skip to Main Content

ফিচার I মৌসুমি ফল সংরক্ষণ

অনেক ফল বছর ধরে পাওয়া সম্ভব নয়। তবে সঠিক নিয়মে রাখলে যেকোনো সময়ই স্বাদ নেওয়া যায়

এই ঋতুতে বাজার সয়লাব হয়ে যায় বিভিন্ন রকম ফলে। আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু- আরও কত কী! সাধারণ সময়ে বারবার বাজারে গিয়ে তরতাজা ফল কিনে আনা সম্ভব হলেও করোনার এই দুর্যোগে নিতান্ত দরকার ছাড়া বাইরে না যাওয়াই ভালো। সে ক্ষেত্রে এই ফল বেশি পরিমাণে এনে ঘরে সংরক্ষণ করা যেতে পারে। কিন্তু এগুলো দ্রুত পচে যায়। সাধারণ অবস্থায় বেশি দিন টেকে না। তবে একটু কৌশল খাটালে কিছুদিন রাখা সম্ভব।

লিচু বেশ নাজুক ফল। সহজেই পচতে শুরু করে। তবে কিছু পদ্ধতি মেনে সংরক্ষণ করলে দীর্ঘদিন ভালো থাকবে। এমনকি এক বছরও টিকতে পারে-
❙ ডালসহ লিচু বেশি দিন টেকে। সামান্য ডাল রেখে লিচুগুলো পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে ১০ মিনিট। একটি পরিষ্কার তোয়ালের উপর ফলগুলো রেখে ভালো করে পানি শুকিয়ে নিন। এরপর ১০টি করে লিচু কাগজে মুড়ে নিতে হবে। এভাবে মোড়ানো লিচুগুলো একটি শপিং ব্যাগে ভরে ডিপ ফ্রিজে রেখে দিন। সারা বছর ভালো থাকবে। ধোয়া লিচুগুলো কাগজের বদলে পলিথিনে ভরে একটি টিফিন বাটিতে পুরে ডিপ ফ্রিজে সংরক্ষণ করতে পারেন।
❙ ফ্রিজ ছাড়াও কয়েক মাস পর্যন্ত লিচু সংরক্ষণ করা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে পাকা লিচুর খোসা ও বীজ ফেলে অল্প আঁচে সেদ্ধ করে নিতে হবে। পরে ঠান্ডা করে লিচুগুলো কাচের বয়ামে চেপে চেপে ভরে রাখুন, যেন ভেতরে বাতাস না থাকে। বয়াম পুরোপুরি না ভরে দুই ইঞ্চি জায়গা খালি রাখতে হবে। তার উপর অলিভ অয়েল ঢেলে ভালো করে মুখ আটকে দিন। মাঝেমধ্যে রোদে দিলে এভাবে সংরক্ষিত লিচু কয়েক মাস পর্যন্ত ভালো থাকবে।

কাঁচা কিংবা পাকা উভয় অবস্থাতেই আমের বেশ চাহিদা। কাঁচা অবস্থায় সংরক্ষণ করতে চাইলে-
❙ আম প্রথমে ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে। খোসা ছাড়িয়ে আরেক দফা ধুয়ে নিন। পছন্দমতো আকৃতিতে টুকরা করে নিতে হবে। আমের আঁটি ফেলে দিন। একটি পাত্রে পানি, আধা টেবিল চামচ চিনি, আধা টেবিল চামচ ভিনেগার একসঙ্গে মিশিয়ে নিন। সেই মিশ্রণে আমের টুকরাগুলো আধা ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে। তারপর ছাঁকনি দিয়ে ছেঁকে পানি ঝরিয়ে নিন। টিস্যু দিয়ে আমের টুকরা থেকে পানি শুকিয়ে নিতে হবে। তারপর টুকরাগুলো ডিপ ফ্রিজে রেখে দিন দুই ঘণ্টা। এই পদ্ধতিতে পুরো বছর কাঁচা আম সংরক্ষণ করা সম্ভব।

খুব সহজে সংরক্ষণ করা যায় পাকা আমও। তবে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া চাই। কেননা, এটি ক্লাইমেকট্রিক জাতীয় ফল। তাই এর ভেতর সব সময় জৈব রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটে-
❙ গাছ থেকে সংগৃহীত আম ঘরের তাপমাত্রায় এমনিতেই সপ্তাহখানেক ভালো থাকে। তবে কুসুম গরম পানিতে ৫-৭ মিনিট ভিজিয়ে রাখলে আরও দুই সপ্তাহ বেশি সংরক্ষণ করা যায়।
❙ কাগজে মুড়িয়েও সংরক্ষণ করা যায়। খবরের কাগজে মুড়ে আমগুলো বড় পলিথিনে ভরে ফ্রিজের নরমালে রেখে দিলে দুই সপ্তাহ ভালো থাকে। চাইলে এক মাস পর্যন্তও রাখা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে ১০ দিন পরপর নতুন কাগজে মুড়ে দিতে হবে। ডিপ ফ্রিজে রেখে আম ছয় থেকে আট মাস পর্যন্ত সংরক্ষণ করা সম্ভব।
❙ আরও বেশি দিন সংরক্ষণ করতে চাইলে পাকা আমের খোসা ছাড়িয়ে ছোট টুকরা করে জিপলক ব্যাগে রাখা যেতে পারে। মুখ বন্ধ করে ব্যাগটি ডিপ ফ্রিজে রাখতে হবে।
❙ আম ছোট টুকরা করে কেটে ব্লেন্ড করে নিন। আইসবক্সে তা ঢেলে ডিপ ফ্রিজে রেখে দিতে পারেন। জমে গেলে তা জিপলক ব্যাগে ঢুকিয়ে নিন। ব্যাগটি মুখবন্ধ বাটিতে ভরে ডিপ ফ্রিজে রেখে দিতে হবে। এভাবে পুরো বছর আম সংরক্ষণ করা যাবে।

জাম বছরে মাত্র তিন মাস মেলে। তাই বছরের অন্য সময় তা খেতে চাইলেও উপায় থাকে না। তবে সংরক্ষণ করে রাখলে সারা বছরই জামের স্বাদ নেওয়া সম্ভব-
১) জাম ধুয়ে পানি ভালোভাবে ঝরিয়ে একটি পলিব্যাগে ভরে নিতে হবে। ব্যাগের মুখ বেঁধে দিন। তারপর একটি ফাইবার ব্যাগে ভরে মুখ বেঁধে নিতে হবে। ব্যাগটি আবার আরেকটি ফাইবার ব্যাগে ঢুকিয়ে নিন। ব্যাগের মুখ মুড়িয়ে ডিপ ফ্রিজে রেখে দিতে হবে। এই পদ্ধতিতে সংরক্ষিত জাম ৫-৬ মাস পর্যন্ত খাওয়া যেতে পারে। চাইলে এক বছর পর্যন্তও রাখা যাবে।

কাঁচা কিংবা পাকা উভয় অবস্থাতেই কাঁঠাল খাওয়া যায়। কাঁচা ফলের তরকারি হয়। পাকা কাঁঠাল আবার দুই ধরনেরÑ নরম ও শক্ত। সব রকম ফলের সংরক্ষণ পদ্ধতি আলাদা।
কাঁচা কাঁঠাল সংরক্ষণ পদ্ধতি-
❙ একটি ছুরিতে তেল মেখে নিন। কাঁচা কাঁঠাল কেটে চার টুকরা করে নিতে হবে। পাতলা কাপড় দিয়ে আঠা মুছে নিতে হবে। ভেতরের মোটা অংশটি কেটে ফেলে দিন। এবার কাঁঠালের টুকরাগুলো থেকে একটু পুরু করে খোসা কেটে ফেলে দিতে হবে। খোসা ছাড়ানো হয়ে গেলে কাঁঠালগুলো আরও ছোট টুকরা করে নেওয়া যেতে পারে। এবার সেগুলো না ধুয়ে পলিথিন বা এয়ারটাইট ব্যাগে ভরে মুখ বন্ধ করে দিন। ব্যাগটি ডিপ ফ্রিজে সংরক্ষণ করুন। তা সারা বছর ভালো থাকবে।
❙ পানিতে সামান্য লবণ ও হলুদ দিয়ে কাঁঠালের টুকরাগুলো হালকা সেদ্ধ করে নিতে পারেন। তারপর পানি ছেঁকে এয়ারটাইট ব্যাগে ঢুকিয়ে ডিপ ফ্রিজে সংরক্ষণ করা যেতে পারে।

পাকা নরম কাঁঠালের ক্ষেত্রে-
❙ এ ধরনের ফলের ক্ষেত্রে একটি চালনিতে চেলে পাল্প বের করে নিতে হবে। তা দিয়ে আইসবক্স ভরে ডিপ ফ্রিজে রেখে দিন। জমে গেলে বের করে জিপলক ব্যাগে ভরে আবারও ডিপ ফ্রিজে রাখুন। এভাবে কাঁঠাল ছয় মাস পর্যন্ত ভালো থাকে।

পাকা শক্ত কাঁঠালের ক্ষেত্রে-
❙ কোয়ার মাঝ বরাবর কেটে ফেলতে হবে। বীজ ফেলে এয়ারটাইট বক্সে ঢুকিয়ে ডিপ ফ্রিজে রেখে দিন। এভাবে রাখার অসুবিধা হচ্ছে, কাঁঠাল একবার ডিপ ফ্রিজ থেকে বের করে ফেললে তা আবার সংরক্ষণ করা সম্ভব হয় না। সে ক্ষেত্রে ছোট ছোট একাধিক এয়ারটাইট ব্যাগে অল্প পরিমাণ কাঁঠাল রেখে সংরক্ষণ করা যেতে পারে।

উল্লিখিত পদ্ধতিতে এসব ফল সংরক্ষণ করলে গুণ ও মানে তেমন কোনো হেরফের ঘটে না।
❙ ফুড ডেস্ক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top