skip to Main Content

টেকসহি I পুনর্ব্যবহারের পৌরনীতি

১৮ মার্চ। গ্লোবাল রিসাইক্লিং ডে। পরিবেশ রক্ষার্থে পুনর্ব্যবহারের বার্তা ছড়িয়ে দিতে। কী এর মাহাত্ম্য? প্রভাব কতটুকু? চিত্রই কেমন?

প্লাস্টিকের কোনো বোতল বা পাত্র কিংবা খাদ্যসামগ্রীর প্যাকেটের গায়ে কি কখনো তিন কোনা তীরচিহ্ন দিয়ে তৈরি ত্রিভুজ লক্ষ করেছেন? ভালোভাবে খেয়াল করলে দেখা যাবে, কখনো কখনো ত্রিভুজের ভেতরে সংখ্যা বা নিচে কিছু শব্দ খোদাই করা থাকে। কখনো কি মনে প্রশ্ন জেগেছে, এই ত্রিভুজের অর্থ কী? এর ভেতরে থাকা সংখ্যাটিই-বা কী বোঝায়?
বেশির ভাগ সময়ে ত্রিভুজাকৃতির তীরচিহ্নটি সবুজ রঙের হয়ে থাকে। এখন প্রশ্ন, তীরটি কী নির্দেশ করে? এটি মূলত রিসাইকেল বা পুনর্ব্যবহার করাকে বোঝায়। কোনো বস্তু আদতে কতটুকু পুনর্ব্যবহার করার যোগ্য, তা চিহ্নিত করতেই ব্যবহার করা হয় এই রিসাইকেল চিহ্ন।
সহজ ভাষায়, রিসাইকেল বা পুনর্ব্যবহার বলতে এমন একটি প্রক্রিয়াকে বোঝায়, যার মাধ্যমে ব্যবহৃত কোনো বস্তু বা দ্রব্যাদিকে রূপান্তর করে নতুন বস্তু পাওয়া যায়। যার মধ্যে যুক্ত প্লাস্টিক, ধাতব পদার্থ, ইলেকট্রনিক সামগ্রী, কাচ, কাগজ, পোশাকসহ অনেক কিছু।
এই পুনর্ব্যবহারকে কেন্দ্র করে প্রতিবছরের ১৮ মার্চ পালন করা হয় বিশ্ব পুনর্ব্যবহার দিবস (গ্লোবাল রিসাইক্লিং ডে)। ২০১৮ সাল থেকে প্রতিবছর পালিত হয়ে আসছে এ দিবস। শুরু করার মূল উদ্দেশ্য ছিল অপচয় রোধ করে দূষণ কমানো এবং পরিবেশকে রক্ষা করা।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোপার্নিকাস ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিসের তথ্যানুযায়ী, সম্ভবত এক লাখ বছরের মধ্যে পৃথিবীর ইতিহাসে উষ্ণতম বছর ছিল ২০২৩ সাল। আকস্মিক জলবায়ুর পরিবর্তনের দামামা বেজে উঠেছে পুরো বিশ্বে। আর তাতে বেড়ে চলেছে বৈশ্বিক তাপমাত্রা; বরফ গলেছে রেকর্ড পরিমাণে। সঙ্গে ঝড়, বন্যা, ভূমিধসও বেড়েছে নজিরবিহীনভাবে।
দুর্যোগ যেভাবে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে, এগুলোকে রোধ করার হাতিয়ার হতে পারে রিসাইক্লিং। এটি অর্থনীতির একটি বড় অংশ, যা প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষায় সাহায্য করে। গ্লোবাল রিসাইক্লিং ফাউন্ডেশন প্রতিবছর একটি প্রতিপাদ্য ঘিরে দিবসটি পালন করে। চলতি বছরের প্রতিপাদ্য, ‘রিসাইক্লিং হিরোজ’ বা ‘পুনর্ব্যবহারকারী নায়ক’। অর্থাৎ যারা পুনর্ব্যবহার বাড়িয়ে বর্জ্যকে সম্পদে পরিণত করেন, তাদের গল্প তুলে ধরাই এবারের অন্যতম লক্ষ্য।
পুনর্ব্যবহারের ইতিহাস
দিবসটি ২০১৮ সাল থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে পালিত হলেও পুনর্ব্যবহারের উৎপত্তি ইতিহাস বেশ পুরোনো। কাগজ যে পুনর্ব্যবহার করা যায়, তা নবম শতকে জাপান প্রথম উপস্থাপন করেছিল। ১৬৯০ সালে আমেরিকার প্রথম কাগজের কল ‘রিটেনহাউস মিল’-এ দেখা যায় ন্যাকড়া, কাপড়, তুলা কিংবা লিনেনের মাধ্যমে কাগজ পুনরায় উৎপাদন করা সম্ভব।
ধাতব পদার্থ প্রথম পুনর্ব্যবহারের উদাহরণ মেলে ১৭৭৬ সালে, আমেরিকায়। ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের উদ্দেশ্যে সেবার আমেরিকার অসংখ্য বন্দুক ও কামানের প্রয়োজন পড়েছিল। সে সময় নিউইয়র্ক সিটিতে ব্রিটিশ রাজা তৃতীয় জর্জের একটি ধাতব ভাস্কর্য ছিল। আমেরিকার আন্দোলনকারীরা সেই ভাস্কর্য গলিয়ে ৪২ হাজার ৮৮টি বুলেট তৈরি করে। ধরা হয়, সেটিই ছিল ধাতব পদার্থ পুনর্ব্যবহারের প্রথম উদাহরণ।
বিশ্বদরবারে ১৯৭০ সালে রিসাইক্লিংয়ের প্রথম লোগো উন্মোচিত হয়। সে বছর আমেরিকার কনটেইনার করপোরেশন একটি লোগো প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছিল। এমন একটি লোগো তৈরি করতে বলা হয়, যেটি বছরের পর বছর ধরে একই অর্থ বহন করবে। তাতে গ্যারি অ্যান্ডারসন নামের একজন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়া ছাত্র একটি লোগো তৈরি করেন, যেখানে ত্রিভুজাকৃতি তিনটি তীরচিহ্নের দেখা মেলে। সেটিই এখন পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে পুনর্ব্যবহারের চিহ্ন হিসেবে জারি রয়েছে।
ইলেকট্রনিক সামগ্রী পুনর্ব্যবহারের জোয়ার আসে গেল শতাব্দীর আশি ও নব্বইয়ের দশকে। সে সময় বিশ্বজুড়ে প্রচুর নতুন ইলেকট্রনিক সামগ্রী কেনাবেচা হয়েছিল। এখন প্রশ্ন, নতুন কেনা হলে পুরাতন টেলিভিশন কিংবা ফ্রিজের কী করা হয়েছিল? সেগুলো আসলে রিসাইক্লিং করা হয়েছিল। প্রথমবারের মতো বিপুল পরিমাণ ইলেকট্রনিক সামগ্রী পুনর্ব্যবহার করা হয় ১৯৯১ সালে, সুইজারল্যান্ডে। এরপর থেকে বিশ্বজুড়ে তা বাড়তে থাকে। এখনো করা হচ্ছে।
চিহ্নের তাৎপর্য
রিসাইক্লিং চিহ্নের গায়ে যেসব সংখ্যা বা অক্ষর লেখা থাকে, সেগুলোর রয়েছে বিশেষ অর্থ। প্রতিটি ত্রিভুজাকৃতি তীরচিহ্নের মধ্যে এক থেকে সাত পর্যন্ত সংখ্যা থাকে। মূলত ধরনভেদে প্লাস্টিকের পণ্যটি পুনরায় ব্যবহার করা যাবে কি না, তা বোঝাতে এগুলো ব্যবহৃত হয়। এমন অসংখ্য প্লাস্টিক রয়েছে যেগুলো পুনর্ব্যবহারযোগ্য নয়। আবার অনেক সময় ত্রিভুজের নিচে পিইটিই, এইচডিপিই ইত্যাদি অক্ষরমালা লেখা থাকে। এগুলো আসলে প্লাস্টিকের নামের সংক্ষিপ্ত রূপ।
সংখ্যা দিয়ে প্লাস্টিক চেনার ক্ষেত্রে প্রথমেই বলা যাক ‘১’-এর কথা। সংখ্যাটি মূলত পানি ও সফট ড্রিংকসের বোতল কিংবা কখনো কখনো প্যাকেজিংয়ের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত। এ সংখ্যার প্লাস্টিককে সাধারণত ‘পলিইথিলিন টেরেফথালেট’ (পিইটিই) হিসেবে অভিহিত করা হয়। এ ধরনের প্লাস্টিক একের অধিকবার ব্যবহার করা নিরাপদ নয়। কারণ, এসব প্লাস্টিকে ব্যাকটেরিয়া আক্রমণের ঝুঁকি অনেক বেশি থাকে, আর তাতে ব্যবহারকারীর দেহে মারণব্যাধি হানা দিতে পারে।
তবে আশার কথা, পিইটিই প্লাস্টিকের রিসাইক্লিং সম্ভব। এগুলোকে প্রথমে গুঁড়ো করে, তারপর তা থেকে নতুন পিইটিই প্লাস্টিক তৈরি করা যায়। তার মানে, ‘১’ সংখ্যা চিহ্নিত প্লাস্টিক রিসাইকেল করে পুরোনো থেকে নতুন প্লাস্টিকে পরিণত করা যাবে; কিন্তু প্রাথমিক অবস্থায় পুরোনো প্লাস্টিক পুনরায় ব্যবহার করা যাবে না।
ত্রিভুজাকৃতি তীরচিহ্নের মাঝে বা নিচে যদি ‘২’ লেখা থাকে, তা হাই ডেনসিটি পলিইথিলিনকে (এইচডিপিই) নির্দেশ করে। দুধ, তেল, ডিটারজেন্টের জার এবং খেলনা ও প্লাস্টিকের ব্যাগ তৈরিতে ব্যবহৃত। একে তুলনামূলক নিরাপদ প্লাস্টিক মনে করা হয়। পুুনর্ব্যবহার করা বেশ সহজ ও সাশ্রয়ী। তবে এই ধরনের প্লাস্টিক একাধিকবার ব্যবহার না করে কেটে অন্য কাজে লাগানোকে শ্রেয় ধরা হয়।
বাচ্চাদের খেলনা কিংবা খাবারের মোড়ক বা পাইপ তৈরি করতে ‘৩’ সংখ্যাসংবলিত প্লাস্টিক বা পলিভিনাইল ক্লোরাইড (পিভিসি) ব্যবহার করা হয়। এ ধরনের প্লাস্টিক ভীষণ নরম এবং নমনীয়। সূর্যালোকে ক্ষতিগ্রস্ত হয় না বলে জানালার ফ্রেম তৈরিতে কাজে লাগে। তবে এগুলো ‘পয়জন প্লাস্টিক’ হিসেবেও পরিচিত। কারণ, এই ধরনের প্লাস্টিকের জীবনচক্রে অনেক বিষাক্ত পদার্থ ক্ষরিত হয়। তাই এর ব্যবহার খুব একটা নিরাপদ নয়।
কাপড়ের প্যাকেট, রুটি মোড়ক করার প্যাকেট, নরম বোতল ইত্যাদিতে ‘৪’ সংখ্যাটি থাকে। কেননা, এগুলোতে প্লাস্টিক বা লো-ডেনসিটি পলিইথিলিন (এলডিপিই) ব্যবহার করা হয়। অন্যান্য প্লাস্টিকের তুলনায় এটি মোটামুটি কম বিষাক্ত ও নিরাপদ। তবে সাধারণত পুনর্ব্যবহার করা হয় না। অবশ্য কখনো কখনো একে রিসাইকেল করে প্লাস্টিকের টাইলস বা সাধারণ ব্যবহার্য জিনিস তৈরি করা হয়। যদিও এই প্লাস্টিক থেকে এইচডিপিই-এর মতো দৃঢ় প্লাস্টিক পাওয়া যায় না; তবে মোড়ক হিসেবে পুনর্ব্যবহার সম্ভব।
একবার ব্যবহারযোগ্য ডায়াপার, চিপসের প্যাকেট, স্ট্র, টেপ, প্লাস্টিকের দড়ি ইত্যাদি তৈরিতে ‘৫’ নম্বর প্লাস্টিক বা পলিপ্রোপিলিন (পিপি) ব্যবহার করা হয়। পুনর্ব্যবহারের ক্ষেত্রে এগুলোর জনপ্রিয়তা তুলনামূলক কম; তবে নিরাপদ হিসেবে গণ্য। সাধারণত ব্যাটারি কেস, ডাস্টবিন, ট্রে ইত্যাদি তৈরিতে পিপি প্লাস্টিক ব্যবহার করা হয়।
রাস্তার ধারে চা খাওয়ার জন্য ওয়ানটাইম কাপ বেশ জনপ্রিয়। এ ধরনের হালকা ওজনের সস্তা প্লাস্টিক বহুল ব্যবহৃত। এর পোশাকি নাম পলিস্টেরিন প্লাস্টিক (পিএস)। নম্বর ‘৬’। কোনো বাক্সে থাকা জিনিস রক্ষা করতে যে ফোম তৈরি করা হয়, সেটিও এই প্লাস্টিকে তৈরি। এটি গাঠনিকভাবে দুর্বল; সহজে ভাঙা যায়। তবে এ ধরনের প্লাস্টিক নিরাপদ নয়। প্লাস্টিকের পাত্র তাপের সংস্পর্শে এলে সমস্যা আরও প্রকট হয়ে ওঠে; অর্থাৎ পিএস পাত্রে খাবার মাইক্রোওয়েভ ওভেনে গরম করলে ক্ষতিকর রাসায়নিকের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। অধিক তাপে এসব প্লাস্টিক থেকে স্টেরিন নামক পদার্থ ক্ষরণ হতে পারে, যা মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। তাই রিসাইক্লিংয়ের ক্ষেত্রে এগুলো ব্যবহার না করতেই অনুপ্রাণিত করা হয়।
‘৭’ নম্বর ক্যাটাগরিটি সাধারণত অন্যান্য ক্যাটাগরি হিসেবে ধরা হয়। পলিকার্বোনেট ও ‘অন্যান্য’ প্লাস্টিক এর অন্তর্ভুক্ত। এটি পুনরায় ব্যবহার এবং রিসাইকেলের জন্য গ্রহণযোগ্য নয়। পলিকার্বোনেট প্লাস্টিকের খাদ্যের পাত্রে সাধারণত বিপিএ থাকে। এটি এমন ধরনের রাসায়নিক পদার্থ, যা বিভিন্ন ধরনের প্লাস্টিকের বাক্স, খাবারের প্যাকেট, প্রসাধন দ্রব্যাদি, ইলেকট্রনিক পণ্য, খেলাধুলার সামগ্রী তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। বিপিএ খাবারের সঙ্গে মিশে নানা রোগের উৎপত্তি ঘটায়। পুনর্ব্যবহারের লোগোর মধ্যে যদি ‘পিসি’ অক্ষর দুটি লেখা থাকে, মনে রাখা চাই, সেখানে বিপিএ মিশ্রিত রয়েছে। তাই যেসব প্লাস্টিকের পাত্র বা বোতলের গায়ে রিসাইকেল নাম্বার ‘৩’ ও ‘৭’ থাকবে, সেগুলোকে পরিত্যাজ্য গণ্য করা জরুরি। অন্যদিকে, ‘১’, ‘২’, ‘৪’, ‘৫’ সংখ্যাসংবলিত প্লাস্টিকগুলো তুলনামূলক নিরাপদ।
ইদানীং কর্ন স্টার্চ থেকে পলিকার্বোনেটের বিকল্প প্লাস্টিক তৈরি হচ্ছে। তবে সেগুলোর গায়ে ‘পিএলএ’ লেখা থাকে। ‘৭’ চিহ্নিত প্লাস্টিকের গায়ে যদি ‘পিএলএ’ লেখা থাকে, তাহলে পুনরায় ব্যবহার করা যাবে। তবে এ ধরনের প্লাস্টিক পুনর্ব্যবহার না করে মাটিতে ফেলে সারে পরিণত করাই ভালো।
বিশ্বজুড়ে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা
বিশ্বব্যাংকের ২০১৮ সালের গবেষণা অনুযায়ী, বিশ্বে প্রতিবছর গড়ে গৃহস্থালির শুকনো বর্জ্য উৎপন্ন হয় ২.০১ বিলিয়ন টন, যার ৩৩ শতাংশের কোনো ধরনের ব্যবস্থাপনা নেই। বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ১৬ শতাংশ মানুষ বসবাস করেন এমন উন্নত দেশগুলো থেকে প্রতিবছর ৩৪ শতাংশ বর্জ্য উৎপন্ন হয়। অঙ্কের হিসাবে যা ৬৮ মিলিয়ন টন। এভাবে চলতে থাকলে ২০৫০ সাল নাগাদ বিশ্বে সলিড ওয়েস্ট বা শুকনো বর্জ্যরে সংখ্যা বছরে গড়ে ৩.৪ বিলিয়ন টনে উন্নীত হবে।
বিশ্বব্যাংকের সমীক্ষা অনুযায়ী মোট সলিড ওয়েস্টের ৫১ শতাংশ হচ্ছে প্লাস্টিক, কাঠ, পেপার, কার্ডবোর্ড, ধাতু প্রভৃতি। অন্যদিকে ৪৪ শতাংশ শুকনো বর্জ্য মূলত খাদ্য ও খাদ্যজাত কাঁচা উপাদান। ৫১ শতাংশের মধ্যে কাচ ৫, ধাতু ৪, প্লাস্টিক ১২, পেপার ও কার্ডবোর্ড ১৭, রাবার ও লেদার ২ এবং অন্যান্য ১৪ শতাংশ। যার মধ্যে রিসাইকেল করা হয় মাত্র ১৩.৫ শতাংশ। সরাসরি খোলা জায়গায় কোনো ধরনের ট্রিটমেন্ট ছাড়াই ৩৩ শতাংশ পুঁতে ফেলা হয়। আগুনে পোড়ানো হয় ১১.১১ শতাংশ এবং বায়োগ্যাস উৎপাদনে ব্যবহৃত হয় ৭.৭ শতাংশ। বাকি অংশ চলে যায় ল্যান্ডফিলে।
বিশ্বব্যাংকের মতে, শুকনো বর্জ্য থেকে প্রতিবছর গড়ে ১.৬৮ বিলিয়ন টন গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ হয়। আশঙ্কা করা হচ্ছে, ২০৫০ সাল নাগাদ এর পরিমাণ ২.৩৮ বিলিয়ন টনে পৌঁছাবে।
বাংলাদেশে পুনর্ব্যবহারের নমুনা
২০৫০ সাল নাগাদ বিশ্ব যে ভয়াবহ হুমকির মুখে পড়বে, তা রোধ করতে পুনর্ব্যবহার কিছুটা হলেও কার্যকর হতে পারে। কিন্তু চাহিদার তুলনায় রিসাইকেলের ব্যবহার আমাদের দেশে অপ্রতুল। তবে কয়েক বছরে পরিস্থিতির কিছুটা হলেও পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে।
রিসাইকেল কিংবা পুনর্ব্যবহার কীভাবে করা যেতে পারে? প্লাস্টিকের বোতল থেকে তৈরি হতে পারে বিভিন্ন ফুলদানি ও শো-পিস। পাইরোলাইসিস পদ্ধতির মাধ্যমে প্লাস্টিককে তরল জ্বালানি ও জ্বালানি গ্যাসে পরিণত করা যেতে পারে। এ ছাড়া প্লাস্টিক বর্জ্যকে বেশি বেশি রিসাইকেলের আওতায় আনলে বর্জ্যরে পরিমাণ যেমন কমে আসবে, তেমনি প্লাস্টিকের উৎপাদনও কমিয়ে আনা সম্ভব।
বাংলাদেশে ‘বাজার৩৬৫’ নামক একটি পরিবেশবান্ধব ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান প্লাস্টিকের বিনিময়ে পণ্য ক্রয়ে ডিসকাউন্টের সুযোগ দিয়ে থাকে। নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী বিক্রির মাধ্যমে ক্ষতিকর প্লাস্টিক দূরীভূত করার উপায় নিয়েই কার্যক্রম শুরু করেছে প্রতিষ্ঠানটি। গ্রাহকের কাছ থেকে প্লাস্টিক সংগ্রহের পর সেগুলো দিয়ে প্ল্যান্ট পট, বিভিন্ন কমিক চরিত্রের মিনিয়েচার যেমন সুপারম্যান, স্পাইডারম্যান, ব্যাটম্যান তৈরি করেন এর সদস্যরা। এগুলো সাধারণত গ্রাহকদের উপহার হিসেবে দেওয়ার জন্যই বানাচ্ছেন তারা।
বর্তমানে আমাদের দেশে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে কাজ করে ‘গারবেজম্যান’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান। সাধারণ ময়লা-আবর্জনাও যে গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যবহার হতে পারে, সেটিই তাদের কাজের বিষয়। গারবেজম্যান তাদের নিজস্ব ইকো সিস্টেমে পুনর্ব্যবহারের কাজ করে।
পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের চমৎকার আরেকটি ব্যবহার হচ্ছে পোশাক তৈরিতে এর ব্যবহার বাড়ানো। বাংলাদেশে ‘রি/ড্রেস’ নামক একটি প্রতিষ্ঠান প্লাস্টিকের বোতল এবং সুতির বর্জ্য থেকে পোশাক তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে। ২০২৩ সাল থেকে তারা চালিয়ে যাচ্ছে পোশাকের পুনর্ব্যবহারের কার্যক্রম।
পোশাক ছাড়াও খাদ্য ও খাদ্যজাত বর্জ্য রিসাইকেলের রয়েছে অপার সম্ভাবনা। যেমন খাদ্য ও খাদ্যজাত বর্জ্যকে মাটি ও গোবরের সঙ্গে মিশিয়ে জৈব সার ও কেঁচো সার উৎপাদন করা যায়, যা রাসায়নিক সারের বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এতে বছরে প্রায় ১.৬৮ বিলিয়ন টন গ্রিনহাউস গ্যাসের নিঃসরণ কমানো সম্ভব। নারকেলের খোসা রিসাইকেল করে জাজিম, তোষক ও আসবাব তৈরিতে ব্যবহার করা যায়। আখের খোসা রান্নার জ্বালানি অথবা কাগজ উৎপাদনে ব্যবহার সম্ভব।
কাগজ অত্যন্ত সহজ ও সুলভ এবং সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত পুনর্ব্যবহারযোগ্য পণ্য। গ্লোবাল নিউজওয়্যারের মতে, কাগজ পুনর্ব্যবহারের বাজার ২০২৪ সালের মধ্যে ৭.৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে। আশা করা হচ্ছে, ২০৩৪ সাল নাগাদ এই বাজার পৌঁছাবে ১৩.১ বিলিয়ন ডলারে। কাগজজাতীয় বর্জ্য পোড়ালে উৎপন্ন হবে বিষাক্ত কার্বন মনোক্সাইড গ্যাসসহ অন্যান্য গ্যাস, যা মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর; পাশাপাশি বাড়বে গ্রিনহাউস গ্যাসের পরিমাণ। এই অবস্থা থেকে পরিবেশকে বাঁচাতে কাগজ পুনর্ব্যবহারের চমৎকার উদাহরণ তৈরি করেছে ‘গ্রিন পেন’। কুড়িগ্রামের সঞ্জয় চৌধুরী এই কাগজের কলম উদ্ভাবন করেছেন। এর বিশেষত্ব, কলমের পাশাপাশি উদ্ভিদের বীজও এতে যুক্ত করে দেওয়া হয়। অর্থাৎ গ্রিন পেন শুধু খাতায় লেখা ফোটায় না, প্রকৃতিতে ফোটায় ফুল। এই কলমে জড়িয়ে আছে প্রাণ।
ফেলে দেওয়া বর্জ্যও যে কখনো কখনো সম্পদে পরিণত হতে পারে, তার উদাহরণ রিসাইক্লিং। এতে যেমন সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার করা যায়, তেমনি অপচয় রোধও সম্ভব। তাই পরিবেশের সুরক্ষায় সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি হতে পারে যথাযোগ্য পুনর্ব্যবহার বাড়ানো।

 সুস্মিতা চক্রবর্তী মিশু
ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top