skip to Main Content

পাতে পরিমিতি I গরমে উদরস্বস্তি

গরমে খাদ্যের মেনুতে পরিবর্তন আসে। জায়গা করে নেয় নতুন কিছু ফলমূল। তৃষ্ণা বেড়ে যাওয়ায় পানীয় পানের পরিমাণও হুট করে বাড়ে। তাই এ সময়ের ডায়েটে চাই বাড়তি মনোযোগ। পরামর্শ দিচ্ছেন নিশাত শারমিন নিশি

চৈত্রের খরতাপে চারদিক যখন দিশেহারা, এক ফোঁটা পানির জন্য যখন খাঁ খাঁ করে প্রকৃতি, তখন সুস্থভাবে বেঁচে থাকাই হয়ে পড়ে দায়। শীতের হালকা আমেজ ছিল বসন্তেও। কিন্তু এখন কাঠফাটা রোদের সময় এসে গেছে। চৈত্রের পরই বৈশাখ। এ সময় পেটব্যথা, ডায়রিয়াসহ নানান জটিলতা দেখা যায় চারপাশে। তাই নেওয়া প্রয়োজন বাড়তি সতর্কতা।
মাছে-ভাতে বাঙালির বৈশাখ শুরু হয় পান্তাভাত আর ইলিশ দিয়ে। তবে সারা মাসই খাদ্যতালিকায় রাখা যায় এই মেনু। যারা সকালে ভাত খেয়ে অভ্যস্ত, তারা সপ্তাহে এক-দু দিন পান্তা খেতে পারেন। যাদের ওজন কম, তাদের ক্ষেত্রে পান্তা ওজন বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে। এ ছাড়া যাদের অল্পতেই পেট গরম হয়, তাদের ক্ষেত্রেও সকালের পান্তা সারা দিনের স্বস্তিতে ভূমিকা রাখে।
গরমে যেহেতু বারবার প্রচণ্ড পিপাসা লাগে, তাই অনেকে বাইরের খোলা খাবার, পানীয়, লেবুর শরবত পান করেন। তাতেই শুরু হয়ে যেতে পারে দুর্ভোগ। পানি বা তরল খাবার থেকে টাইফয়েডসহ নানান রকম অণুজীব প্রবেশ করতে পারে আমাদের শরীরে। সে ক্ষেত্রে অবশ্যই বাদ দেওয়া উচিত রাস্তার খোলা খাবার; বিশেষত তরল। আজকাল অনেক জায়গায়ই ঠান্ডা লেবুর শরবত, মাল্টার জুস, আখের রস গ্যালন গ্যালন বিক্রি হয়, যা আকর্ষণীয় ও কালারফুল করতে রাখা হয় মাল্টা স্লাইস, লেমন স্লাইস ইত্যাদি। এসব দেখে তৃষ্ণার্ত মন মানতে চায় না কোনো বাধা। তবু নিজের মনকে একটু সামলে যদি কোয়ালিটিফুল পানীয় গ্রহণ করা যায়, তাহলে অসুখ থেকে অনেকটা দূরে থাকা সম্ভব।
মানা যেতে পারে টিপস:
 গরমে সব সময় থাকতে হবে হাইড্রেটেড। সে ক্ষেত্রে বাসায় তৈরি জুস ও লেমোনেড খাওয়া যায়। তা ছাড়া বারেবারে খাওয়ার জন্য ঠান্ডা এক লিটার পানির সঙ্গে গ্রিন টি ব্যাগ দিয়ে বানিয়ে নিতে পারেন সুপার ডিটক্স ওয়াটার। তাতে অল্প পুদিনাপাতা, লেমন স্লাইস ও কিছু আদাকুচি দিলে খাওয়ার সময় আলাদা স্বাদ মিলবে। পাশাপাশি শরীর ডিটক্সিফাই হবে। যারা অতিরিক্ত চা গ্রহণে অভ্যস্ত, তাদের জন্যও এটি খুব ভালো কাজ করবে।
 গরমে প্রচুর ঘাম হয়। শরীর থেকে বেরিয়ে যায় প্রয়োজনীয় লবণ। এতে দেখা যায় ঝিমুনি, ক্লান্তিভাব ও দুর্বলতা। এ ছাড়া ইলেকট্রোলাইটস ইমব্যালেন্স হওয়ার শঙ্কাও থাকে। সে ক্ষেত্রে অনেকেই স্যালাইন বা ওআরএস বারবার গ্রহণ করেন, যাতে হিতে বিপরীত হতে পারে। এসব স্যালাইনে কিছু এক্সট্রা লবণ থাকায় বারবার গ্রহণে কিডনির ওপর চাপ পড়ে। তাই খাদ্যতালিকায় প্রতিদিন রাখা যেতে পারে এক গ্লাস কচি ডাবের পানি। এতে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে সোডিয়াম ও পটাশিয়াম। প্রচণ্ড গরমে এক গ্লাস কচি ডাবের পানি, সঙ্গে সাদা নরম শাঁস সারা দিনের ক্লান্তিভাব দূর করবে; পাশাপাশি রাখবে সতেজ ও এনার্জেটিক।
গরমে অনেকেরই পেট ফাঁপা বা পেট গরম হওয়ার সমস্যা দেখা যায়। সে ক্ষেত্রে খাদ্যতালিকায় রাখা যেতে পারে:
টক দই: প্রতিদিন আধা কাপ টকদই রাখতে পারেন খাদ্যতালিকায়। যাদের পেটের গোলযোগের জন্য কষ্ট পেতে হয়, তারা এই গরমে টক দই খেলে উপকৃত হবেন। সে ক্ষেত্রে খাওয়া যেতে পারে লাস্যি বা দইয়ের তৈরি কোনো পানীয়। এটি বদহজম দূর করে। পেটের গরম ভাব কমিয়ে পেট ঠান্ডা রাখতেও কাজে দেয়।
পেঁপে: কাঁচা ও পাকা—দুভাবেই খাওয়া যায় পেঁপে। এটি ঠান্ডা সবজির মধ্যে অন্যতম। পেঁপেতে রয়েছে প্যাপেইন নামের এনজাইম, যা দ্রুত হজমে সহায়ক। এটি কোলন পরিষ্কার রাখে। ফলে যাদের গ্যাস বা এসিডিটির সমস্যা রয়েছে, পেঁপে খেলে তাদের অনেকটা আরাম বোধ হয়। সে ক্ষেত্রে খাওয়া যেতে পারে পেঁপের স্যালাদ, পেঁপে স্লাইস, পাকা পেঁপের জুস বা স্মুদি। পেটের সুস্থতা রক্ষায় খাওয়া যেতে পারে স্যালাদের এই রেসিপি: এক বাটি কাঁচা পেঁপে স্লাইস করে নিন। তাতে কিছু পাকা তেঁতুল, অল্প কাঁচা মরিচকুচি ও ধনেপাতা যোগ করতে হবে। পরিমাণমতো লবণ ও সামান্য চিনি যোগ করে নিলে বাড়তি টেস্ট পাওয়া যাবে। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যেন পেঁপেটি ফ্রেশ ও কষমুক্ত হয়। গরমে কিছু খেলেই গ্যাস হয়ে যায় এমন অভিযোগ যারা করেন, তাদের ক্ষেত্রেও এই রেসিপি বেশ ভালো সমাধান।
মেথি: খাবার খাওয়ার পর তা কত সুন্দরভাবে ডাইজেস্ট হবে, সেটি নির্ভর করে ডাইজেস্টিভ সিস্টেমের ওপর। অনেকেরই হজম ক্ষমতা কম থাকায় খাবার গ্রহণের পরপরই অস্বস্তি হতে দেখা যায়। এই গরমে ডাইজেস্টিভ সিস্টেম ভালো রাখতে মেথি রাখা যেতে পারে খাদ্যতালিকায়। ২৫০ মিলি পানিতে দুই চামচ মেথি ভিজিয়ে রাখতে হবে ২৫ থেকে ৩০ মিনিট। মাত্র আধা ঘণ্টা অপেক্ষার পর হালকা হলুদ রং ধারণ করলেই তা খাওয়ার জন্য প্রস্তুত। মেথির পুষ্টিগুণ অনেক। এতে রয়েছে পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, আয়রন, সেলেনিয়াম, জিঙ্ক ও ম্যাগনেশিয়াম। রয়েছে ফলিক অ্যাসিড, রিবোফ্লাভিন, নিয়াসিন, ভিটামিন এ, বি৬ ও ভিটামিন সি। মেথি পেট ঠান্ডা, ব্লটিং ও গ্যাস দূর করা ছাড়াও ওজন নিয়ন্ত্রণে ভালো কাজ করে।
তরমুজ: গ্রীষ্মে পাওয়া যায় নানা রকম ফলফলারি। আমাদের দেশে যেসব রসাল ফল মেলে, সেগুলোর মধ্যে তরমুজ বেশ কাজের। ১০০ গ্রাম লাল রঙের তরমুজে রয়েছে ৯১ শতাংশ পানি। এ ছাড়া এতে রয়েছে কপার, ভিটামিন সি, ভিটামিন ডি ও বিটা ক্যারোটিন। প্রতিদিন এক বাটি তরমুজ গ্রহণে যাদের শীতের সময় ত্বক ও চুলের ক্ষতি হয়েছিল, তাদের ক্ষেত্রে সেল রিপেয়ার ও ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে পারে ফলটি।

 লেখক: প্রধান পুষ্টিবিদ ও বিভাগীয় প্রধান, পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top