skip to Main Content

ফিচার I ব্লাউজ বৃত্তান্ত

বিয়ে মানেই মোক্ষম সুযোগ অভিনব সব ব্লাউজ পরার। প্রাণভরে শো অফ করার। কনের নিজস্বতা আর সেন্স অব স্টাইল বোঝানোর জন্য গজখানেক এই ঘেরই যে যথেষ্ট। প্রমাণ? ব্রাইডাল ওয়্যার ডিজাইনারদের নিত্যনতুন কালেকশন আর খোদ সেলিব্রিটিদের বিয়ের ব্লাউজের প্রিন্ট-কাট-প্যাটার্নে। এ বছরের ট্রেন্ডটা কেমন? জানাচ্ছেন জাহেরা শিরীন

সিনেমার নায়িকাদের দেখে আর সোশ্যাল মিডিয়ার পেইজ স্ক্রল করে পছন্দের বিয়ের ব্লাউজ বুকমার্ক করা শেষ? এবার প্রয়োজন হবে সাধ আর সাধ্যের সমন্বয়। সেই সঙ্গে এমন কেউ; যিনি মাপজোখ মেনে, কনের কনসেপ্টের খুঁটিনাটি বুঝে তবেই তৈরি করে দেবেন বহুল আকাঙ্ক্ষিত বিয়ের ব্লাউজ। হতে পারেন তিনি এলাকার সিদ্ধহস্ত দরজি কিংবা কনের পুরোনো টেইলর মাস্টার। আর যদি ডিজাইনারদের ডেরায় ঢুঁ মারা যায়, তাহলে তো কথাই নেই।
শাড়ি, লেহেঙ্গা কিংবা অন্য যেকোনো ফিউশন আউটফিট—কনের পোশাকে ব্লাউজ বাধ্যতামূলক। লুক কমপ্লিট করার জন্য। সে ক্ষেত্রে অপশন মেলা। নিরীক্ষা না করতে চাইলে ক্ল্যাসিক কাট-প্যাটার্নই সই। আর যদি বাঁধাগতে না হেঁটে একটু আউট অব দ্য বক্স কিছু চাই, তার অপশনও মেলা। একটু চোখ-কান খোলা রাখতে হবে শুধু।
ইনফিনিটি ব্লাউজ
সম্প্রতি ইন্টারনেট জুড়ে ঝড় তুলে ফেলেছে এই নকশা। নেটিজেনদের চোখ এড়াবে? অসম্ভব। ভারতীয় ডিজাইনার মনীশ মালহোত্রার এই ক্রিয়েশন ইতিমধ্যেই বলিউড পাড়ায় সাড়া ফেলে দিয়েছে। শুরুটা অভিনেত্রী আলিয়া ভাটের। কাছের বন্ধুর বিয়েতে লেহেঙ্গার সঙ্গে পরিহিত বোল্ড এই ব্লাউজেই বাজিমাত। নিয়ন গ্রিন আর পিঙ্কের মিশেলে তৈরি চিকেনকারী আউটফিটটির ডিজাইনার খোদ মনীশ। এরপর দীপিকা পাডুকোন, সারা আলি খান, অনন্যা পান্ডেসহ অনেক তারকার পরনেই দেখা গেছে ইনফিনিটি ব্লাউজ। আনকোরা এ নামের পেছনের রহস্য ভেদ করেন মনীশ নিজেই। একদম ইনফিনিটি সাইনের মতো দেখায় এই ব্লাউজগুলো। তাই নামটা এমন। অনুপ্রেরণা নেওয়া হয়েছে ভারতের কাচ্ছ্ আর গুজরাটের প্রত্যন্ত অঞ্চলের নারীদের থেকে। তারা অভিনব পদ্ধতিতে স্কার্ফকে ব্লাউজের মতো করে জড়ান গায়ে, তা থেকে প্রাণিত কনটেম্পরারি এ ব্লাউজের নকশা। শাড়ি কিংবা লেহেঙ্গা—দুয়ের সঙ্গেই অনবদ্য। স্লিভ ছাড়া সুন্দর; তবে অস্বস্তি হলে স্লিভসহই পারফেক্ট।
ব্রালেট ব্লাউজ
বেসিক লঞ্জারে। বেশ কিছুদিন হলো ব্যবহৃত হচ্ছে ব্লাউজের বদলে। সেলিব্রিটি আর ইনফ্লুয়েন্সার অ্যাপ্রুভড এই স্টাইল বিয়েতেও বেছে নিচ্ছেন অনেক কনে। বোল্ড অ্যান্ড বিউটিফুল লুকের জন্য। আনকনভেনশনাল, এক্সপেরিমেন্টাল ব্রাইডাল ওয়্যারের যোগ্য সঙ্গত ব্রালেট ব্লাউজ। মিলেনিয়ালদের জন্য সেরা অপশন। দারুণ আরামদায়কও বটে। তাই বিয়েতে তেমন বিধিনিষেধের বালাই না থাকলে ব্রালেট ব্লাউজ পরে নেওয়া যেতেই পারে। শুরুতে ওয়েস্টার্ন ওয়্যারের সঙ্গে এটি বেছে নিলেও এখন এথনিক ওয়্যারের সঙ্গেও এর জোড় জবরদস্ত দেখায়। বিভিন্ন স্টাইলে পাওয়া যায় বলে স্টাইলিংটাও সেরে নেওয়া যায় মনের মাধুরী মিশিয়ে। বিয়ের শাড়ির সঙ্গে মানিয়ে বেছে নিতে হবে এটি। অনেক বেশি শিমারি, সিক্যুইনড হলে এর সঙ্গে ম্যাচ করে ব্রালেট বানিয়ে নিলে যেমন মন্দ দেখাবে না, ঠিক তেমনি মানিয়ে যাবে সলিড স্যাটিনের ব্রালেট। তবে তা যেন অবশ্যই শাড়ির রঙের সঙ্গে মানিয়ে যায়। আর বিয়ের শাড়ি যদি খুব বেশি জমকালো না হয়, এমবেলিশড ব্রালেট মন্দ দেখাবে না। জরি, সিক্যুইন, দপকা বা হালের টাসেলড বর্ডারের ব্রালেটও চমৎকার মানাবে এর সঙ্গে। বিয়ের সময় একটা বেসিক ব্ল্যাক ব্রালেট রাখতে হবে হাতের কাছে। যেকোনো ধরনের কিংবা রঙের শাড়ির সঙ্গে সহজে টিম আপ করার সুবিধার্থে।
সুইটহার্ট নেকলাইন ব্লাউজ
ট্র্যাডিশনাল ব্রাইডাল অ্যাটায়ারের সঙ্গে চমৎকার মানায় এ ব্লাউজগুলো। বেস্টসেলার হিসেবে বেশ সুনাম রয়েছে বরাবরই। দারুণ দেখায় যেকোনো ধরনের বিয়ের পোশাকের সঙ্গে। অনন্য এ নেকলাইন গভীর হলেও অশ্লীল দেখায় না একদমই, বরং দেখায় স্টাইলিশ। এ ধরনের ব্লাউজে স্ট্র্যাপি ডিটেইল যেমন ভালো দেখায়, তেমনি ফুল স্লিভেও সৌন্দর্যের ঘাটতি হয় না এতটুকু। যেসব কনের কলারবোন প্রমিনেন্ট, এই নেকলাইনে তাদের পুরো লুক আরও চমৎকার দেখায়। কনেদের গলা তুলনামূলকভাবে লম্বা হলেও এই নেকলাইনের ব্লাউজ থাকা চাই তালিকায়।
ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রাইডাল ওয়্যারের জন্য বিখ্যাত নাম সব্যসাচী মুখার্জি। তার মতে, এই অঞ্চলের নারীদের সামাজিক মূল্যায়নের সূচক হচ্ছে ব্লাউজ। শাড়ির সঙ্গে সাপোর্টিং রোলে নয়, ব্লাউজ হচ্ছে মাস্টারপিস—এমনটাই বিশ্বাস এ ডিজাইনারের। তাই তো নিয়মিত নিরীক্ষা চলে এ নিয়ে। তার ক্যাম্পেইনগুলো খেয়াল করলেই বোঝা যায় ব্লাউজের বদলে যাওয়া রূপ, সঙ্গে নারীরও। শাড়ি কিংবা লেহেঙ্গায় তেমন পরিবর্তন না এলেও যুগের হাওয়া বদলের আভাস মিলেছে ব্লাউজে। হাইনেক, ফুলস্লিভ ফুল অন মডেস্ট ব্লাউজ থেকে হাল আমলের ক্লিভেজ পপিং প্যাটার্নে কনের কনফিডেন্সের গ্রাফ সুস্পষ্ট। কিন্তু কেমন সব্যসাচীর ডিজাইন করা মাস্টারপিসগুলো?
দ্য বিপাশা
সব্যসাচী মুখার্জির অলটাইম বেস্টসেলার এ ব্লাউজ। অনুপ্রাণিত হয়েছে বলিউডের লাস্যময়ী অভিনেত্রী বিপাশা বসু থেকে। একটা মুভির নাচের দৃশ্যায়নের জন্য তৈরি হয়েছিল ব্লাউজটি। পরবর্তী সময়ে তা বাতিল হয়ে যাওয়ায় সব্যসাচী সিদ্ধান্ত নেন ব্লাউজটি কমার্শিয়ালি বিক্রির। সে সময় ফুলহাতার ডিপ কাট পিসটি পরিণত হয় সেক্স সিম্বলে। দারুণ সাড়াও ফেলে। বলতে গেলে এখন অব্দি সব্যসাচীর ডিজাইন করা সবচেয়ে জনপ্রিয় পিস এটি। স্বীকারোক্তি এসেছে খোদ ডিজাইনারের কাছ থেকে। এখন পর্যন্ত আড়াই লাখের বেশি পিস বিক্রি হয়েছে ব্লাউজটির। কখনো লেহেঙ্গা, তো কখনো শাড়িসমেত। অভিনেত্রী বিপাশা বসু তার বিয়ের পোশাক কেনার জন্য সব্যসাচীর স্টোরে এসে তার নামকরণে করা ব্লাউজ দেখে বিস্মিত হয়েছিলেন। খুশিও কম হননি।
দ্য কণ্ঠি
বাংলায় এর অর্থ গলা। সব্যসাচীর সবচেয়ে মডেস্ট ডিজাইনের ব্লাউজ। হাই নেকের। সঙ্গে ফুলস্লিভ। ব্লাউজগুলোর বিশেষত্ব এর একদম সহজ এবং সাধারণ উপস্থাপনায়। বাড়তি কারুকার্যের বালাই নেই একদমই। অনুপ্রেরণা? খোদ ডিজাইনারের কনভেন্ট স্কুলিং, বন্ধুদের শৃঙ্খল মিলিটারি লাইফস্টাইল, এমনকি জনপ্রিয় মিউজিক্যাল দ্য ফ্যানটম অব দ্য অপেরার ব্যালেট ইনস্ট্রাক্টরের মন্ত্রমুগ্ধকর নির্দয়তা। এই ব্লাউজের মূল উদ্দেশ্য দেহকে নয়, বরং চেহারায় স্পটলাইট ফেলা। এ ছাড়া যাদের হাত মোটা, তাদের জন্য দারুণ অপশন এটি। সেই সঙ্গে যিনি পরছেন, তার আত্মবিশ্বাস বাড়াতেও সহায়তা করবে এই ব্লাউজ। সঙ্গে বাড়াবে সৌন্দর্যও।
দ্য টুকি
বাংলায় বোঝায় লুকোচুরি। এই ব্লাউজের প্লেফুলনেসের পুরোটাই প্রাণিত ভারতের কাচ্ছ্ অঞ্চলের রাবাদি সম্প্রদায়ের নারীদের থেকে। ব্লাউজটি প্রথম আলোয় আসে ২০০৭-০৮ সালে ল্যাকমে ফ্যাশন উইকের উইন্টার কালেকশনে। শোর জন্য ডিজাইন করা টুকি ব্লাউজ মাতায় দর্শকদের, ফ্যাশন-সচেতনদেরও চর্চার বিষয় হয়ে ওঠে। ব্লাউজের ডিজাইনে ব্যবহার করা হয় সূক্ষ্ম কারুকার্য, নিগূঢ় ডিটেইলিং আর আউট অব দ্য বক্স সব রং। শোতে মডেল আনুশকা শর্মা পরেন ব্লাউজটি। পরে শোর ছবি দেখে এই মডেলকে অডিশনের জন্য ডেকে পাঠান বলিউডের শীর্ষস্থানীয় পরিচালক আদিত্য চোপড়া। আর বর্তমানটা সবার জানা। বলিউডের সেরা অভিনেত্রীদের তালিকায় আছে আনুশকার নাম।
দ্য আখমারো
ভারতের ঐতিহ্যবাহী নাচের পোশাক থেকে অনুপ্রাণিত ব্লাউজটিকে সব্যসাচী মুখার্জি দিয়েছেন করসেটের আঁটসাঁট ভাব। এই ব্লাউজ প্রথম প্রদর্শিত হয় ২০১১ সালে, পিলি কোঠি নামের শোতে। শো-এর প্রস্তুতির সময় স্যাম্পল ফ্যাব্রিককে ড্রেস ফর্মে ড্রেপ করার মুহূর্তে একজন অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিজাইনারের চোখে প্রথম ধরা পড়ে, এর বাস্ট এরিয়ার সেলাই এক জোড়া চোখের মতো দেখাচ্ছে। কাকতালীয়ভাবে সেদিন সন্ধ্যায় ব্র্যান্ডটির প্রডাকশন ফ্লোরের রেডিওতে বেজে ওঠে নব্বইয়ের জনপ্রিয় বলিউড গান ‘আখমারে’। ফলাফল—ব্লাউজটির নামকরণের জন্য এটাই বেছে নেন সব্যসাচী।
দ্য ভি-নেক
সব্যসাচী মুখার্জির ফিরোজাবাদ কতুর কালেকশনের জন্য তৈরি, ২০১৪ সালে। চলচ্চিত্র পরিচালক মিয়া নায়েরের বহুল চর্চিত সিনেমা ‘কামা সূত্র’ থেকে অনুপ্রাণিত। মূলত পিতৃতান্ত্রিক কুটিলতার বিরুদ্ধে কড়া জবাব দেওয়ার প্রচেষ্টা থেকেই এ ব্লাউজের নকশা করেন সব্যসাচী। নিজেকে নারীবাদী দাবি করা এই ডিজাইনার এমন একটি ব্লাউজ বানাতে চেয়েছিলেন, যাতে আধুনিক ভারতীয় নারীসত্তা উপস্থাপিত হবে। বাজারে আসার পরপরই রানী মুখার্জি, বিদ্যা বালানের মতো প্রথম সারির বলিউড অভিনেত্রীদের পরতে দেখা গেছে এ ব্লাউজ। গলাকে সুডৌল দেখানোর পাশাপাশি ঘাড়ের অংশকেও প্রসারিত করে তোলে ব্লাউজটি। যাদের বাস্ট এরিয়া তুলনামূলকভাবে বড়, তাদের জন্য চমৎকার অপশন এটি। তবে গ্রেসফুলি এটি পরার মন্ত্র একটাই—বি কনফিডেন্ট। এমনটাই ভাষ্য সব্যসাচীর।
দ্য চান্দ
আন্ডারওয়্যারড লঞ্জারের ভারতীয় রূপ এ ব্লাউজ। ব্লাউজের ওয়েস্টব্যান্ড সামান্য অর্ধচন্দ্রাকৃতির হওয়ায় ডিজাইনার রোমান্টিসাইজড করে এর নাম দিয়েছেন দ্য চান্দ। সত্তরের দর্শকনন্দিত বলিউড ডিভা জিনাত আমানের ‘সত্যম শিবম সুন্দরম’ নামক সিনেমার চরিত্র থেকে প্রবলভাবে অনুপ্রাণিত এর নকশা। অনেকটা করসেটের মতো দেখায়, যেকোনো কাপড় দিয়ে সহজে তৈরি করে নেওয়া যায়। হোক তা শিফন বা স্টিফ টাফেটা। লো ওয়েস্ট লেহেঙ্গার সঙ্গে এর জোড় চমৎকার, এমনকি লো ওয়েস্ট জিনসের সঙ্গেও দেখায় দুর্দান্ত। কাঁধের অংশকে সুন্দর দেখানোর পাশাপাশি কোমরকেও সুডৌল দেখাতে দারুণ এ ব্লাউজ।
মডেল: আনসা ও রিচি
মেকওভার: পারসোনা
ওয়্যারড্রোব: সাফিয়া সাথী
জুয়েলারি: উযমাহ্
ছবি: হাদী উদ্দীন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top