skip to Main Content

মনোজাল I পিএমএস-প্রসূত

দ্যাট টাইম অব দ্য মান্থ? তাহলে তো হরমোন সামলাতেই হিমশিম অবস্থা। বুদ্ধিমানেরা এ সময় কিন্তু শপিং মল থেকে শ হাত দূরে থাকেন। কারণটা…!

মেনস্ট্রুয়াল সাইকেল অর্থাৎ মাসিক চক্র। যা ব্যক্তিবিশেষে একেকজনের জন্য একেক রকমভাবে ধরা দেয়। তবে এর মধ্যেও বেশ কিছু প্রচলিত ব্যাপার ঘটে। এ সময় সাধারণত নারীদেহের হরমোনের মাত্রার হেরফের এই চক্রকে উসকে দেয়। স্বাভাবিক হরমোনের পরিবর্তনের কারণে সেরোটোনিনের মাত্রা কমে, যা মস্তিষ্কের রসায়নকে প্রভাবিত করে। এর কারণে এ সময় নারীরা বিভিন্ন ধরনের আবেগ অনুভব করতে শুরু করেন। এতে মেজাজ ব্যাপকভাবে ওঠানামা করে, যা ঋতুচক্রের আগে এবং সময়কালে আচরণে নাটকীয় পরিবর্তন ঘটায়। আর তেমনই একটা পরিবর্তন হলো আবেগের বশবর্তী হয়ে খরচ। অর্থাৎ এ সময় অনেকটা অহেতুকই কেনাকাটার ঝোঁক বেড়ে যায়।
গবেষকদের মতে, এ ধরনের খরচ মাসিক চক্রের আগে অর্থাৎ পিএমএস স্টেজে হরমোনের পরিবর্তনের মাধ্যমে প্রভাবিত হয়। ফলে নারীরা এ সময় ফ্যাশন, খাবার ও বিনোদনের জন্য নানা রকম বাড়তি খরচ করতে শুরু করেন। এটি মূলত মাসিকের সময় আবেগপ্রবণতা প্রদর্শন করার একটা চেষ্টামাত্র। নারীরা সবচেয়ে বেশি অনলাইনে কেনাকাটা করেন মাসের নির্দিষ্ট এ সময়ে। অন্তত পরিসংখ্যানে তেমনই মিলেছে। কোনো কিছু কেনার প্রতি অসম্ভব এই ঝোঁক সেই মুহূর্তে মানসিক শান্তির জন্য প্রয়োজন হয়ে দেখা দেয়।
ভোগের ওপর মেজাজের প্রভাব বলে একটা কথা আছে, ব্যাপারটা ঠিক তাই ঘটে। অনেক নারীই ঘন ঘন এমন সব জিনিস কিনে থাকেন, যা তাদেরকে নিজের সম্পর্কে ভালো অনুভব করায় বা স্পেশাল অনুভূতি দেয় এবং সাময়িকভাবে নেতিবাচক চিন্তাভাবনা থেকে মুক্তি দেয়।
হরমোনের মাত্রার তারতম্য এই সময়ে মেজাজের ওপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলে। এমনিতেও, যখন একজন ব্যক্তি উদ্বিগ্ন থাকেন, তখন অনলাইনে ব্রাউজ করার সময় বা শপিংয়ের ক্ষেত্রে তার আবেগপ্রবণ হয়ে খরচ করার সম্ভাবনা বেশি থাকে। অনেকটা তেমন কারণই মাসিক চক্রের সময় নারীর কেনাকাটার সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করে। তবে পিরিয়ডের এই সময়ে মেজাজের আকস্মিক পরিবর্তন সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণগুলোর মধ্যে একটি। হরমোনের ভারসাম্য ঘটাতে গিয়ে ভালো বোধ করতে, আনন্দ পেতে, অযথা চিন্তা দূর করে কিছু একটা নিয়ে ব্যস্ত থাকতে পছন্দ করেন নারীরা। আর এই পরিবর্তন ঋতুস্রাব এবং মাসিক চক্রের পুরো সাইকেলজুড়ে হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধির কারণে ঘটে। যা আবেগের তারতম্য ঘটায় এবং ভোক্তাদের আচরণ প্রভাবিত করে।
ক্রয় আচরণের ওপর হরমোনের প্রভাবকের হরেক রকমের মধ্যে পিএমএস ক্রয় অভ্যাসের ওপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলে বলে ধারণা করা হয়। গবেষণায় বের হয়েছে, অনেক নারীর ব্যয়ের ধরন তাদের মাসিক চক্রে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তিত হয়। হরমোন পরিবর্তনের কারণে আসা আবেগ ও উদ্বেগের সাধারণ অভিজ্ঞতা এটি নিয়ন্ত্রণ করে। এ সময় রিটেইল থেরাপিতে সবচেয়ে বেশি প্রলুব্ধ হওয়ার রেকর্ড মিলেছে। তাৎক্ষণিকভাবে দুঃখ ভুলে মুড লিফটিংয়ের জন্য ‘কেনাকাটা’ বিষয়টিকে প্রাধান্য দেওয়ার প্রমাণও আছে অনেক। এমনকি অত্যধিক ব্যয়, আত্মনিয়ন্ত্রণের অভাব এবং ক্রেতার অনুশোচনা—সবই চক্রের দিনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
এমনকি কী কেনা হচ্ছে, সে ব্যাপারটিও। যেমন জামাকাপড় কেনাকাটা খুব বেশি হয় মাসিক চক্রের প্রথম সপ্তাহের মাঝ থেকে দ্বিতীয় সপ্তাহের মাঝ অব্দি, অর্থাৎ মাসিক চক্রের চতুর্থ থেকে দশম দিনের মাঝে। কেন? কারণ, এই দিনগুলোতে দেহে এস্ট্রোজেনের মাত্রা বাড়ে; যা আত্মবিশ্বাসী, ধৈর্যশীল, উদ্যমী করে তোলায় কাজ করে। আয়নায় নিজেকে দেখে এ সময় আরও আত্মবিশ্বাসী বোধ করেন। অনেকেই বিশ্বাস করতে শুরু করেন, একটি সুন্দর পোশাক এ সময় তার সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে তুলবে।
এই সময় হরমোনের কারসাজিতে স্কার্ট, সালোয়ার-কামিজ, শর্টস, প্যান্ট ও টপগুলোকে যেন আরও আকর্ষণীয় মনে হয়। পোশাক কেনার মোক্ষম সময় বটে। তবে এর মানে এই নয় যে চক্রের অন্য দিনগুলোতে কেউ কেনাকাটা করতে যান না। তা-ও যাওয়া হয়। উচ্চ এস্ট্রোজেনের কারণে জীবনে কখনো পরা হয়নি এমন পোশাক কেনার জন্যও আকস্মিক তাগিদ অনুভূত হয়। তাই সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ! এই উচ্চ মাত্রায় নিঃসরিত হরমোন মাসিক চক্রের সময় ব্যয়বহুল জিনিসগুলোর প্রতি মোহপ্রবণ করে তোলে মনকে। ফলাফল—নারীরা তাদের চক্রের এই পর্যায়ে বিলাসবহুল পণ্যের জন্য বেশি ব্যয় করে থাকেন।
অভিউলেশনের ঠিক পরের দিন থেকে ৮ দিন পর্যন্ত একটা বিষয় মনে রাখা জরুরি। ক্রমবর্ধমান প্রোজেস্টেরন এমন একটি মানসিকতা তৈরি করে, যা প্রতিফলিত হয় পোশাক পছন্দের ক্ষেত্রে। যেমন যারা সাধারণত উজ্জ্বল, আঁটসাঁট, ত্বক দেখানো পোশাক পছন্দ করেন, তারা শারীরিক পরিবর্তনের কারণে এ সময় কেনেন মাথা থেকে পা পর্যন্ত ঢেকে থাকা ঢিলেঢালা নমনীয় রঙের পোশাক।
তবে মনে রাখা দরকার, প্রোজেস্টেরন প্রশান্তিদায়ক হরমোন হিসেবে পরিচিত, যা দেহে ক্লান্তি আনে। তাই সঙ্গে এমন খাবার থাকলে ভালো, যা খেতে সহজ। যেমন চকলেট বার। তা ছাড়া শপিংয়ের জন্য এমন প্লেস বেছে নেওয়া যেতে পারে, যেগুলো বিরক্তিকর নয়। মন-মেজাজকে প্রশান্তি দেবে এমন জায়গা। উদাহরণস্বরূপ, উচ্চ স্বরে মিউজিক নেই কিংবা দুর্গন্ধযুক্ত পারফিউম কাউন্টার অতিক্রম করতে হবে না এবং অপেক্ষাকৃতভাবে ছোট, এমন। কারণ, এই সময় প্রচুর হাঁটার মতো শারীরিক শক্তি থাকে না; যেকোনো গন্ধে বমি আসারও শঙ্কা থাকে। অফ আওয়ারে কেনাকাটা করা যেতে পারে যখন ভিড় সবচেয়ে কম হয়। যেহেতু এই দিনগুলোতে অতিরিক্ত খরচের ঝুঁকি বেশি, তাই কেনাকাটা করতে যাওয়ার আগে যতটুকু খরচ করার পরিকল্পনা, ঠিক সেই পরিমাণ নগদ টাকা নিয়ে যাওয়াই শ্রেয়। ক্রেডিট কার্ড সঙ্গে না থাকলে বরং বাঁচা যাবে!

 রত্না রহিমা
ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top