skip to Main Content

কভারস্টোরি I স্কিন সাইক্লিং

প্রশ্ন যখন যথাযথ ও নিয়মিত ত্বকযত্নের, অধিক পণ্য ব্যবহার সব সময় কাজের কথা নয়। আবার প্রতিদিন একই পণ্য সমানভাবে ব্যবহারের বদলে একেক দিন একেক ধরনের পণ্য চক্রাকারে ব্যবহার করলে তা থেকে উপকৃত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। বিস্তারিত সাদিয়া আফরিন শায়লার লেখায়

স্কিন কেয়ার রুটিন! ইনস্টাগ্রাম বা ফেসবুকের মতো প্ল্যাটফর্মে নিয়মিত হয়ে থাকলে কথাটি পরিচিতই শোনাবে। সহজ ভাষায় বললে, ত্বকযত্নের কয়েক ধরনের পণ্য ধাপে ধাপে ব্যবহার করাই স্কিন কেয়ার রুটিন মেনে চলা। ত্বকের যত্নে তারকারা কী পন্থা অবলম্বন করেন, তা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলো বরাবরই সরব। একেক তারকার স্কিন কেয়ার রুটিন একেক ধরনের। আমেরিকান তারকা কিম কারদাশিয়ানের কথা ধরা যাক। গত বছর ৯ ধাপের স্কিন কেয়ার রুটিন নিয়ে হাজির হয়েছিলেন তিনি। ক্লিনজার, টোনার, এক্সফোলিয়েটর, হায়ালুরনিক অ্যাসিড সেরাম, ভিটামিন সি সেরাম, ফেস ক্রিম, আই ক্রিম, অয়েল ড্রপ, নাইট অয়েল। কিমের মতো এমন জটিল প্রক্রিয়ায় না চললেও স্কিন কেয়ার রুটিনে সাধারণত চার থেকে পাঁচ ধরনের পণ্য ব্যবহারের চল রয়েছে। তবে ত্বকযত্নে এত বেশি পণ্য ব্যবহার কি আদৌ প্রয়োজনীয়? তা ছাড়া একটার পর একটা ভিন্ন ধরনের পণ্য ব্যবহার করলে ত্বকের ক্ষতি হওয়ার ঝুঁকি কতটা?
ত্বক যেমন দেহের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ, তেমনি এটি একদিকে আমাদের পরিচায়ক, অন্যদিকে সার্বিক রক্ষাকবচও। মানসিক ও শারীরিকভাবে সুস্থ থাকতে হলে তাই এর যত্নও নেওয়া চাই সেভাবে। ত্বকযত্নে কয়েক ধরনের পণ্য ধাপে ধাপে ব্যবহার করাকে অনেক স্কিন স্পেশালিস্ট ইতিবাচক হিসেবে দেখলেও এর কিছু নেতিবাচক দিক রয়েছে। এ ক্ষেত্রে সবার আগে আসে ত্বকে একেক ধরনের পণ্যের লেয়ার তৈরির মাধ্যমে অবাঞ্ছিত বিল্ড-আপ জমা হওয়ার প্রসঙ্গ। এমন বিল্ড-আপের ফলে একদিকে যেমন ত্বকে নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে, তেমনি স্কিন কেয়ার পণ্যগুলো ব্যবহারের খুব একটা সুফলও মেলে না। এ সমস্যা থেকে বাঁচতে এবার ত্বকের যত্নে এসেছে নতুন এক তত্ত্ব: স্কিন সাইক্লিং! না, ত্বকের কোনো ওয়ার্কআউট নয় এটি; বরং ত্বকযত্নে কীভাবে একেক ধরনের পণ্য পরিমিত উপায়ে ব্যবহার করা উচিত, তার চক্র বোঝাতেই এই শব্দযুগলের আবির্ভাব। প্রতিদিন একই পণ্য একইভাবে ব্যবহারের পরিবর্তে একেক দিন একেক ধরনের পণ্য চক্রাকারে ব্যবহার করলে তা থেকে উপকৃত হওয়ার সম্ভাবনাই বরং বেশি।
দেহের মতো আমাদের ত্বকেরও চাই বিশ্রাম। এই ধারণা থেকে স্কিন সাইক্লিংয়ের উৎপত্তি। আমেরিকার নিউইয়র্কের ডার্মাটোলজিস্ট হুইটনি বো প্রথম এই শব্দযুগল ব্যবহার করেন। তবে স্কিন সাইক্লিং সম্প্রতি জনপ্রিয়তা পেলেও এই পদ্ধতি নিয়ে অনেক দিন ধরেই বলে আসছেন ডার্মাটোলজিস্টরা। বিশেষ করে নায়াসিনামাইড, হায়ালুরনিক অ্যাসিড, সিরামাইড, স্যালিসাইলিক অ্যাসিড, বেনজয়েল পার-অক্সাইড, গ্লাইকোলিক অ্যাসিড, ল্যাকটিক অ্যাসিড, ভিটামিন সি কিংবা ভিটামিন বি-এর মতো অ্যাকটিভ এজেন্ট প্রতিদিন ব্যবহার না করে, বিরতি দিয়ে ব্যবহারের পরামর্শ তাদের। তাহলে ইদানীং কেন এই পদ্ধতি এত জনপ্রিয়তা পেল? প্রথমত, আকর্ষণীয় নামের কারণে এবং সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের হ্যাশট্যাগে শব্দযুগলটি ব্যবহারের ফলে খুব দ্রুত অনেকের কাছে পরিচিতি পেয়েছে স্কিন সাইক্লিং। ত্বক নিয়ে সচেতনতা বরাবরই আলোচনার বিষয় হলেও বিশেষ করে করোনার সময়টায় মানুষ এ নিয়ে বেশি সচেতন হয়ে ওঠে। কিন্তু এ সচেতনতা অজান্তেই অনেকের ভেতর অতি-সচেতনতায় রূপ নেয়! একটার পর একটা এক্সপেরিমেন্ট, নতুন নতুন পণ্যের ছড়াছড়িতে স্কিন কেয়ার রুটিনের ধাপও বাড়তে থাকে।
প্রত্যেকের ত্বক যে ভিন্ন, সেদিকে নজর না দিয়ে এসব এক্সপেরিমেন্টের কারণে অনেকের ত্বকেই দেখা দেয় নানা সমস্যা। জ্বালাপোড়া ভাব, অ্যালার্জি, ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়া প্রভৃতি সমস্যা নিয়ে ডার্মাটোলজিস্টদের কাছে ধরনা দেওয়া মানুষের সংখ্যা বাড়তে থাকে। ডার্মাটোলজিস্ট হুইটনির কাছেও রোগীরা একই ধরনের সমস্যা নিয়ে আসেন। রোগীদের সমস্যাগুলো খুব কাছ থেকে দেখার পর সেসব সমাধানের উপায় বের করতে গিয়েই উৎপত্তি ঘটে স্কিন সাইক্লিংয়ের।
আমেরিকান ফ্যাশন ম্যাগাজিন হারপার’স বাজারে প্রকাশিত এক আর্টিকেলে হুইটনি স্কিন সাইক্লিং শুরুর গল্প বলেন। করোনার সময় তার কাছে যেসব রোগী আসতেন, তাদের বেশির ভাগের ধারণা ছিল—একেকটি পণ্য যত বেশি ব্যবহার করা যাবে, তা ততই ভালো কাজ করবে। কিন্তু হরেক রকমের পণ্য অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে উল্টো তাদের ত্বকে ক্ষতিই বেশি হয়। এমনকি তারা এটাও জানতেন না, কোন পণ্য কখন ব্যবহার করা উচিত। যখনই বাজারে আসা কোনো নতুন পণ্যের কথা তারা জানছেন, তখনই তা নিয়ে করছেন এক্সপেরিমেন্ট! হুইটনি তখন বুঝতে পারেন, সমস্যা যেহেতু অনেক প্রকারের পণ্য একসঙ্গে ব্যবহারের ফলে হচ্ছে, তাহলে একেক দিন একেক ধরনের পণ্য ব্যবহার করা যাক। শুরুতে স্কিন সাইক্লিংয়ের পরামর্শ তিনি তার রোগীদেরই দিয়েছিলেন। পরবর্তীকালে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম টিকটকে স্কিন সাইক্লিং নিয়ে একটি ভিডিও প্রকাশের পর তা দ্রুতই জনপ্রিয়তা পেতে থাকে।
এবার তাহলে দেখা যাক স্কিন সাইক্লিং আসলে কীভাবে কাজ করে। এ ক্ষেত্রে মূলত রাতের স্কিন কেয়ার রুটিনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয় বেশি। ডার্মাটোলজিস্ট হুইটনি তার রোগীদের বেলায়ও শুরুতে রাতের রুটিন ঘিরেই পরামর্শ দিয়েছিলেন। তার ভাষায়, এটি এমন এক পদ্ধতি, যার মাধ্যমে অপ্রয়োজনীয় অস্বস্তিকর ভাব ছাড়াই স্কিন কেয়ার পণ্যের জন্য ত্বককে প্রস্তুত করা হয়। স্কিন সাইক্লিংয়ের মূল লক্ষ্য হলো অ্যাকটিভ এজেন্ট রেটিনলের কার্যকারিতা বাড়ানো। হুইটনির পরামর্শ অনুযায়ী, ক্ল্যাসিক স্কিন সাইক্লিং চার রাতব্যাপী একটি চক্র। এই চক্রের প্রথম রাতে এক্সফোলিয়েশনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। তবে এ ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক এক্সফোলিয়েন্ট নয়, ল্যাকটিক অ্যাসিড বা গ্লাইকোলিক অ্যাসিডের মতো রাসায়নিক এক্সফোলিয়েন্টের ওপরই জোর দেন হুইটনি। দ্বিতীয় রাতে ব্যবহার করা হয় অ্যাকটিভ এজেন্ট রেটিনল। তৃতীয় ও চতুর্থ রাতে ত্বকে কোনো প্রকারের তীব্র উপাদান বা অ্যাকটিভ এজেন্ট ব্যবহার করা হয় না; বরং একটি হালকা ময়শ্চারাইজার ব্যবহারের মাধ্যমে ত্বককে সার্বিকভাবে সুস্থ হয়ে ওঠার সময় দেওয়া হয়। স্কিন সাইক্লিংয়ের এই দুটি দিনকে ‘রেস্ট ডে’ বা বিশ্রামের দিন হিসেবে উল্লেখ করেন হুইটনি। অন্যান্য স্কিন কেয়ার রুটিনের সঙ্গে স্কিন সাইক্লিংয়ের পার্থক্য এই দুদিনের রেস্ট ডে।
বলাই হয়েছে, স্কিন সাইক্লিংয়ের প্রথম রাত শুরু হয় এক্সফোলিয়েশন দিয়ে। এক্সফোলিয়েশন বলতে মূলত আমাদের ত্বকের পৃষ্ঠ থেকে মৃতকোষ বা ডেড স্কিন সেল দূর করা বোঝায়। এক্সফোলিয়েশনের আবার উপায় রয়েছে দুটি—ফিজিক্যাল ও কেমিক্যাল এক্সফোলিয়েশন। কেমিক্যাল এক্সফোলিয়েশনের বেলায় আলফা-হাইড্রক্সি অ্যাসিড (এএইচএ), বিটা-হাইড্রক্সি অ্যাসিড (বিএইচএ) বা এনজাইম ব্যবহার করে মৃতকোষ দূর করা হয়। অন্যদিকে ফিজিক্যাল বা ম্যানুয়াল এক্সফোলিয়েন্টের বেলায় স্কিন কেয়ার ডিভাইস, লিকুইড, জেল বা স্ক্রাব ব্যবহার করে এক্সফোলিয়েট করা হয়। প্রশ্ন হলো, আমাদের ত্বকে এক্সফোলিয়েশন আসলে কেন প্রয়োজন। আমরা জানি, ত্বক ক্রমাগত নিজেকে মেরামত করে এবং নিয়মিত প্রতিস্থাপন প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে যায়। ঠিক এ কারণেই আপনি নিজের শরীরজুড়ে মৃত চামড়ার স্তর দেখতে পান। এক্সফোলিয়েশন সহজভাবেই এই মৃত চামড়া থেকে মুক্তি দেয়। তা ছাড়া এক্সফোলিয়েশনের পাঁচটি মূল সুবিধাও রয়েছে। বয়সের দাগ বা বলিরেখা হালকা করতে সাহায্য করে এটি। সেই সঙ্গে ফাইন লাইন বা ত্বকের সূক্ষ্মরেখাও কম দৃশ্যমান করে তোলে। এক্সফোলিয়েশনের পর ত্বকের ওপরে থাকা মৃত চামড়ার স্তরটি পরিষ্কার হয়ে যাওয়ায় ময়শ্চারাইজার, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং কোলাজেন-বুস্টিং সেরাম আরও সহজে ত্বকে কাজ করতে পারে। তা ছাড়া ত্বকের ছিদ্র বা পোরসে জমে থাকা ময়লা দূর হয় এক্সফোলিয়েশনে; ফলে কমে আসে ব্রণ হওয়ার ঝুঁকি। সেই সঙ্গে পোরসের আকার ও ত্বকের দাগ কমিয়ে আনতেও সাহায্য করে এক্সফোলিয়েশন। এককথায়, উজ্জ্বল ও মসৃণ ত্বক পেতে হলে এক্সফোলিয়েশনের জুড়ি মেলা ভার।
মূলত অত্যন্ত সংবেদনশীল ও ব্রণ-প্রবণ ত্বকের ক্ষেত্রে খুব ভালো কাজ করে কেমিক্যাল এক্সফোলিয়েন্ট। ডার্মাটোলজিস্টরা শুরুতে গ্লাইকোলিক অ্যাসিড, ল্যাকটিক অ্যাসিড, ম্যান্ডেলিক অ্যাসিডের এক্সফোলিয়েন্ট ব্যবহারের পরামর্শ দেন। তা ছাড়া পেঁপে, আনারস বা কুমড়ার মতো ফল বা সবজির এনজাইম সমৃদ্ধ এক্সফোলিয়েন্ট ব্যবহারের পরামর্শও দেন অনেকে। সাধারণত যারা কখনোই কেমিক্যাল এক্সফোলিয়েন্ট ব্যবহার করেননি, কিংবা যারা নিজ ত্বকে কোনো ধরনের রাসায়নিক উপাদান ব্যবহার করতে চান না, তাদেরকেই মৃদু ধাঁচের এসব ফল বা সবজির এক্সফোলিয়েন্ট ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়। কেমিক্যাল এক্সফোলিয়েন্ট ব্যবহারের বড় একটি সুবিধা, এ ক্ষেত্রে কোনো ধরনের স্ক্রাবিংয়ের প্রয়োজন পড়ে না, যা ফিজিক্যাল এক্সফোলিয়েশনের বেলায় দেখা যায়। তা ছাড়া এমন এক্সফোলিয়েশনে যে ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহৃত হয়, সেসব উপাদানের অতিরিক্ত উপকারিতাও পায় ত্বক। যেমন আপনি যদি গ্লাইকোলিক অ্যাসিড ব্যবহার করেন, তাহলে এক্সফোলিয়েশনের পাশাপাশি আপনার ত্বকের কোলাজেন উৎপাদন উদ্দীপিত হবে। সেই সঙ্গে এর অ্যান্টি-এজিং প্রপার্টি ত্বকের বলিরেখা হালকা করতেও সাহায্য করবে। আবার স্যালিসাইলিক অ্যাসিড জাতীয় এক্সফোলিয়েন্ট ত্বকের তেল গ্রন্থি থেকে তেলের নিঃসরণ কমায়, যার কারণে কমে আসে ব্রণ। এমন অনেক কেমিক্যাল এক্সফোলিয়েন্টও আছে, যেগুলোতে কয়েক ধরনের অ্যাকটিভ এজেন্ট ব্যবহার করা হয়।
কেমিক্যাল এক্সফোলিয়েন্ট ব্যবহার করতে চাইলে তালিকার প্রথমেই রাখা চাই সাধারণ এএইচএ এবং বিএইচএ। উভয় কেমিক্যালই ত্বকের বাইরের স্তরে থাকা লিপিডজাতীয় উপাদানের সঙ্গে মিশে গিয়ে মৃতকোষগুলো আলাদা করতে সাহায্য করে। এএইচএ সবচেয়ে সাধারণ ধরনের মৃদু জাতের কেমিক্যাল পিল। এই গোত্রের কেমিক্যালগুলো মূলত প্রাকৃতিক উৎস থেকে উদ্ভূত। ফল, দুধ বা চিনি থেকেই এগুলোর উৎপত্তি। বর্তমানে ত্বকযত্নে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত দুটি পণ্য হলো গ্লাইকোলিক অ্যাসিড—যা চিনি থেকে তৈরি এবং ল্যাকটিক অ্যাসিড—যা দুধ থেকে তৈরি। এএইচএ জাতের ফেশিয়াল এক্সফোলিয়েটর তৈলাক্ত ত্বকে দারুণ কাজ করে। এএইচএর মতো বিএইচএও মৃদু জাতের কেমিক্যাল পিল। বিএইচএর সবচেয়ে সাধারণ প্রকার হলো স্যালিসাইলিক অ্যাসিড। ব্রণপ্রবণ ত্বকের জন্য পথ্য হিসেবে কাজ করে এটি। শেষমেশ আসে এনজাইম এক্সফোলিয়েন্ট। ত্বক যদি খুব সংবেদনশীল হয়, কিংবা আগে কখনো যদি কেমিক্যাল এক্সফোলিয়েন্ট ব্যবহারের অভিজ্ঞতা না থাকে, শুরুতে এনজাইমভিত্তিক এক্সফোলিয়েন্ট ব্যবহারের পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। এই এনজাইমগুলো পুরোপুরি প্রাকৃতিক উৎস থেকেই আসে। এএইচএ, বিএইচএ কিংবা অ্যাসিডভিত্তিক অন্যান্য এক্সফোলিয়েটরের মতো কাজ করলেও এনজাইম এক্সফোলিয়েন্টের কাজ খুবই ধীরগতির। তাই ব্যবহারের জন্য এনজাইম এক্সফোলিয়েন্ট অত্যন্ত নিরাপদ ও কার্যকর।
এ তো গেল স্কিন সাইক্লিংয়ের প্রথম রাতের রুটিন। দ্বিতীয় রাতে ব্যবহার করতে হয় রেটিনল, সে কথাও আগে জেনেছি। এবার একটু বিস্তারিত জানা যাক। ১৯৭১ সালে আমেরিকায় ব্রণ, সোরিয়াসিস, বলিরেখা এবং বার্ধক্যজনিত অন্যান্য রোগের চিকিৎসার পাশাপাশি কয়েক ধরনের ক্যানসারের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয় নতুন একটি পণ্য। আমেরিকান অস্টিওপ্যাথিক কলেজ অব ডার্মাটোলজি অনুসারে, ‘রেটিনয়েড’ নামের পণ্যটি মূলত ভিটামিন এ-এর একটি ডেরিভেটিভ। হার্ভার্ড হেলথ পাবলিশিং সূত্রে জানা যায়, বাজারে প্রথম রেটিনয়েড হিসেবে আসে ট্রেটিনোইন টপিকাল (রেটিন-এ)। প্রাথমিকভাবে পণ্যটি ব্রণের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। কিন্তু পরে দেখা যায়, ত্বকে পিগমেন্টেশনের দাগ কমিয়ে এনে সার্বিকভাবে কোষের সুস্থতায়ও কাজ করছে রেটিনয়েড। এরপরই রেটিনয়েডের অপেক্ষাকৃত মৃদু সংস্করণ ‘রেটিনল’ আসে বাজারে, যা প্রতিনিয়ত ব্যবহৃত হচ্ছে ত্বকযত্নে। আমাদের ত্বকের কোষ রিপেয়ারে কাজ করে এটি। রেটিনল ও রেটিনয়েড মূলত নিজ নিজ অ্যান্টি এজিং প্রপার্টির জন্য জনপ্রিয়। অনেকেই রেটিনয়েড ও রেটিনলকে একই ভাবলেও এ দুটোর মধ্যে বিস্তর ফারাক। দুটি উপাদানই ভিটামিন এ পরিবারের অংশ হলেও এদের রয়েছে তীব্রতার ভিন্নতা। সহজভাবে বললে, রেটিনল হলো রেটিনয়েডের দুর্বল রূপ। আর তাই স্কিন কেয়ার পণ্য হিসেবে রেটিনল ব্যবহার করা হয়, যেখানে রেটিনয়েড ব্যবহারের জন্য প্রয়োজন হয় ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন। অন্যদিকে, রেটিনল ব্যবহারের ফলে ত্বকে এর প্রভাব দেখাতেও সময় লাগে বেশ। ডার্মাটোলজিস্টরা বলেন, ত্বকে রেটিনলের দৃশ্যমান প্রভাবের জন্য অপেক্ষা করতে হয় ১২ সপ্তাহ! রেটিনল দুর্বল জাতের হওয়ায় প্রায়ই ময়শ্চারাইজারের সঙ্গে মিশিয়ে ব্যবহার করা হয় এটি।
চলুন জানি, রেটিনল আমাদের ত্বকে কীভাবে কাজ করে। অ্যান্টি-এজিং ও ব্রণ কমাতে ব্যবহৃত অন্যান্য পণ্যের মতো একই পদ্ধতিতে ত্বকের মৃতকোষ অপসারণ করে না এটি; বরং রেটিনলের অণুগুলো ত্বকের বাইরের স্তর এপিডার্মিস ভেদ করে ভেতরের স্তর ডার্মিসে প্রবেশ করে। এক স্তর থেকে আরেক স্তরে যাওয়ার সময়টায় রেটিনল ইলাস্টিন ও কোলাজেন উৎপাদন উন্নীত করে। ত্বকের ভেতরের স্তরে গিয়ে কাজ করতে পারে বলে সূক্ষ্মরেখা, বলিরেখা এবং ওপেন পোরের দৃশ্যমানতা কমিয়ে আনতে পারে এটি। একই সঙ্গে রেটিনল ত্বককে এক্সফোলিয়েটও করে, ফলে ত্বকের গঠন ও টোন আরও উন্নত হয়। সিভিয়ার অ্যাকনি কমানো ও ব্রণের দাগ হালকা করতেও এটি সাহায্য করে। রেটিনল ত্বকের পোরগুলো পরিষ্কার রাখে বলে ব্রণ সৃষ্টিকারী জীবাণু ত্বকে বাসা বাঁধতে পারে না। এ ছাড়া ত্বকের বাম্প দূর করতেও বেশ কাজে আসে রেটিনল। কারও যদি সিভিয়ার অ্যাকনের সমস্যা থাকে, তাহলে চিকিৎসকেরা মূলত রেটিনলযুক্ত অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তবে রেটিনল মৃদু জাতের উপাদান হওয়ায় ব্রণের ওপর এর প্রভাবের দেখা পেতেও প্রায় ৬ সপ্তাহ লেগে যায়। পণ্যটি ত্বকের হাইড্রেশন স্তরের ভারসাম্য বজায় রাখতেও সাহায্য করে। এ ছাড়া ত্বকের সিবামের অতিরিক্ত উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে বলে তৈলাক্ত ত্বকের জন্যও রেটিনল উপকারী। বর্তমানে রেটিনল মূলত ব্রণের দাগ দূর করতে, সূর্যরশ্মির ক্ষতিকর প্রভাব কাটাতে, ত্বকের অসম গঠন ঠিক করতে, মেছতার দাগ কমাতে, হাইপারপিগমেন্টেশন দূর করতে, পোরের দৃশ্যমানতা কমাতে ব্যবহার করা হয়।
তবে রেটিনল ও রেটিনয়েড ত্বকে ব্যবহারের জন্য অনুমোদিত হলেও এগুলোর কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। নিয়মিত রেটিনল ব্যবহারকারীরা প্রায়ই শুষ্ক ত্বকের সমস্যায় ভোগেন। রেটিনল ব্যবহারে অন্যান্য সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলো ত্বক লালচে হয়ে যাওয়া, চুলকানি হওয়া, ত্বকের চামড়া ওঠা প্রভৃতি। তবে এ ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলো সাধারণত বেশি দিন স্থায়ী হয় না। তা ছাড়া ত্বক রেটিনলে অভ্যস্ত হয়ে গেলে এসব সমস্যাও আর থাকে না। তবে ত্বকে যদি জ্বালাপোড়া ভাব হয়, তাহলে শুরুতে কম ঘনত্বের রেটিনল ব্যবহারের পরামর্শ দেন ডার্মাটোলজিস্টরা। আরেকটি উপায় হলো, মুখ ধোয়ার কিছু সময় পর রেটিনল ব্যবহার করা। সাধারণত মুখ ধোয়ার ৩০ মিনিট পর এটি প্রয়োগ করলে ত্বকের জ্বালাপোড়া কম হতে পারে। আর এ ক্ষেত্রেই কাজে আসে স্কিন সাইক্লিং। তিন দিন পরপর রেটিনল ব্যবহারে এর পরিপূর্ণ কার্যকারিতার জন্য হয়তো বেশি সময় লাগবে; তবে নানা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থেকে মুক্তিও মিলবে। ধীরে ধীরে রেটিনলের প্রতি ত্বকের সহনশীলতা বাড়ালে উপকারও পাওয়া যাবে সেভাবেই। আবার আপনি যদি একই সময়ে রেটিনলযুক্ত একাধিক পণ্য ব্যবহার করেন, তাহলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ঝুঁকিও বেশি হতে পারে। যে পণ্যগুলো ব্যবহার করছেন, সেগুলোর লেবেল গুরুত্বসহকারে পড়া চাই। বিশেষ করে অ্যান্টি-এজিং এবং ব্রণ-প্রতিরোধী ক্রিমে রেটিনল থাকার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাই পেণ্য জেনে-বুঝে ব্যবহার করাই ভালো।
রেটিনল দীর্ঘ সময় ব্যবহারে সানবার্ন বা রোদে পোড়ার ঝুঁকি বেড়ে যায় বহুগুণে। এ কারণেই ডার্মাটোলজিস্টরা রাতে এটি ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। স্কিন সাইক্লিংয়ে যেহেতু প্রতি রাতে রেটিনল ব্যবহার করা হয় না, তাই এ পদ্ধতিতে ত্বক এ ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ঝুঁকিতে খুব কমই পড়ে। স্কিন সাইক্লিং মেনে চললেও বাইরে বের হলে সানস্ক্রিন ক্রিম ব্যবহার করা উচিত। তা ছাড়া যতটা সম্ভব সরাসরি রোদ এড়িয়ে চলা ভালো। সাধারণত গর্ভবতী নারীদের রেটিনলযুক্ত পণ্য ব্যবহার না করার পরামর্শ দেওয়া হয়। ধারণা করা হয়, এই অ্যাকটিভ এজেন্ট গর্ভের সন্তানের জন্মগত ত্রুটির ঝুঁকি বাড়াতে পারে, এমনকি গর্ভপাতেরও ঝুঁকি থাকে। তাই বর্তমানে গর্ভবতী কিংবা অদূর ভবিষ্যতে তা হওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে—এমন নারীদের উচিত রেটিনল সম্পর্কে ডার্মাটোলজিস্টের পাশাপাশি নিজের চিকিৎসকের সঙ্গেও আলাপ করে নেওয়া।
স্কিন সাইক্লিংয়ের সর্বশেষ দুদিন, অর্থাৎ তৃতীয় ও চতুর্থ দিন হলো ময়শ্চারাইজ ও হাইড্রেশনের সময়কাল। শুষ্ক হোক, কিংবা তৈলাক্ত বা মিশ্রিত—যেকোনো ধরনের ত্বকের দৈনন্দিন যত্নের রুটিনে রাখার মতো চমৎকার একটি পণ্য ময়শ্চারাইজার। এটি ত্বককে হাইড্রেটেড ও সতেজ রাখতে সাহায্য করে। আমাদের ত্বককে সুস্থ রাখতে কিছু উপকারী তেল নিঃসৃতকারী গ্রন্থি রয়েছে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ত্বককে সুস্থ রাখতে দরকারি এসব গ্রন্থির তেল উৎপাদন ক্ষমতা কমে যেতে থাকে। ন্যাচারাল এই হাইড্রেশনের অভাব পূরণে কাজ করে ময়শ্চারাইজার। তা ছাড়া ত্বক যদি শুকিয়ে যায়, তাহলে ত্বকের পিএইচে ভারসাম্যহীনতার দেখা মেলে; ফলে স্বাভাবিকভাবেই অনেক সমস্যা দেখা দিতে পারে। এসব ক্ষেত্রে ত্বকে লালচে ভাব বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি ব্রণও বেড়ে যায়। এ ধরনের সমস্যা এড়াতে ব্যবহার করা চাই ময়শ্চারাইজার। একেক ধরনের ত্বকের জন্য রয়েছে একেক ধরনের ময়শ্চারাইজার। শুষ্ক ত্বকের জন্য রয়েছে তৈলাক্ত ময়শ্চারাইজার। আবার প্রাকৃতিকভাবে তৈলাক্ত ত্বকের জন্য রয়েছে কম তেলযুক্ত ময়শ্চারাইজার। তা ছাড়া ময়শ্চারাইজার কিন্তু বলিরেখা দূর করতেও সাহায্য করে। সাধারণত শুষ্ক ত্বকে দ্রুত বলিরেখা পড়ে। ময়শ্চারাইজার ব্যবহারে ত্বকের হাইড্রেশন বজায় থাকে বলে ত্বক শুকিয়ে যায় না; ফলে বলিরেখাও সহজে পড়ে না। আবার যাদের মুখে আগে থেকেই বলিরেখা রয়েছে, তারা নিয়মিত ময়শ্চারাইজার ব্যবহার করলে বলিরেখার দৃশ্যমানতাও কমে আসে। নিয়মিত ময়শ্চারাইজার ব্যবহার করা আক্ষরিক অর্থে স্কিন কেয়ার ট্রিটমেন্ট না হলেও এর কার্যকারিতা স্কিন কেয়ারের চেয়ে কম নয়। ময়শ্চারাইজারে অন্যান্য অ্যাকটিভ এজেন্টের মতো তীব্র কোনো কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় না বলে এর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার শঙ্কাও নেই। স্কিন সাইক্লিংয়ের রেস্ট ডেগুলোতে ময়শ্চারাইজারের হাইড্রেশনকে এক অর্থে ত্বকের খাদ্যই বলা চলে!
স্কিন সাইক্লিংয়ের প্রতি রাতে একেক ধরনের পণ্য ব্যবহার করতে হলেও দিনের রুটিনটা একেবারেই সাধারণ। ক্লিনজার, ভিটামিন সি সেরাম, ময়শ্চারাইজার এবং অধিক এসপিএফযুক্ত সানস্ক্রিন ক্রিম ব্যবহার করেই দিনের বেলা ত্বকের যত্ন নিতে পারেন সহজে। প্রথমে ক্লিনজার দিয়ে ত্বক পরিষ্কার করে সেরাম ব্যবহার করে নিন। এর কিছু সময় পর ব্যবহার করতে হবে ময়শ্চারাইজার। তা ভালোমতো ত্বকে বসে গেলে ব্যবহার করা চাই সানস্ক্রিন ক্রিম।
প্রশ্ন হলো, সবার ত্বকেই কি কাজ করবে স্কিন সাইক্লিং? আপনি যদি স্কিন কেয়ারে রেটিনল বা কেমিক্যাল এক্সফোলিয়েন্টের মতো পণ্য যোগ করতে চান, তাহলে স্কিন সাইক্লিংই সবচেয়ে কার্যকর পন্থা। কিন্তু আপনার ত্বকে যদি ব্রণ বা রোজেশিয়ার (ত্বক লালচে হয়ে যাওয়া) মতো সমস্যা কিংবা যেকোনো ধরনের চর্মরোগ থাকে, অথবা আপনি যদি ত্বকের চিকিৎসায় কোনো ধরনের ওষুধ ব্যবহার করে থাকেন, তাহলে স্কিন সাইক্লিং শুরুর আগে কোনো বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে ভুলবেন না যেন।

মডেল: তমা মির্জা
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: কৌশিক ইকবাল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top