skip to Main Content

মনোজাল I প্রিটি প্রিভিলেজ

সৌন্দর্যের সরাসরি প্রভাব রয়েছে উপার্জনের ওপর। কথাটা হজম হচ্ছে না তো! অনুসন্ধানে কিন্তু সত্যতা মিলেছে

আগে দর্শনদারি পরে গুণবিচারি। এই প্রবাদবাক্যের সঙ্গে পরিচিত নন এমন মানুষ সহজে মিলবে না। এটি বলতে যা বোঝায় তা হচ্ছে, প্রথমে চেহারা দেখে ভালো লাগা চাই, পরে না হয় দেখা যাবে কাজে কতটা পটু। যুগ যুগ ধরে সুন্দর মুখের কদর প্রায় সব জায়গাতেই একটু বেশি বেশি। এমনকি অর্থ উপার্জনের ক্ষেত্রেও। রীতিমতো গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে এটি। প্রচুর তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করার পর গবেষকেরা নিশ্চিত হয়েছেন, আকর্ষণীয় চেহারা কেবল অন্যকে আকর্ষিত করে না, বরং পকেট গরম করতেও সাহায্য করে। সেটি যেকোনো পেশা—ফুটবলার, অধ্যাপক, গায়িকা, নায়িকা—সব ক্ষেত্রেই। আবার যেহেতু পুরুষ গড়ে নারীর থেকে বেশি উপার্জন করেন, এখানেও সেটি বিদ্যমান। একজন সুদর্শন পুরুষ একজন সুন্দরী নারীর তুলনায় ২০-২৫ শতাংশ বেশি আয় করেন। এ তথ্য লন্ডনের রয়্যাল হলওয়ে ইউনিভার্সিটি এবং অস্টিনের টেক্সাস ইউনিভার্সিটির শ্রম অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড্যানিয়েল হামারমেশের। যিনি দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে এই বিষয়ে মাথা ঘামাচ্ছেন। মানুষের বাহ্যিক সৌন্দর্য তার আর্থিক উপার্জনে প্রভাব ফেলে কি না, এ নিয়েই গবেষণা।
পুরো ব্যাপারটি বলার আগে প্রথমত, সৌন্দর্য কী, তা নিয়ে এই গবেষকের ব্যাখ্যা শোনা যাক। তার মতে, ‘সৌন্দর্য সব দর্শকের চোখে প্রায় একই রকম’। উদাহরণ দিলে ব্যাপারটা আরও ভালো বোঝা যাবে। ধরা যাক, রাস্তায় হেঁটে যাওয়ার সময় দুজন আরেকজনকে দেখতে পেলেন। তিনি দেখতে কেমন, তা নিয়ে দুজন পুরোপুরি একমত হয়তো হবেন না, তবে খুব কাছাকাছি থাকবেন। জাতিগত গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে তুলনা হয়তো এটিকে প্রভাবিত করতে পারে; কিন্তু সৌন্দর্য কী, তা নিয়ে সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি বেশ সর্বজনীন বলে এই অধ্যাপক বিশ্বাস করেন। অর্থাৎ সৌন্দর্য বিষয়ে আমাদের সবার মস্তিষ্ক প্রায় একই রকম কাজ করে বলে তার মত।
এখন আসল প্রশ্ন হচ্ছে, যাদেরকে আকর্ষণীয় মনে করা হয়, তাদের আয় বেশি হওয়ার কারণ কী? হামারমেশ স্বীকার করেছেন, এই প্রশ্নের উত্তর কঠিন এবং কিছুটা জটিল। তার অনুমান, শত শত বছর আগে, সুন্দর মানে সুস্থতা বোঝানো হতো। অর্থাৎ যিনি সুন্দর, তিনি আসলে পুরোপুরি সুস্থ এবং অনেক কাজ করতে সক্ষম। যদিও এই সংজ্ঞা এখন আর মানা হয় না; তবু তিনি মনে করেন, সৌন্দর্য এখনো কোনো কোনোভাবে সুস্বাস্থ্যের ধারণার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। তা ছাড়া একজন সুদর্শন ব্যক্তি মানবমনে নিজের অজান্তেই একধরনের প্রভাব ফেলেন। তার সঙ্গে বেশির ভাগ মানুষ বন্ধুত্ব করতে আগ্রহ বোধ করে, তাকে কিছু দিতে পারলে আপ্লুত হয়; সেটি বিয়ে হোক বা চাকরি। তবে এখানে যেহেতু আয়ের কথা হচ্ছে, বিয়ের ব্যাপারটা বাদ রেখে চাকরি প্রসঙ্গে আলোকপাত করা যাক। তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, সৌন্দর্য কি ইন্টারভিউ বোর্ডে কাউকে সাহায্য করে? তিনি অবলীলায় বলেছেন, হ্যাঁ, অনেকটা। কারণ, বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, ভালো চেহারার মানুষদের প্রথম স্থানে ইন্টারভিউ পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। সেখানেই শেষ নয়, নিয়োগ থেকে বেতনপ্রক্রিয়া পর্যন্ত—সৌন্দর্য সব পর্যায়ে সুবিধা পেতে সাহায্য করে। একই যোগ্যতা নিয়ে একজন সুশ্রী মানুষ যে আয় করতে পারেন, অসুন্দর বা কম সুশ্রী চেহারায় সেটা সম্ভব হয় না বললেই চলে।
যদিও হামারমেশ এ-ও উল্লেখ করেছেন, সবক্ষেত্রেই যে নিয়োগকর্তারা অভিজ্ঞতার চেয়ে আকর্ষণীয়তার পক্ষপাতী হন, ব্যাপারটা এমন নয়। কিন্তু সৌন্দর্য—শিক্ষা, বয়স, লিঙ্গ, জাতি, শ্রেণি ও ব্যক্তিত্বের মতো বিষয়গুলোর সঙ্গে একটি বাড়তি গুণ হিসেবে কাজ করে, যা বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন স্কেলে সত্যিকারভাবে একটি পার্থক্য তৈরি করে। সাধারণত আকর্ষণীয় হওয়ার কারণে উচ্চ বেতনের চেয়েও অতিরিক্ত অনেক বেশি সুবিধা পাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায় শতভাগ। সব পেশাতেই কি এটা সম্ভব? বিভিন্ন পেশা নিয়ে অনেক গবেষণা করে তিনি নিশ্চিত হয়েছেন, প্রায় সব কটিতেই এটি গুরুত্বপূর্ণ।
ন্যাশনাল ফুটবল লিগ [আমেরিকান ফুটবল] নিয়ে একটি গবেষণার উল্লেখ করে তিনি ব্যাখ্যা করেন, সুদর্শন কোয়ার্টারব্যাক, যারা মূলত দলকে পরিচালনা করেন, তাদের বেশি বেতন দেওয়া হয়। কারণটা সম্ভবত, খেলোয়াড়েরা তাদের প্রতি একটু বেশি মনোযোগ দেন। এমনকি অর্থনীতিবিদ থেকে শুরু করে অধ্যাপনার মতো খটমটে পেশাতেও দেখা গেছে, সুশ্রী ব্যক্তিরা বেশি অর্থ উপার্জন করছেন। আর আর্থিক সুবিধাগুলো কেবল বেতনে শুরু ও শেষ হয় না। হাউস মর্টগেজ লোন থেকে শুরু করে দৈনন্দিন জীবনে বিনা মূল্যে কফি পাওয়া বা ছোটখাটো জরিমানায় ছাড় পাওয়া—এসব বিশেষাধিকার পাওয়া পর্যন্ত বিস্তৃত থাকে।
কিন্তু কেন? এর খুব সহজ উত্তর হচ্ছে, সুন্দরের প্রতি আকর্ষণ মানুষের সহজাত। সাধারণ ভোক্তা বরাবরই সুন্দরে আকর্ষিত হন এবং এর জন্য সব সময় অর্থ ব্যয়ে ইচ্ছুক থাকেন। নিয়োগকর্তা সে সুযোগ নিয়েই অর্থ উপার্জন করতে এবং সুন্দর চেহারা প্রাধান্য দিয়ে ভোক্তার পছন্দগুলোকে প্রশ্রয় দিতে চান।
গবেষণার উপসংহারে এমনও বলা হয়েছে, আকর্ষণীয় লোকেরা কর্মক্ষেত্রে বৈষম্য থেকে উপকৃত হয়েছেন। এটি কেবল ঈর্ষান্বিতদের বিদ্রূপ নয়, বাস্তব তথ্যের ওপর ভিত্তি করে একটি স্বীকৃত বোঝাপড়া। তবে কোনো কোনো গবেষক বলছেন, ব্যাপারটি সত্যি হলেও অত সরল নয়। শুধু শারীরিক সৌন্দর্য নয় বরং আকর্ষণীয়তা, বুদ্ধিমত্তা, সুস্বাস্থ্য ও ব্যক্তিত্বের কারণগুলোর একটি নির্দিষ্ট সংমিশ্রণ ঘটলেই আয়ের পরিমাণ অনেক গুণ বাড়ে। অন্যথায় কর্মক্ষেত্রে এই বৈচিত্র্যের পক্ষপাত শুধু কেউ দেখতে কেমন তা নিয়ে নয়, বরং আউটলুকের পাশাপাশি তিনি কতটা স্মার্ট, কতটা সুস্থ এবং ব্যক্তিত্বসম্পন্ন কি না, এই সবকিছুর ওপর নির্ভরশীল। অর্থাৎ শারীরিক সৌন্দর্য উপার্জনের ওপর প্রাথমিক প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে হলেও তা একটা নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত। তারপর তার সঙ্গে জড়িত হয় অনেক কিছু। বুদ্ধিমত্তা, বিবেক, ব্যক্তিত্ব, মেধার সঙ্গে সৌন্দর্যের মেলবন্ধন ঘটলেই একজন মানুষ আরও বেশি উপার্জনের জন্য উপযুক্ত হয়ে উঠতে পারেন। না হলে নয়।
 রত্না রহিমা
ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top