলে ইনগ্রোন হেয়ারের সমস্যাও থাকে না। ওয়াক্সিংয়ের পর গোসল করে পুরো শরীরে ময়শ্চারাইজার মাখিয়ে নেওয়া চাই।
হাত-পায়ের যত্নে
ম্যানিকিওর কিংবা পেডিকিওর যেহেতু সময়সাপেক্ষ, তাই সারা সপ্তাহে এর জন্য সময় বের করা সত্যিই মুশকিল। যারা নিয়মিত স্যালনে গিয়ে ম্যানি-প্যাডি করান, তাদের কথা আলাদা। বাকিদের সপ্তাহ শেষে অবশ্যই হাত-পায়ের যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। পরিষ্কার নখ এবং হাত-পা ব্যক্তিত্বকেও সুন্দর দেখাতে সহায়ক। তা ছাড়া নখে অনেক দিনের পুরোনো নেইলপলিশ বেশ ক্ষতিকর। প্রতি সপ্তাহে তা তুলে ফেলাই ভালো। গোসলের আগে এটা সেরে নেওয়ার ভালো সময়। এরপর নখ কেটে ফাইল করে নিতে হবে। তারপর হাতে ও পায়ের পাতায় ভালো করে নারকেল তেল মাসাজ করে নিতে হবে। গোসলের পর ইচ্ছা হলে আবার নেইলপলিশ পরে নেওয়া যায়। নইলে শুধু টপকোট বুলিয়ে নিলেও চলে। এতে নখ অনেক বেশি পলিশড দেখায়। পায়ের ক্ষেত্রে গোসলের সময় পিউমিস স্টোন ব্যবহার করে গোড়ালি ঘষে নিতে হবে। এতে করে মৃতকোষ উঠে আসবে, আর পা ফাটার সমস্যা থাকলে তা-ও কমবে। ফাটা পায়ে খানিকটা দুধের সর, এক চা-চামচ মধু আর কয়েক ফোঁটা পাতিলেবুর রস একসঙ্গে মিশিয়ে মাখিয়ে রাখা যায়। গোসলের পর পুরো শরীরে ময়শ্চারাইজেশন মাস্ট।
এ ছাড়া শরীর সুন্দর আর ঝরঝরে রাখতে পর্যাপ্ত ঘুমের প্রয়োজন। সারা সপ্তাহে নানা ব্যস্ততার মধ্যে যদি ঘুমের ঘাটতি থেকে যায়, সে ক্ষেত্রে সপ্তাহ শেষে তা পূরণ করে নেওয়াই ভালো। সেই সঙ্গে রিল্যাক্সড থাকার চেষ্টা করতে হবে। ঈষদুষ্ণ পানিতে গোসলের পাশাপাশি এতে সামান্য এপসম সল্ট আর কয়েক ফোঁটা ল্যাভেন্ডার এসেনশিয়াল অয়েল মিশিয়ে গোসল করা যায়। এতে স্ট্রেস রিলিফ হবে।

i অর্চনা সাহা
মডেল: আদিবা
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: তানভীর খান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top