skip to Main Content

ফিচার I হালের হলোগ্রাফিক

ফয়েল ইফেক্ট ফ্যাব্রিকে তৈরি হচ্ছে ফ্যাশনেবল ফিউচারিস্টিক ভাইব। এ যেন স্পেস এজ স্টাইলের পুনরাবির্ভাব। সেই সত্তরের প্রেরণায়

পোশাকই পার্টি। কথাটা পুরোদমে খাটে হলোগ্রাফিক ফ্যাশন ট্রেন্ডের সঙ্গে। দেখলেই মনে হবে মেটাল মিলেছে রংধনুর রঙে। সত্তরের ডিসকো ভাইব তৈরি হচ্ছে লুকে। মূলত ১৯৪৭ সালে আবিষ্কৃত হলোগ্রাম থেকেই অনুপ্রাণিত এ ট্রেন্ড। প্রথম নজরে আসে সত্তরের দশকে। নিজেকে ডিসকো বলের মতো দেখাতে এবং লুকে ফিউচারিস্টিক অ্যাসথেটিক যোগে। গ্ল্যাম পাঙ্ক প্রাণিত সুপার শাইনি স্কিন টাইট প্যান্ট, ব্যাগ, জুয়েলারি, গ্লিটারি পাম্প আর স্যান্ডেল ছিল সে সময় ফ্যাশন স্টেপল। এ বছর সে ট্রেন্ড ফিরে এসেছে ফ্যাশনে। উদযাপনকে উসকে দিতে। নানা ধরন রয়েছে হলোগ্রাফিক ট্রেন্ডের। যার মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে ফয়েল ইফেক্ট। এতে পোশাকে আলোর কারসাজিতে প্রতিবিম্ব তৈরি হয়। রঙধনু ফুটে ওঠে মেটালিক ইফেক্টের সাহায্যে। ২০১৩ সালে আন্তর্জাতিক ফ্যাশন ডিজাইনার স্টেলা, ম্যাককার্টনি ছাড়াও জনপ্রিয় ব্র্যান্ড বারবেরি, ব্লু ম্যারিন, জনাথন সনডারসের পোশাকের নকশায় হলোগ্রাফিক ফ্যাব্রিকের ব্যবহার হয়। সে বছরে স্প্রিং সামার কালেকশনে প্রদর্শিত হয় পোশাকগুলো। এরপরে এই ট্রেন্ড ফিরে আসে ২০১৮ তে। তখনো বেশ সাড়া ফেলে দেয়। নিউইয়র্কের ফ্যাশন ব্র্যান্ড টম ফোর্ড, জেরেমি স্কট, মারিয়াম নাসির জাদেহ এবং টিবি হলোগ্রাফিক ফ্যাব্রিক ব্যবহারে বেশ কিছু পোশাক নকশা করেছিলেন সে সময়। এর মাঝে ছিল ট্রেঞ্চ কোট, লেগিংস, ইভনিং গাউন। রঙে প্রাধান্য পায় পিচ, মিন্ট এবং হোয়াইট। লন্ডনও বাদ পড়েনি এ ট্রেন্ডের জাদু থেকে। আর্থার আরবেসার আর এমলিয়া উইকস্টেডের মতো ডিজাইনারদের কাজে মেলে হলোগ্রাফিক ট্রেন্ড প্রীতি। টি ড্রেস থেকে ট্রাউজার আর স্টেটমেন্ট জ্যাকেট নজর কাড়ে তাদের কালেকশনে। পরবর্তীকালে প্যারিস অব্দি ছড়িয়ে পড়ে এর আকর্ষণ। প্রমাণ মেলে মোসিনো, রবার্তো কাভালি আর গুচির কাজে। এরপরে এই ট্রেন্ড বিস্তৃত হয় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। অ্যাকসেসরিজে ব্র্যান্ড লোগোর চাহিদা আবারও তৈরি হচ্ছে। লাউড লোগো আসছে হলোগ্রাফিক নকশায়।
ভারতীয় ফ্যাশনে হলোগ্রাফিক ফ্যাশনের ভিন্ন রকমের চাহিদা পরিলক্ষিত হয়। ইন্ডিয়ান ফ্যাশন ডিজাইনার অমিত আগারওয়াল, মনিশা জয়সিং এই ট্রেন্ড নিয়ে কাজ করেছেন, করে যাচ্ছেন। সেলিব্রিটিদের হলোগ্রাফিক ফ্যাশনপ্রীতিও চোখে পড়ার মতো। রিয়ানার পছন্দের তালিকায় দেখা গিয়েছিল হলোগ্রাফিক টপস আর ক্লাচ। সেলেনা গোমেজ পরেছেন ডিজাইনার জেনি পাখামের একটি কালো হলোগ্রাফিক ঝলমলে গাউন। দীপিকা পাড়ুকোনকে দেখা গেছে ক্রিস্টোফার কেইনের ডিজাইনে তৈরি হলোগ্রাফিক প্লিটেড স্কার্টে। কুইন অব হার্ট বিয়ন্সকে অনেকবার দেখা গেছে লুই ভিতোঁর ফিরিঙ্গি বুটে। হলোগ্রাফিক টোনে তৈরি ছিল সেটি। কান চলচ্চিত্র উৎসবে একবার ফ্যাশনিস্তা সোনম হাজির হয়েছিলেন হলোগ্রাম প্রিন্টেড শাড়িতে।
২০২২ সালের নিউইয়র্ক ফ্যাশন উইকে ডিজাইনার মেইসি শ্লোস হাজির হয়েছিলেন তার ব্র্যান্ড মেইসি ওয়াইলেনের ফল উইন্টার ২০২২ কালেকশন নিয়ে। তিনি বাস্তবে এমন কিছু তৈরি করতে চেয়েছিলেন, যার সঙ্গে মিশে থাকবে পরাবাস্তবের অনুভূতি। এ জন্য ব্যবহার করেছিলেন অপটিক প্রিন্ট। অল্প কিছু টেক্সটাইল টেকনিক ব্যবহার করে সম্পন্ন করা হয়েছিল পুরো কাজ। যেমন হলোগ্রাফিক ভিনাইল, ম্যাট সিক্যুইন ইত্যাদি। এই আয়োজনের অতিথিরা দেখতে পেয়েছেন মডেলদের পোশাক থেকে মঞ্চের পাশের দেয়ালগুলোতে তৈরি হওয়া হলোগ্রাফিকের হাইপার রিয়েল প্রজেকশন। পোশাক দেখতে গিয়ে দর্শক মূলত দুটি অনুভূতির মিশে যাওয়াকে দেখতে পাবেন, সেটাই ছিল ডিজাইনারের মূল প্রচেষ্টা।
হলোগ্রাফিক ফ্যাব্রিক ব্যবহারে তৈরি পোশাক বেছে নিলে কিছু বিষয়ে একটু যত্নশীল হতে হবে। জানতে হবে বর্তমান ট্রেন্ডের বিস্তারিত। এবারের ফিরে আসাকে কেন্দ্র করে কালো হলোগ্রাফিক ফ্যাব্রিকে মন মজবে বেশির ভাগের। এমনটাই ধারণা করা যাচ্ছে আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড এবং ফ্যাশনবোদ্ধাদের ভাবনা থেকে। এই ট্রেন্ড বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে জানতে হবে পরিমার্জন এবং প্রচলনের পাশাপাশি অবস্থান সম্পর্কে। মনে রাখতে হবে, ঝিকিমিকি ফ্যাব্রিকের পোশাকে হারিয়ে গিয়ে ডিসকো বলে পরিণত হওয়া যাবে না কোনোভাবেই। হলোগ্রাফিক পোশাকে অভ্যস্ততা না থাকলে প্রথমবারে কিছুটা অস্বস্তি তৈরি হতেই পারে। তাই প্রথমবারে পুরো আউটফিটের যেকোনো একটি অংশ বেছে নেওয়া যেতে পারে।
সন্ধ্যাকালীন দাওয়াতের জন্য হলোগ্রাফিক ফ্যাব্রিকের পোশাক বেছে নেওয়া যায়। সলিড ব্ল্যাক ড্রেসের সঙ্গে পেয়ার আপ করে নেওয়া যাবে হলোগ্রাফিক ফ্যাব্রিকের জ্যাকেট। ফুটওয়্যারের দিকে মনোযোগী হওয়া চাই। টপ ও বটমে বিভক্ত পোশাকের ক্ষেত্রে দুটোই হলোগ্রাফিক ঘরানার বেছে না নিয়ে যেকোনো একটি নিউট্রাল রাখা যেতে পারে। এতে অতিরঞ্জন হবে না।
অনুষঙ্গের ক্ষেত্রেও হলোগ্রাফিক ট্রেন্ড রাজত্ব করার সম্ভাবনা রয়েছে বছরজুড়ে। ব্যাকপ্যাকেও দেখা যাচ্ছে হলোগ্রাফিক ট্রেন্ড। ম্লান রঙের পোশাকের সঙ্গে এমন ধরনের ব্যাগ বেশ মানিয়ে যাবে।
হলোগ্রাফিক ফ্যাব্রিকে তৈরি পোশাকের সঙ্গে নিউট্রাল কালারের ফুটওয়্যার থাকলেই ভালো। দিনের বেলা হলোগ্রাফিক ফ্যাশনের পোশাক বেছে নিলে এর সঙ্গে একটি নিউট্রাল কালারের বেল্ট ব্যবহার করা যায়। বেল্ট না চাইলে ব্রেসলেট ব্যবহারও কাজে দেবে। এতে লুকে ভিন্নতা আসবে। অলংকার বেছে নেওয়া যায় হলোগ্রাফিক ফ্যাশনের। সলিড কালারের পোশাকের সঙ্গে হলোগ্রাফিক জুয়েলারি নিজেকে আলাদা করবে।
অলংকারের ক্ষেত্রে হলোগ্রাফিক নকশার ফ্যাব্রিক ব্যবহার করতে চাইলে বেছে নেওয়া যাবে চোকার। রঙিন এই নেকলেস সাজপোশাকে আনবে ইতিবাচক পরিবর্তন।

 সারাহ্ রুশমিতা
মডেল: মারিয়াম
মেকওভার: পারসোনা
ওয়্যারড্রোব: রাবেইব
ছবি: হাদী উদ্দীন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top