skip to Main Content

বিশেষ ফিচার I জোডিয়াক জুয়েলারি

পার্সোনালাইজড জুয়েলারি ট্রেন্ড। পছন্দ হেইলি বিবার, বেলা হাদিদ আর রিয়ানার মতো তারকাদেরও। বিশেষ অর্থবহ, চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যসূচক প্রতিটি পিস। লিখেছেন শিরীন অন্যা

জোডিয়াক জুয়েলারি এত বেশি ট্রেন্ডি হওয়ার মূল কারণ, এটি মানুষের অভ্যন্তরীণ ও মানসিক বৈশিষ্ট্যগুলোর প্রতিনিধিত্ব করে। এ ধরনের জুয়েলারির রয়েছে রকমভেদ। অনেক জোডিয়াক জুয়েলারিতে আঁকা হয় প্রাচীন আইকনোগ্রাফি, যা এই জুয়েলারিগুলোকে দেয় টাইমলেস, ভিন্টেজ অনুভূতি। এ ছাড়া মোম ঢালাই করে তৈরি মেডেলিয়ন দুল আর পৌরাণিক গ্রিক দেবী-দেবতার চিহ্ন আঁকা, সিগনেট আংটিতেও আগ্রহী হয়ে উঠছেন ফ্যাশন-সচেতনেরা। এখন তো নানা নকশার নক্ষত্র আর তারার গতিপথ এঁকে তৈরি হচ্ছে চার্ম আর স্টাড ইয়াররিং। এ ছাড়া আধুনিক জোডিয়াক সাইন জুয়েলারি তো আছেই। ভারী চেইনের সঙ্গে ডায়মন্ড ডাস্টেড পেনডেন্ট, চিকন ব্রেসলেটের সঙ্গে ঝুলন্ত ট্যালিসম্যান, লেটার নেকলেস কিংবা আড়ম্বরপূর্ণ স্ট্যাকিংয়ের জন্য একটার সঙ্গে আরেকটা সংযুক্ত রিং—জুয়েলারি ট্রেন্ডে এগুলোই জনপ্রিয়। তবে রাশি অনুযায়ী কোন ধাঁচের কিংবা কোন ডিজাইনের জুয়েলারি বেছে নিতে হবে, তা নিয়ে একটু পড়াশোনা করে নিতে হবে আগেই।
মেষ
রাশিচক্রের প্রথম চিহ্ন মেষ। এটি একটি অগ্নিচিহ্ন, যা আবেগ, দীক্ষা ও সাহসের প্রতিনিধিত্ব করে। তাই মেষ রাশির অধিকারীদের আগ্রহ এমন সব জুয়েলারিতে, যা সবকিছুর প্রতিনিধিত্ব করে। ঠিক যেমনটা লাল প্রতিনিধিত্ব করে অন্য সব রঙের ওপর। তাই গয়নায় বসানোর জন্য পাথর হিসেবে বেছে নেওয়া যায় রুবি। মেষ রাশির উচ্চাভিলাষী জাতকেরা সাধারণত কৌণিক আকৃতির স্পাইকড জুয়েলারি বেশি পছন্দ করে থাকেন। তীক্ষè ব্যক্তিত্ব খুব সহজেই প্রকাশ করা যায় এর মাধ্যমে। এ ছাড়া কনস্টিলেশন ইয়াররিং, নেমপ্লেট নেকলেস কিংবা একটা ফাঙ্কি পেনডেন্ট হতে পারে ব্যক্তিত্বের সঙ্গে মানানসই।
বৃষ
বৃষ রাশির জাতকেরা শক্তিশালী মস্তিষ্কের অধিকারী হিসেবে পরিচিত হলেও তারা অনেক বেশি নির্ভরযোগ্য এবং অধ্যবসায়ী। স্থিতিশীলতা, বস্তুবাদ, অদম্য মানসিক শক্তি—এ ধরনের বৈশিষ্ট্যের প্রতিনিধিত্ব করতে ডায়মন্ড ডাস্টেড নেকলেস, ডেন্টি রিং বা ভিনটেজ চার্মের চেয়ে ভালো অপশন আর কী হতে পারে? আর বস্তুবাদের প্রতি অমোঘ আকর্ষণের কারণে বৃষ রাশির স্বভাবতই গয়না পছন্দ। সে ক্ষেত্রে নামিদামি ব্র্যান্ডগুলোর টরাস চার্ম বা ডায়মন্ড ব্রেসলেট রাখা যায় সংগ্রহে।
মিথুন
রাশিচক্রের তৃতীয় চিহ্ন মিথুন বহুমুখিতা আর শক্তির প্রতিনিধিত্ব করে। এই রাশিচক্রের জাতকেরা খুব সূক্ষ্ম ধাঁচের জুয়েলারি পরতে পছন্দ করেন। তা হতে পারে ছোট প্রজাপতি, চাঁদ কিংবা তারা—এদের বুদ্ধিমত্তা সবার সঙ্গে মানিয়ে চলার সক্ষমতা এবং বহির্মুখী ব্যক্তিত্ব তুলে ধরতে একটা মিনিমাল স্টাড ইয়াররিং আর একটা পেনডেন্টই যথেষ্ট। রঙিন ও চকচকে জিনিস মিথুনদের খুবই পছন্দ, বিশেষ করে সেটা যদি হয় বেগুনি রঙের। বলা হয়, মিথুন রাশির জন্য দারুণ শুভ এই রং। তাই এদের আদর্শ রত্নপাথর অ্যামেথিস্ট। আর এটি যদি রুপার ওপর বসানো যায়, তাহলে তো আরও ভালো।
কর্কট
সংবেদনশীল, স্বজ্ঞাত এবং যত্নশীল কর্কটদের রাশিচিহ্ন কাঁকড়া। এ রাশির জাতকেরা খুব বেশি আবেগপ্রবণ ও সংবেদনশীল। তাই তারা এমন ধরনের গয়না পরতে পছন্দ করেন, যার সঙ্গে তাদের আবেগের সংযোগ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে বেছে নেওয়া যেতে পারে লস্ট ওয়্যাক্স কাস্ট রিং, ডায়মন্ড নেকলেস কিংবা ক্যামিও চার্ম। এ ছাড়া ডায়মন্ড সেন্টারড ক্যানসার ইয়াররিং এ রাশির জন্য বেশ মানানসই জোডিয়াক জুয়েলারি। কর্কটের আদর্শ রত্নপাথর হতে পারে এমারেল্ড কিংবা মুনস্টোন।
সিংহ
সিংহ রাশি প্রতিনিধিত্ব করে সৃজনশীলতা আর রাজকীয়তার। হয়তো এ জন্যই এ রাশির মানুষ গয়নার ক্ষেত্রে গোল্ডের কথা ভাবেন। আকৃতির দিক থেকে সিংহের পছন্দ হার্ট-শেপ। আত্মবিশ্বাসী এবং নেতা হওয়ার বৈশিষ্ট্যপূর্ণ এই রাশির জাতকেরা সব সময় স্পটলাইটে থাকতেই পছন্দ করেন। এ জন্যই আকৃতির নয়, জুয়েলারির মূল উপাদান তাদের কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। মার্লো লাজের লিও নেকলেস এমনই একটি খুব দামি জোডিয়াক জুয়েলারির উদাহরণ।
কন্যা
বাস্তববাদী, দয়ালু এবং নিরহংকার হয়ে থাকেন কন্যা রাশির জাতকেরা। ফলে খুবই অনাড়ম্বর এবং সহজ জীবনধারায় স্বচ্ছন্দ। তাই গয়নার ক্ষেত্রেও তাদের পছন্দ খুবই সাধারণ ও পরিচ্ছন্ন নকশা। জবরজং কোনো কিছুই কন্যার সঙ্গে মানানসই নয়। তাই মিনিমাল গয়নাতেই তাদের ঝোঁক। হতে পারে সেটা খুবই সাধারণ মুক্তার কানের দুল, অথবা ক্ল্যাসিক রুপার ব্রেসলেট।
তুলা
দাঁড়িপাল্লা দিয়ে চিহ্নিত করা হয় বন্ধুত্বপূর্ণ তুলা রাশির জাতকদের। যা ভারসাম্য, সম্প্রীতি, শান্তি আর সৌন্দর্যের সমর্থক। এরা সব সময় ট্রেন্ডের সঙ্গে চলতেই পছন্দ করেন। শুধু চলতেই না, বরং খুব সহজেই খাপ খাইয়েও নিতে পারেন নতুন সব ট্রেন্ডের সঙ্গে। তাই সবচেয়ে বেশি আধুনিক জোডিয়াক জুয়েলারির ব্যবহার এরাই করে থাকেন। ডায়মন্ড নেকলেস, লিঙ্কড রিং কিংবা লাক্স চার্ম থাকতে পারে তুলা রাশির জাতকদের পছন্দের তালিকায়। রত্নপাথরের দিক থেকে এদের জন্য আদর্শ টোপাজ এবং আকোয়ামেরিন।
বৃশ্চিক
বৃশ্চিক রাশি তীব্রতা, গোপনীয়তা আর আবেগের প্রতীক। নিজের সত্যিকারের আবেগ তো নয়ই, নিজেদের সবার সামনে তুলে ধরতে চান না, বরং লুকিয়ে রাখেন। দামি রত্নপাথরের নেকলেস, চাঙ্কি সিগনেট, ডায়মন্ড ব্রেসলেট কিংবা ঝুলন্ত কানের দুলের মতো আকর্ষণীয় গয়নাগুলো দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, অনুগত এবং উচ্চাকাক্সক্ষী বৃশ্চিকের জন্য পুরোপুরি মানানসই।
ধনু
ধনু রাশির জাতকেরা আশাবাদ, অ্যাডভেঞ্চার এবং অন্বেষণের প্রতিনিধিত্ব করেন। এরা সাধারণত দুঃসাহসিক ধরনের এবং ভ্রমণপিপাসু। তাই বাইরে কোথাও ঘুরতে গেলে সেখানকার কোনো বিশেষ জুয়েলারি সংগ্রহ করতে ভোলেন না। অধিকাংশ ধনুর প্রিয় রং নীল। তাই গয়নার আকৃতি বা নকশা যেমনই হোক না কেন, তাতে যদি নীলকান্তমণি কিংবা ফিরোজা জড়ানো থাকে, তাতেই চলবে। হতে পারে সেটি একটি কনস্টিলেশন নেকলেস কিংবা ডায়মন্ডযুক্ত মেডেলিয়ন চার্ম ব্রেসলেট।
মকর
মকর রাশি সংগঠন, শিল্পবাদ আর ব্যবসার প্রতীক। বস্তুবাদী হিসেবে পরিচিত, সেই সঙ্গে বেশ ক্লাসি। তাই গয়নার ক্ষেত্রেও এ রাশির জাতকদের পছন্দ খুব ক্লাসি। হোক সেটা সাধারণ কিংবা জোডিয়াক জুয়েলারি। এদের প্রিয় রত্নপাথর অনিক্স, তবে পছন্দের তালিকায় ল্যাপিস লাজুলি এবং ব্লু টোপাজও রয়েছে। পৌরাণিক সি-গোট আকৃতির পেনডেন্ট, কেশি পার্ল রিং, মেইড-টু-লেয়ার লেটার নেকলেস থাকতে পারে মকরের পছন্দের তালিকায়।
কুম্ভ
কুম্ভ রাশি বিদ্রোহ এবং অনন্যতার প্রতিনিধিত্ব করে। কুম্ভরা একমাত্র ওই সব জুয়েলারিই পছন্দ করেন, যেগুলো পরিবেশবান্ধব। তারা মানবতাবাদী, তাই পরিবেশের প্রতি গভীরভাবে যত্নশীল। কনস্টিলেশন কনফিগারেশন থেকে শুরু করে খোদাই করা আইকনোগ্রাফি এবং ট্যারো কার্ড-অনুপ্রাণিত ডিজাইন হতে পারে আত্মনির্ভরশীল, বুদ্ধিমান এবং আশাবাদী কুম্ভ রাশির জন্য মানানসই অপশন।
মীন
মীন রাশি পরিচিত উদারতা ও সৃজনশীলতার জন্য। এমন জুয়েলারি পরতে চাইবেন, যা তাদের আবেগপ্রবণ করে তুলবে। তাই দাদির রেখে যাওয়া বা বড় খালার কাছ থেকে পাওয়া কোনো নেকলেস, কানের দুল, ব্রেসলেট কিংবা আংটিতেই তাদের বিশেষ ঝোঁক। এ ছাড়া জেড, নীলকান্তমণি, রক ক্রিস্টাল, অ্যামেথিস্ট, অ্যাকোয়ামেরিন এবং ব্লাডস্টোনও পছন্দ করেন মীনরা।
জোডিয়াক জুয়েলারির আরেকটি বিশেষত্ব হলো, এটি যেকোনো ফাংশন বা উপলক্ষনির্বিশেষে প্রায় যেকোনো পোশাকের সঙ্গে পরে নেওয়া যায়। ব্যক্তিগত স্টাইল যেমনই হোক, এ ধরনের জুয়েলারি মানিয়েও যায় অনায়াসে। অন্যান্য নেকলেসের সঙ্গে একটি জোডিয়াক সাইন নেকলেস লেয়ার করে পরলে ব্যক্তিত্বের স্বতন্ত্রতা তাৎক্ষণিকভাবে তুলে ধরা সহজ হয়ে যায় অনেকখানি। আর যেহেতু এই জুয়েলারিগুলো কখনো ‘আউট অব ট্রেন্ড’ হয় না, তাই ভালো জুয়েলারদের থেকে মান যাচাই করে এ ধরনের গয়না কিনলে তা টেকে বছরের পর বছর।

মডেল: জাকিয়া ও অ্যানি
মেকওভার: পারসোনা
ওয়্যারড্রোব ও অ্যাকসেসরিজ: মুক্তা
ছবি: হাদী উদ্দীন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top