skip to Main Content

কভারস্টোরি I চা-চক্র: দৃষ্টির তৃষ্ণায়

কেটলি কিংবা টি-পট থেকে ফ্যাব্রিকে। মানে, দেহমনের ক্লান্তি কাটিয়ে চা ছড়িয়ে পড়েছে পোশাকের জগতে। নানান রঙে, বিচিত্র শেডে। এ হলো প্রকৃতিপ্রাণিত রঙের আনকোরা এক বিজ্ঞান। ফ্যাশনের নতুন এক ধারা। লিখেছেন সারাহ্ দীনা

এবার চায়ের ভিন্ন এক আখ্যান। লন্ডনের সেন্ট্রাল সেন্ট মার্টিন স্কুল অব ফ্যাশনের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো সুজান লি ইম্পেরিয়াল কলেজ অব লন্ডনের এক দল রিসার্চারের সঙ্গে মিলে চা নিয়ে একটি গবেষণা করেছিলেন। সেলুলোজ ফাইবার থেকে ব্যবহারযোগ্য ফ্যাব্রিক তৈরি করা ছিল সে গবেষণার মূল উদ্দেশ্য। এর আগে কেউ এ ধরনের গবেষণা করেননি, তা নয়। তাহলে কি এই রিসার্চের প্রধান দিক?
এতে ছিল গ্রিন টি-এর একটি মিক্সার, যা মূলত সবুজ চায়ের সঙ্গে নিউট্রিয়েন্টস এবং চিনির মিশ্রণ। এরপরে যোগ করা হয় ব্যাকটেরিয়া। বেশ কয়েক দিন ধরে চলে এগুলোর বিক্রিয়া। মাইক্রো অর্গাানিজম অর্থাৎ ব্যাকটেরিয়া, ফাঙ্গির প্রভাবে ডিকম্পোজিশন পদ্ধতির মাধ্যমে বায়োডিগ্রেডেবলে পরিণত হয় চা।
মিশ্রণটি শুকিয়ে এলে দেখা যায়, সেলুলোজের লম্বা ফিলামেন্টে পরিণত হয়েছে সেটি। ভেসে আছে একটি পাতলা আস্তরণ তৈরি করে। যদিও সেভাবে ইভেন টোন নয়, অনেকটা আনইভেন, তবু এই-বা কম কী! পরবর্তীকালে আস্তরণটি ব্যবহারে করে তৈরি হয় পোশাক। লেদারের মতো চা সেই প্রথম ব্যবহারযোগ্য ম্যাটেরিয়াল হিসেবে তালিকায় আসে।
লোয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ইয়ং আ লি সু এবং ভেস্ট-এর জন্য প্রটোটাইপ প্রসেস নিয়ে রিসার্চ করেন। ব্যাকটেরিয়ার সিমবায়োটিক কলোনি এবং ইস্ট নিয়ে হারভেস্ট শুরু হয়। এখানে ব্যবহার করা হয় কমবুচা ধরনের চা। সঙ্গে ছিল ভিনেগার ও সুগার।
ড্রাই হওয়ার পরে দেখা যায়, লেদারের মতো একটি রেপ্লিকেট তৈরি হয়েছে। ইয়ং লি জিনিসটির ব্যবহার কেমন হবে, তা নিয়ে কাজ করেন। তৈরি করেন তিন ধরনের পণ্য— ব্যাগ, জুতা ও পোশাক। শতভাগ বায়োডিগ্রেডেবল এই ফ্যাব্রিক। ফ্যাশন-বর্জ্য নিয়ে দুশ্চিন্তার এই সময়ে এ ধরনের ফ্যাব্রিক ব্যবহারের মাধ্যমে পরিবেশের ক্ষতি কমানো সম্ভব।
নতুন ফ্যাব্রিক নিয়ে কাজ করার হাজার রকম চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এনভায়রনমেন্টাল প্রটেকশন এজেন্সির সঙ্গে ইয়ং লি বিভিন্ন চায়ে তৈরি ফ্যাব্রিক নিয়ে গবেষণার মাধ্যমে সাসটেইনেবিলিটি বিষয়ে অগ্রগতির উদ্দেশ্য কাজ করছেন। চা থেকে উৎপন্ন ফ্যাব্রিক বর্জ্যরে পরিমাণ কমায়, রি ইউজের চক্রমান মডেলের কারণে। এটি ক্রাডেল টু ক্রাডেল মডেল নামে পরিচিত। ফাস্ট ফ্যাশনের যুগে সব সিজনেই ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতে নতুন নতুন পোশাক যুক্ত হয়। এতে ওয়েস্টের পরিমাণ বাড়ে। শেষ অবধি সব বর্জ্য গিয়ে পৌঁছায় পৃথিবীর বুকে। অপচনশীলে তৈরি হয় জঞ্জাল। পরিবেশ হয় দূষিত। রিসাইকেলের শেষেও এর সমাধান নেই। বর্জ্যরে পরিমাণে বাড়তেই থাকবে। এসব ক্ষেত্রে সাসটেইনেবল ফ্যাশন দেখাতে পারছে নতুন দিকের সূচনা। রিসাইকেল ফলে ধরণির দূষণ কমছে। টি ফ্যাব্রিকের বর্জ্য মিশে যাবে মাটির সঙ্গে। পরিণত হবে না জঞ্জালে।
বহুল প্রচলিত ‘টি-শার্ট’ শব্দের নতুন দিক উন্মোচিত হয় গবেষকদের চেষ্টায়। ব্রিটেন থেকে আগত জনপ্রিয় পানীয় টি থেকে শেষ পর্যন্ত তৈরি হয়েই গেল ফ্যাব্রিক। লেদারের মতো দেখতে কিন্তু লাইট ওয়েট এই কাপড় থেকে এরপরে তৈরি করা হয় শার্ট। টি-শার্ট! এর বাইরেও তৈরি করা হয় বিভিন্ন পোশাক, ভেস্ট, সুজ। ইম্পেরিয়াল কলেজ, ইংল্যান্ডের একটি সায়েন্টিস্ট টিম কাজ করছে সেন্ট মার্টিন কলেজ অব আর্ট অ্যান্ড ডিজাইনের সায়েন্টিস্ট গ্রুপের সঙ্গে। এই কর্মযজ্ঞের মূল উদ্দেশ্য ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতে টি মেইড ফ্যাব্রিক ব্যবহার করা। মূল উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে গ্রিন টি স্যুপ, চিনি এবং আরও বিভিন্ন রকম পদার্থ।
চা খেতে খেতে ছলকে পোশাকে পড়েনি এমন মানুষ মনে হয় না তেমন আছে। কখনো না কখনো চায়ের দাগ কাপড়ে লেগেই যায়। এখন সেই চায়ের দাগের গল্প। শ্রীলঙ্কার একটি পাহাড়ি অঞ্চলের নাম আগার পাঠানা। বিশ্বখ্যাত ইউনিলিভারের ইনস্ট্যান্ট টি ফ্যাক্টরি সেইটিয়া এখানে। প্রতিবছর ২ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন রেডি-টু-ড্রিংক চা উৎপন্ন হয় এটি থেকে। লিপ্টন আইস টি তৈরিতে ব্যবহার করা হয় সেই চা। প্রতিদিন ফ্যাক্টরিতে তৈরি হয় প্রায় পাঁচ টন উৎপাদন বর্জ্য। ফ্যাক্টরি ম্যানেজার আনুশাহ কাটালাওয়ালা এবং তার টিম কীভাবে উৎপাদন বর্জ্য কমানো যায়, সে বিষয়ে গুরুত্বের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছিলেন। সল্যুশন লুকিয়ে ছিল সমস্যার মাঝেই। আনুশাহ বলেন, ‘এ বিষয়ে আনুশাহ বলেন, ‘কাজ করতে গিয়ে ফ্যাক্টরির শ্রমদানকারীদের ইউনিফর্মে দাগ লেগে যায় প্রতিদিন। বেশ দারুণ দেখতে নকশা এবং রং তৈরি হয় এই দাগ থেকে। এ নিয়ে আমরা ভাবতে শুরু করি। এভাবে ফ্যাব্রিক ডাই করার ভাবনা আসে আমাদের মাথায়। নতুন একটি কাজ আবার একই সঙ্গে বর্জ্য কমবে— এ ধরনের চিন্তা থেকেই আমাদের ভাবনা শুরু।’ এরই মধ্যে শ্রীলঙ্কার লিডিং ন্যানো টেক ইনস্টিটিউট স্লিনটেকের সিনিয়র রিসার্চ সায়েন্টিস্ট প্রফেসর ভিনিতা ঠাডানি যোগাযোগ করেন আনুশাহর সঙ্গে। তিনি কাজ করছেন ন্যাচারাল ডাই নিয়ে। গুগল সার্চে তিনি খুঁজে পান আনুশেহর ফ্যাক্টরির চা ডাই-এর খবর।
এবার চায়ের রঙে পোশাক রাঙানোর কথা। আনুশাহ বলেন, ‘আমরা জানতাম, প্রাকৃতিক রং নিয়ে কাজ করতে গেলে সাপ্লাই চেইন, ব্যয় এবং রি প্রডাকটিবিলিটির বিষয়ে উন্নতি এবং এর আধুনিকায়ন করতে হবে। স্লিনটেক এবং সেইটিয়ার সঙ্গে গার্মেন্ট পার্টনার হিসেবে যুক্ত হয় ডাইনাওয়াশ। এখান থেকে শুরু হয় মূল কর্মযজ্ঞ। আনুশাহ বলেন, ‘আমরা র ম্যাটেরিয়াল সাপ্লাই দিতে শুরু করি, স্লিনটেকের তত্ত্বাবধানে শুরু হয় গবেষণা এবং উন্নয়ন। তিন বছরের নিরলস গবেষণা এবং পরবর্তী এক বছর চলে এর উন্নয়ন। এই কার্যক্রমের মাধ্যমে তৈরি হয় ইন্ডাস্ট্রি স্ট্যান্ডার্ড ন্যাচারাল টি ডাই। আর ডাইনাওয়াস কাজ শুরু করে ডাইয়িং এবং কমার্শিয়ালাইজেশন নিয়ে। সব ধরনের কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয় শ্রীলঙ্কার রপ্তানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধানে।
ওয়েস্ট থেকে ওয়্যারড্রোবে চা ডাইয়ের গল্পটা এমন। সিয়েটা টি ফ্যাক্টরি এখন টি পাউডারের সঙ্গে সঙ্গে ন্যাচারাল টি ডাই উৎপাদন করছে। নামকরণ হয়েছে ‘টি-হিউ’। পাউডারি এই ফর্ম থেকে পনেরোটি শেড ন্যাচারাল টি ডাই তৈরি করা যায়। অ্যান্টিক লুক নিয়ে আসার ক্ষেত্রে টি ডাই দারুণ ভূমিকা রাখে। এর বাইরে আরও বিভিন্ন রঙে রাঙানো সম্ভব। ক্যামোমেইল টি বাথের মাধ্যমে ব্রাইট ইয়েলো কালার নিয়ে আসা যায়। গ্রিন টি হালকা সবুজ আভা তৈরি করে। চিরচেনা কালো চায়ে ট্যান, বাদামি আর বেজ শেড নিয়ে আসা যায়, হিবিসকাস টি গোলাপি এবং ল্যাভেন্ডারের মিশ্রণের একটি আকর্ষণীয় রং তৈরি করে।
টি ডাই-এর মজার একটি দিক হলো, এই কাজে রং অনেকটাই নির্ভর করে গন্ধের ওপর। বিভিন্ন রকম চায়ের মধ্যে যার গন্ধ যতটা কড়া, তার রং ঠিক ততটাই গাঢ়। ডাই-এর পরে ধুয়ে নিলে ম্লান হয়ে আসবে চায়ের ঘ্রাণ। মনে রাখতে হবে, সিনথেটিক ফ্যাব্রিকে টি ডাই সম্ভব নয়। আরেকটি বিশেষ টিপস অবশ্যই মনে রাখতে হবে। সেটি হচ্ছে, ডাই করার আগে ফ্যাব্রিকটিকে গরম পানিতে ঠিকভাবে ভিজিয়ে নিতে হবে। এতে ফ্যাব্রিকের মাঝে টি ডাই গ্রহণের সক্ষমতা বাড়বে।
টি ডাই নিয়ে আগ্রহ কি বাড়ছে? এটি সম্ভব ঘরে বসেও। প্রথমে একটি পাত্রে ২৫০ এমএল পানি নিতে হবে। তাতে প্রতি ১৫০ এমএলের জন্য মেশাতে হবে ১০০ গ্রাম ড্রাই চা। এক টুকরা চিজ ক্লথে বেঁধে নিতে হবে এই চা, খুব শক্ত করে বাঁধন না দিয়ে কিছুটা ঢিলে অবস্থায় পানিতে রাখতে হবে। মনে রাখা দরকার, এর আকার ধীরে ধীরে বড় হবে। তাই অতিরিক্ত টাইট না করলেই ভালো। এবার এসবের সঙ্গে ১৫ মিলি অ্যালুম অথবা ক্রিম অব টারটার মেশাতে হবে। ১০ থেকে ১৫ মিনিট ধরে ফোটাতে হয়। অল্প অল্প নাড়তে হবে। এরপরে পানি থেকে চিজ ক্লথে মোড়ানো চা তুলে নিতে হবে। স্কুইজ করে নিতে হবে পাত্রেই। চায়ের ডাইতে মনোযোগ দিয়ে দেখতে হয়, কোনো চা-পাতা ভেসে আছে কি না। থাকলে তুলে নিতে হবে। ব্যস! তৈরি হলো টি ডাই।
এবার যে কাপড় রাঙানো দরকার, সেটি গরম পানিতে ভিজিয়ে নিতে হবে। টি ডাই আবারও নেড়ে নিতে হবে। তারপরে ভেজাতে হবে ক্লথটি। নেড়ে না নিলে ফ্যাব্রিকের সব অংশে সমানভাবে ডাই না হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
প্রতিটি ফ্যাশন বছরেই আসে নতুন ট্রেন্ড। এবারের লন্ডন এবং নিউইয়র্ক ফ্যাশন উইকে আমরা দেখতে পাই, ফ্রন্ট রোতে ফেলে আসা বছরের অ্যানিমেল প্রিন্টের জায়গা করে নিয়েছে নতুন এক ধারা। মিল্কের সঙ্গে ডিপ টোস্টেড! না না, চিরচেনা বেভারেজ মিল্ক টি আর টোস্টের কথা বলা হচ্ছে না। এতে রঙে রাঙানো পোশাকের কথা উল্লেখ্য। মিল্ক ক্রিম কালার এবং টোস্টেড ব্রাউনের ড্রেস লাইনের দেখা মেলে বিভিন্ন সময়ের ফ্যাশন শোর ক্যাটওয়াকে। চা-এর নিজস্ব একটি রং রয়েছে, যা মূলত দেখা যায় গরম পানিতে ফুটিয়ে নিলে। র চায়ের রং নিয়ে বেশ আগ্রহ বর্তমান সময়ের ফ্যাশন-সচেতনদের। রংটির গাঢ় শেড দেখা যাচ্ছে স্ট্রিট ফ্যাশন ওয়ারড্রোবে। র চা থেকে দুধমিশ্রিত চা অবধি বেশ কয়েকটি কালার খুঁজে পাওয়া যায়। আবার দুধ চায়েরও রয়েছে প্রকারভেদ। আমাদের দেশের আবহাওয়ায় হালকা থেকে ডার্ক— সব শেডই মানানসই। হালকা র চায়ের রং লো ওয়েট ফ্যাব্রিক, যেমন— জর্জেট, সিল্ক, মসলিনে। আবার মিল্কটি এর বিভিন্ন শেডে কটন বেছে নেওয়া যায়। এর সঙ্গে ভারী অর্নামেন্টেশন, ব্লক বেশ মানিয়ে যেতে পারে। এ রঙের সঙ্গে ম্যাট গোল্ডেন তৈরি করতে পারে দারুণ এক কম্বিনেশন। ‘মোর ইজ মোর’, ‘মিনিমালিস্ট মিন্ট’ এবং ‘অ্যানিমেল প্রিন্ট’ এর পরে এবারের এই কালার শেড বেইজ ফ্যাশনে মাতবেন ফ্যাশনিস্তারা, এমনটাই মনে হচ্ছে পোশাক দুনিয়ার হাল হকিকতে। ট্রেঞ্চ কোট, টিউনিক বেশ নজর কাড়বে বলে ধারণা করা যাচ্ছে। এর পাশাপাশি শু-এর দুনিয়াতে টি শেডের বেশ কিছু ব্যবহার দেখতে পাওয়া যেতে পারে। উইন্টারের এই শেডের ক্লোজড শু নজর কাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। হাই নি বুটেও থাকতে পারে আগ্রহ। অ্যাকসেসরিজের ক্ষেত্রে ব্যাগ লাইনে টি শেডের আধিপত্যের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। র টি থেকে মিল্ক টি, ব্রিটেন বেভারেজের সব শেডের ক্ষেত্রেই সম্ভাবনা রয়েছে ইন ফ্যাশন হওয়ার। বেল্ট অর্থাৎ ওয়েস্ট বেল্টের দুনিয়াতেও দেখা যেতে পারে এই শেডগুলো।
টি-পট থেকে ক্যাটওয়াক। বেভারেজ লেবেল, এমনকি ওয়্যারড্রোব, টি শেড এবারে ছড়িয়ে পড়ছে ফ্যাশন দুনিয়াতেও। ফ্যাব্রিক, ডাই— দু ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে চায়ের জয়জয়কার। ফ্যাশন দুনিয়ার দায়িত্ব এখন পরিবেশ রক্ষায়ও বর্তেছে। সাসটেইনেবল ফ্যাশনে পরিবেশ থাকবে সুন্দর। চা যেমন মেটায় দেহমনের তৃষ্ণা, তেমনি দৃষ্টিসুখের চাহিদাও।

 সারাহ্ দীনা
মডেল: তানিয়া
মেকওভার: পারসোনা
ওয়্যারড্রোব: মুক্তা
ছবি: ইভান সরদার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top