skip to Main Content

দেহযতন I ফুল বডি সামার ওয়ার্কআউট

গ্রীষ্মের দাবদাহে ওষ্ঠাগত প্রাণ? ভাবছেন, এমন সময়ে ওয়ার্কআউট থেকে খানিকটা বিরাম নেওয়াই শ্রেয়? মোটেই ভালো ভাবনা নয়! বরং চাই সময়োপযোগী ও সঠিক পরিকল্পনা। আর তা সারা শরীরের জন্য হলে তো কথাই নেই

সানি সামারে ফুল বডি ওয়ার্কআউটের জন্য করতে পারেন টানা ৬ সপ্তাহের একটি প্ল্যান। সপ্তাহে ৬ দিন করে। এই ফ্যাট বার্ন প্রোগ্রাম আপনার দেহে এক্সট্রিম ক্যালরি বার্নের জন্য সুপারসেট ও হাই-ইনটেনসিটি ইন্টারভ্যাল ট্রেনিংকে [হিট] ভারসাম্যপূর্ণ করবে।
সার্টিফায়েড ট্রেনার সাদিয়া শীলার কাছ থেকে জানা যাক নারী-পুরুষ উভয়ের জন্যই প্রযোজ্য এমনই এক প্ল্যান—
 মূল লক্ষ্য: ওজন কমানো
 প্রশিক্ষণ স্তর: বিগিনার বা শিক্ষানবিশ
 প্রোগ্রাম ব্যাপ্তি: ৬ সপ্তাহ
 প্রতি সপ্তাহে সক্রিয় দিবস: ৬ দিন
 প্রতি ওয়ার্কআউটে সময়ব্যাপ্তি: ৪৫-৬০ মিনিট
 প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম: বারবেল, বডিওয়েট, ডাম্বেল
 প্রস্তাবিত সাপ্লিমেন্ট (বিশেষজ্ঞ পরামর্শ অনুসারে): হুই প্রোটিন, ব্রাঞ্চড-চেইন অ্যামিনো অ্যাসিড [বিসিএএ], ফিশ অয়েল, ফ্যাট বার্নার।
শীলা জানান, এখানে সপ্তাহে প্রতিটি দিনকে আলাদাভাবে ভাগ করা হয়েছে, যা পরবর্তী ছয় সপ্তাহের জন্য সময়সূচি হিসেবে কাজ করবে। এই বিভাজনের ক্ষেত্রে দুটি বিষয় খেয়াল রাখা চাই। শুক্রবার ছুটি বিবেচনা করে শনিবার থেকে বৃহস্পতিবার ওয়ার্কআউট করতে হবে—এমন কোনো ব্যাপার নেই; বরং নিজের সুবিধামতো যেকোনো একটি দিন বাদ দিয়ে টানা ছয় দিন চর্চা করলে সুফল পাবেন।
প্রশিক্ষণের জন্য নির্দিষ্ট সময় অনুসরণ করারও বাধ্যবাধকতা নেই। কারও কারও হয়তো ৯টা-৫টা কর্মঘণ্টা; আবার অনেকের নির্দিষ্ট কর্মঘণ্টা নেই। কাউকে আবার ওভারটাইম করতে হয়। হাতে ন্যূনতম ৪৫ মিনিট সময় থাকলে ওয়েট রুমে হাজির হয়ে শুরু করতে পারেন দেহচর্চা। হোক তখন সকাল ৭টা কিংবা সন্ধ্যা ৭টা, ব্যায়ামের উপকারিতা কিন্তু একই রকমের। শুধু থাকা চাই ইচ্ছাশক্তি।
 দিন ১ ও ৪: আপার বডি সুপারসেট ওয়ার্কআউট
 দিন ২ ও ৫: লোয়ার বডি সুপারসেট ওয়ার্কআউট
 দিন ৩ ও ৬: কার্ডিও ও অ্যাবস
 দিন ৭: সম্পূর্ণ বিশ্রাম।
সাদিয়া শীলা বলেন, ‘কঠোর পরিশ্রম আর প্রশিক্ষণের সময়ব্যাপ্তিকে সর্বাধিক ব্যবহারের মাধ্যমে ওয়ার্কআউটগুলো অনুসরণ করা দরকার। প্রশিক্ষণের দিনের ওপর নির্ভর করে ১০ থেকে ১৫ বার পুনরাবৃত্তি করুন। এটি স্ট্রেন্থ-ভিত্তিক প্রোগ্রাম নয়, তাই খুব কম রিপিট করলে সুবিধা টের পাওয়া যাবে না। অন্যদিকে, খুব বেশি গতি প্রয়োগও নিষ্প্রয়োজন। তবে ওয়েট লিফটিং নিয়ে চ্যালেঞ্জিং ওয়ার্কআউট করার জন্য নিজেকে কিছুটা চাপ দেওয়া চাই। আপনি যদি একটানা ১২ বার পুনরাবৃত্তি করতে পারেন, তাহলে ক্রমান্বয়ে ওজন বাড়াতে থাকুন। ওজন ব্যবহার করতে সমস্যা হলে প্রতিবার গতি খানিকটা কমিয়ে দিন।’
অস্ট্রেলিয়াপ্রবাসী এই বাংলাদেশি ফিটনেস এক্সপার্ট আরও বলেন, ‘ওয়ার্কআউটগুলোর সেটআপ সুপারসেটের ওপর ভিত্তি করে তৈরি। যারা জানেন না তাদের বলতে চাই, বিরতি নেওয়ার আগে পরপর দুটি ব্যায়াম করুন। সুতরাং “১-এ”-এর পর “১-বি” এক্সারসাইজ করুন। তারপর নিন বিশ্রাম।’
সুপারসেটগুলো জিমে সময় বাঁচিয়ে আরও কাজ করার সুযোগ দেয়। বিশেষ করে এগুলো এমনভাবে সাজানো, যেন শরীরের বিপরীত অংশগুলো (ওপর-নিচ) কাজ করে। আপার বডি সুপারসেট ওয়ার্কআউট দুটি সুপারসেটে বুক ও পিঠ এবং একটি সুপারসেটে কাঁধ ও বাহু-সংশ্লিষ্ট ব্যায়ামের অন্তর্ভুক্ত। অন্যদিকে, লোয়ার বডি সুপারসেট ওয়ার্কআউট শুরু হয় হ্যামস্ট্রিং দিয়ে। এরপর ফোকাস করা হয় গ্লুটের ওপর। তারপর কোয়াড্রিসেপ। তারপর লেগ ও অ্যাবস একসঙ্গে এবং শেষে পায়ের পেছনের অংশে ব্যায়াম করা হয়।
শুনতে সহজ মনে হলেও এ সবকিছুই বেশ চ্যালেঞ্জিং। লক্ষ্য সময় বাঁচানো নয়; বরং নির্দিষ্ট সময়ে যত বেশি ওয়ার্কআউট করা যায়। প্রতিটি সেট তিন থেকে চারবার চর্চা করা চাই। প্রতি জোড়ার তিনটি সুপারসেট তৈরি করে শুরু করতে পারেন। যদি সুপারসেটগুলোর মধ্যবর্তীকালে ৩০ সেকেন্ডের জন্য বিশ্রাম নিতে পারেন, তাহলে যোগ করতে পারেন চতুর্থ সুপারসেট। এই সামান্য বাড়তি ব্যায়ামকে হয়তো আহামরি কিছু না-ও মনে হতে পারে, তবে এ ধরনের ছোট ছোট প্রচেষ্টা একসময় বড় ফল এনে দেয়।
আপার বডি সুপারসেট
 ১-এ: ফ্ল্যাট বারবেল বেঞ্চ প্রেস
 ১-বি: ডাম্বেল পুলওভার
 ২-এ: ইনক্লাইন ডাম্বেল প্রেস
 ২-বি: পেন্ডলে বারবেল রো
 ৩-এ: লেটারাল রাইজ
 ৩-বি: রেয়ার লেটারাল রাইজ
 ৪-এ: বারবেল কার্ল
 ৪-বি: লায়িং ডাম্বেল ট্রাইসেপস এক্সটেনশন।
প্রতিটি এক্সারসাইজ ১০-১২ বার করে ৩-৪ সেট করা চাই। প্রতিটির ক্ষেত্রে মোট সময়ব্যাপ্তি ৩০-৬০ সেকেন্ড।
লোয়ার বডি সুপারসেট
 ১-এ: স্টিফ-লেগ ডেডলিফট
 ১-বি: ওয়াকিং লাঞ্জ
 ২-এ: গবলেট স্কোয়াট
 ২-বি: ডাম্বেল লেগ এক্সটেনশন
 ৩-এ: স্কোয়াট জাম্প
 ৩-বি: মাউন্টেইন ক্লাইম্বার্স
 ৪-এ: সিটেড কাফ রাইজ
 ৪-বি: স্ট্যান্ডিং কাফ রাইজ।
এ ক্ষেত্রেও প্রতিটি এক্সারসাইজ ১০-১২ বার করে ৩-৪ সেট করা চাই। প্রতিটির ক্ষেত্রে মোট সময়ব্যাপ্তি ৩০-৬০ সেকেন্ড।
কার্ডিও ও অ্যাবস
চাইলে প্রতিদিন একবার কার্ডিও করা যেতে পারে। সাদিয়া শীলার মতে, প্রত্যেকেরই সকালে প্রথমে ১৫-২০ মিনিট হাঁটার সেশনটি করা উচিত। পর্যাপ্ত পানি পান করে এবং বিশেষজ্ঞ পরামর্শমতে প্রয়োজনীয় সাপ্লিমেন্ট নিয়ে হাঁটতে হবে। শুরুতে মাঝারি গতিতে হাঁটার চেষ্টা করুন; তবে দৌড়াবেন না।
দ্বিতীয় সেশন ওয়ার্কআউট সপ্তাহে দুই দিন করা চাই। এটি হিট ধরনের প্রোগ্রাম। ট্রেডমিল, ক্রস্ট্রেইনার কিংবা সাইকেল চালানোর মাধ্যমে করা যেতে পারে। আপনি যে ধরনের ওয়ার্কআউট পছন্দ করেন, সেটিই করা শ্রেয়। ১৭ মিনিট ধরে চর্চার চেষ্টা করুন। প্রথম ১ মিনিট নিম্ন থেকে মাঝারি গতিতে। এরপর প্রতি ১.৩০ মিনিটের প্রথম ৩০ সেকেন্ড উচ্চ গতিতে এবং পরের ৬০ সেকেন্ড মাঝারি গতিতে। এভাবে ১৬ মিনিট চর্চার পর শেষ ১ মিনিট ধীরলয়ে সমাপ্তি টানুন। হিট কার্ডিও সেশনের পরে অ্যাবস চর্চা করতে পারেন।
এই প্রোগ্রামে সপ্তাহে একটি সম্পূর্ণ একটি দিন বিশ্রাম রয়েছে। আর সেদিনকে সর্বাধিক কাজে লাগানো মঙ্গল। মানসম্পন্ন ঘুম, যতটা সম্ভব আরামবোধ করা, পরের সপ্তাহের জন্য মাথা ঠান্ডা রাখা এবং শক্তি পুনরুদ্ধারের দিকে মনোযোগ দেওয়া চাই। যদি মনে করেন আপনার একটি মাসাজ থেরাপি সেশন প্রয়োজন, তবে তা সেরে নিন।
বলে রাখি, পেশি পুনরুদ্ধারে পারকাসিভ থেরাপি একটি ভালো উপায়। একে অবহেলা করা ঠিক নয়। পর্যাপ্ত বিশ্রাম এবং পেশি পুনরুদ্ধার আগের সপ্তাহের চেয়ে দ্বিগুণ পর্যন্ত কাজ করার উদ্যম জোগাবে আপনাকে। তাই একে গুরুত্বের সঙ্গে নিলে আপনার সাফল্য অনেক বেশি দৃশ্যমান হয়ে উঠবে।

 ফুয়াদ রূহানী খান
ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top