skip to Main Content

মনোজাল I পুরাতনে পুনরুজ্জীবন

ভবিষ্যতের সৌন্দর্যবিশ্ব যদি মেটাভার্সেই মশগুল থাকবে, তাহলে নস্টালজিয়া নিয়ে এত মাতামাতি কেন! প্রোডাক্টের ফর্মুলা থেকে প্যাকেজিং—সবেতেই কেমন পুরোনো দিনের মায়ার প্রবল প্রভাব

মানুষ কেন বারবার নস্টালজিয়ায় আক্রান্ত হয়? আসলে নস্টালজিয়া হচ্ছে একরকম রোমান্টিসিজম, যা আমাদের অতীতের মধুর স্মৃতি মনে করিয়ে একধরনের সুখানুভূতি দেয়। আর ঠিক একই কনসেপ্ট যদি ব্যবসার পরিভাষায় ঘটে, ব্যাপারটি কেমন হবে? প্রশ্নটি ভবিষ্যৎকালীন করা বোধ হয় ঠিক হলো না। কারণ, কনসেপ্টটির প্রয়োগ এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে। বিশেষ করে সৌন্দর্যবিশ্বে। ইদানীং জনপ্রিয় বিজ্ঞাপনগুলো লক্ষ করলেই মিলবে প্রমাণ। নানি-দাদিরা চুল ভালো রাখতে নারকেল তেলের সঙ্গে কী ব্যবহার করতেন কিংবা সাবানের পরিবর্তে তারা ত্বক ভালো রাখার জন্য মাটি ব্যবহার করতেন কি না, তাতেই মূল ফোকাস থাকছে বিউটি ব্র্যান্ডগুলোর। কারণ, বাজারের নতুন ফেসওয়াশ বা শ্যাম্পুতে পাওয়া যাচ্ছে সেসব উপাদান; যা একই সঙ্গে নস্টালজিয়ায় আক্রান্ত করবে এবং উৎসাহী করে তুলবে ওই পণ্য ব্যবহারে।
গবেষকদের মতে, বিষয়টির উত্থান মূলত করোনাকালে। তাদের ভাষায়, সে সময় উদ্বেগ আর অস্থিরতার মধ্যে আটকে গিয়েছিল জীবন। তাই সহজ সময়ের জন্য আকাঙ্ক্ষা মানুষকে আরামদায়ক পণ্য এবং দীর্ঘ সময় ধরে চর্চিত সৌন্দর্য আচারের দিকে ঝুঁকিয়েছে। নিউ নরমাল যেন পাল্টে দিয়েছে গোটা সৌন্দর্যবিশ্বকে। বিশেষ করে উৎপাদন এবং ক্রেতার ভোগের পুরো প্যাটার্ন পাল্টে যায় এর পরপর। নস্টালজিয়াকেন্দ্রিক পণ্য সেই সহজাত আশাবাদের আলো দেখাতে সক্ষম। সম্প্রতি সামাজিক মিডিয়াগুলোতে তা এমনভাবে প্রচারিত হচ্ছে যে, কট্টর সমালোচকেরাও বিষয়টি অর্থপূর্ণ দৃষ্টিতে দেখতে বাধ্য হচ্ছেন। এই প্রবণতার কল্যাণেই বিশ্বব্যাপী অনেক নতুন নতুন ব্র্যান্ডের জন্ম হচ্ছে। যারা স্বাস্থ্যোজ্জ্বল মাথার ত্বক বা চুলের জন্য শতাব্দীপ্রাচীন আয়ুর্বেদিক আচার অনুষ্ঠানের ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে তৈরি করছে তাদের প্রোডাক্ট।
প্রতিবেশী ভারতের কথা বলতে হয়। সেখানকার বিখ্যাত কিছু বিউটি ব্র্যান্ড আজকাল চুলের যত্নে খাঁটি আচার ও অনুশীলনগুলো প্রবর্তনের যে প্রচারণা চালাচ্ছে, তাতে পশ্চিমাদেরও মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার উপায় থাকছে না। দীঘল, উজ্জ্বল চুলের জন্য ফর্মুলা হিসেবে নানি-দাদিদের আমলের ঐতিহ্যবাহী হেয়ার অয়েলিং রুটিনের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তৈরি হচ্ছে হাতে বানানো উদ্ভিজ্জ তেলের মিশ্রণ। শক্তিশালী ব্র্যান্ডিংয়ের সঙ্গে প্রাচীন ভারতীয় সৌন্দর্যরহস্যের অনুস্মারক মনে করিয়ে দেওয়া প্যাকেজিংয়ের মেলবন্ধন, এটি আসলে নস্টালজিক ব্র্যান্ডের নিখুঁত উদাহরণ। একই সময়ে ‘পূর্বের সাথে পশ্চিমের মেলবন্ধন’ ধারণাটিও প্রাধান্য পাচ্ছে।
গবেষকেরা মনে করেন, কোভিড-১৯ এক অর্থে সৌন্দর্যশিল্পের জন্য আশার অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে। ভোক্তাদের পছন্দ ও মূল্যবোধের পরিবর্তন সেখানে নিয়মিত অভিব্যক্তিকে পরিবর্তিত করেছে। সুস্থতার বোধ এবং চারপাশের প্রকৃতিকে লালন করার জন্য অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে প্রাণশক্তিকে। নস্টালজিয়া ফ্যাক্টরটি সেখানে সৌন্দর্যশিল্পের জন্য নবজাগরণ সূচনার কাজ করেছে। সহজ অর্থে, অতীত ও বর্তমানের সঙ্গে পারস্পরিক সমন্বয়ে থাকা ‘সৌন্দর্য’ বিকশিত হওয়ার সময় এসেছে।
বাড়িতে চার দেয়ালের মধ্যে আবদ্ধ থাকার কারণে, করোনা মানুষকে আরও সচেতন হওয়ার এবং নিজেদের ও শরীরের প্রতি মনোযোগ দেওয়ার সময় দিয়েছে; যা অতীতে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই উপেক্ষিত হয়েছে। আর তাই নিখুঁত ত্বকের জন্য একটি জাদুকরী ফাউন্ডেশনে বিনিয়োগ করার পরিবর্তে, ভোক্তারা এখন এমন সব পণ্যের দিকে বেশি ঝুঁকছেন, যা মনে আনন্দ অনুভূতি দেয় বা ভালো বোধ করায়। সৌন্দর্যপণ্যের ক্রেতারা প্রাকৃতিক ও নিরাপদ উপাদান দিয়ে তৈরি পণ্যগুলো খুঁজছেন, যা মূলত মান ও কার্যকারিতার ওপর জোর দেয় এবং যার সঙ্গে একটি গভীর অর্থও সংযুক্ত থাকে।
এই প্রত্যাশা পূরণের জন্যই, বিউটি ব্র্যান্ডগুলো নিত্যনতুন টেকনিকে ভোক্তাদের মনে প্রবেশ করার চেষ্টা করছে। কীভাবে? এমন একটি পণ্য তৈরির মাধ্যমে, যা ক্রেতার চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি সৌন্দর্যশর্তগুলো পূরণেও পারঙ্গম। নস্টালজিয়াকে কেন্দ্র করে নতুন এই বিউটি ব্র্যান্ডগুলো বিকশিত হচ্ছে আসলে ক্রেতাদের স্বাভাবিকতার অনুভূতি প্রদানের জন্য। যাদের মূল উদ্দেশ্য মানুষকে শিকড়ে ফিরিয়ে নেওয়া। বিউটি-মার্কেটিংয়ের হিসাবে আজকাল বেশির ভাগ গ্রাহকই নতুন পণ্যের খোঁজে এসে এমন কিছু চান, যা নস্টালজিয়াকে প্রতিফলিত করে। যা তাদের শিকড়ের সঙ্গে পুনরায় সংযোগ করার তাগিদ দেয়, উদ্বেগ কমাতে সাহায্য করে। কয়েক দশক ধরে, বিউটি ইন্ডাস্ট্রি ‘ফিল-গুড ফ্যাক্টর’-এর পরিবর্তে চেহারার ওপর ফোকাস করে আসছিল। কিন্তু নতুন যুগের ভোক্তা স্বচ্ছতা চান এবং অর্থপূর্ণ ক্রয়ের সিদ্ধান্তের জন্য প্রচেষ্টা করতেও পিছপা হন না। তারা তাদের পণ্য পছন্দের মাধ্যমে নিজেদের ব্যক্তিত্বকে পুনরুজ্জীবিত হতে দেখতে চান। এই ক্রমবর্ধমান ল্যান্ডস্কেপই নতুন ব্র্যান্ডগুলোকে উৎসাহিত করেছে। তাই সেই কাজ করার জন্য ব্র্যান্ডের আখ্যানকে আরও আকর্ষণীয় করা হোক বা নস্টালজিক প্যাকেজিংয়ের মাধ্যমে প্রসাধনীতে এক্স ফ্যাক্টর যোগে চেষ্টার কমতি থাকছে না। বিষয়টিকে এক অর্থে নস্টালজিয়া মার্কেটিংয়ের প্রভাব বলেও ধরা যায়।
নস্টালজিয়া মার্কেটিং নিত্যনতুন ব্র্যান্ডগুলোর নতুন পাওয়ার টুল হিসেবে কাজ করছে। এই প্রবণতা অনুসরণ করে, বিউটি ব্র্যান্ডগুলো তাদের পণ্য ও প্রচারাভিযানের কৌশলগুলোকে পুনরুজ্জীবিত করে তোলার সুবিধা নিচ্ছে। একটি পরিচিত মোটিফ, আইকন বা রঙের প্যালেটসহ দৃশ্যত আকর্ষণীয় প্যাকেজিং ডিজাইন, কাস্টমাইজেশন ও ব্যক্তিগতকরণের মতো বিশেষ পরিষেবাগুলো অফার করছে তারা। গ্রাহকেরাও তাতে তৃপ্তি পাচ্ছেন। কারণ, নস্টালজিয়াপ্রাণিত সৌন্দর্যপণ্যগুলো তাদের সুখী ও আত্মবিশ্বাসী বোধ করতে সাহায্য করছে। কারণ কী? গবেষকেরা বলছেন, পুরো বিষয়টি আসলে এমন একটি সময়ের কথা মনে করিয়ে দেয়, যখন ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী ছিল মানুষ।

 রত্না রহিমা
মডেল: রিচি
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: ক্যানভাস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top