skip to Main Content

ফিচার I খুনে খাবার

বাঁচার জন্য খাদ্য। অথচ এর কোনো কোনোটি হতে পারে মৃত্যুর কারণ। আমাদের চারপাশে সেসবের উপস্থিতি

কিছু খাদ্য বিষের বাহক। সঠিক পদ্ধতিতে না রাঁধলে কিংবা না বুঝে খেলে প্রাণটাই যেতে পারে। অথচ এসব খাবার হরহামেশাই খেয়ে যাচ্ছে মানুষ…

সুস্বাদু খাবারের তালিকা দীর্ঘ। কিন্তু সব খাবারই নিশ্চিন্তে খাওয়ার জো নেই। কিছু খাদ্য প্রাণঘাতীও। কেননা, সেগুলো এমন সব উপাদান বহন করে, যা মানবদেহের জন্য ভীষণ ক্ষতিকর। বিশেষ প্রক্রিয়ায় না খেলে অসুস্থ হতে হয়। কিছু ক্ষেত্রে মৃত্যু অবধারিত। যদিও এসব খাবার পুষ্টিগুণে ভরা। থাকে ভিটামিন আর খনিজও। কিন্তু প্রাকৃতিকভাবেই এগুলোর মধ্যে প্রাণঘাতী অম্ল কিংবা রাসায়নিক পদার্থ তৈরি হয়। এই তো চলতি বছরের শুরুতে দেশের কিশোরগঞ্জ জেলায় পটকা মাছ খেয়ে প্রাণ হারিয়েছে তিনজন। গুরুতর অসুস্থ হয়েছিল প্রায় অর্ধশত। মূলত সে জেলার হাওরে দুই ধরনের পটকা মাছ মেলে। একটির শরীরে থাকে টেট্রোডোটক্সিন বিষ, যা পটাশিয়াম সায়ানাইডের চেয়েও ১২ শ গুণ বেশি বিষাক্ত। এমন একটি মাছের বিষক্রিয়ায় ৩০ জনের মৃত্যু হওয়ার আশঙ্কা থাকে। কিন্তু পটকার এই জাত সম্পর্কে সেই অঞ্চলের মানুষের কোনো ধারণাই ছিল না। তারা অজ্ঞতার বশে মাছটি খেয়ে প্রাণ হারিয়েছে। দেশের বাইরেও এ ধরনের ঘটনা ঘটে, বিশেষ করে পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে। তবে পটকা মাছ খেয়ে নয়, কাঁচা ঝিনুক খেয়ে। এতে নরো ও ভাইব্রিও নামের দুটি ভাইরাস থাকে, যা শরীরে প্রবেশ করে গ্যাস্ট্রনটেরিটিস ও কলেরার সৃষ্টি করে। এতে মৃত্যুও হতে পারে। তবু মানুষ কাঁচা ঝিনুক খায়। এই খাদ্য চামড়ায় ক্ষত ও পচনশীল রোগ সৃষ্টির পাশাপাশি মারাত্মক সেপটিসিমিয়ার তৈরি করতে পারে। টুনা মাছ খেলেও মরণব্যাধিতে আক্রান্ত হয় মানুষ। প্রতিবছর শত শত লোক অসুস্থ হয়ে পড়ে এটি খেয়ে। কেননা এটিও বিষাক্ত পদার্থ বহন করে। মাছটি রাঁধতে শেফকে বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত হতে হয়।
পটকা মাছ, ঝিনুক ও টুনার মতো বিপজ্জনক কিছু ফল, খাদ্য ও সবজিও রয়েছে। যেমন চেরি। এর বীজে সায়ানোজেনিস থাকে, যা শরীরে প্রবেশ করে সায়ানাইড তৈরি করে। ১৫০ পাউন্ড ওজনের একজন মানুষের মৃত্যু ঘটাতে এই বিষের মাত্র ০.১ গ্রামই যথেষ্ট। একটি চেরির বীজে ০.১৭ গ্রাম সায়ানাইড থাকতে পারে। মানে একটি কিংবা দুটি চেরি যদি বীজসমেত খাওয়া হয়, তবে মৃত্যুর আশঙ্কা থাকে। একই বিপদ রয়েছে আপেল ও নাশপাতির বীজে। এক কেজি আপেল বীজে প্রাণঘাতী হাইড্রোজেন সায়ানাইড আছে ৭০০ মিলিগ্রাম। একেকটি আপেল বীজের গড় ওজন প্রায় আধা গ্রাম। মোটামুটি ২০০টি বীজ মানুষের পেটে গেলেই মৃত্যু ঘটতে পারে। ক্যাস্টর বীজও প্রাণঘাতী। যারা তা সংগ্রহের কাজ করে, তাদের শরীরে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এমনকি এর একটি বীজ খেলে একজন মানুষ মারা যেতে পারে। চারটি খেলে একটি ঘোড়া মারা যেতে পারে। বিষাক্ত ফল মানুষ তো খেয়েই থাকে, কখনো সেটি আবার জাতীয় ফলের মর্যাদাও পায়। যেমন আকী। এটি জ্যামাইকার জাতীয় ফল। সঠিক উপায়ে না খেলে এটি খাওয়ার পর মৃত্যু হতে পারে। কেননা এর বীজ ভীষণ বিষাক্ত। কাঁচা কিংবা আধা পাকা আকী খাওয়ার ফলে প্রথমে বমি তারপর হার্ট অ্যাটাক এবং মৃত্যু। কেননা অপক্ব আকীতে হাইপোগ্লাইসিন নামের উপাদান থাকে, যা মানুষের জন্য বিষ। তবে পাকলে ফলটির মাংসল অংশ খাওয়া যায়। জ্যামাইকার জাতীয় খাবার ভয়িলা আকী ফল দিয়েই তৈরি।
চিনাবাদামও হতে পারে মৃত্যুর কারণ। বিভিন্ন দেশে রান্নায় এটি যোগ করা হয়। কিন্তু সঠিকভাবে রাঁধতে না পারলে বিষক্রিয়া হতে পারে। আবার এটি বেশ অ্যালার্জিযুক্ত খাবারও। তা খেয়ে ফুড অ্যালার্জি হয়ে মারা গেছে, বিশ্বে এমন ঘটনাও ঘটেছে। কাঠবাদামে সায়ানাইড বিদ্যমান। তা আলাদা না করে খেলে মৃত্যুর শঙ্কা থাকে। একই ভয় রয়েছে কাজুবাদামে। তবে তা কাঠবাদামের চেয়ে তুলনামূলকভাবে কম।
চাষ পদ্ধতির জন্যও খাবার বিষাক্ত হতে পারে। যেমন আর্সেনিক রয়েছে এমন মাটিতে যদি ধান চাষ হয় কিংবা আর্সেনিকযুক্ত পানি দিয়ে সেচ দেওয়া হয়, তাহলে চাল বিষাক্ত হতে পারে। এমন চালে রাঁধা ভাত খেলে বমি ও পেটে ব্যথা হওয়ার আশঙ্কা থাকে। প্রাপ্তবয়স্ক একজন মানুষের মৃত্যুর জন্য ৫০ গ্রাম আর্সেনিকই যথেষ্ট। বিষাক্ত চালে রাঁধা ভাতের এক কাপের চার ভাগের এক ভাগে প্রায় আড়াই মাইক্রোগ্রাম আর্সেনিক থাকে। এমন ১৮ শ কাপ ভাত খেলেই মানুষের মৃত্যু হতে পারে। প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারে আলুও। এই কন্দে সোলানাইন নামের প্রাকৃতিক উপাদান থাকে। এর পরিমাণ বেশি হলে আলুর রং সবুজ হয়ে যায়। যার এক পাউন্ড খেলেই মানুষ মারা যেতে পারে। জোলাবও বিষাক্ত হতে পারে। এর গাছে অক্সালিক অ্যাসিড রয়েছে। ফলে বৃক্ষটির পাতা খেলে মুখ ও গলায় চুলকানি হয়ে বমি হয়। অতি বিষক্রিয়ায় মানুষ মারাও যায়। এ গাছের পাতা মাত্র ১০ পাউন্ড খেলেই প্রাণ হারাতে হয়। প্রাণ যেতে পারে মাশরুম খেয়েও। কেননা এর রয়েছে ১৪ হাজার প্রজাতি। কিন্তু বেশির ভাগই বিষাক্ত। কিছু মাশরুমের নামেই এর বিষের ভয়াবহতা বোঝা যায়। যেমন ডেথ ক্যাপ ও ডেস্ট্রয়িং অ্যাঞ্জেল। ফলে মাশরুম খাওয়ার ক্ষেত্রেও এর জাত বোঝা জরুরি।
এ তো গেল সরাসরি বিষক্রিয়ার কথা। কিছু ফল আছে যেগুলো খাওয়ার পর পানি পান করলে বিষক্রিয়া ঘটতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, ফুটি, তরমুজ, কমলালেবু, শসা, আনারস, বাতাবিলেবু ও স্ট্রবেরি খাওয়ার পর পানি পান অনুচিত। কেননা, এসব ফলে পানির পরিমাণ বেশি। এগুলো খাওয়ার পর যদি আবারও পানি পান করা হয়, তাতে শরীরের পিএইচ মাত্রার হেরফের ঘটে। ফলে হজমে গন্ডগোল হয়, পরিণামে এগুলো পুষ্টি দেওয়ার বদলে টক্সিনে পরিণত হয়; যা দীর্ঘ মেয়াদে শরীরের জন্য খারাপ ফল বয়ে আনে। তাই ফল খাওয়ার আধা ঘণ্টা পর পানি খাওয়ার পরামর্শ দেন পুষ্টিবিদেরা।
এসব ছাড়াও বিশ্বে আরও কিছু খাবার আছে, যা খেলে কিছু ক্ষেত্রে মৃত্যু ঘটে এবং বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মানুষ ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়ে। কেননা সেসব খাদ্য এমন সব রাসায়নিক বহন করে, যা কম রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতাসম্পন্ন মানুষের শরীরের জন্য বিপদের কারণ হতে পারে। সেসব খাবার হলো নামিবিয়ার জায়ান্ট বুলফ্রগ, আফ্রিকা ও দক্ষিণ আমেরিকার হাইড্রোজেন সায়ানাইডযুক্ত কাসাভার পাতা ও মূল, ইতালির কাসু মারজু চিজ, গ্রিনল্যান্ডের হাকার্ল ইত্যাদি।

 ফুড ডেস্ক
ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top