skip to Main Content

ফিচার I টাইমলেস ট্যাঙ্ক

ক্ল্যাসিকও বটে। যুগ পেরিয়েছে কিন্তু কদর কমেনি এতটুকু। বরং হয়ে উঠেছে এ বছরের নিউ ওয়্যারড্রোব এসেনশিয়াল

ক্যাপসুল ক্লজেট কনসেপ্ট। বিশ্বজুড়ে ফ্যাশনিস্তাদের মাঝে দারুণ জনপ্রিয় কৌশল। যার মাধ্যমে নির্দিষ্ট কিছু পোশাক মিক্স অ্যান্ড ম্যাচ করে প্রতিনিয়ত নিত্যনতুন সব আউটফিট স্টাইল করে নেওয়া যায়। তাই ওয়্যারড্রোবে অসংখ্য ফ্যাশনেবল পিস নয়, দরকার হয় ব্ল্যাক টি-শার্ট, হোয়াইট বাটন ডাউন আর লিটল ব্ল্যাক ড্রেসের মতো বেসিক সব কি-পিস। কিন্তু এ বছর এই মাস্ট হ্যাভ এসেনশিয়ালের তালিকায় নেতৃত্ব দেবে বিশ্বস্ত স্টেপল থেকে সামার ওয়্যারড্রোবে মাস্ট হ্যাভ হয়ে ওঠা পিস-ট্যাঙ্ক টপ। এর আভাস মিলেছিল ফল ২০২২-এর রানওয়েতে। প্রাদার শোতে দেখা গেছে হাউসের ট্রায়াঙ্গল লোগোসমেত সাদা ট্যাঙ্ক টপের সংগ্রহ। কাইয়া গারবার থেকে হান্টার স্ক্যাফারের মতো মডেলরা এগুলো পরে আলোকিত করেছেন মঞ্চ। ডিজাইনার ব্র্যান্ড বটেগা ভেনেটা রিবড হোয়াইট ট্যাঙ্ক টপকে লেদার ভার্সনে রূপান্তর করে চমকে দিয়েছিল ফ্যাশনবোদ্ধাদের। অ্যাকনে স্টুডিও একদম বেসিক এই পিসকে হাই ফ্যাশনেবল আইটেমে রূপান্তর করে নজর কেড়েছে সবার। স্টেটমেন্ট স্কার্ট আর ওভারসাইজড ট্রাউজারের সঙ্গতে। ক্লোয়ির শোতে মডেলদের ট্যাঙ্ক টপের সঙ্গে কালারফুল লেদার প্যান্ট পরতে দেখা গেছে এবারের সিজনে। স্কুপ নেক ট্যাঙ্ক টপও দেখা গেছে একই ব্র্যান্ডের শোতে। বেভজার রানওয়েতে কি স্টাইলিং পিস ছিল লেদার প্যান্ট। সঙ্গে সাদা ট্যাঙ্ক টপ থেকেও কিন্তু নজর সরানো যাচ্ছিল না।
তবে এটাও সত্য, ট্যাঙ্ক টপ কখনোই একেবারে ট্রেন্ড থেকে হারিয়ে যায়নি। তবে এ বছরটা ব্যতিক্রম। ওয়াইটুকে ফ্যাশনের প্রত্যাবর্তন আর জেন্ডারলেস ফ্যাশনের পাকাপোক্ত অবস্থান ভার্সাটাইল এ স্টেপল পিসকে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পৌঁছে দিয়েছে। তারকারাও আগ্রহের সঙ্গে স্টাইল করে নিচ্ছেন স্টেটমেন্ট এ পিসকে। ক্যান্ডেল জেনার, কিম কার্দাশিয়ান এবং ভেনেসা হাডজেনের মতো তারকাদের অহরহই পরতে দেখা যাচ্ছে সাদা ট্যাঙ্ক টপ। কখনো নব্বই অনুপ্রাণিত মম জিনসের সঙ্গে, তো কখনো কার্গো প্যান্টের জোড়ে। তবে সুপার মডেল বেলা হাদিদের ট্যাঙ্ক টপ প্রীতি চোখে পড়ার মতো। নিটেড শ্রাগ থেকে অফ শোল্ডার টপ—সবকিছুর সঙ্গেই ট্যাঙ্ক টপ তার প্রথম পছন্দ।
তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে, প্রথম ট্যাঙ্ক টপটি ডিজাইন করা হয়েছিল মেনজ আন্ডারগার্মেন্ট হিসেবে। ১৯১০ সালে। মূলত শার্টের নিচে পরার জন্যই তৈরি করা হয়েছিল এটি। অনেকে সাঁতরাবার সময়ও পরতেন। ১৯২০ থেকে ১৯৪০ সালের মাঝে আউটারওয়্যার হিসেবে ট্যাঙ্ক টপের প্রচলন শুরু হয়। প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়। তখন আন্ডার গার্মেন্টকেই মূল পোশাক হিসেবে পরার প্রচলন শুরু হয় পুরুষদের মাঝে। পরবর্তীকালে বড় পর্দায় শার্টের নিচে ট্যাঙ্ক টপ পরতে দেখা যায় অভিনেতাদের। ব্যস! বাজারে বিকানো শুরু হয় দেদার। এরপর প্রায় পনেরো বছর পেরিয়ে ট্যাঙ্ক টপ হয়ে ওঠে পুরুষদের ক্লজেটের সাধারণ অনুষঙ্গ। অনস্ক্রিন ও অফস্ক্রিনে। মারলন ব্র্যান্ডো আর জেমস ডিনের মতো হলিউড আইকনের গায়ে ওঠার পর ট্যাঙ্ক টপের কদর বাড়তে শুরু করে সাধারণদের মাঝেও। জনপ্রিয়তা যখন তুঙ্গে, ‘ওয়াইফবিটার’-এর মতো কন্ট্রোভার্সিয়াল টার্মও যুক্ত হয়ে যায় পোশাকটির সঙ্গে। মজার কারণও রয়েছে এর পেছনে। বড় পর্দায় স্ত্রীর গায়ে হাত তোলার বেশির ভাগ দৃশ্যে ট্যাঙ্ক টপ পরিহিত অবস্থায় দেখা যেত স্বামীদের।
তবে পোশাকটির কনটেম্পরারি পপুলারিটি বাড়তে শুরু করে ১৯৯০ এবং ২০০০ এর শুরুর দিকে। হিপহপের এ যুগে নারীরাও ঝুঁকতে শুরু করেন ট্যাঙ্ক টপ ট্রেন্ডে। সুপার মডেল কেট মসের হাত ধরে। ট্যাঙ্ক টপের সঙ্গে ডেনিম স্কার্ট আর মিনিমালিস্ট ট্রাউজারের জোড়ে তৈরি অফডিউটি সে লুক নিমেষেই দখল করে নেয় ফ্যাশন ট্রেন্ডের শীর্ষ স্থান। পরে কেলভিন ক্লেইনের ব্র্যান্ড অ্যাডেও কেট মসকে ট্যাঙ্ক টপ পরিহিত দেখা যায়। পপ কালচারেও এর জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে। ২০০০ সালের অ্যালবামের কভার, মিউজিক ভিডিও, রেড কার্পেট লুক—সর্বত্র এর উপস্থিতি তারই প্রমাণ। ২০০৩ এ ‘ক্রেজি ইন লাভ’ মিউজিক ভিডিওতে বিয়ন্সের হল্টার নেট ট্যাঙ্ক টপ ক্রেজের সৃষ্টি করেছিল। আর ২০০০ সালে এমটিভি ভিডিও মিউজিক অ্যাওয়ার্ডে জেনিফার লোপেজের বিডেজেলড ক্রপড ট্যাঙ্ক টপ লুক আজও মনে আছে ফ্যাশনিস্তাদের।
এ বছর স্টাইলের বদলে বেশি প্রাধান্য পাচ্ছে আরাম, ফলে ডিজাইনার থেকে ব্র্যান্ড—সবার তালিকাতেই জায়গা দখল করে নিয়েছে ট্যাঙ্ক টপ। কনটেম্পরারি এ স্টেটমেন্ট পিস স্টাইল করে নেওয়া যায় নানাভাবে।
এ বছরের ট্যাঙ্ক টপ স্টাইলে প্রাধান্য পাবে স্কুপ নেকের চওড়া, ব্রা ফ্রেন্ডলি স্ট্র্যাপ যুক্তগুলো। উজ্জ্বল রঙের বদলে টাইমলেস নিউট্রাল যেমন—ক্রিম, কালো আর বাদামি রঙাগুলোই বিকোবে বেশি। ক্রপড শিলুয়েটের ট্যাঙ্ক টপের বাজার থাকবে বছরজুড়েই। হাই ওয়েস্টেড প্যান্টের সঙ্গে এগুলোর জোড় দেখাবে দারুণ। সঙ্গে মিনিমালিস্ট লেদার স্যান্ডেল আর স্টেটমেন্ট ইয়াররিংয়ে লুক পরিপূর্ণ। তবে সুপার থিন স্ট্র্যাপের সিল্ক ক্যামিসোলও মন্দ দেখাবে না। সঙ্গে হোয়াইট ওয়াশ ডেনিম। অ্যাকসেসরিজ হিসেবে ডেনটি জুয়েলারি থাকলেই চলবে। হাই নেক ট্যাঙ্কও থাকতে পারে ওয়্যারড্রোবে। ডেনিম শর্ট থেকে সিল্কি কার্গো প্যান্ট—পরে নেওয়া যাবে সবকিছুর সঙ্গেই। কানে থাকুক স্টেটমেন্ট ইয়াররিং। মিডি স্কার্টের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি মানায় ট্যাঙ্ক টপ। এ ছাড়া ওল্ড ফ্যাশনড সাদা রিবড ট্যাঙ্ক টপের সঙ্গে বোল্ড স্টেটমেন্ট ট্রাউজার দারুণ দেখাবে। ফান প্রিন্ট অথবা দারুণ উজ্জ্বল রঙের হতে পারে এই বটম। সঙ্গে অ্যাকসেসরিজ হিসেবে থাকুক গোল্ড চেইন নেকলেস, স্লিক লেদার মিনি হ্যান্ডব্যাগ আর পয়েন্টি টো শু। ব্যস! মনোক্রোম লুকও তৈরি করা যায় ট্যাঙ্ক টপ দিয়ে। তবে সে ক্ষেত্রে বেসিক নিউট্রাল শেডগুলোই দুর্দান্ত দেখাবে মাথা থেকে পা অব্দি লুকে। সাদা, ফরেস্ট ইন্সপায়ারড গ্রিন কিংবা কালোর নানা শেডে স্টাইলিং সেরে নেওয়া যাবে সে ক্ষেত্রে। ডাবল ডেনিক লুকের সঙ্গেও ট্যাঙ্ক টপ দুর্দান্ত দেখায়। তবে স্টাইলিংয়ের সময় কিছু জিনিস এড়িয়ে যেতে হবে নিয়ম মেনে। কটন স্প্যাগেটি স্ট্র্যাপের ট্যাঙ্ক টপে বড্ড স্কুলপড়–য়া মনে হতে পারে। সে ক্ষেত্রে এগুলো এড়িয়ে যাওয়া ভালো। ট্যাঙ্ক টপ সব সময় টাক ইন করে পরতে হবে। আর স্টাইলিংয়ের সময় জুয়েলারি হতে হবে মিনিমালিস্টিক। চাঙ্কি নয়, বরং ডেনটি পিসগুলো এ ক্ষেত্রে ভালো অপশন।

 অর্চনা সাহা
মডেল: জান্নাতুল পিয়া
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: রনি বাউল ও ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top