skip to Main Content

ফিচার I অদ্ভুত শীতোৎসব

শীত মানেই হাড়কাঁপুনি আবহাওয়ায় দেহ-মনে ঈষৎ উষ্ণতার সন্ধান। আর সময় ও সুযোগ পেলে উৎসবে মেতে ওঠা। শীত ঘিরে সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে রয়েছে বিবিধ উৎসব। এগুলোর মধ্যে কোনো কোনোটা বেশ অদ্ভুতুড়েও

কুইবেক উইন্টার কার্নিভ্যাল
এই অবাধ আনন্দোৎসবের সূত্রপাত বেশ আগে। ১৮৯৪ সালে। তারপর দীর্ঘদিন অনিয়মিত হলেও, ১৯৫৫ সাল থেকে নিয়মিত বার্ষিক কার্নিভ্যাল। কানাডার কুইবেক প্রভিন্সের রাজধানী কুইবেক সিটিতে। সাধারণত জানুয়ারির শেষ দিক থেকে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত চলে। আগামী আসর বসবে ২৫ জানুয়ারি থেকে ১১ ফেব্রুয়ারি। কুইবেক উইন্টার কার্নিভ্যালকে দুনিয়ার উদ্ভট শীতোৎসবগুলোর একটি হিসেবে গণ্য করা হয়। স্নোম্যান মাসকট ‘বনহোম’-এর আবির্ভাবের মধ্য দিয়ে সূচনা ঘটে এর। তাতে বিভিন্ন ধরনের ইভেন্টে মাতোয়ারা হন চার লাখের বেশি ভিজিটর। ইভেন্টগুলোর মধ্যে রয়েছে আইস-কোল্ড স্নো বাথ, গ্রাফিতি ডিসপ্লে, স্নো স্কাল্পচার কনটেস্ট, নাইট প্যারেড, ক্যানো রেস, হিউম্যান-পাওয়ার্ড ফুসবল, আইস স্কেটিং, এক্স থ্রোয়িং, আইস স্কাল্পচার ওয়ার্কশপ, কার্লিং প্রভৃতি। এ সময়ে বৈচিত্র্যপূর্ণ সজ্জা, বরফের ভাস্কর্য আর আলোর ঝলকে অন্য রকম এক স্নো ফেস্টিভ্যালে রূপ নেয় গোটা শহর। তুষারঝরা শীতে অংশগ্রহণকারীদের উষ্ণ রাখার জন্য থাকে বিশেষ সিগনেচার পানাহার! কার্নিভ্যালটির অফিশিয়াল ওয়েবসাইট: www.carnaval.qc.ca।
ফ্রোজেন ডেড গাই ডেজ
এই উৎসবের সূচনা একটি মৃত্যুকে ঘিরে। ১৯৮৯ সালে ব্রেডো মোর্সটল নামের এক নরওয়েজিয়ান হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। পরিবার তার মৃতদেহ নিয়ে আসে যুক্তরাষ্ট্রে; রেখে দেয় বিতর্কিত ক্রায়োনিক অবস্থায়। মানে, আবারও বাঁচিয়ে তোলা যাবে—এই আশায়, বিশেষ হিমায়িতভাবে সংরক্ষণ করে। তাদের আশা, বিজ্ঞান নিশ্চয় একদিন এমন অবস্থায় পৌঁছাবে, যখন এই মৃতদেহে প্রাণ ফেরানো সম্ভব হবে। শুরুতে ক্যালিফোর্নিয়ার ওকল্যান্ডের একটি ক্রায়োনিক ফ্যাসিলিটিতে রাখা হয়েছিল সেই মৃতদেহ। চার বছর পর সেখান থেকে সরিয়ে নেওয়া হয় কলোরাডো রাজ্যের পার্বত্য শহর নেদারল্যান্ডের নিকটবর্তী একটি চালাঘরে। সেখানে এখনো রয়েছে মোর্সটলের মৃতদেহ। আর একে ঘিরেই ১৯৯৫ সালে নেদারল্যান্ডবাসী শুরু করে এই বিশেষ শীতোৎসব—ফ্রোজেন ডেড গাই ডেজ। প্রতিবছর তিন দিনব্যাপী আয়োজিত এই উৎসবে উষ্ণ তাঁবুর নিচে চলে লাইভ মিউজিক। আরও থাকে কফিন রেসিং, ফ্রোজেন টি-শার্ট কনটেস্ট, শবযানের প্যারেড, আইস টার্কি বোলিং, ফ্রোজেন স্যালমন টস প্রভৃতি। আগামী আসর বসবে ১৫ থেকে ১৭ মার্চ। আন্তর্জাতিক পর্যটকেরা অংশ নিতে চাইলে টিকিট কাটতে পারেন অফিশিয়াল ওয়েবসাইট থেকে: www.frozendeadguydays.com।
অ্যাঙ্করেজ ফার রেন্ডেজভাস উইন্টার ফেস্টিভ্যাল
জনসংখ্যার হিসাবে যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কা রাজ্যের সবচেয়ে বড় শহর অ্যাঙ্করেজে অনুষ্ঠিত এই আয়োজনকে উত্তর আমেরিকার সবচেয়ে বড় শীতকালীন উৎসব গণ্য করা হয়। সূচনা ১৯৩৫ সালে। সৃজনশীল পরিমণ্ডল ও খ্যাপাটে কর্মকাণ্ডের জন্য এটি বিশেষভাবে পরিচিত। ঐতিহ্যগতভাবে ১০ দিনের উৎসব হলেও চলে পুরো শীতকাল। কে না জানে, যুক্তরাষ্ট্রের শীতকাল একটু বেশি দীর্ঘই! আয়োজনে থাকে বল্গা হরিণের দৌড় প্রতিযোগিতা, স্নো স্কাল্পচার কনটেস্ট, স্নো-শু সফটবল, কাস্টমড ফান রান, স্লোড ডগ রেস, আউটহাউস রেস, ডেইলি কার্নিভ্যাল, দাড়ি-গোঁফ প্রতিযোগিতাসহ আরও অনেক কিছু। আগামী আসর ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩ মার্চ। ওয়েবসাইট: www.furrondy.net।
কর্ডোভা আইসওর্ম ফেস্টিভ্যাল
আলাস্কার কর্ডোভা শহরে অনুষ্ঠিত এই উৎসবের নামকরণ করা হয়েছে একটি অতিক্ষুদ্র কৃমির নাম থেকে, গ্লাসিয়াল ইকোসিস্টেমে যেটির ব্যাপক বংশবৃদ্ধি ঘটে! উৎসবটির সূচনা ১৯৬১ সালে। তারপর থেকে প্রতিবছর শীতকালে টানা এক সপ্তাহের বেশি দিন চলে। এর কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে আইসওর্ম প্যারেড। স্থানীয়রা নিজেদের সৃজনশীলতা ও মৌসুমি সহনশীলতার সমন্বয়ে একটি বিরাট আকৃতির আইসওর্ম বানিয়ে সেটি নিয়ে করেন শোভাযাত্রা। অন্যান্য আকর্ষণের মধ্যে থাকে জমকালো আতশবাজি প্রদর্শনী, সার্ভাইভাল স্যুট রেস, কাগজের এয়ারপ্লেন প্রতিযোগিতা, স্ক্যাভেঞ্জার হান্ট, নানা রকমের বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান প্রভৃতি। আগামী আসর বসবে ২৭ জানুয়ারি থেকে ৩ ফেব্রুয়ারি। ওয়েবসাইট: www.icewormfestival.com।
সেন্ট পল উইন্টার কার্নিভ্যাল
সেন্ট পল। যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে শীতল শহরগুলোর একটি। এই শহরে অনুষ্ঠিত সেন্ট পল উইন্টার কার্নিভ্যালে থাকে চার ডজনের বেশি ইভেন্ট। এটিই যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে পুরোনো শীতোৎসব। সূচনা ১৮৮৬ সালে। তারপর থেকে প্রতিবছর উদ্‌যাপিত হচ্ছে বিভিন্ন বৈচিত্র্যের সমাহারে। আয়োজনের মধ্যে থাকে ডেটাইম প্যারেড, নাইটটাইম প্যারেড, আইস অ্যান্ড স্নো কার্ভিং কম্পিটিশন, বারস্টুল স্কিংসহ অনেক কিছু। ২৫ জানুয়ারি থেকে ৩ ফেব্রুয়ারি বসবে আগামী আসর। ওয়েবসাইট: www.wintercarnival.com।
বুসোইয়ারাস
ধরা যাক, সময়টি ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে। আপনি হাঙ্গেরির মোহাচ শহরের অধিবাসী। মাস কয়েকের অন্ধকারাচ্ছন্নতা, তুষার, বরফ, হিমশীতল বাতাস ও শীতের দিন সহ্য করে এ সময়ে পৌঁছেছেন। সময়টি কীভাবে উদ্‌যাপন করবেন? ওই শহরের বাসিন্দারা এমন সময়ে প্রতিবছর মেতে ওঠেন বুসোইয়ারাস উৎসবে। কাঠে তৈরি নানা ধরনের দুঃস্বপ্নতুল্য মুখোশ আর ভারী পশমের কোট পরে শত শত নারী-পুরুষ বিশেষ নৌকা নিয়ে শহরজুড়ে দল বেঁধে ঘুরে বেড়ান, আর পরিশেষে টাউন স্কয়ারে গিয়ে পুড়িয়ে দেন একটি কফিন। তাদের মতে, এটি শীতের সমাপ্তি ঘোষণা করে। ছয় দিনের এই উৎসবে আরও থাকে কস্টিউম কনটেস্ট, আর্ট ডিসপ্লে, নাচ ও লাইভ মিউজিক। এবারের আসর বসবে ৮ থেকে ১৩ ফেব্রুয়ারি। ওয়েবসাইট: www.mohacsibusojaras.hu।
পোর্টল্যান্ড উইন্টার লাইট ফেস্টিভ্যাল
দীর্ঘতর রাত আর নিরন্তর বৃষ্টিপাত—যুক্তরাষ্ট্রের অরেগন অঙ্গরাজ্যের বন্দরনগর পোর্টল্যান্ডের শীতকাল বেশ নিরানন্দেরই বটে! এই ঋতুর নিষ্করুণ অন্ধকারাচ্ছন্নতায় আলো ও প্রণোচ্ছলতার জোয়ার বইয়ে দিতেই ২০১৬ সালে পোর্টল্যান্ড উইন্টার লাইট ফেস্টিভ্যালের সূচনা ঘটে। অল্পদিনের মধ্যেই উৎসবটি বৃষ্টি ঝরুক বা না ঝরুক, ঘর থেকে বেরিয়ে শীতকালকে স্বাগত জানানোর জন্য পোর্টল্যান্ডবাসীর কাছে একটি রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। এই আউটডোর ফেস্টিভ্যালে চলে নানা রূপে, নানা আকারে, নানা ঢঙে আলোর প্রদর্শনী। তাতে যুক্ত হয় ইস্পাতের একটি ড্রাগন ভাস্কর্য, প্রমাণ আকারের লাইট ব্রাইট, আলোকোজ্জ্বল পং টেবিল, শিখা ক্ষেপণকারী ঝাড়বাতি প্রভৃতি। জ্বলজ্বলে আলোর পাশে বিজ্ঞানবিষয়ক আলাপ, আগুনের পাশে বসে গল্প শোনানো, লাইভ মিউজিক, নাচ, আলোকোজ্জ্বল বাইক রাইড, ল্যান্টার্ন প্যারেড, সাইলেন্ট ডিস্কোসহ থাকে আরও অনেক আয়োজন। আগামী আসর আসন্ন ২ থেকে ১০ ফেব্রুয়ারি। ওয়েবসাইট: www.pdxwlf.com।
হোয়াইটফিশ উইন্টার কার্নিভ্যাল
প্রচলিত আছে, যুক্তরাষ্ট্রের মন্টানা অঙ্গরাজ্যের ফ্ল্যাটহেড ভ্যালির প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে বিমোহিত হয়ে সেখানে নিজের নতুন আবাস গড়েছিলেন নর্ডিক মিথোলজির তুষার দেবতা। সেই সুখ দিন কয়েকের মধ্যেই রূপ নেয় বিড়ম্বনায়। তার রানিকে অপহরণের চেষ্টা চালায় একদল ইয়েতি। অবশ্য ওই উপত্যকায় যেহেতু মানুষের বসবাস ছিল, তাই তুষার দেবতা ও তার স্ত্রী তখন পরে নিয়েছিলেন মানুষের পোশাক। শুধু তা-ই নয়, ইয়েতিদের প্রতিহত করার জন্য সাহায্য চেয়েছিলেন মানুষের কাছে। পেয়েছিলেনও। পরিশেষে, মান্টানার হোয়াইটফিশ শহরের অধিবাসীরা ওই দেবতাকে বানিয়েছিলেন নিজেদের রাজা। এ তো গেল কিংবদন্তি। তবে এর বাস্তব রেশও রয়েছে। সেই সূত্র ধরে, দেবতা ও মানুষে মিলে পাহাড়ি ইয়েতিদের পাহাড়ে তাড়িয়ে নেওয়ার এবং শীতকাল উপভোগ করার জন্য চল ঘটেছে হোয়াইটফিশ উইন্টার কার্নিভ্যালের। এই আনন্দমুখরতায় থাকে ডিস্কো পার্টি, ঘোড়ায় টানা স্কি, চিলড্রেন’স কার্নিভ্যাল, সেলিব্রেটরি প্যারেড ইত্যাদি আয়োজন। আগামী আসর বসবে ২ থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি। ওয়েবসাইট: www.whitefishwintercarnival.com।
এখানেই শেষ নয়। আরও রয়েছে জাপানের সাপোরোর ‘সাপোরো স্নো ফেস্টিভ্যাল’ [www.snowfes.com], যুক্তরাষ্ট্রের উইসকনসিনের ‘ম্যাডিসন উইন্টার ফেস্টিভ্যাল’ [www.winter-fest.com], মিনেসোটার ‘ইন্টারন্যাশনাল ইলপট ফেস্টিভ্যাল’ [www.eelpoutfestival.com], নিউইয়র্কের ‘সরনাক লেক উইন্টার কার্নিভ্যাল’ [www.saranaclakewintercarnival.com] প্রভৃতি। উৎসবগুলো মূলত স্থানীয়দের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হলেও সেখানে সুবিধামতো ভিড় করেন সারা দুনিয়ার পর্যটকেরা। চাইলে আপনিও যেতে পারেন। কীভাবে? জানতে ব্রাউজ করতে পারেন সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইটে।

 লাইফস্টাইল ডেস্ক
ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top