skip to Main Content

মনোজাল I টাক-টকিজ

পুরুষত্বের প্রতীক হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে নানা সমীক্ষায়। চুল নিয়ে চিন্তার দিন শেষ

মাথায় চুল কম বা অকালে টাক পড়ে যাচ্ছে? সে কারণে যাদের মন খারাপ বা ভাবছেন আকর্ষণ বোধ হয় কমেই গেল নারীদের কাছে, তাদের জন্য সুখবর। চুল নিয়ে দুশ্চিন্তা বন্ধ করে ফেলা যাবে একেবারেই; বরং চুলের কোনো ঝামেলা যাতে না থাকে, সে জন্য একটু সাহস করে টাকই হয়ে যাওয়া যাবে।
ভাবনা আসতে পারে, একজন মানুষের টাক মাথার সংকেত কী? অনেকের হয়তো জানা, ছোটবেলায় শোনা সেই উক্তি, টাক টাকা আনে! অর্থাৎ টাক মাথার পুরুষেরা সাধারণত প্রচুর টাকাপয়সার মালিক হন। আসলেই কি তাই? হলে হতেও পারে, কথাগুলো তো আর এমনি এমনি আসেনি! ইদানীং আবার বলা হচ্ছে, কামানো মাথা আসলে পুরুষদের আধিপত্য ও কর্তৃত্ব প্রকাশ করে। বিশ্বাস হচ্ছে না? ব্যাপারটা কিন্তু রীতিমতো গবেষণার ফসল। যেখানে বলা হয়েছে, একটি কামানো মাথা নির্দেশ করে আধিপত্য, কর্তৃত্ব ও নিয়ন্ত্রণ। এ ছাড়া যেসব পুরুষ তাদের মাথা শেভ বা ন্যাড়া করেন, তারা অন্যদের তুলনায় নিজেকে আরও শক্ত ও শক্তিশালী ভাবেন। হলিউডের শীর্ষস্থানীয় অ্যাকশন তারকা ব্রুস উইলিস, ডোয়াইন জনসন, ভিন ডিজেল ও জেসন স্ট্যাথামের কামানো মাথা আসলে তাদের দাপুটে পুরুষালি ভাবমূর্তিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
টাক পুরুষের শক্তির প্রতীক—এ ধারণা অবশ্য নতুন নয়। আলেকজান্ডার দ্য গ্রেটের শাসনামলে গ্রিক সৈন্যদের একটি প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা হিসেবে তাদের মাথা ন্যাড়া করার আদেশ দেওয়া হয়েছিল। যাতে লড়াইয়ের সময় শত্রুদের হাত, তাদের চুল আঁকড়ে না ধরে বা ধরা থেকে বিরত থাকে। তারপর থেকে কামানো মাথা একরকম আগ্রাসন ও কঠোরতার প্রতীক হয়ে ওঠে। তা ছাড়া এ-ও বলা হয়, গর্বের সঙ্গে টাক মাথা প্রদর্শনে অনেক আত্মবিশ্বাসী হওয়া লাগে। তার মানে, মানুষটির মনোবল অনেক শক্তিশালী হতে হয়। গবেষণা অনুসারে, কামানো মাথাওয়ালা ছেলেদেরকে পুরো মাথা ভর্তি বা পাতলা চুলের ছেলেদের তুলনায় ১৩ শতাংশ বেশি শক্তিশালী, লম্বা ও নেতৃত্বের অধিকারী বলে মনে করা হয়।
ত্রিশের দশকের শেষের দিকে, পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের হোয়ার্টন স্কুল অব বিজনেসের প্রভাষক আলবার্ট ম্যানেস তার ক্ষয়ে যাওয়া চুলের লাইন নিয়ন্ত্রণ করার জন্য মাথা কামিয়ে ফেলেছিলেন। এরপর তিনি তার সম্পর্কে মানুষের ধারণার ব্যাপক পরিবর্তন লক্ষ করেন। যেখানে তার মনে হয়েছে, মানুষ তার প্রতি আগের চেয়ে বেশি শ্রদ্ধাশীল হয়ে উঠেছে। টাক মাথায় পুরুষেরা আরও পুরুষালি হয়ে ওঠেন—এই ধারণার পেছনের সত্যতা যাচাইয়ের জন্যই এই পরীক্ষা চালান তিনি।
যখন তিনি নিজের মাথা শেভ করা শুরু করেছিলেন, তখন থেকেই তার প্রতি অন্যদের আচরণ বদলে যায়। পুরো ব্যাপারটা ম্যানেসকে দারুণ অবাক করে। কামানো মাথার অন্য পুরুষদেরও একই রকম অভিজ্ঞতা কি না, পরীক্ষাটা মূলত ছিল তা নিয়ে। তিনি জানতে চেয়েছিলেন, স্বেচ্ছায় মাথা কামানো পুরুষদের তুলনায় মাথা ভর্তি চুল কিংবা চুলের রেখা কমে যাওয়া পুরুষদের আলাদা সামাজিক অবস্থান বলে মনে করা হয় কি না। সোশ্যাল সাইকোলজিক্যাল অ্যান্ড পার্সোনালিটি সায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত গবেষণাপত্রে তিনি অন্যান্য মানুষের ওপর পরিচালিত তিনটি পরীক্ষার বর্ণনা করেছেন। যার মূল বিষয়বস্তু একটাই, টাক মাথাওয়ালা পুরুষদের কি বেশি প্রভাবশালী ও কর্তৃত্বপূর্ণ মনে করা হয়? প্রথম পরীক্ষায় ৫৯ জন স্বেচ্ছাসেবক একটি বিজনেস স্কুল প্রোগ্রামে নথিভুক্ত পুরুষদের ২৫টি ছবি বিশ্লেষণ করেন। যেখানে ২৫ জন পুরুষের মধ্যে ১০ জনের মাথা ন্যাড়া ছিল। বাকিরা বিভিন্ন স্টাইল ও লেন্থে তাদের চুল কাটতেন। অংশগ্রহণকারীদের তাদের অনুভূত ক্ষমতা, প্রভাব ও কর্তৃত্বের ভিত্তিতে প্রতিটি ফটোগ্রাফকে রেট দিতে বলা হয়েছিল। মজার ব্যাপার হলো, ফলাফলগুলো গড় করার পর দেখা গেল শেভ মাথার পুরুষেরা শক্তিশালী, প্রভাবশালী ও কর্তৃত্বপূর্ণ রেটিংয়ের শীর্ষে অবস্থান করছেন। তিনটি পরীক্ষার ফলাফলেই টাক মাথার পুরুষদের আধিপত্য, পুরুষত্ব, নেতৃত্বের সম্ভাবনা ও শক্তিতে সর্বোচ্চ রেট দেওয়া হয়েছিল।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কেন। গবেষকেরা বলছেন, কামানো মাথার পুরুষদের একটি বিশাল প্রভাব পড়ে অন্যদের ওপর। আধিপত্য ও পুরুষত্ব-সম্পর্কিত উপলব্ধিগুলো উচ্চতা ও শক্তির মতো শারীরিক বৈশিষ্ট্য পর্যন্ত প্রসারিত বলে ধারণা করা হয়। মাথা কামানো পুরুষদের একটি শক্তিশালী চেহারা তৈরি হয় মানুষের মনে। এর পেছনে মূলত যে তত্ত্ব কাজ করে তা হলো, যে পুরুষেরা স্বেচ্ছায় মাথা ন্যাড়া করার উদ্যোগ নেন, তারা আসলে অবচেতনে সাহসিকতা ও আধিপত্যের ছাপ রাখেন। এতে তাদের ইমেজ উন্নত হয় অনেকাংশে। পুরোপুরি টাক মাথা, দৃশ্যমান টাক চেহারার তুলনায় আরও বেশি আকর্ষণীয় লাগে।
তার মানে, যেসব পুরুষ নিজেদের ম্যানলি হিসেবে প্রমাণ করার জন্য ব্যস্ত, তারা একটু সাহস করে মাথা শেভ করে ফেললেই চলবে। কিংবা ন্যাচারালি চুলের ক্ষতিতে ভুগছেন এমন পুরুষেরা তাদের মাথা ন্যাড়া করে আধিপত্য ও আকর্ষণ উভয়ই বাড়িয়ে তুলতে পারেন। ইদানীং তাই মনোবিশেষজ্ঞরাও চুল ঝরে পড়ছে এমন বিষণ্নতায় ভোগা পুরুষদের মাথা টাক করে ফেলার পরামর্শ দিচ্ছেন। কিংবা যাদের অকালেই অল্পবিস্তর টাক দেখা দিচ্ছে মাথায়, তাদের এটিকে ঢেকে রাখার চেষ্টা বন্ধ করার পরিবর্তে পুরোপুরি শেভ করে ফেলার পরামর্শ দেওয়া হয়। যাতে অন্য মানুষের ধারণার পরিবর্তন তাদের আত্মসম্মানকে বাড়িয়ে দিতে পারে।
মাথা ভর্তি চুলের অধিকারী পুরুষদের তুলনায় কামানো মাথার পুরুষদের কম আকর্ষণীয় এবং বয়স্ক দেখায়, এই ধারণা এখন অমূলক। আমেরিকান সংস্কৃতিতে শেভ হেড বা কামানো মাথার পুরুষদের প্রধানত সামরিক, ক্রীড়া ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পেশাগুলোতে আধিপত্য বিস্তার করতে দেখা যায়। যে পুরুষেরা তাদের মাথা ন্যাড়া করেন, তাদের অপ্রচলিত বলে মনে করা হয়। ভাবা হয়, সমাজে যাদের উচ্চ মর্যাদা রয়েছে, তারা সামাজিক নিয়মে কম বাধাগ্রস্ত হন এবং তাদের নিয়ম লঙ্ঘনের প্রবণতা বেশি থাকে। আসলে এর পেছনের কারণ হলো, সমাজে চুলের নান্দনিক মূল্যকে উপেক্ষা করতে সাহস লাগে। এই আত্মবিশ্বাস ও সাহসের কারণেই নারীদের কাছে অনেক বেশি আকর্ষণীয় হয়ে ওঠেন টেকো মাথার পুরুষেরা। জরিপেও মিলেছে প্রমাণ। বিশেষজ্ঞদের মতে, নারীরা বাজে হেয়ারস্টাইলের পুরুষদের চেয়ে বল্ড হেড বেশি পছন্দ করেন।
তাই বলে চুল থাকলেও আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর জন্য মাথা কামিয়ে ফেলতে হবে, ব্যাপারটি এমন নয়। তবে চুল যদি পাতলা হয়ে যায়, সে ক্ষেত্রে নির্দ্বিধায় মাথা কামানো যেতে পারে এখন। তাতে কোনো লজ্জা নেই; বরং আরও হ্যান্ডসাম হয়ে ওঠার সুযোগ শতভাগ।

 রত্না রহিমা
ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top