skip to Main Content

ফিচার I রোজাদার শিশুর খেয়াল

মাহে রমজান। সারা বছর ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা এই মাসের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেন। শুধু বড়রাই নন, ছোটদের মাঝেও এ মাস ঘিরে থাকে নানান উদ্দীপনা। সাত-আট বছর বয়স থেকেই পরিবারের ছোটদের রোজা রাখার ব্যাপারে উৎসাহ দিয়ে থাকেন মুরব্বিরা। কিন্তু ছোটদের রোজার মাসের খাদ্যতালিকা নিয়ে কজনে ভাবেন?

পরিবারের খুদে সদস্যরা যেন রোজার সময় পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবার পেয়ে সুস্থভাবে সিয়াম পালন করতে পারে, এ ব্যাপারে সচেতন থাকা জরুরি। তাই অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় রোজার মাসে তাদের খাবারের ব্যাপারে অধিক যত্নশীল হওয়া যেমন প্রয়োজন, তেমনই পুষ্টির ব্যাঘাত যেন না ঘটে, সেদিকেও রাখতে হবে যথেষ্ট খেয়াল।
বড়দের তুলনায় শিশুদের খাদ্যের চাহিদা ভিন্ন হওয়ায় শুধু ভাজাপোড়া এবং গতানুগতিক খাবারের পদ ইফতারির তালিকায় রাখলে শারীরিকভাবে শিশুদের দুর্বল হয়ে পড়ার শঙ্কা থাকে। তাই শরবত এবং ঘরে তৈরি ফলের রস, স্মুদি ইত্যাদি প্রতিদিনের ইফতারে রাখা ভালো। এ ক্ষেত্রে লেবু, পাকা বেল, কমলা, আনার, আনারস, তরমুজ কিনে ঘরেই বানিয়ে নিতে পারেন পুষ্টিকর জুস। বাইরের ভেজালমিশ্রিত কোল্ড ড্রিংকস কিংবা প্যাকেটজাত ফলের জুস এড়িয়ে যাওয়াই উত্তম। ইফতারের সময় ফলের জুসের পাশাপাশি খেজুর খাওয়ার প্রতি শিশুদের উৎসাহিত করুন। খেজুরের আঁশ, ক্যালরি ও আয়রন শিশুদের জন্য খুবই উপকারী। সঙ্গে রাখতে পারেন কলা। কেউ কলা খেতে না চাইলে দুধ-কলা দিয়ে কাস্টার্ড বানিয়ে খাওয়াতে পারেন। ছোলা একটি উপকারী খাবার। তবে অধিকাংশ বাড়িতেই অনেক বেশি মসলায় ছোলা রান্না করা হয়। শিশুদের জন্য কম মসলায় ছোলা রান্না করুন। শুধু সেদ্ধ খেতে পারলে আরও ভালো। এ ছাড়া রাখতে পারেন দই-চিড়া। এ খাদ্য পেট ভরানোর পাশাপাশি ঠান্ডাও রাখে।
বাচ্চারা বড়দের মতো অফিস-ঘর-সংসার না সামলালেও তাদের শরীর ও মস্তিষ্ক কোনো না কোনো কাজে ব্যস্ত থাকে সারা দিন। হয় তারা স্কুলে যাচ্ছে, লেখাপড়া করছে, খেলছে কিংবা তাদের পছন্দমতো কাজ করছে। যেকোনো কাজেই শরীর ও মাথার মধ্যে কোনো একটাকে কাজে লাগাতে হয়। মাঝে মাঝে দুটোকেই। দিনের সিংহভাগ কর্মব্যস্ত সময়ে শরীর কোনো ধরনের খাবার গ্রহণ করছে না বলে ইফতারের সময় তাদের জন্য প্রস্তুত রাখতে হবে প্রোটিন, ক্যালরি, কার্বোহাইড্রেট ও ফ্যাট সমৃদ্ধ ব্যালেন্স খাবার। এ ক্ষেত্রে মুরগির মাংস দিয়ে তৈরি করে দিতে পারেন নানান পদ। রাখতে পারেন পনির অথবা পনিরের তৈরি খাবারও। বাচ্চারা সাধারণত মাংস ও ফাস্ট ফুড জাতীয় খাবার বেশি পছন্দ করে। রেস্টুরেন্টের খাবার না কিনে ঘরেই বানিয়ে দিতে পারেন চিকেন বল, চিজ স্যান্ডউইচ, পাস্তা বা নুডলস, চিকেন রোল ইত্যাদি। ঘরে তৈরি এই খাদ্যগুলো খুবই পুষ্টিকর।
সারা দিন পেট খালি থাকার পর অনেক বাচ্চা ইফতারের সময় বেশি খাবার খেতে চায় না। তাদের জোরাজুরি না করে অল্প অল্প করে কিছুক্ষণ পর পর খেতে দিতে পারেন। ইফতারের পর রাতে কেউ ডিনার করতে না চাইলে গতানুগতিক খাবারে বাইরে তৈরি করতে পারেন ডাল, চাল ও মাংসের তৈরি হালিম বা খিচুড়ি। এতে পেট ভরবে, পুষ্টির জোগানও হবে।
ইফতারে ভারী ও পুষ্টিকর খাবার খেলে রাতে সেহরি খাওয়ার আগে তেমন কিছু খাওয়ার সাধারণত প্রয়োজন পড়ে না। তবু যদি আপনার শিশুকে ডিনারের সময় কিছু একটা খাওয়াতে চান, তাহলে সহজপাচ্য খাবার দেওয়াই ভালো। ভাত, সবজি, মাছ বা মাংস—যেকোনো একটির সঙ্গে ডাল রাখুন। কিংবা আপনি চাইলে ভাতের বদলে খিচুড়ি, স্যুপ বা সিরিয়াল এবং দুধ-ডিম-পাউরুটির মতো হালকা খাবারগুলোও দিতে পারেন।
যেহেতু সেহরির পর দীর্ঘ সময় খালি পেটে থাকতে হয়, তাই বাচ্চাদের সেহরি খাওয়ার প্রতি বিশেষ নজর দেওয়া উচিত। ঘুম থেকে ওঠার অলসতায় অনেক শিশুই ঠিকমতো সেহরি খেতে চায় না। এতে শারীরিক দুর্বলতা, অপুষ্টিতে ভোগারও শঙ্কা থাকে। এ কারণে সেহরিতে ভালো মানের খাবার রাখা প্রয়োজন। ভাত-সবজির পাশাপাশি মুরগি বা মাছ এবং ডাল রাখতে পারেন। সেহরির খাদ্যতালিকায় গরু অথবা খাসির মাংসের মতো চর্বিযুক্ত খাবার কিংবা ঘি-বাটারসহ প্রাণিজ যেকোনো চর্বি না রাখাই ভালো। সেহরির জন্য তৈরি খাবারে যত সম্ভব তেল-মসলা কম ব্যবহার করা উত্তম। হালকা তেল-মসলায় রান্না খাবার শরীর সুস্থ রাখে। এ ছাড়া খাওয়ার পর ডেজার্ট হিসেবে দুধ বা দুধের তৈরি খাবার রাখতে পারেন। সঙ্গে কলা বা আমজাতীয় ক্যালরিযুক্ত ফল রাখতে পারলে বেশ উপকার দেবে।
এবার রোজা পড়েছে পুরোপুরি গরমের সময়। তীব্র দাবদাহ এমনিতেই সহ্য করা যাচ্ছে না। রোজার মাসে দীর্ঘ সময় পানি না খেয়ে সহ্য করাটা বেশ কঠিন হবে; বিশেষ করে বাচ্চাদের জন্য। ফলে ইফতার থেকে শুরু করে সেহরি পর্যন্ত বাচ্চাদের পানি খাওয়ার ব্যাপারে বিশেষ নজর দেওয়া চাই। শরীরে পানির পরিমাণ কমে গেলেই শারীরিক দুর্বলতার সম্মুখীন হতে হবে। তাই শিশুরা ইফতার ও সেহরির মধ্যবর্তী সময় পানি যেন কম না খায়, সে ব্যাপারে খেয়াল রাখুন।
রোজা পালন বড়দের সঙ্গে সঙ্গে শিশুদের জন্যও বেশ উপকারী। এতে তাদের রক্ত পরিশুদ্ধ হয়। শরীরের খারাপ পদার্থগুলো কিডনি-অন্ত্র দিয়ে নিঃসৃত হয়ে যায়। তবে রোজার এ সময়টায় শুধু শিশুদের খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারেই সতর্ক থাকলে চলবে না, বিশ্রাম ও অন্যান্য শারীরিক ব্যাপারেও যত্নশীল হতে হবে। বাচ্চারা যেন দুপুরে কিছুক্ষণের জন্য হলেও বিশ্রাম নেয়, সেটি খেয়াল রাখুন। এই গরমে প্রতিদিন গোসল করতে হবে। অলসতার কারণে যেন সেটা বাদ না পড়ে, বড়দের তা খোঁজ রাখা দায়িত্ব। এ সময়টায় তাদেরকে ঘরের কিছু ছোটখাটো কাজে হাত লাগাতে বলবেন। তাতে তারা ব্যস্ত থাকবে; রোজার ক্লান্তি মাথা থেকে দূরে থাকবে। এ ছাড়া মানসিকভাবে যেন তারা প্রাণোচ্ছল থাকে, সে ব্যাপারেও পরিবারের সবার নজর রাখা প্রয়োজন। রোজা রাখা অবস্থায় আপনার শিশুর ইউরিন ঠিকমতো পাস হচ্ছে কি না, অতিরিক্ত দুর্বলতার কারণে মাথা ঘোরে কি না অথবা মাথাসহ শরীরের অন্য কোথাও কোনো ধরনের ব্যথা রয়েছে কি না, তা-ও খেয়াল রাখা দরকার।
এ সময় বাসি খাবার একদম এড়িয়ে যাবেন, বিশেষ করে শিশুর পাতে কখনোই বাসি খাবার দেওয়া ঠিক হবে না। এতে ফুড পয়জনিংয়ের মতো ঘটনা ঘটতে পারে। চেষ্টা করুন টাটকা খাবার খাওয়ানোর। এ জন্য পরিমাণমতো রান্না করুন যেন খাবার বেঁচে না যায় এবং সেগুলো ফ্রিজে রেখে দিতে না হয়।

i সিফাত বিনতে ওয়াহিদ
ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top