skip to Main Content

বিশেষ ফিচার I ঊর্ধ্বগতির উইন্টার মার্কেট

শীতপোশাকের বাজার কলেবরে বাড়ছে। পরিবর্তন হয়েছে ক্রেতা চাহিদা। প্রভাবক হিসেবে ট্রেন্ড কার্যকর। ফ্যাশন ব্র্যান্ডের কর্মকর্তাদের মতে, এবারেও গতি ঊর্ধ্বমুখী। কারণ খুঁজেছেন সারাহ্ দীনা

অতীতে শীত আসি আসির এই সময়ে ট্রাংক খুলে বের করা হতো উলেন পোশাক। ন্যাপথলিনের গন্ধ ছড়িয়ে যেত সবখানে। বছর বছর নতুন শীতকাপড় কেনার প্রচলন তখন ছিল না। এরপরে ধীরে ধীরে আসে পরিবর্তন। এখন তো প্রতিবছরেই নতুন পোশাক কেনার ধারা তৈরি হয়েছে। ক্রেতা-বিক্রেতা—উভয়েরই এতে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ। ব্র্যান্ডস্টোরগুলোতে দেখা মেলে উইন্টার কালেকশনের বৈভব।
উইন্টার মার্কেটের গ্রোথ সম্পর্কে তথ্য জানা গেল বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কাছ থেকে। ফ্যাশন হাউস লা রিভ নিয়মিত শীত সংগ্রহ নিয়ে আসে। ব্র্যান্ডটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মুন্নুজান নার্গিস বলেন, ‘আমাদের দেশের ফ্যাশন সিজন মূলত তিনটি—গ্রীষ্ম, বর্ষা ও শীত। ঈদ, ফাল্গুন, বৈশাখ কয়েক বছর ধরে গ্রীষ্মকালের অংশ। শীত এমন একটি সিজন, যেখানে বিশেষ আয়োজন ছাড়াও প্রায় চার মাসজুড়ে উৎসবমুখর আমেজ টের পাওয়া যায়। দেখা গেছে তুলনামূলকভাবে, এই সময় অ্যাভারেজ ইনভয়েস ভ্যালু বেশি এবং বাস্কেট সাইজও বড় হয়। এর একটি বড় কারণ, শীত আমাদের অন্যতম প্রধান ফ্যাশন সিজন। শরতের শেষ থেকেই শাল, পঞ্চো, ক্যাপ, মাফলার, বিনি ক্যাপ দিয়ে স্টাইলিংয়ের অপশন তৈরি হয়। শীতের মাঝামাঝি নানা ধরনের জ্যাকেট, ডেনিম, সোয়েটশার্ট, কার্ডিগান ও লেয়ারিংয়ের ফ্যাশন চলে। শেষ দিকে ভারী জ্যাকেট, কোট, ব্লেজার, সোয়েটার এবং উইন্টার অ্যাকসেসরিজের ব্যবহার বেড়ে যায়। এ বছরেও আমরা ক্রেতাদের মাঝে উইন্টার শপিংয়ের চাহিদা লক্ষ করেছি। তারা নতুন নতুন স্টাইল চাইছেন, আমাদের নতুন ডিজাইনগুলোর প্রশংসা করছেন। এবার শালের পাশাপাশি ট্রেন্ডি পঞ্চো লঞ্চ করেছে লা রিভ, যা এক মাসের মাথায় টার্গেট সেল হিট করেছে। প্রতিষ্ঠিত ও লোকাল ব্র্যান্ড সবাই নিজ নিজ জায়গা থেকে অবদান রাখছে। উইন্টার তো শুরু হলো মাত্র। আমার ধারণা, এই বছরও উইন্টার মার্কেটের গ্রোথ ঊর্ধ্বগামী থাকবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই বছর ক্ল্যাসিক উইন্টার স্টাইলগুলোর পাশাপাশি ফিউশন-বেজড স্টাইলেও সমান মনোযোগ দিয়েছি। শালের পাশাপাশি পঞ্চো ডিজাইন করা হয়েছে। বোম্বার, বাইকার, ব্লেজারের সঙ্গে ওপেন ফ্রন্ট জ্যাকেটে নানান স্টাইল এসেছে। ট্রেন্ডি ওয়াইড শল কলারের পাশাপাশি ক্ল্যাসিক কলারে দেশি স্টাইলে হাতের কাজের মতো ফিউশনও নিয়ে এসেছি। এভাবে শুধু উইন্টারেই সাত শর বেশি নতুন ডিজাইন লঞ্চ করেছে লা রিভ।’
সারা লাইফস্টাইলের মিডিয়া ও পাবলিকেশন বিভাগের ম্যানেজার এস কে রাহাত অয়ন বলেন, ‘২০২৩-২৪ এর শীতবাজার উপলক্ষে আমরা ১০০ নতুন ডিজাইনের পোশাক বানিয়েছি। এর কালার ভ্যারিয়েশন আছে ৪০০-৪৫০টি। জ্যাকেট লাইনে আছে ভিন্নতা। যেমন পাফার, বোম্বার, বাইকার জ্যাকেট। ডেনিম নিয়ে রয়েছে বিশাল কালেকশন। আলাদা করে আরবান উইন্টার ফ্যাশন মাথায় রাখা হয়েছে এ ক্ষেত্রে। ডেডিকেটেড প্রি-উইন্টার কালেকশন এসেছে। সেখানে ফুলস্লিভের আধিক্য চোখে পড়বে। এই সংগ্রহের পোশাকগুলো তৈরি করা হয়েছে হালকা শীতের কথা মাথায় রেখে।’
টুয়েলভ ফ্যাশন লেবেলের অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার (ব্র্যান্ড অ্যান্ড মার্কেটিং) সজল মিত্র বলেন, ‘শীতপোশাকের বাজার প্রতিবছর বড় হচ্ছে। আগে মানুষ যখন একটি উইন্টার ওয়্যার কিনতেন; তখন উদ্দেশ্য থাকত, সেটি ৪-৫ বছর ব্যবহার করার। শুধু চাহিদাই ছিল কেনাকাটার প্রভাবক। এখন সেই জীবনাচরণে বদল এসেছে। আবার শীতের আবহাওয়া এবং ট্রেন্ডও ভূমিকা রাখছে। ক্রেতা নকশায় নতুনত্ব খুঁজছেন প্রতিবছর। নতুনে এই আগ্রহ তাদের নিয়মিত শীতবাজারে নিয়ে আসছে। আমরা তাই শীত সংগ্রহে ডিজাইনকে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করি। চেষ্টা করি এ সময়ে বাহারি নকশা নিয়ে আসার।’
ক্লাবহাউসের সিনিয়র মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ ইয়াসমিন আক্তার বলেন, ‘ক্লাবহাউসের কাছে ক্রেতাদের শীতপোশাকের চাহিদা পর্যবেক্ষণ করে বলা যায়, নতুন ট্রেন্ডের প্রতি আগ্রহ থেকেই শপিং করতে আসেন বেশির ভাগ মানুষ। নতুন ডিজাইনের প্রতি তাই আগ্রহ বেশি দেখা যায়। অতীত অভিজ্ঞতায় আমরা বুঝতে পেরেছি, এই ব্র্যান্ডের কিছু নির্দিষ্ট ক্যাটাগরির পোশাকে ক্রেতাদের আগ্রহ বেশি। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে আমরা এবার ডিজাইন করেছি। ছেলে, মেয়ে এবং কিড ক্যাটাগরিতে পোশাক তৈরি করা হয়েছে। পাঁচ শর বেশি ডিজাইন এসেছে। ক্রেতাসন্তুষ্টি আমাদের শীতপোশাকের কালেকশন বড় করার উৎসাহ দেয়।’
ফ্যাশন ব্র্যান্ডের দোকানের বাইরেও শীতপোশাকের বাজার রয়েছে দেশে। বঙ্গবাজার একসময় বিবেচিত হতো সবচেয়ে বড় উইন্টার ওয়্যার হাব হিসেবে। নূরজাহান মার্কেট, নিউমার্কেট, দোজা মার্কেট, হোপ মার্কেট, উত্তরার রাজলক্ষ্মী—এই জায়গাগুলো উলেন পোশাকের জন্য বিখ্যাত। থ্রিফট শপিংয়ের অনলাইন পেজগুলোতেও চাহিদা উপচে পড়ে এ সময়।
বাংলাদেশের শীতপোশাকে দীর্ঘ সময় ভেস্ট সোয়েটারের কদর ছিল। ‘জাম্পার’ নামে প্রচলন ছিল এর। হাতাকাটা, কোমর অবধি সেই উইন্টার ওয়্যারের ফ্যাশন এখন বেশ খানিকটা বদলে গেছে। জাম্পারের চাহিদা কমেছে, অথবা বলা যেতে পারে বেশি বয়সের পুরুষের কাছে আটকে আছে। কখনো শার্টের ওপরে লেয়ারিংয়ে, আবার কখনো ব্লেজারের নিচে ইনার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ফুলস্লিভ সোয়েটারের চাহিদা এর চেয়ে বেশি। তবে জ্যাকেট, সোয়েটশার্ট—এই দুটি আইটেম জনপ্রিয়তার তালিকায় দারুন এগিয়ে। হুডি আছে উইন্টার কমফোর্টের উদাহরণ হিসেবে। আর অফিসওয়্যারে অনবদ্য স্যুট।
লোকাল মার্কেটের তথ্য অনুযায়ী, অনুষঙ্গ হিসেবে এ সময়ে বিক্রি হয় কানটুপি, মাফলার, হাতমোজা ও পায়ের মোজা। বাসার জন্য আলাদা করে শীতপোশাক কেনার চল কিছুদিন আগেও সেভাবে ছিল না। একটু পুরোনো হয়ে যাওয়া পোশাকেই খুঁজে নেওয়া হতো ওম। এখন সেখানেও এসেছে বদল। ফ্লানেলের তৈরি পাজামা পরিণত হয়েছে প্রয়োজনে।
মেয়েদের ফ্যাশনে শাল ও কার্ডিগান এখনো আছে। তবে গায়ের চাদর, অর্থাৎ শালে এসেছে পরিবর্তন। আকার, ওজন, অলংকরণ—সব ক্ষেত্রেই। হালকা ওজনের শাল জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে কয়েক দশক ধরে। অলংকরণে মিনিমালিজম পেয়েছে গ্রহণযোগ্যতা। আলাদা করে প্রস্থে কম এমন শালের ক্রেতাও আছেন। আলাদা অলংকরণ নয়; বরং বুননে নান্দনিকতা প্রকাশ্য। শাল থেকে ইন্সপায়ারড পঞ্চোতেও আগ্রহ ক্রেতাদের। এবারেও দেশি ব্র্যান্ডগুলোতে মিলবে এর কালেকশন। কোমর অবধি কার্ডিগান এখনো আছে। তবে লং লেন্থ জনপ্রিয় হয়ে আছে এক দশকের বেশি সময় ধরে। হাঁটু অবধি সোয়েটারের ক্রেতা বাড়ছে। লেয়ারিংয়ের জনপ্রিয়তা এবং উইন্টার আরবান ভূমিকা রাখছে এই পোশাকে। তুলনামূলক হালকা ফ্যাব্রিকে ঝোঁক দেখাচ্ছেন ক্রেতারা। ট্রেঞ্চ কোটের প্রতি আগ্রহ বেড়েছে। সব বয়সী ক্রেতাদের এই কোটে কেতাদুরস্ত হয়ে উঠতে দেখা যাচ্ছে। বটমে ডেনিমের ছিল একচ্ছত্র আধিপত্য। সেখানে চিনো কয়েক বছর ধরে জায়গা করে নিয়েছে। ফিমেল উইন্টার ওয়্যারের কালার প্যালেটে এবারে পরিবর্তন আছে। প্রকৃতি থেকে খুঁজে নেওয়া উপাদানের রঙের কালেকশন দেখা যাচ্ছে বেশি। ফ্যাশন কোর ‘কোয়াইট লাক্সারি’।
বেবি উইন্টার ফ্যাশন ভাইব্র্যান্ট হয়েছে দিন দিন। জ্যাকেট আর হুডি সংগ্রহের কলেবরও বড়। ডেনিম নিয়ে এবারের শীত আয়োজনে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের আনকোরা কাজ আছে। মেয়েদের জ্যাকেটের নকশায় ফ্রিল যোগে ভিন্নতা আনার চেষ্টা নজর কেড়েছে। হোমওয়্যার হিসেবে সোয়েটশার্ট ও ফুল লেন্থ পায়জামায় আগ্রহ আছে। ছেলেদের জন্য সলিড কালার জ্যাকেটের কালার প্যালেটে নতুনত্বের প্রকাশ আছে। প্যাস্টেল কালারের পোশাক দেখা যাচ্ছে দুরন্ত শিশুদের জন্য। আগে এই বয়সের পোশাকে গাঢ় লাল, উজ্জ্বল নীল, নেভি ব্লু, সবুজ, হলুদের ব্যবহার ছিল বেশি। হালকা রং দেখা যেত খুব কম। প্রিন্টের তুলনায় এবার সলিড কালারের আয়োজন অধিক দেখা যাচ্ছে।

মডেল: তর্ষা ও আনসা
মেকওভার: পারসোনা
ওয়্যারড্রোব: রাইজ ও সোলাস্তা
ছবি: কৌশিক ইকবাল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top