skip to Main Content

স্বাদশেকড় I চানাচুর

মুখরোচক। উৎপত্তিস্থল ভারতের বোম্বে। মোগল আমলে এসেছে এই খাবার

মুচমুচে খাবার। উৎপত্তিস্থান হিসেবে ধারণা করা হয় ভারতবর্ষকে। প্রণালিতে বদল ঘটতে ঘটতে ছড়িয়ে পড়েছে সারা বিশ্বে। এখন তো মাছ থেকেও তৈরি হচ্ছে এটি। চানাচুরের উৎপত্তি সম্ভবত ৪০০ বছর আগে।
ফুটবল খেলেনি এবং চানাচুর খায়নি এমন মানুষ পাওয়া কঠিন। অতিথি আপ্যায়নেও খাবারটি বেশ জুতসই। ঘরে, টিভিতে খেলা দেখতে দেখতে কিংবা বৃষ্টিমুখর দিনে মুড়ির সঙ্গে এটি মিশিয়ে খাওয়া বাঙালির একরকম বিনোদন বটে। আবার টক-ঝাল-মিষ্টিসহ বিচিত্র স্বদের চানাচুর রয়েছে। খাবারটি ছোট বড় সবাই পছন্দ করে।
এর উৎপত্তিস্থান নিয়ে সঠিক কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে ধারণা করা হয়, মোগল আমলের মাঝামাঝি সময়ে, ভারতের মুম্বাইয়ের বন্দর এলাকায় এর উৎপত্তি। ওই অঞ্চলে কিছু খাদ্য ব্যবসায়ীকে একধরনের বিশেষ খাবার বিক্রি করতে দেখা যেত। তা হলো মুড়মুড়ে ডাল ভাজা। তারা আধভাঙা ডালের সঙ্গে ঝাল মসলা মিশিয়ে ভেজে নিত। ‘চুড়া’ নামে তা বিক্রি হতো। ভোজনরসিকদের আকৃষ্ট করতে সক্ষম হয়েছিল এই খাবারটি। তাই কোনো প্রকার বিজ্ঞাপন ছাড়াই এর মুখরোচক গল্প বের হতে হতে পুরো ভারতবর্ষে ছড়িয়ে পড়ে চানাচুর নামে।
অঞ্চলভেদে পরিবর্তিত হতে থাকে এর রেসিপি। ডাল ও ঝাল মসলার সঙ্গে একে একে যুক্ত হতে থাকে আলু ও বাদাম। যা খাবারটির স্বাদ আরও বাড়িয়ে তুললেও মৌলিকতা বিনষ্ট করে। আবার অঞ্চলভেদে এর নামও বদলে যেতে থাকে। একপর্যায়ে চানাচুর থেকে আলু বাতিল হয়ে যায়। ভারতবর্ষে আলুবিহীন এ পদটি কোথাও চিবাড়া, কোথাও চিব্দু, কোথাও বা ভুষো নামে পরিচিত। বর্তমানে বিভিন্ন স্বাদের ঝাল মসলাসহ তেলেভাজা মটর, চিনাবাদাম, কর্ন ও লবণের মিশ্রণকেই চানাচুর বলে। ধারণা করা হয়, উড়িয়া শব্দ ‘চানাচুড়া’র অপভ্রংশ হলো আজকের চানাচুর। তবে এই তথ্য নির্ভুল কি না, তা নিশ্চিত নয়।
অনুমান করা হয় মীর জুমলার সময়ে বাংলায় চানাচুরের প্রবেশ ঘটে। তার সঙ্গে থাকা বাবুর্চিরা খাবারটি এখানে নিয়ে এসেছিল। ফলে এটিকে মোগল খানার সমসাময়িক পদ বলেই গণ্য করা হয়। সেই হিসেবে চানাচুর ৪০০ বছরের পুরোনো বলে গণ্য।
ভারতে আগত ইউরোপীয়রা চানাচুর বেশ পছন্দ করেছিল। ফলে এর রেসিপি তারা বয়ে নিয়ে যায় উপমহাদেশের বাইরে। এমনি করে চানাচুর ছড়িয়ে পড়ে বহির্বিশ্বে। ইউরোপেও এর চাহিদার কমতি নেই। আয়ারল্যান্ড ও যুক্তরাজ্যের বাসিন্দারা মুম্বাই থেকে উৎপত্তি লাভ করা এই পদকে বোম্বে মিক্স বলে। মুম্বাইয়ের বাইরে এমন কিছু খাদ্য মেলে, যেগুলোকে তারা চানাচুরই বলে। মিয়ানমারে ‘সারকালে চিই’। আবার শ্রীলঙ্কাতেও এমন একটি বাহারি পদের হদিস মেলে, সেখানে গাছ-গাছড়ার সঙ্গে শুকনা কারি লিফ ও কাসাবা যোগে এক প্রকার খাবার তৈরি করে। যা মূলত চানাচুরই। সিঙ্গাপুরেও ‘ক্যাকাং পুতিই’ নামে প্রায় একই রকমের একটি পদ মিলে। তবে বাংলা ঘরানার চানাচুরের সঙ্গে এর মিল খুব একটা নেই। সেই সাদৃশ্য আছে নেপালের ডালমুঠের সঙ্গে। আবার তামিলনাড়ু ও কেরালার চানাচুরের সঙ্গে আমাদের অঞ্চলের মিল রয়েছে। সেসব স্থানে চানা ডাল, পাকোড়া, কারাসেভ, বুন্ধি, ওমাপড়ি ও মুরুককু একসঙ্গে মিশিয়ে যে খাবারটি তৈরি হয়, তা মূলত চানাচুরেরই জাত। আফ্রিকার বিভিন্ন দেশেও রয়েছে চানাচুরের উপস্থিতি। জিম্বাবুয়ে, কেনিয়া, উগান্ডা ও তাঞ্জানিয়ায় পদটি চিবদো ও চিবরা নামে পরিচিত। দক্ষিণ আফ্রিকার ‘কাপে মালায়’ সম্প্রদায় চানাচুরকে ‘শ্লাঙ্গেরজিয়েস’ বলে। আফ্রিকান চানাচুরে ঝালের বদলে মিষ্টি দেওয়া হয়। যুক্তরাষ্ট্রেও মেলে এটি। এই উপমহাদেশের যে কয়টি শুকনা খাবার মার্কিনরা নিজ দেশে বিক্রি করে, সেগুলোর মধ্যে একটি হলো এই চানাচুর। আমেরিকায় গুজরাটি মিক্স বা গথিয়া মিক্স নামে একধরনের চানাচুর প্রচলিত রয়েছে, যা মূলত কুড়মুড়ে ভাজা ডালের সঙ্গে ঝাল মসলার মিশ্রণ। একই রকমের ঝাল দেওয়া এক প্রকার চানাচুর আছে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে। সেখানে তা ভুজিয়ামিক্স নামে পরিচিত। পাকিস্তানে চানাচুর চিবাড়া কিংবা নিমকো নামে পরিচিত। এই জাতের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি মিল রয়েছে লক্ষ্ণৌ অঞ্চলের চানাচুরের। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ, অ্যাকোয়াকালচার অ্যান্ড মেরিন সায়েন্স অনুষদের একদল গবেষক, পাঙাশ ও সিলভার কার্প থেকে উদ্ভাবিত চানাচুরের নাম দিয়েছেন যথাক্রমে সাউফিস চানাচুর-১ এবং সাউফিস চানাচুর-২।

 ফুড ডেস্ক
ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top