skip to Main Content

নখদর্পণ I কনেসুলভ

আয়োজনের আভা ছড়িয়ে পড়ুক নখের নকশাতেও। সাজ সমন্বয়ে প্রাধান্য পাবে পুরো আউটফিট আর অনুষঙ্গ। পুরোদস্তুর পারফেক্ট ব্রাইডাল লুকের জন্য

বিয়ের মৌসুম মানেই বিয়ের পোশাক কেনা থেকে শুরু করে গয়না-সাজ কেমন হবে, তা নিয়ে বিশদ প্রস্তুতি। কিন্তু একটা দিক প্রায় অধরাই রয়ে যায়, তা হলো নখের সজ্জা! বিয়ের প্রতিটি অনুষ্ঠানের জন্য আলাদা আলাদা নখের ডিজাইন সে আবার অনেক হ্যাপার ব্যাপার। তাই এ ক্ষেত্রে হতে হবে কিছুটা কৌশলী। এমনভাবে নখের ডিজাইন ঠিক করতে হবে, যাতে তা সব অনুষ্ঠানের জন্যই মানানসই হয়, অথবা এমন নকশা যা কিনা মিলে যায় বিয়ের পুরো থিমের সঙ্গে।
নখের সজ্জার কথা এলেই প্রথমে যে রংটা চোখে ভাসে, তা হলো মেহেদি রাঙা হাতে লাল নখ। বাঙালি ঐতিহ্যে ওতপ্রোতভাবে মিশে আছে বর্ণালির এ রং। লাল বেনারসি, লাল টিপের সঙ্গে বাঙালি বধূরা লাল নখেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন বেশি। তবে লাল রঙেরও আছে রকমভেদ। ত্বকের টোন ও পোশাকের রঙের সঙ্গে মিলিয়ে লালের শেড বেছে নিতে পারেন। তা ছাড়া অনেকে চাইলে লালের সজ্জার পাশাপাশি নখ সাজাতে পারেন ছোট ছোট মুক্তা বা রাইনস্টোন দিয়েও। এতে করে ট্র্যাডিশনাল লুকের পাশাপাশি নিয়ে আসতে পারবেন ট্রেন্ডি একটা লুক। লাল নখ যে শুধু লালরঙা পোশাকের সঙ্গেই মানায়, তা কিন্তু নয়। প্যাস্টেল ও হালকা শেডের পোশাকের সঙ্গেও লাল নখ, সঙ্গে লাল ঠোঁট এনে দেয় অসাধারণ বৈপরীত্য।
বিয়েতে নখের সাজে লালের পরই যে ডিজাইন খুব বেশি প্রচলিত, তা হলো গ্লিটার। গায়েহলুদ, মেহেদি সন্ধ্যা কিংবা বিয়ে—যেকোনো অনুষ্ঠানের জন্যই পারফেক্ট এই নেইল আর্ট। গ্লিটার যেকোনো ধরনের আলোর সেটিংয়েই চমৎকার দ্যুতি ছড়ায়; এতে করে ছবিতেও হাত দেখায় নজরকাড়া। তবে লালের মতোই গ্লিটারের টোন বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রেও সচেতন হতে হবে। পোশাকে যদি লাল-সোনালি কাজ থাকে, তাহলে গোল্ডেন গ্লিটার বেছে নেওয়া যেতে পারে নখ সাজাতে। বিয়ের পোশাক যদি হয় সাদা কিংবা রুপালি, আর অনুষঙ্গ হিসেবে থাকে ডায়মন্ডের গয়না, তাহলে নখসজ্জায় হালকা সিলভার শেডের নেইল পেইন্ট দেখাবে দারুণ। গোল্ডেন-সিলভারের প্রচলিত শেড ছাড়াও আজকাল কনের সাজে ব্যবহৃত হয় অন্যান্য রঙেরও গ্লিটার। সে ক্ষেত্রে পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে বেছে নেওয়া যেতে কুল, ওয়ার্ম বা নিউট্রাল আন্ডারটোনের গ্লিটার। তবে গোল্ডেন-সিলভারের মতো অন্যান্য শেডের গ্লিটার কিন্তু সেভাবে আলোকচ্ছটা দেবে না, সাজের বেলায় এ বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে।
গ্লিটারেরই আরেকটি ট্রেন্ডি সংস্করণ বলা যায় গ্লিটার অ্যাকসেন্টকে। নখজুড়ে গ্লিটারের সাজ পছন্দ না হলে বেছে নেওয়া যায় এগুলো। এই ডিজাইনের জন্য প্রথমে পোশাকের রঙের সঙ্গে মিলিয়ে একটি বেস নেইল পেইন্ট বেছে নিতে হবে। এরপর পোশাকের কাজের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে গ্লিটারের ডিজাইন করতে হবে নখে। গ্লিটার দিয়ে নানা ডিজাইনের পাশাপাশি, নখ সাজতে গ্লিটারি ফ্রেঞ্চ নেইল কিংবা গ্লিটারি অমব্রেও সাজে এনে দেবে নতুনত্ব।
গ্লিটার ফ্রেঞ্চ নেইলের কথা যখন এলোই, তখন নিউট্রাল ফ্রেঞ্চ ম্যানিকিউরের কথা না বললেই নয়! বিশ্বের প্রায় সর্বত্র কনেদের নখসজ্জার পছন্দের তালিকায় শুরুতেই রয়েছে ফ্রেঞ্চ ম্যানিকিউর। বিয়ের সাজে অনাড়ম্বর ভাব আনতে যেমন ফ্রেঞ্চ ম্যানিকিউর পারফেক্ট। এর সঙ্গে নানা অনুষঙ্গ জুড়ে দিয়ে নখের সাজকে সহজেই জাঁকজমকপূর্ণ করে তোলা যায়। অনেক সময় একই দিনে সকালে ও রাতে বিয়ের দুটো অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এমন আয়োজনে লাইফসেভার ফ্রেঞ্চ ম্যানিকিউর। সকালের আয়োজনে সাধারণত হালকা সাজেই মানায় কনেদের। এ সাজের সঙ্গে বেছে নেওয়া যায় নিউট্রাল ফ্রেঞ্চ ম্যানিকিউর। আর রাতের ভারী সাজের বেলায় নখসজ্জায় ওই একই ম্যানিকিউরের ওপর রাইনস্টোন কিংবা গ্লিটার বসিয়ে দিলেই লুকে আসবে আভিজাত্য।
নখ সাজানোর এখনকার ট্রেন্ডগুলোর মধ্যে শুরুতেই রয়েছে পাথর, মুক্তা কিংবা রাইনস্টোনের ব্যবহার। এ ধরনের ম্যানিকিউরের বেলায় পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে বেস হিসেবে একরঙা কোট দেওয়া হয় নখে। এর ওপর আঙুলের কিউটিকল বরাবর ছোট ছোট স্টাড দিয়ে ডিজাইন করা হয়। সাধারণত এ ধরনের সাজের বেলায়, হাতের যেকোনো একটি আঙুলের নখে (বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অনামিকার নখ) তুলনামূলক ভারী কাজ করা হয়। বড় রাইনস্টোন, মুক্তা কিংবা বড় আকারের স্টাড দিয়ে সাজানো হয় ওই আঙুল। আবার পোশাকের ডিজাইনের সঙ্গে মিলিয়েও নখে পাথরের ডিজাইন করে নেওয়া যায়। তবে খুব বাড়তি কিছু না করাই ভালো। এতে ফিকে হয়ে যেতে পারে হাতের মেহেদি। জমকালো এ নেইল আর্টের ক্ষেত্রে আরেকটি কৌশল হলো, ডিজাইনে অনেক ছোট স্টাড বা রাইনস্টোন ব্যবহার করা। আঠা দিয়ে এগুলো বসানোয় প্রায়ই কিছু না কিছু স্টাড বা রাইনস্টোন খুলে আসে। তাই এমন নকশা বেছে নিতে হবে যেখানে এ ধরনের ক্ষতি ততটা চোখে পড়বে না।
জমকালো নখসজ্জার আরেক সংস্করণ থ্রি-ডি নেইল আর্ট। যদিও এখনো এই নেইল আর্ট তেমন প্রচলিত হয়নি; তবে সময়ের পরিক্রমায় যে থ্রি-ডি আর্ট বিয়ের একটি অসামান্য অনুষঙ্গে পরিণত হবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ছোট একটা ফুল, পাতা, কিংবা প্রজাপতি—নখে এসব থ্রি-ডি ডিজাইন বিয়ের ছবিতেও যোগ করবে অনন্য মাত্রা! চাইলে এর সঙ্গে জুড়ে নেওয়া যেতে পারে রাইনস্টোনও।
নেইল আর্টের পুরো প্রক্রিয়া সহজ করতে এখন আবার বাজারেই কিনতে পাওয়া যায় রেডিমেড অ্যাকসেসরাইজড ফেক নেইল সেট। এগুলো নেইল আর্টের বাড়তি ঝক্কি থেকে মুক্তি দেবে। হরেক রকমের ডিজাইন থেকে বেছেও নেওয়া যাবে পছন্দ অনুযায়ী ডিজাইন। হাতে যদি সময় একদমই কম থাকে, তবে ফেক নেইল হতে পারে পারফেক্ট সমাধান।
স্টাড, গ্লিটার, রাইনস্টোন দিয়ে নখসজ্জা তো হলো; কেমন হবে যদি নখটাকে একটা ক্যানভাস ধরে নেইল আর্ট করে নেওয়া যায়? কাস্টমাইজড নেইল আর্টের এই সংস্করণই বোধ হয় কনেদের সাজে সবচেয়ে কম দেখা যায়। এ ধরনের নেইল আর্টে প্রকৃতির ছবির পাশাপাশি বর কিংবা কনের প্রতিকৃতিও এঁকে নেওয়া যায়। অথবা এমন কোনো উদ্ধৃতি লিখে রাখা যায়, যা হয়ে থাকবে স্মরণীয়। এ ধরনের আর্টের জন্য প্রয়োজন পড়বে বিশেষজ্ঞ নেইল আর্টিস্টের। তবেই বিশেষ দিনে নখের সাজটাও দেখাবে অনন্য।

 সাদিয়া আফরিন শায়লা
মডেল: জেমিম
মেকওভার: পারসোনা
জুয়েলারি: উযমাহ্
ওয়্যারড্রোব: নাবিলা
ছবি: হাদী উদ্দীন ও সংগ্রহ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top