skip to Main Content

এডিটর’স কলাম I নতুন সময় নতুন চিন্তা

‘নিজের চিন্তাভাবনার খুব সামান্য পরিবর্তন, নিজ স্পৃহার অতি সামান্য পরিমার্জন আপনাকে শেষ পর্যন্ত টেনে নিতে পারে বড় রকমের নবরূপায়ণের দিকে’

‘কিছু ফেলতে পারি না/ তোষকের নিচে জমানো প্যাকেট/ মরচে পড়েছে কৌটোতে/ তবু ফেলতে পারি না/…ছিঁড়ে যাওয়া জুতো/ ভাঙা ডট পেন/ চাঁদার রশিদ/ কবেকার চিঠি/ ফেলতে পারি না…’ পুরোনোকে আঁকড়ে ধরার, স্মৃতিকাতরতায় ঘোরগ্রস্ত থাকার, এমন অন্তর ছোঁয়া গান গেয়েছেন মৌসুমী ভৌমিক। না; পুরোনো মানেই ফেলে দিতে হবে—তা নয়। আবার স্মৃতিকাতরতাও দোষের নয়; বরং মানুষের সহজাত বৈশিষ্ট্যের অংশ। কিন্তু কোনো কিছু একান্তই ছেঁটে ফেলার প্রয়োজন অনুভব করেও তা আঁকড়ে ধরতে চাইলে চোখ রাঙায় জটিলতা। আর এ ক্ষেত্রে অনেক সময় কলকাঠি নাড়ে প্রথা নামক মূল্যবোধবিশেষ। তা শুধু প্রচলিত বিশ্বাস ও চর্চাগুলোর ওপর ভর দিয়েই গড়ে ওঠে না; বিশেষত প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের যাপনজনিত অভিজ্ঞতার ফল হিসেবেও গেড়ে বসে ব্যক্তিমানুষের জীবনবোধে। তাই বলে এটি সব সময় হানিকর কিংবা পশ্চাৎপদ মানসিকতার প্রকাশ ঘটায়, এমনও নয়। কিন্তু যেসব প্রথা কিংবা জীবনবোধ ইতিবাচক নতুন কিছু গ্রহণের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়, সেগুলো ছেঁটে ফেলাই শ্রেয় বলে অভিমত বিশেষজ্ঞদের। তবে হুট করে নয়; যথেষ্ট ভেবে-চিন্তে, বিচার-বিশ্লেষণসহযোগে। তা করার এক দারুণ উপলক্ষ হতে পারে নতুন বছর।

দুই
পৃথিবীর বুকে কাটানো দিনগুলোর নিমিত্তে আমরা প্রতিনিয়ত যেসব অভিজ্ঞতা অর্জন করি, তা আমাদের মনোজগৎকে ভাবনার বিবিধ উপাদানের সন্নিবেশে ঋদ্ধ করে তোলে। ফলে নিজের জন্য স্বস্তিকর, মূলত এ ধরনের চিন্তাভাবনাকে আঁকড়ে থাকি আমরা। এর প্রতিফলন পড়ে জীবনচর্চায়। আপাতদৃষ্টে তা অস্বাভাবিক নয়। প্রত্যেক ব্যক্তিমানুষই যেহেতু আলাদা; তাই তার অন্তস্তলে গড়ে ওঠা ভাবনাজগৎও স্বতন্ত্র। তাতে কিছু বিশ্বাসকে আমরা সযত্নে লালন করি। আর অন্য কারও কিংবা কোনো গোষ্ঠীর হাজির করা নতুন ভাবনা যখন উচ্চকিত হয়ে ওঠে, অনেক সময় অনুভব করি শঙ্কা। ভয় হয়, সেগুলো আমাদের জন্য সামগ্রিকভাবে হানিকর হয়ে ওঠে কি না। অন্যভাবে বললে, সেগুলো আমাদের নিজ নিজ অন্তস্তলে সাজানো নিজস্ব ভাবনার বাগানকে করে দেবে কি না তছনছ। কিন্তু কখনো কি ভেবে দেখেছি, যেসব ভাবনার সঙ্গে নিজেরা অভ্যস্ত নই, যেসব চিন্তা আমাদের সামনে আগন্তুক হয়ে আচমকা আবির্ভূত হয়—সেগুলোর সবই সার্বিক বিবেচনায় আদৌ নেতিবাচক বা ক্ষতি? নাকি এর উল্টো? শুধু আপনারই নয়, সবার জন্যই ইতিবাচক? যদি তা-ই হয়, কেন নিজেকে আরেকটু পরিমার্জন করে নেবেন না? এগিয়ে যাবেন না নতুন সময়ের নতুন চিন্তার স্বপ্নযাত্রায়?

তিন
‘নিজের চিন্তাভাবনার খুব সামান্য পরিবর্তন, নিজ স্পৃহার অতি সামান্য পরিমার্জন আপনাকে শেষ পর্যন্ত টেনে নিতে পারে বড় রকমের নবরূপায়ণের দিকে,’ যথার্থই বলেছেন আমেরিকান পারফরম্যান্স সাইকোলজি কনসালট্যান্ট এবং অনুপ্রেরণাবিষয়ক লেখক কেভিন এল মিচেল। তাই গণ্ডিবদ্ধ চিন্তাচক্রে নিরন্তর ঘুরপাক না খেয়ে, সময়ে সময়ে নিজের ভাবনাবৃক্ষের ডালে নতুন পাতার গজিয়ে ওঠা নিশ্চিত করতে, নিজেকে নিরন্তর পরিবর্তন, পরিমার্জন ও পরিশোধনের ভেতর দিয়ে এগিয়ে নেওয়া শ্রেয়।

চার
বলছি না, যেকোনো নতুন চিন্তাকে নির্দ্বিধায় উদারচিত্তে গ্রহণ করা চাই; বরং দ্বিধা কিছুটা থাকুক! সেই দ্বিধা আপনার মনে জাগিয়ে তুলুক জিজ্ঞাসা। আর সেই প্রশ্নবাণে ওই নতুন চিন্তাকে প্রতিনিয়ত করুন জর্জরিত। তারপর সময় নিয়ে, গভীর মনোযোগ দিয়ে উপলব্ধি করুন, সেই চিন্তার ভেতর মঙ্গলকর কিছু আদৌ রয়েছে কি না। যদি থাকে, পুরোনো ধারণাকে আঁকড়ে না থেকে, সেই নতুন চিন্তাকে জড়িয়ে নিন নিজ জীবনচর্চায়। কেননা, এভাবেই মানবজীবনের বিকাশ অব্যাহত থাকে চির বৈচিত্র্যময় এই ধরণীর বুকে।

পাঁচ
নতুন সময়কে সঠিকভাবে সঙ্গী করতে জানলে, পুরোনো ক্ষত খুব একটা কাবু করতে পারে না আমাদের; বরং পাঠ হিসেবে কাজে দেয়। গেল বছরের ভুলকে চলতি বছরে ফুলে পরিণত করার জোগায় প্রেরণা। সেই প্রেরণায় ভর দিয়ে কল্যাণকর নতুন ভাবনার জয় হোক।
মঙ্গল হোক সবার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top