skip to Main Content

দৃশ্যভাষ্য I দালি দ্যোতনা

ক্রিয়েটিভ ফটোগ্রাফির প্রসঙ্গ এলেই আলোকচিত্রপ্রেমীদের অনেকের মনে ভেসে ওঠে ‘দালি অ্যাটোমিকাস’ শিরোনামের এই অনবদ্য শিল্পকর্ম। স্প্যানিশ পরাবাস্তববাদী কিংবদন্তি চিত্রশিল্পী সালভাদর দালির [১৯০৪-১৯৮৯] চিত্রকর্মের মতোই পরাবাস্তবতার আবহ ছড়ানো এ ছবি। না, ফটোশপ কিংবা অন্য কোনো এডিটিং অ্যাপ বা সফটওয়্যার ব্যবহারে এটি সৃষ্ট নয়; বরং ক্যামেরায় সরাসরি তোলা! আমেরিকান পোর্ট্রেট ফটোগ্রাফার ফিলিপ হ্যালসম্যানের [১৯০৬-১৯৭৯] কীর্তি। ১৯৪৮ সালের।
বিশ শতকের শুরুর দিকে ‘লাইফ’ ম্যাগাজিনে আলোকচিত্রী হিসেবে কাজ করতেন ফিলিপ। জন্মসূত্রে লাটভিয়ার (তৎকালীন রুশ সাম্রাজ্যের অন্তর্গত) নাগরিক। উন্নত জীবনের আশায় পাড়ি জমিয়েছিলেন নিউইয়র্কে। দালির সঙ্গে পরিচয় ১৯৪১ সালে। তারপর বন্ধুত্ব।
১৯৪৮ সালে বিশেষ আলোকচিত্রের আইডিয়া নিয়ে দালির সামনে হাজির হন ফিলিপ। জানতেন, সেটি কোনো মামুলি প্রতিকৃতি হলে চলবে না। তেলচিত্রে আঁকা দালির বিখ্যাত চিত্রকর্ম ‘লেদা অ্যাটোমিকা’য় প্রাণিত হয়ে সাসপেনশনের একটি আইডিয়া সৃষ্টি করতে চেয়েছিলেন এই আলোকচিত্রী। অ্যাটোমিকাস মানে ‘সবকিছুতেই সাসপেনশন’। নিজের চিত্রকর্মটি দেখতে থাকা শিল্পীকে ঘিরে একটি সম্প্রসারিত দৃশ্য সৃষ্টি করেছিলেন ফিলিপ। সেই দৃশ্যে যুক্ত হলো বেশ কিছু অনুষঙ্গ। যেগুলোর মধ্যে রয়েছে একটি ভাসমান চেয়ার, এক বালতি পানি, লাফানো অবস্থায় স্বয়ং দালি এবং একটি ভাসমান ইজেল।
লেদা অ্যাটোমিকা চিত্রকর্মটির সামনে লাফিয়ে দৃশ্যবন্দি হলো তিনটি বিড়ালও। স্বয়ং চিত্রকর্মটি ভাসছিল শূন্যে। সহকারী, পরিবারের সদস্য এবং সরু তারের সহায়তা নিয়ে এই পরাবাস্তব দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি করতে সক্ষম হয়েছিলেন মিস্টার হ্যালসম্যান। ইজেল ও চিত্রকর্মকে ভাসিয়ে রাখা হয়েছিল তারের সাহায্যে। কীভাবে সম্ভব হয়েছিল? দালি যখন লাফিয়ে উঠেছিলেন, তার পেছনে এক হাতে চেয়ারটি শূন্যে তুলে রেখেছিলেন আলোকচিত্রীর স্ত্রী। সহকারীরা ছুড়ে দিয়েছিলেন বিড়াল ও পানি।
ডিজিটাল ফটোগ্রাফি তখনো দূরের ভবিষ্যৎ। স্বভাবতই ফিল্ম ক্যামেরায় তোলা এ ছবি। প্রতিবার ক্লিক করার পর ফিলিপ ছুটে যেতেন ফিল্ম ডেভেলপ করতে। ছবিটির কম্পোজিশন চেক করে ফিরে আসতেন আরেকবার চেষ্টা করার জন্য। ২৮ বারের প্রচেষ্টায় অবশেষে ধরতে পেরেছিলেন বিখ্যাত এই আলোকচিত্র। পরে তারের নিশানা মুছে দিয়েছেন ফিল্ম ডেভেলপের সময়। আর, দালি এঁকে দিয়েছেন একটি পূর্ণাঙ্গ চিত্রকর্ম, যেটি তারা জুড়ে দিয়েছেন সেন্ট্রাল ইজেলে।
এই একটিমাত্র আলোকচিত্র সৃষ্টির জন্য আইডিয়া, সেটআপ ও সম্পাদনপ্রক্রিয়ায় কাটাতে হয়েছিল দীর্ঘ সময়। সেই শ্রম যে বৃথা যায়নি, বলা বাহুল্য।

 লাইফস্টাইল ডেস্ক
সূত্র: এক্সপার্ট ফটোগ্রাফি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top