skip to Main Content

ইন্টারন্যাশনাল ফ্যাশন I গেম অন

ভার্চ্যুয়াল ফ্যাশনের বিপ্লব এর হাত ধরেই ঘটবে বলে মত বিশেষজ্ঞদের। লাক্সারি ব্র্যান্ড থেকে স্ট্রিটওয়্যার লেবেলগুলোও তাই পাল্টে ফেলেছে তাদের চিরাচরিত গেম প্ল্যান। লিখেছেন সারাহ্ রুশমিতা

ফ্যাশন নিয়ে গেম, গেমে ফ্যাশন—প্রযুক্তি আর ফ্যাশনের দারুণ এক মেলবন্ধন। ফ্যাশন নিয়ে তৈরি এসব গেমে নিজেই হয়ে ওঠা যায় ফ্যাশন ডিজাইনার। আবার কিছু গেমে জনপ্রিয় ক্যারেক্টারদের দেখা যায় চেনা ব্র্যান্ডের পোশাকে তৈরি থাকতে। ফ্যাশন আর গেমের এ জমাটি জোড় বর্তমানে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ‘গেমিফিকেশন’ নামে। বর্তমানে ভার্চ্যুয়াল মিডিয়া যোগাযোগের অন্যতম জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্ম। ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলো তাই ইন-গেম অ্যাডভারটাইজিংয়ের মাধ্যমে ক্রেতা আকর্ষণে আগ্রহী হচ্ছে।
সারা দিনের কর্মব্যস্ততা সেরে রিলাক্সেশনের জন্য গেমিংয়ের জুড়ি নেই। তাই নিজের ব্র্যান্ড নিয়ে মানুষের কাছাকাছি পৌঁছানোর মোক্ষম সময় এটি। ব্র্যান্ডগুলো সেই সুযোগই কাজে লাগাচ্ছে।
বিভিন্নভাবে হতে পারে গেমিফিকেশন। নির্ধারিত কস্টিউমে যেমন তৈরি থাকতে পারে ক্যারেক্টার, তেমনি গেমারের মাধ্যমে সাজিয়ে তোলার অপশনও থাকতে পারে গেমে। ফ্যাশন স্টাইলিং গেমগুলোতে নির্দিষ্ট ক্যারেক্টার বেছে নিয়ে তাকে মনমতো সাজিয়ে তোলার সুযোগ থাকে। বিশ্বজুড়ে এ ধরনের খেলায় আগ্রহী অনেকেই। ১৮ থেকে ৬০ বছর বয়সীরা রয়েছেন এ দলে। এই ধরনের গেমের ওয়্যারড্রোব জুড়ে দুই রকমের উপকরণ থাকতে পারে। ফ্রি অথবা পেইড। যা কিছু ফ্রি, তা নিজের মতো করে গেমের আলমিরা থেকে নিয়ে খেলায় ব্যবহার করা যাবে। সেখানে সবকিছু আলাদাভাবে সাজিয়ে রাখা থাকে। পোশাক, অনুষঙ্গ, গয়না—সবকিছুই! এখন ফ্রিতেই সন্তুষ্ট থাকবেন, নাকি একটু খরচ করে আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের সবকিছুতে সাজিয়ে তুলবেন ক্যারেক্টারকে, সে সিদ্ধান্ত যিনি গেম খেলছেন তার।
এ ধরনের গেমে ক্যারেক্টার বেছে নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। চাইলে বেছে নেওয়া যেতে পারে পছন্দের তারকাকে। হয়ে ওঠা যাবে তার স্টাইলিস্ট। তৈরি করা যাবে তার রেড কার্পেট লুক। এ ধরনের গেমে অনেক সময়ে কোলাবরেট করে ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলো। লুই ভিতোঁর এমন একটি চুক্তি আছে রায়ট গেমের লিগ অব লেজেন্ডের সঙ্গে। ২০১৯ সালের লিগ অব লেজেন্ডের স্কিন ফোর ২০১৯ এর ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালের। এপ্রিল, ২০২১ রায়ট চুক্তি করে গ্রামীণ ইউনিক্লোর সঙ্গে। মার্ক জ্যাকব এবং ভ্যালেন্তিনো আউটফিটস একসঙ্গে হয়েছিল অ্যানিমেল ক্রসিং গেমে। বারবেরির রয়েছে নিজস্ব গেমিং ওয়েবসাইট বি সার্ফ। ২০২০ সালে গুচি পার্টনারশিপ করে মোবাইল গেম টেনিস ক্লাসের সঙ্গে। অ্যাপ স্টোরে প্রথম পাঁচটি গেমের মধ্যে খুঁজে পাওয়া যাবে এটিকে। এই গেমে খেলোয়াড়, কোচ—সবাইকেই দেখা গেছে গুচির পোশাক এবং অনুষঙ্গে।
গেমিফিকেশন মানে গেমার ও ফ্যাশনের দারুণ এক বন্ধন। এর যথাযথ পরিকল্পনা করতে বিশেষজ্ঞ মতের গুরুত্ব অনেক। ড্রেসট নামের খেলাটি তৈরি করা হয়েছে ফ্যাশন এডিটর লুসি ইয়ম্যান্সের সঙ্গে আলোচনার পরে। পোর্টার ম্যাগাজিনের সম্পাদক এবং হারপার’স বাজারের এডিটর ইন চিফ ছিলেন তিনি।
২০২০ সালের তথ্য অনুযায়ী গেমের আন্তর্জাতিক বাজারমূল্য ১৭৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। যুক্তরাজ্যের এন্টারটেইনমেন্ট সফটওয়্যার অ্যাসোসিয়েশনের ২০২০ সালের তথ্যমতে, সে দেশের ৪১ শতাংশ গেমার মেয়ে। গেমপ্রেমীদের সংখ্যা নিয়মিত বাড়বে বলেই ধারণা করা হয়। ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলোর জন্য তাই ক্রেতা আকর্ষণের বিশাল পরিসর এটি। তাই এই ক্ষেত্রে ব্র্যান্ড পজিশনিং নিয়ে পরিকল্পনা হওয়াটাই স্বাভাবিক। এত মানুষের আকর্ষণ প্রাপ্তি অবশ্যই যেকোনো ব্র্যান্ডের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
ডিজিটাল এরাতে ফ্যাশনের প্রবেশ বেশ খানিকটা ধীরলয়ে ঘটেছে। মহামারি ব্র্যান্ডগুলোকে তাদের প্রমোশন নিয়ে নতুন করে ভাবতে শিখিয়েছে। ক্রেতাদের কাছাকাছি পৌঁছাবার নতুন নতুন পন্থা খুঁজতে হয়েছে। করোনাকালে দীর্ঘ সময় আন্তর্জাতিক ফ্যাশন শো এবং ফিজিক্যাল স্টোর—দুই-ই বন্ধ ছিল। কিন্তু থেমে ছিল না ক্রেতাদের চাহিদা। একটা সময়ের পরে চাহিদার জোগানের খোঁজ শুরু হয়। একই সঙ্গে ব্যবসা ধরে রাখতে ক্রেতাদের কাছাকাছি পৌঁছানোর চেষ্টায় ব্যস্ত তখন ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি। ওয়ার্ক ফ্রম হোম, অনলাইন ক্লাসের দিনগুলোতে গেমের প্রতি আগ্রহী হয়েছেন অনেকেই। তাই সুযোগ বুঝে অত্যাধুনিক গেমগুলোর ব্যবহারকারীদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে বিভিন্ন ফ্যাশন ব্র্যান্ড। এ ক্ষেত্রে একটি ব্র্যান্ডকে উদাহরণ হিসেবে ধরে পুরো বিষয়টি ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। রেট্রো ভিডিও গেম আফটারওয়ার্ল্ড: দ্য এজ অব টুমরোতে ব্যালেন্সিয়াগা তাদের ফল ২০২১ এর কালেকশন প্রকাশ করে। ফ্যাশন ও প্রযুক্তির সহাবস্থান সুচারুভাবে প্রকাশিত হয়েছে এই সন্ধির ফলে। লিস্ট ইনডেস্কের তথ্য অনুযায়ী এই গেম রিলিজের পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায় ব্র্যান্ডটিকে অন্তর্জালে খুঁজে বেড়ানোর পরিমাণ ৪১ শতাংশ বেড়ে যায়। সবচেয়ে বেশি সার্চ করা ব্র্যান্ডের তালিকায় এগিয়ে আসে এই ব্যালেন্সিয়াগা।
গেম ও ফ্যাশন সম্পূর্ণ আলাদা দুটি ক্ষেত্র হয়েও পাশাপাশি অবস্থান করতে পারছে সাফল্যের সঙ্গে। এর পেছনে কারণটা সহজ। এই দুই-ই বাস্তব জীবনের নেতিবাচকতাকে পাশ কাটিয়ে আনন্দের খোঁজ এনে দেয়। লারজার দ্যান লাইফ—এই অনুভূতি বর্তমানে এই দুই মাধ্যমে সহজেই পাচ্ছে মানুষ।
ইয়ম্যানসের মতে, ফ্যাশনের বেস্ট ফ্রেন্ড হওয়া উচিত প্রযুক্তির। কারণ, প্রযুক্তির মাধ্যমে ফ্যাশন মানুষের নিত্যদিনের জীবনযাপনের নানান অংশে মিশে যেতে পারবে। সম্ভাব্য ক্রেতা সহজেই ব্র্যান্ডটিকে কাছের বলে মনে করবে। সহজ হবে মনোযোগ আকর্ষণ এবং বিশ্বাস অর্জন। তিনি আরও মনে করেন, গেমের দুনিয়ার সঙ্গে ফ্যাশনের মিলেমিশে যাওয়ার প্রচেষ্টা ব্র্যান্ডগুলোকে সুযোগ দিচ্ছে সহজে মানুষের কাছাকাছি পৌঁছে যাওয়ার।
ফ্যাব্রিক্যান্টের হেড অব কনটেন্ট মিশায়েলা লারোসের মতে, গেমিফিকেশনের কারণে বেশ কিছু নতুন অভিজ্ঞতা হচ্ছে গেমারদের। গেমের মতো ফ্যাশনেও আনন্দের সঙ্গে নিজেকে প্রকাশ করার সুযোগ তৈরির পরামর্শ তার। গেম আর ফ্যাশনের যুগলবন্দি দেখা গিয়েছিল ১৯৮৪ সালের ওয়ান্ডার ওমেন চলচ্চিত্রে। সেখানে ড্রেস্ট, ওয়ারনার ব্রোসের সঙ্গে পার্টনারশিপে এসেছিল। চলচ্চিত্রের অ্যাভাটাররা ব্যবহার করেছিল দারুণ সব কস্টিউম। এই ভিন্নধর্মী ক্যাম্পেইন থেকে ব্যাপক সাড়া পাওয়া গিয়েছিল ক্রেতা এবং সম্ভাব্য ক্রেতাদের মাঝে।
ফিজিক্যাল, ডিজিটাল—বর্তমানে এই দুই নামের সঙ্গেই ফ্যাশন বিশ্ব এবং ক্রেতারা পরিচিত। এখন ঘরের বাহির না হয়েই শপিং সেরে নেওয়ায় আগ্রহ বেড়েছে। তাই ডিজিটাল মাধ্যমে ফিজিক্যাল শোরুমের অভিজ্ঞতা প্রদানের চেষ্টা করছে আন্তর্জাতিক ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলোও। মার্কেটিংয়ের দিক থেকে এই পুরো অভিজ্ঞতার নামকরণ করা হয়েছে ফিজিট্যাল। ফিজিক্যাল এবং ডিজিটালের সংমিশ্রণে। ভার্চ্যুয়াল টু রিয়েল মাধ্যমটি ব্যবহার করে ‘স্টাইল বিফোর ইউ বাই’ ধারণার প্রয়োগ করা হয়েছে এখানে। খুব শিগগির প্রাডার সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হতে যাচ্ছে ইয়ম্যানসের নতুন উদ্যোগ। বেশির ভাগ ফ্যাশন-গেমিং কোলাবোরেশনে ক্রেতাদের সরাসরি ফ্যাশন পণ্য অনুভব করার সুযোগ তৈরির চেষ্টা করে থাকে ব্র্যান্ডগুলো। গেমের পাশাপাশি ফিজিক্যাল স্টোরে স্থান পায় পোশাকটি। আবার কিছু ব্র্যান্ডকে দেখা যায় নিজেদের বিশেষ এডিশন কিংবা কোনো নকশাকে গেমের মাধ্যমে ক্রেতার সম্মুখে প্রদর্শন করতে।
লন্ডন কলেজ অব ফ্যাশনের হেড অব ফ্যাশন এভিয়েশন এজেন্সি, ম্যাথু ডিংকওয়াটার বলেন, গেম খেলার সময়ের আনন্দ-উত্তেজনার অনুভূতি ফ্যাশন ব্র্যান্ডের প্রতি একটি ইতিবাচক মনোভাব তৈরি করবে গেমারদের মাঝে।
ফ্যাশনের এরূপ ডিজিটাল উপস্থাপন পরিবেশের ক্ষতিকেও কমিয়ে আনতে সাহায্য করবে। ফ্যাশন বর্জ্য বর্তমানের একটি দুশ্চিন্তার জায়গা। ক্রেতা আকর্ষণের হাতিয়ার হিসেবে ফ্যাশন পণ্যের অতিরঞ্জন ব্যবহার থেকে খানিকটা বাঁচাবে নতুন এই মার্কেটিং কৌশল। একই সঙ্গে কমবে মূল্যবান প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহার। ডিজিটাল প্রযুক্তিতে পরিবেশের ক্ষতির পরিমাণ বেশ খানিকটা কম। ৪ শতাংশ গ্রিন হাউস গ্যাস তৈরি হয় এই মাধ্যমে।
বিশ্বব্যাপী তরুণেরা ঝুঁকছে গেমের দুনিয়ায়। বিনোদনের এই মাধ্যমে ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলো প্রবেশ করতে চাইবে তাদেরকে আকর্ষণের উদ্দেশ্যে। এই মাধ্যমে ক্রেতা চাহিদা তৈরি করতে ব্র্যান্ডগুলো নিয়মিত হবে ডিজিটাল প্যাটার্ন ফাইল তৈরিতে। আর এই পোশাকগুলোকে ক্রেতাদের কাছাকাছি নিয়ে যেতে থ্রি ডি অ্যাভাটর ভূমিকা রাখবে। ফেস ফিল্টার ইতিমধ্যে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। নিয়মিত ব্যবহৃত হচ্ছে বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে। সামনের দিনে ফেস ফিল্টারের জায়গা নিয়ে নিতে পারে বডি ফিল্টার। বিভিন্ন ধরনের পোশাকের ফিল্টারে নিজেকে আগেভাগেই সম্পূর্ণ রূপে দেখে নিয়ে তারপর কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ তৈরি হলে ক্রেতারা আগ্রহী হবেন ডিজিটাল মাধ্যম ফ্যাশন গেমিফিকেশনে।

ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top